-জুতোটা একেবারেই ছিড়ে গেছে , এই জুতোজোড়া নিয়ে কমপক্ষে ৭-৮ বার মুচির কাছে যেতে হয়েছে। আমার মত মানুষরা যদি তার কাছে না যায় তা বেচারা কাস্টমার পাবে কোথায় ? সংসার চালাবে কি করে ??
সেদিন জুতোর দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম , ভাবলাম একজোড়া জুতো দেখে আসি , পছন্দ হলে কিনে নেব। এসব ভেবে দোকানে ঢুকেই পড়লাম।
প্রথমেই চোখ পড়ল থাকের মধ্যে রাখা জুতোটার উপর।
- বাহ , কি চমৎকার। এই জুতোটাই কিনব , জুতোটা পায়ে দিয়ে দেখলাম ঠিকই আছে। জুতোটা বোধয় আমার পায়ের জন্যই তৈরি করা হইছে।
- জুতোটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম , কোনো সমস্যা আছে কিনা , তখন্ই চোখ পড়ল জুতোয় প্রাইস ট্যাগ করা অংশটার দিকে।
জুতোটার দাম ৫৯৫ টাকা। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ২৫০ টাকা আছে। জুতোটা আমার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
-সেলসম্যানকে বললাম , "সরি ভাইয়া' জুতোটা পছন্দ হয় নি। আসলে পুরো দোকানের শত শত জুতোর মধ্যেই এই জুতোটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছিল।
-দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে জুতোটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান , আমার এতো দামি জুতো পড়ার কোনো মানেই হয় না। এই টাকাটা পকেটে থাকলে অনেক কাজে লাগবে।
মধ্যবিত্তরা সবকিছু কিনতে পারে না , শুধু কেনার ' আশা 'করতে পারে। পছন্দের কিছু পেলে খুশি হয় , না পেলে দুঃখ পায়। কিন্তু মনকে সন্ত্বনা দিতে পারে। আমরা মধ্যবিত্তরা বাবার কাছে হাত একটু কম্ই পাতি , কিছু খুঁজতে লজ্জা লাগে। কিভাবে খুঁজব !! যে বাবা এতো কষ্ট করে সংসার চালায় তার উপর বাড়তি চাপ দেয়ার কোনো মানে হয় না। শখ দমিয়ে রাখার মানসিকতা আমাদের আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে জুতোর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম , আপনমনে হাঁটতে থাকলাম। খোলা আকাশের নিচে হাঁটতে ভালই লাগছিল। রিক্সায় উঠলে ১৫ টাকা দিতে হত। এই ১৫ টাকা আমার জন্য অনেক কিছু।
হঠাৎ চোখ পড়ল একটা দোকানের সামনে একটা লোক হামাগুড়ি দিচ্ছে। কাছে গেলাম , দেখলাম লোকটার দুটো পা নেই , আর হাত থেকেও নেই। যার যত খুশি হচ্ছে তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করছে। লোকটাকে দেখে আমার জুতো কিনার শখ মিটে গেছে। কি লাভ হবে নতুন জুতা পড়ে !! আমার তো পা আছে , কিন্তু ওর তো হাঁটার্ও ক্ষমতা নেই। আর জুতো কিনলাম না , পুরনো জুতোটা সেলাই করিয়ে নিয়ে আসলাম।
- আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আমাদের সুস্থ রেখেছেন , শখের জিনিস নাই বা কিনলাম , তুব্ও এই সুন্দর পৃথিবীতে এখনো সুন্দর ভাবে চলতে পারি , হাঁটতে পারি।
- আল্লাহ আমাদের যেমন রেখেছেন , অনেক সুখেই রেখেছেন ; পা আল্লাহর দেয়া একটি নেয়ামত, এমন হাজারো নেয়ামত আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। সারাজীবন ইবাদত্ই করলেও একটা নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় সম্ভব না।
-আল্লাহ আমাদের যেমন রেখেছেন , আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:৪৭