আবেগে জড়িয়ে সবসময় মানবতা দেখাতে নেই। রহিঙ্গারা এদেশে আরেকটি ইসরাইলও সৃষ্টি করতে পারে। একটা সত্য হলো, মানবতা কখনো কখনো চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে। আবার কখনো কখনো একটি জাতিকে করতে পারে সমৃদ্ধশালী।
ফিলিস্তিনির কথা যদি বলি, জেরুজালেম এমন একটি জায়গা যেটা মুসলিম, ইহুদী ও খৃষ্টান এই তিন ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র স্থান। এই তিন ধর্মের মানুষই মনেকরে এদের আদী ভূমী এটা। কারন এখানেই এই তিন ধর্মের জাতীর জনক ইব্রাহীম (আঃ) এর জন্মস্থান। এটা এমন স্থান যেটা এখন পর্যন্ত ২ বার ধ্বংস করা হয়েছে। ২৩ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। মুসলিম, খৃষ্টান ও ইহুদীদের মধ্যে ৪৪ বার দখল বেদখল হয়েছে। ৫২ বার বিভিন্ন প্রকার যুদ্ধে আক্রান্ত হয়েছে। সোজা কথা জেরুজালেমের ভূমিতে এই তিন ধর্মেরই বসবাসের অধিকার আছে। কিন্তু ৬৩৭ খৃষ্টাব্দের আগে খৃষ্টানরা ফিলিস্তিন থেকে সব ইহুদীদের বিতাড়িত করে, ফিলিস্তিনিকে পুরোপুরিভাবে ইহুদী শুন্য করে ফেলে। ৬৩৭ খৃষ্টাব্দে উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ'র নেতৃত্বে মুসলিমরা আবার ফিলিস্তিনে ক্ষমতা দখল করে। সে সময় বিশ্বের নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ইহুদীরা মারাত্মক নিপীড়নের মধ্যে পতিত হয়। তখন ফিলিস্তিনির উদার নেতাগন ইহুদীদের প্রতি মানবতা দেখিয়ে তাদের জেরুজালেমে ফিরয়ে আনেন। এবং সেখানে ইহুদীদের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে দেন। যেখানে ইহুদীরা তাদের নিজেদের ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি অবাধে পালন করতে পারবে। সে মানবতাই পরবর্তিতে কাল হয়েছে। এরপরেও দখল বেদখলের খেলা হয়েছে কিন্তু অবস্থান শক্ত থাকায় ইহুদীদের আর কউ ফিলিস্তিনির মাটি থেকে বিতাড়িত করতে পারেনি।
এর ইতিহাস বলতে গেলে আরও একটা ব্লগ লেখা প্রয়োজন। তাই এটাকে নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাইনা। আধুনিক বিশ্বের শেষ পরিস্থিতি আরব ছিলো বৃটিশদের দখলে। কিন্তু আরব বৃটিশদের দখলে থাকলেও তারা মুসলিমদের ও ইহুদীদের ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত করতে পারেনি। এবং মুসলিম আরব দেশগুলো দিন দিন স্বাধীনতার জন্য আকুল হয়ে পড়েছিলো। এক এক করে আন্দোলন সংগ্রাম করতে লাগলো। যার মধ্যে ফিলিস্তিন ও সিরিয়া অন্যতম। সে অবস্থায় খৃষ্টানরা ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে ভাল অবস্থানে ছিলো, মুসলিমরা ছিলো আরবে। কিন্তু ইহুদীদের তেমন কোনো অবস্থান ছিলোনা পৃথিবীতে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো।
১৯৮০ সালের দিকে পুরো পৃথিবীতে আবার ইহুদী নিপীড়ন শুরু হয়। তখন পূর্বের নেয় ফিলিস্তিনিরা ইহুদীদের জেরুজালেমে আশ্রয় দেয়। তখন থেকেই অস্ট্রিয়ার এক ইহুদী নেতা জেরুজালেমে ইহুদীদের জন্য আলাদা একটা রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব রাখে। আর তখন থেকেই শুরু ইহুদী আর মুসলিমদের দ্বন্দ্ব। বৃটিশরা তাদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের বিদ্রহো ঠেকাতে পারছিলোনা, তাই তারা মদদ দিতে থাকে ইহুদীদের। যাতে করে ইহুদী মুসলিম ঝামেলায় জড়িয়ে পরে এবং বিদ্রোহ দূর্বল হয়ে পরে। এবং ১৯১৮ সালে ইহুদীদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জোরালো সমর্থন দেয় বৃটেন। আর এটা তাদের যুদ্ধের অপচেষ্টা।
১৯৩০ সালে আবার জার্মান ইহুদীদের নির্যাতন শুরু করে। ফলে সেখান থেকে পালিয়ে এসে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে আশ্রয় নেয়। দিন দিন ইহুদী বাড়তেই থাকে। আর সাথে বাড়তে থাকে ইহুদিদের সাথে ফিলিস্তিন মুসলিমদের ঝামেলা। কেনোনা ইহুদীরা তখন থেকেই ফিলিস্তিনির মিধ্যে ইহুদীদের জন্য আলাদা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য উঠে পড়ে লাগে।
