"""" দল মত নির্বিশেষে যে, যেখান থেকে যেভাবে পারেন সাহায্যে এগিয়ে অসুন"""
### ভবনধসে শ্রমিক মৃত্যুর ব্যপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা আগে থেকেই সচেতন ছিলাম। আমরা জানতাম বলে সব লোক সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু মূল্যবান জিনিস সরিয়ে নিতে সকালে লোকজন সেখানে গিয়েছিল। তারাই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।’
--- বাংলাদেশেরে মানুষ এ কথা কতটুকু বিশ্বাস করছে জানি না। তবে আমার কয়েকেটি প্রশ্ন:
১. গতকালকে লোকদেরকে যখন সরিয়ে ফেলা হয় তখন কি তাদেরকে যার যার অবস্থান থেকে জোর করে ধরে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল যে তারা তাদের মূল্যবান (টিফিন ক্যারিয়ার) জিনিসগুলো সাথে নেয়ার সময় পাননি?
২. একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের কর্মস্থলে এমন কী মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে যার জন্য সে সরকারের নিষেধাজ্ঞা(!) স্বত্বেও জীবনের ঝুকি নিয়ে ওই ভবনে যায়?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়ত নাও জানতে পারেন। কিন্তু ঢাকায় যারা সাধারণ জীবন-যাপন করেন তারা জানেন যে গার্মেটস শ্রমিকদের হাতে একটি করে টিফিন ক্যারিয়ার থাকে। (এছাড়া মোবাইল বা আনুসাঙ্গিক জিনিসও সাথে থাকে কিন্তু ওগুলো কেউ কোথা ওভাবে ফেলে আসে না।)
৩. ধরে নিলাম অনেকে জিনিস পত্র ফেলে এসেছেন। কিন্তু তার জন্য অত সকালে (৯টার দিকে ভবন ধ্বংস হয়েছে সুতরাং তার আগেই শ্রমিকরা ওখানে গিয়েছে।) শত শত শ্রমিক একত্রে তা আনতে গেল?
৪. না হয় ধরে নিলাম তারা গেলই। তাহলে যারা লোকগুলো আগের দিন তড়িঘড়ি(!) করে সরিয়ে নিলেন (মানে প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী সরকার পক্ষ) তারা কিভাবে তাদেরকে ঢুকতে অনুমতি দিল?
অথবা মালিক পক্ষই বা তাদেরকে কিভাবে অনুমতি দিল?
যদি অন্যভাবে দেখি:
ভবনটিতে ফাটল ধরেছিল। যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। তারপরও শ্রমিকদেরকে জোর করে কাজ করানো হচ্ছিল। হর্তা-কর্তাদের কাছে তাদের জীবনের কোন মূল্য ছিলনা। ১০০০, দুই হাজার মানুষ তাদের কাছে কোন ব্যপারই না। বরং খালি ভবন ধসে পড়ার চেয়ে ভিতরে কিছু মানুষ থাকলে মানুষের মাঝে হৈ চৈ পরে যাবে। মিডিয়ার চোখ এ দিকে থাকবে। ইস্যু পরিবর্তন করার চমতকার কৌশল। মিডিয়া, জনগন, বিরোধী দল, টক শো ওয়ালারা এ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। ফাঁকে অন্য কাজগুলো (!) সেরে নেয়া যাবে।
### বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, কিছু হরতাল সমর্থক সাভারের ধসে পড়া ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। মন্ত্রী বলেন, ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সাম্ভাব্য কারণ হতে পারে।
---- আমাদের দেশের মানুষ কি এইত বোকা যে উনি যা বললেন তা সবাই গিলে খাবে।
তাছাড়াও তিনি বললেন আমাদের দেশটি পুলিশি রাস্ট্র না যে ওই ভবনটি পুলিশ দিয়ে পাহাড়া দেওয়াবেন যেন কেউ না ঢুকতে পারে। (তাইতো বলি পুলিশ আঙ্গুল চোষার সময় পায় কখন?) কিন্তু তিনি কি ভিডিওগুলো দেখেননি যেখানে শ্রমিকরা বলছে যে তাদেরকে পিটিয়ে কাজ করাতে নেয়া হয়েছে।
একটু পিছনে তাকালে আমরা দেখি যে বিরোধীদল কোন মহা সমাবেশ করতে চাইলে সরকার হরতাল দেয়। পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আবার বিরোধী দল হরতাল দিলে-কল কারখানা চলবে, গাড়ির চাকা ঘুরবে টাইপের মিছিল বা কর্মকান্ড করা বা করানো। যেমন হরতালের দিন সরকারী কর্মচারীদের অফিসে যাওয়া ফরজ।
সুতরাং আমারতো মনে হয় হরতালের বিরুদ্ধে যারা ছিলেন তারা মূলত ঐ সকল শ্রমিকদেরকে এদিন কাজে যেতে জোর করেছেন যেন দেখানো যায় যে শ্রমিকরা হরতাল বিরোধী। সুতরাং বলা যায় যে রাজনৈতিক ইস্যুকে বাস্তবায়িত করার জন্য এ সকল শ্রমিকদের জীবন নেয়া হল।
অবশ্য এ জন্য হরতাল আহ্বানকারীদের ও দোষ দেয়া যায়। তবে সেটা মাননীয় মন্ত্রীমহোদয়ের মত আবোল তাবল বলে নয়। বরং বলা যেতে পারে যে হরতালকারীরা যদি আজকে হরতাল না ডাকত তাহলে হরতাল বিরোধীরা নিষিদ্ধ ঘোষিথ ওই ফাটল ধরা ভবনে ওই সব শ্রমিকদের পিটিয়ে কাজে যেতে বাধ্য করত না। সুতরাং এদিক থেকে হরতালকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে।
আমি চাইনা দেশে আর কোন মানুষ এ ধরনের অঘটনে মারা যাক।
রাজনৈতিক মদদে মালিকের খামখেয়ালীপনা আর না চলুক। শুধু নিজের দলের লোকই না প্রতিটি মানুষের জীবনই যে মূল্যবান তা সকলের বোধগম্য হোক। ঘটনার পর একে অপরকে দোষী বলা বা অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত মনে করা বন্ধ হোক। সব ধরনের দুর্ঘটনা, অকালমৃত্যু বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হোক। স্বজন হারাদের আহাজারি আর কত দেখব?