somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিটি সন্তানের হৃদয় জুড়ে থাকুক মা-বাবার প্রতি অম্লান ও অক্ষয় ভালবাসা।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-বাবার আঙ্গুল ধরে ছোটবেলা অনেক হেঁটেছি , সেই সব কথা এখন খুব একটা মনে পড়ে না।এখন দু পায়ে ভর করে নিজেই হাঁটতে পারি। বাব.... বাব.. বাব্বা .. করে বাবা বলে ডাকতে অনেক সময় লেগেছিল। তারপর আস্তে আস্তে বড় হতে থাকি। একসময় বাবাকে কাছে না পেলে বাবা বলে চিৎকার দিতাম। দৌড়ে এসে বাবা কোলে নিতেন আর আদর করতেন। আমি বাবার খুব আদরের ছিলাম। বাবা যখন যখন বাড়িতে থাকতেন সবসময় আমি পাশে থাকতাম। খাওয়ার সময় , গোসলের সময় , ঘুমানোর সময় ; বলতে গেলে সবসময় বাবা আমাকে কাছে রাখতেন। সবাই বলে ছোট বেলা আমি নাকি অনেক দুষ্ট ছিলাম। বাবা যখন গোসলে নিয়ে যেতেন আমি স্যান্ডেল নিতাম না কারন স্যান্ডেল নিলে পুকুর ঘাট থেকে হেঁটে আসতে হবে , বাবার কোলে করে আসতে পারব না। প্রতিদিন এমনটা করতাম আর বাবা আমাকে গোসল করিয়ে কোলে করে নিয়ে ঘরে আসতেন।

-সময় যায় আর আমিও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি। আমাদের পশ্চিমের পুকুরটাতে কচুরিপানা ছিল। আমরা কয়েকজন মিলে কচুরিপানার শিকড় দিয়ে গোঁফ লাগাতাম , আর সবাইকে বলতাম ,' দেখো তো আমাকে বাবার মত দেখাচ্ছে কিনা ?" এসব দেখে সবাই শুধু হাসত আর আমিও মজা পেতাম। মানব শিশু অনুকরণ প্রিয় , সে হিসাবে বাবাকেই আমি অনুকরণ করতাম। বাবা কিভাবে হাঁটেন , কিভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন , কিভাবে ঘুমান এসব।

-বাবা যখন দুপুরে ঘুমাতেন তখন আমাকেও ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। কতসময় ঘুমাবো , কত সময় ঘুমালে বাবা আমাকে কি দিবেন এসব নিয়ে বাবার সাথে চুক্তি করতাম। একটু সময় ঘুমের অভিনয় করে দেখতাম বাবা ঘুমিয়ে গেছেন কিনা। বাবা যখন ঘুমিয়ে যেতেন তখন তখন আমি চুপিচুপি হেঁটে খেলার জন্য চলে যেতাম। কোনোদিন বাবা আমাকে ধরে ফেলতেন , সেদিন আর না ঘুমিয়ে রেহাই নেই। আর যখন সত্যি ঘুমিয়ে যেতাম তখন ওঠে দেখতাম রাত হয়ে গেছে। সবাই বলত , ' এ কিরে তুই পরশু দিন বিকেলে ঘুমালি আর আজ সন্ধ্যা ঘুম ভাংল।' আমি তাদের কথা বিশ্বাস করতাম আর বাবা যখন বাড়ি ফিরতেন বলতাম বাবা সবাই বলছে দুদিন ধরে আমি ঘুমাচ্ছি তুমি জাগাও নি কেন। বাবা হাসতেন আর বলতেন আমার সাথে দুষ্টু কর্লে এভাবে দুদিন ঘুমাতে হয়।আর বাবা যখন সন্ধ্যায় ফিরতেন আমার জন্য নানা রকম খাবার নিয়ে আসতেন। কোনোদিন বাবার ফিরতে একটু দেরি হলে আমি অপেক্ষা করতাম বাবা কখন আমার জন্য মজার মজার খাবার নিয়ে আসবেন। বাবা ফিরতে দেরি হলে কোনোদিন মা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। আর বাবা ফিরে এসে দেখতেন আমি ঘুমিয়ে গেছি। আমাকে ঘুম থেকে তুলে মজার খাবার হাতে তুলে দিতেন আর আমি অনেক খুশি হতাম।

-বাবা যখন নতুন জুতো কিনে আনতেন তখন যে কি আনন্দ লাগত তা বলে শেষ করা যাবে না। নতুন জুতো পড়ে বিছানার উপর লাফালাফি করা সেটা ছিল আমার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। আর বাবার আদরের ছিলাম বলে বাবা আমাকে সঙ্গে নিয়ে আমার পছন্দের কাপড় কিনতেন। বাবার আঙ্গুল ধরে হাঁটতে খুব ভাল লাগতো। এক দোকান থেকে অন্য দোকান ঘুরে ঘুরে কাপড় দেখতাম কিন্তু পছন্দ হত না। কেনাকাটা শেষ হলে নিয়ে যেতেন রেস্টুরেন্টে , আমি কি খাবো বলতাম আর বাবা অর্ডার দিতেন। আমার খাওয়া দেখে বাবা শুধু হাসতেন। আসার সময় বাবা বল কিনে দিতেন।
বাসায় ফিরার পর সবাই এক দিকে আর আমি বল নিয়ে অন্যদিকে। বিছানায় বসে দেয়ালে বল ছুড়ে মারতাম আর বল আমার কাছে আসত। বলে যদি একটু মাটি লাগত তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতাম যাতে বলটা পুরোপুরি নতুন থাকে।