এরপর ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলা কালিন সময়ে নাৎসি বাহিনি ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করে। বেচে যাওয়া বহু সংখ্যক ইহুদী আবার আশ্রয় নেয় ফিলিস্তিন সহ বিভিন্ন দেশে। আর তখনই ফিলিস্তিনের ইহুদী-মুসলিম দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারন করে।
যেহেতু আগে থেকেই বৃটেন ইহূদীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র ঘঠনের জন্য তাদের সমর্থন জানিয়েছে সেহেতু, বৃটেন ১৯৪৭ সালে ফিলিস্তিনিকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য জাতিসংঘর কাছে আহবান করে। ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহন করে।
এরপর ১৯৪৮ সালের ৪ মে বৃটিশরা ফিলিস্তিন থেকে প্রত্যাবর্তন করে। এবং ৪ মে'তেই ইহুদীরা সেখানে একটি অঞ্চলকে "ইজরাইল" নামে আলাদা একটা রাষ্ট্রর ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৫৭ সাল পর্জন্ত তারা গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর দখল করে। পশ্চিম তীরের দখলদারি চলছে এখনো। তাই বলাই যায় মানবতার জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়েছে ফিলিস্তিকে। এতোটা ক্ষতি যা আর কোনোভাবেই শোধরানো সম্ভব নয়।
আবার শরণার্থী দ্বারা সমৃদ্ধশালী হয়েছে এমন রাষ্ট্রের কথা বলি, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর কথা বলা যায়। যেখানে বহু বছর ধরে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা পরিশ্রম করে যুক্তরাষ্ট্রকে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রর প্রভাবশালী হয়ে ওঠার শিড়িটা আসলে তৈরি করে দিয়েছে ওরাই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের নীতি কি হওয়া উচিৎ? এ ব্যাপারে আগে উপরের বিষয় দুটি নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। আমাদের ভাবতে হবে, শরণার্থীদের পার্মানেন্ট আশ্রয় দিলে আমাদের জাতী লাভবান বা সমৃদ্ধশালী হবে কি? বা এতে আমাদের ক্ষতি বা চড়া মূল্য দিতে হতে পারে কি?
যদি সমৃদ্ধির কথা ভাবি, তবে বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর ফাকা জমি ছিলো এবং কৃষি কাজের লোকেরও অভাব ছিলো। এ ক্ষেত্রে সেখানে একটা কৃষি বিপ্লব ঘটানো সহজ ছিলো। যেটা বাংলাদেশের বর্তমান পেক্ষাপটে সম্ভব নয়। সুতরাং রোহিঙ্গা শরণার্থী দ্বারা সুবিধার কথা চিন্তা করার ব্যাপারটাও ভুলে যাওয়াই শ্রেয়।
আর রোহিঙ্গা নিয়ে ক্ষতির দিক চিন্তা করতে গেলে সহজেই বলা যায়, রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়া। রোহিঙ্গারাও যে ইসরাইলের মত এদেশে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে চাইবেনা তার নিশ্চয়তা কি? আর এ সম্ভাবনা উরিয়ে দেওয়া না যাওয়ার কারনও আছে।
ইসরাইলের ব্যাপারটাই বলি। তারা কিন্তু সোজা দুঃখে ইহুদীদের জন্য আলাদা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়নাই তখন। এর পেছনে অনেক কারন ছিলো। তারা বহুকাল বহু দেশে নির্যাতিত হয়েছে। বহু দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। আস্তে আস্তে তারা দলবদ্ধ হওয়া শুরু করেছে। সর্বশেষ হিটলার কতৃক গনহত্যা থেকে তারা জার্মান ছেড়ে পালিয়েছে।
ইহুদীরা তাদের পূর্বঘটনা বিবেচনা করে তারা ইহুদীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা করলো। এ ব্যাপারে তাদের সবচেয়ে বড় সাহায্য করেছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্য তাদের যুদ্ধস্বার্থে ইহুদীদের এই সাহায্য করেছিলো। যুক্তরাজ্য চাইতো ইহুদীদের আলাদা একটা রাষ্ট্র হোক। আর তাদের অবস্থান পক্ত করতে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইহুদীরা নিজেদের স্বাধীন ভাবে বাচিয়ে রাখার জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে হয়েছে। ফিলিস্তিনির সাথে বেঈমানি করে হলেও ভাবতে হয়েছে। কেনোনা, আগে নিজেদের বাচা প্রয়োজন। তেমনি রোহিঙ্গাদেরও চাওয়া স্বাভাবিক যে তাদের জন্য আলাদা একটা রাষ্ট্র হোক। কেনোনা মানুষ স্বাধীনভাবে বাচতে চায়। নিজেদের মত করে বাচতে চায়। তা সে স্বাধীন রাষ্ট্র হোক আরাকানে অথবা বাংলাদেশের কোথাও।
