লালসালু উপন্যাসে যেমনটা বর্নিত,
//এভাবেই মজিদের প্রবেশ হল মহব্বতনগর গ্রামে। প্রবেশটা নাটকীয় হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু গ্রামের লোকেরা নাটকেরই পক্ষপাতী। সরাসরি মতিগঞ্জের সড়ক দিয়ে যে গ্রামে এসে ঢুকবে তার চেয়ে পছন্দ হবে তাকে, যে বিলটার বড় অশ্বথ গাছ থেকে নেবে আসবে। মজিদের আগমনটা তেমনি চমকপ্রদ//
অনেকটা সেভাবেই চাঁদগাজী ভাই ক্যাডেট কলেজ সম্বন্ধে সত্যের মত করে মিথ্যা (কিংবা অর্ধসত্য/অর্ধমিথ্যা) বলে চরম নাটকীয়তার অবতারনা(নাকি অপচেষ্টা) করলেন। স্বভাব যায় না মলে। আমরা লালসালু উপন্যাসের মহব্বতনগর গ্রামের মানুষের মতই। নাটকেরই পক্ষপাতী (নইলে এত হিট হয় কিভাবে?)
চাঁদগাজী ভাইয়ের নাটকের দৃশ্যগুলির একটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি।
দৃশ্য-১ // ক্যাডেট কলেজগুলো পাকিস্তান সরকারের উপস্হিতি ছাড়া আর কিছু নয়//
ক্যাডেট কলেজগুলো (৭১ এর সময়কার ঝিনাইদহ, ফৌজদারহাট, মির্জাপূর ও রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ) স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করে তাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে তাদের অবস্হান সন্দেহাতীতভাবেই সুদৃঢ় করেছিল। এরকম গৌরবময় ইতিহাস যারা ধারন করে আছে তাদের মাঝে আপনি কিভাবে পাকিস্তান সরকারের উপস্হিতি খুজে পান সেটা বোধগম্য নয়। আর যেভাবে চাঁদগাজী ভাই আপনার মনগড়া interpretation দিলেন তাতে করে আম-জনতা মনে করে বসতে পারে ক্যাডেট কলেজগুলোয় এখনও চান-তারা পতাকা ওড়ানো হয়, পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত সহকারে।
মুক্তিযুদ্ধে ক্যাডেট কলেজ গুলোর অবদান জানতে ক্লিক করুন নিম্নের লিংকগুলোয়ঃ
ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ ও ৭১
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ ও ৭১-১
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ ও ৭১-২
দৃশ্য-২ //পাকিস্তান সরকার ক্যাডেট কলেজগুলো করেছিলো মুসলিম লীগ ও ব্যবসায়ীদের ছেলেদের সেনা বাহিনীতে স্হান করে দেয়ার জন্য//
দৃশ্য-৩ //সেই দেশে মাথাপিছু সরকার খরচ করছে আনুমানিক ১০/১২ লাখ টাকা ধনীদের ১৪ বছরের ছেলেদের পেছনে, ক্যাডেট কলেজে//
চাঁদগাজী ভাইয়ের উপরোল্লিখিত বক্তব্যের সারমর্ম এটাই যে ক্যাডেট কলেজে কেবলমাত্র ধনীর ছেলেরাই পড়াশোনা করে। তাহলে প্রতি বছর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা কেবলই লোক দেখানো কিনা এবং লোক দেখানো পরীক্ষায় ছেলেকে অংশ গ্রহন করানোর পর ধনীরা কর্তৃপক্ষকে এমন পরিমান ধন উপঢৌকন হিসেবে দেন কিনা যে কারনে ধনীর ছেলেকে ভর্তি না নিয়ে কোন উপায় তাদের আর থাকে না.....এ রকম কোন তথ্য চাঁদগাজী ভাইয়ের কাছে থাকলে ঝেঁড়ে কেশে বললেই তো হয়।
/সর্বপোরি একজন ধনী ব্যক্তি কেন তার ছেলেকে/মেয়েকে ক্যাডেট কলেজে পড়াবে? মানে পড়ালে তার বা তার সন্তানের কি লাভ?
