-মেয়েদের জীবনটা অক্টোপাসের মত আটপায়ে আটকানো। পদে পদে তাদেরকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবার থেকেই শুরু হয় তাদের প্রতি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি। ছেলেদের খেলার জন্য বাপ-চাচারা কিনে দেন খেলনার পিস্তল , বল আর মেয়েদের কিনে দেন একটা প্লাস্টিকের পুতুল। একসময় ছেলে , মেয়েরা বড় হয়। ছেলেরা ইচ্ছে করলে যেখানে খুশি যেতে পারে কিন্তু মেয়েরা তা পারে না। ছেলেরা রাত ১০ টার পরে বাড়ি ফিরলে কারো কাছে কিছু বলতে হয় না আর মেয়েরা স্কুল ছুটির পর একটু দেরি করে আসলে বা বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গেলে আসার পর তাকে জবাবদিহি করার জন্য সবাই ছুটে আসে। এদিক থেকে ছেলেদের তুলনায় তাদের নিয়েই বেশি চিন্তিত থাকে পরিবারের মানুষগুলা।
- স্কুল বা কলেজ জীবন শেষ করার পর আরো অনেক সমস্যা দেখা দেয়। ছেলেরা দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায় আর বেশিরভাগ মেয়েদেরকে যেতে হয় মফঃসলের কোনো একটা কলেজে। ঘর থেকে বের হলেই মেয়েদেরকে নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তাটা অনেকখানি বেড়ে যায়। পথে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা , কেউ বিরক্ত করছে কিনা। এসব চিন্তা করার কারন কিন্তু একটাই কখনো ছেলেদেরকে বলা হয় না ,' কোনো মেয়েকে বিরক্ত করবি না , তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবি না , তারা তোর বোন।'
সব বাবা মা যদি তাদের ছেলে সন্তানকে এভাবে বুঝাতো তাহলে মেয়েদের নিয়ে পরিবারের মানুষগুলা এত চিন্তা করতে হত না।
-উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য কোনো মেয়েকে বিদেশ পাঠানো হয় এটা আমি খুব কম্ই দেখেছি। ছেলে বিদেশ পড়বে মা-বাবার কি আনন্দ !! বিদেশ থেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে দেশে আসবে !! আর মেয়েটার জন্য তখন দেখা হয় বিয়ের পাত্র। এদিক থেকে ছেলেদের আগেই মেয়রা সাংসারিক জীবনে ডুকে পড়ে।
-বিয়ের পর অচেনা মানুষগুলাই হয় মেয়েদের সবচেয়ে আপন মানুষ। আর বাবা মায়ের বাড়িটা হয়ে যায় মেয়েদের বেড়ানোর ঠিকানা , যে ঘর নিজের ছিল , যে ঘরে জন্ম , বেড়ে ওঠা , শৈশব, কৈশোরের স্মৃতি জড়ানো সেই ঘরটা হয়ে যায় পর্যটন কেন্দ্রের মত। মেয়েদের জন্ম হয় বাবার বাড়িতে আর কবর হয় স্বামীর বাড়িতে।
বিয়ের পর মেয়েদের ইচ্ছেটা অনেক কমে যায় , তার সব কিছু নির্ভর করে শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলার উপর। অন্যের ইচ্ছাতেই তাকে চলতে হয়।সেখানে ইচ্ছেটা কম , কর্তব্যটাই বেশি।
যদি মেয়েটার স্বামী ভালো হয় তাহলে তার নারী জীবন ধন্য , আর খারাপ হলে জীবনটাই বৃথা।
-নারীদের শুধু নারী আর পুরুষদের শুধুই পুরুষ মনে করলে সমাজ থেকে এই অবহেলা , বা দৃষ্টিভঙ্গি কখনো বদলাবে না।যতক্ষণ পর্যন্ত নারীকে নারী না মনে করে একজন মানুষ হিসাবে বিবেচনা করা না হবে ততক্ষন অবধি নারীরা অবহেলিত রয়ে যাবে।
নারীর্দের ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে ,
'মানুষের অর্ধেক নারী , আর অর্ধেক নর।'
নারীরা না থাকলে আমরা জীবনের প্রারম্ভে অসহায় , মধভাগে নিরানন্দ , আর শেষভাগে সন্তানহীন .........
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