শংকার বিষয় হলো বান্দরবন, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্রোগ্রামকে আগে থেকেই "জুমল্যান্ড" নামে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছে সেখানকার চাকমারা। রহিঙ্গাদের সেখানে রাখা হলে রহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নবাদীদের সাথে মিলে যেতে পারে। কেনোনা তাদেরও একটা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রয়োজন। এতে তাদের জনবল ও সৈন্য বৃদ্ধি পাবে। বহুকাল থেকেই ইন্ডিয়া বিদ্রহীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। এর দুটি কারন খুজে পাওয়া যায়। এক, বাংলাদেশকে নিজেদের ইচ্ছামত চালাতে যে বিষয়গুলো দিয়ে চাপ দেওয়া হয় এটা তার মধ্যে একটা। দুই, ১৯৪৭ সালে ঐ এলাকায় যেখানে পাকিস্তানের পতাকা ওরার কথা ছিলো সেখানে তারা উড়িয়েছিলো ভারতের পতাকা। এবং রটনা আছে, "জুমল্যান্ড" স্বাধীন করার পর একটা গনভোট এর আয়োজন করা হবে। গনভোটের বিষয় হবে "জুমল্যান্ডকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা" এবং "জুমল্যান্ডকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবেই রাখা"। এই দুই বিষয় নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভোট হবে। তাই এখানে ভারতের একটু পুরোনো লোভ আছেই। সাথে আছে বার্মা। বার্মার চাওয়া না চাওয়া মূলত নিয়ন্ত্রিত হয় চিন দ্বারা। তাই বলাই যায়, "জুমল্যান্ড" প্রতিষ্ঠার পেছনে সাহায্যের অন্য ইন্ডিয়া, বার্মা ও চিন বদ্ধপরিকর।
জুমল্যান্ড এর ব্যাপারটা ছাড়াও অনেক অনেক জটিল সমস্যায় পড়তে হবে। এমনিতেই লাখ লাখ শিক্ষিত জনগন বেকার হয়ে বসে আছে। শ্রমবাজারে চাকরি শংকট। এর উপর যদি আরও এতো মানুষ দেশে প্রবেশ করে তবে সম্ভবত বড়সড় একটা ধাক্কা খেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আঁকড়ে ধরতে চলেছে অভাব। শিক্ষিতরা হতে চলেছে সন্ত্রাসী।
এছাড়। রহিঙ্গাদের মধ্যে ১৩০০ শিশু এসেছে যাদের কোনো বাবা মা আসেনি। মোট রহিঙ্গার পাচঁ ভাগের চারভাগই নারী, বয়স্ক ও শিশু। এ মানুষগুলোর দায়িত্ব কে নিবে? মানুষ ও এনজিওগুলো ত্রান পাঠাবে সর্বচ্চ আর তিনমাস। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের খোজ খবর নিবে তাদের রাজনীতির ফয়দা পর্জন্তই। এরপর তাদের কি হবে? তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা এগুলোর কি হবে?
এরপর তারা বেচে থাকার তাগিদে অবৈধ পথ বেছে নিবে। ক্যাডাররা তাদেরকে ব্যাবহার শুরু করবে। দেশে অন্যায় অপরাধ বেড়ে যাবে। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে। এবং তা নিয়ন্ত্রণ করাটাও প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
তাই আমাদের খুব সাবধানেই পা ফেলতে হবে। আমাদের জন্য অসংখ্য ফাত পাতা আছে। সেগুলো দেখেশুনে এগুতে হবে। তাছাড়া আমাদের সত্যিই সত্যিকারের কোনো বন্ধু নেই। সব স্বার্থের বন্ধু। সুতরাং, যেভাবেই হোক রহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। অবশ্যই সেটা যুদ্ধ বাদে। কারন মায়ানমার চাচ্ছেই একটা যুদ্ধ বাধুক। তারা একটা যুদ্ধে জড়াতে চাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সে ফাদে পা দেওয়া যাবেনা। জাতিসংঘর বন্দুক মায়ানমারের ঘারে চেপে রহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়াতে হবে। এ ছাড়া কোনো রাস্তা নেই। আশাকরি এ ব্যাপারে সরকার বুদ্ধির সাথে পা ফেলবে। প্রার্থনা করি এ দেশে কোনো অশুভ ছায়া না পরুক।
বিঃ দ্রঃ আসুন আপাতত আমরা রহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াই। তাদের রহিঙ্গা না ভেবে মানুষ ভাবি। যতটুকু সাধ্য আপনার আছে, ততটুকু দিয়েই সাহায্য করি। এটা ভুললেও চলবেনা যে, আমাদের দেশের অনেকেই একসময় ভারতে গিয়ে শরণার্থী হয়েছিলো। ভূখণ্ড, আইন কানুন, নিয়ম এসবের জন্য মানুষ সৃষ্টি হয়নি। মানুষের জন্য এসব সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং রহিঙ্গা ভাবার আগে মানুষ ভেবে তাদের পাশে থাকি। এটাই ভাল হবে। গড়ে উঠুক #মানবিক #বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৭