ধনী লোকের সন্তানেরা তো মায়ের পেট থেকে পড়েই দেখে ইউরোপ/আমেরিকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোনক্রমে যারা বাংলাদেশের থাকে তারাও এ/ও লেভেল দিয়ে এক সময় বাংলাদেশের সীমানা পগার পার। তারপর বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে (আচ্ছা এ বাবদ বাংলাদেশের কত বৈদেশিক মূদ্রা খরচ হয়?) এসে বাপ-দাদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামলায়।
শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারে বরাদ্দ বিষয়ক যৎসামান্য বাস্তবতা (যা চাঁদগাজী ভাই শেয়ার করেন নাই) তা নিম্নরূপঃ
শিক্ষা মন্ত্রনালয় (Primary & Mass Education)-১৪৫০২ কোটি টাকা
শিক্ষা মন্ত্রনালয় (Education Division)-১৭১০৩ কোটি টাকা
সর্বমোটঃ ৩১৬০৫ কোটি টাকা *
এই যে ৩১,৬০৫/- কোটি টাকা সরকার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করেছে তার সাথে আরো ১০০ কোটি (যা মোট শিক্ষা বাজেটের .৩২% মাত্র) টাকা যোগ হবে যদি ক্যাডেট কলেজগুলো বন্ধ করা হয়। প্রশ্ন এটাই যে চাঁদগাজী ভাই ৩১,৭০৫ কোটি অথবা বারতি ১০০ কোটি টাকা দিয়ে কিভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হায় আমূল পরিবর্তন আনবেন?
*তথ্যসূত্রঃ Total Budget of Bangladesh 2015-16
চাঁদগাজীর বলার ধরনই এমন যেন সরকার এই ১০০ কোটি টাকা স্রেফ জলে ফেলছে আর কিছুই না। এই ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে ক্যাডেটরা সমাজে কোন অবদানই রাখতে পারছে না এই রকম ভাব (ব্যাঙ্গ করে লিখলেন, চৌকস মৌকস) ওনার লেখায়।
এ ব্যাপারে কিছু বাস্তব উদাহরনের জন্য নিম্নের লিংকে একটু খোঁচা মারুনঃ
প্রসংগ ক্যাডেট কলেজঃপ্রত্যাশা ও বাস্তবতা
আম জনতার পয়সায় চলা ক্যাডেট কলেজগুলোর ক্যাডেট কেন আম জনতাকেই ব্লাডি..............ন বলে গালি দিবে, বিষয়টা আমি নিশ্চিত নই। তবে এই গালিটা যদি কেউ চাঁদগাজী ভাইকে দেয়, সে ব্যপারে আমার কোন confusion নেই। কেননা উনি ওনার পোষ্টে ক্যাডেট কলেজ নিয়ে যে মিথ্যাচার করলেন তাতে করে ঐ গালিটা খাওয়ার দায়ভার অনেকাংশে কেবলই ওনার। উনি সিভিলিয়ানদের মধ্যে এমন এক পিস যে ওনার মতো বা ওনার সমমনাদের কারনে আপামর সিভিলিয়ানদের বদনাম হয় খামোকাই।
ক্যাডেট কলেজ বন্ধ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা বা উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পরপরই একশ্রেনীর রাজনীতিবিদদের প্ররোচনায় প্রথমে ক্যাডেট কলেজগুলোতে রাজনীতির প্রচলন পরে তাতে ব্যর্থ হয়ে ক্যাডেট কলেজ বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ (তথ্যসূত্রঃ কিপ ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পেইন) নেয়া হয়েছিল (স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার কি উপযুক্ত পুরষ্কার!) কিন্তু তৎকালীন ক্যাডেটদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তা কার্যকর হয়নি। এর ফলাফল এটাই যে আমরা অন্ততঃ নিঃসন্দেহে বলতে পারি, রাজনীতিমুক্ত, রাজনৈতিক হানাহানা ছাড়াই ক্যাডেট কলেজে ছাত্ররা নিশ্চিন্তে পড়তে পারছে। স্বাভাবিকভাবেই এখন যারা ক্যাডেট কলেজ বন্ধ করতে চান, তাদের আসল উদ্দেশ্যটা আসলে কি সেটা জানতে খুব ইচ্ছে করে।
পুনশ্চঃ আমরা যারা ক্যাডেট কলেজে পড়িনি, আমাদের উচিত এক্স-ক্যাডেটদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা (ক্যাডেট কলেজ বিষয়ক confusion দূর করা/cross-check করার জন্য)। এক্ষেত্রে ক্যাডেট কলেজ ব্লগে ঢুঁ মারতে পারেন। ক্যাডেট কলেজ বিষয়ক অনেক রিসোর্স পাবেন সেখানে। আর যারা ক্যাডেট কলেজ বিষয়ক রূপকথা, নাটক ইত্যাদি ইত্যাদি পছন্দ করেন.......তারা চালিয়ে যান অথবা চলে যান চান্দের দেশে (চাঁদগাজীর ব্লগে)।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৪