-আমার যখন বয়স ৬ তখন বাবা আমাকে স্কুলে ভর্তি করেন। ক্লাসে যা পড়ানো হয় তা সব্‌ই বাবার কাছ থেকে আগে শিখে ফেলেছিলাম। সকাল হলে মক্তবে আর মক্তব থেকে আসার পর স্কুলে যেতে হত আমাকে। যেদিন থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু হল সেদিন থেকে আমার বন্দি জীবন শুরু হয়েছিল। পড়ালেখা আমার ভাল লাগত না তবে বরাবর্‌ই ক্লাসের মধ্যে ফার্‌স্ট হতাম আর বাবার কাছ থেকে পেয়ে যেতাম পুরস্কার। সময়্‌ও যায় আর আমিও বড় হতে থাকি আর আমার পড়ালেখার ব্যাপারে বাবার কড়া নজরদারি বাড়তে থাকে। রাতে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে পারতাম না ,খুব ভয় ছিল আমার। যখন পড়তাম তখন পাশে মা , বাবা বা অন্য কাউকে বসিয়ে রাখতাম। পড়ালেখার ব্যাপারে বাবার খুব খেয়াল ছিল তাকে কখনো ফাঁকি দিতে পারতাম না। বাবা আমাকে ডিকশনারি দিয়ে বলেছিলেন ৪ টা ইংরেজি শব্দের বাংলা শিখতে পারলে ১ টাকা করে দিবেন। বাবা যখন বাড়িতে ফিরতেন তখন আমার পড়া ধরাতেন আর চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিতেন।

-চাঁদনী রাতে বাবা আমাকে কোলে নিয়ে চাঁদের বুড়ির গল্প শোনাতেন আর আমি গল্প শোনার জন্য খুব পাগল ছিলাম। বাবা আমাকে প্রচুর গল্প শুনিয়েছেন। কখন রাক্ষস আর ডাইনীর গল্প শুনাতেন আবার কখনো বৃদ্ধ বাবা আর তার সন্তানদের গল্প শুনাতেন।

-সন্তান জন্মের পর মা বাবা সেই সন্তানকে অনেক কষ্টে লালন পালন করেন। ভাল কিছু না নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। সন্তানদের সুখের জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করেন। বাবা মার স্বপ্ন থাকে সন্তান একদিন অনেক বড় হবে , মানুষের মত মানুষ হবে। বাবা মা সন্তানকে শুধু দিয়ে যান বিনিময়ে তারা কিছুই চান না। শত দুঃখে মাঝেও সন্তানকে ভুলে যান না। যে সন্তান একসময় বাবা আঙ্গুল না ধরে হাঁটতে পারত না , নিজের হাতে খেতে পারত না সেই সন্তান একসময় বড় হয়। আর সেই মা বাবাকে ভুলে যায় , যে মা বাবার কারনে সে এই পৃথিবীতে এসেছে। এক সময় বাবা মায়ের সেই আদরের ছেলে বাবা মাকে ত্যাগ করে নিজের সুখের নীড় বানায়। বিদেশি কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমায় আর মা-বাবা যে অসহায়ের মত জীবন কাটায় সে খবর রাখে না। বউ বাচ্চাদের নিয়ে সুখের জীবন কাটায়। একসময় তার সন্তান্‌ও তাকে ছেড়ে চলে যায় ,তখন সে বুঝতে পারে সন্তান চলে গেলে মা-বাবার যে কি কষ্ট !! তখন তার অনুশোচনা করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

- আমরা একসময় খুব অসহায় ছিলাম , নিজের হাতে খেতে পারতাম না , মা খাইয়ে দিতেন ; হাঁটতে পারতাম না , বাবা কোলে নিয়ে ঘুরতেন। মা-বাবা যখন বৃদ্ধ হয়ে যান তখন তারা অসহায় হয়ে পড়েন। আর সন্তান যদি তাদের ত্যাগ করে তাদের বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টের হয়ে যায়। মা-বাবাকে হারালে কখনো আর ফিরে পাওয়া যায় না। বাবা বলে চিৎকার করলে ওপাশ থেকে আর জবাব আসবে না। সন্তানের জন্য মা-বাবা বোঝা নয় বরং খোদার অশেষ নেয়ামত।

-দাঁত থাকতে যদি আমরা দাঁতের মর্যাদা ' না বুঝি তাহলে দাঁত পরে যাবার পর কেঁদে লাভ নেই।সবার প্রতি একটা অনুরোধ ,যে মা-বাবার জন্য আমরা পৃথিবীর আলো দেখেছি সেই মা-বাবাকে যেন কেউ কষ্ট না দেয়। একটাই প্রত্যাশা করি 'পৃথিবীর সব সন্তানরাই সুখে থাকুক মা-বাবাকে নিয়ে।শেষ বয়েসে কোনো মা-বাবাকে যেন অসহায়ের মত জীবনযাপন করতে না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×