somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় অথবা অপ্রিয় মমতাদি,
(সবাই আপনাকে দিদি বলে, তাই আমিও বললাম আর কি)

বহু বহু দিন আগে একবার টিভির কোনো চ্যানেলে কোনো এক জনসভায় আপনাকে বক্তৃতা দিতে শুনেছিলাম৷ অবশ্য আপনি যেটা করছিলেন সেটাকে বক্তৃতা বলতে আমার আপত্তি আছে, আপনি আসলে গলার রগ ছেড়ে দিয়ে চেঁচাচ্ছিলেন৷ আমাদের এই অঞ্চলে চেঁচামেচিকেই বক্তৃতা বলা হয়, সেই হিসেবে আপনার সেই চেঁচানিকেও আমরা বক্তৃতা বলতে পারি৷ এই ধরণের চেঁচামেচি আমার বিশেষ অপছন্দ বলে সেদিন আপনাকেও আমি পছন্দ করে উঠতে পারিনি৷ বরঞ্চ আপনাকে যে আপনার দেশেরই কিছু পত্রিকা ঝগড়াটে বলে উল্লেখ করেছে, সে বিষয়ে আমি একমত৷

যাকগে, আগেই বলেছি, সেই বক্তৃতা শোনার পর বহুদিন চলে গেছে৷ জানতে পারলাম আপনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন৷ আমার ধারণা, লোকে আপনাকে পছন্দ করে যতোটা ভোট দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের উপর বিরক্তির কারণে৷ কিন্তু যেটাই হোক, মুখ্যমন্ত্রী হবার পর আপনার কাজ নিয়ে চারদিকে বেশ প্রশংসা বয়ে যেতে লাগলো৷ জানতে পারলাম আপনি কোলকাতাকে লন্ডন বানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন৷ পত্রপত্রিকায় আপনার কীর্তিকাহিনী পড়ে রীতিমতো চমৎকৃত হতে লাগলাম৷ আপনি নাকি বাদশাহ হারুণ-অর-রশিদের মতো প্রজাদের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য যখন তখন রাস্তায় বের হয়ে পড়েন৷ যেখানে অনিয়ম দেখেন তখনি সেটা শোধরানোর চেষ্টা করেন৷ আপনি নাকি সরকারী প্রটোকল নেন না, এমনকি সরকারি গাড়িও ব্যবহার করেন না৷ হাসপাতালগুলোতে হঠাৎ হঠাৎ উদয় হয়ে আপনি যেভাবে টাইট দিতে শুরু করলেন তাতে তো মনে হলো যে একদম সিনেমা হচ্ছে৷ সত্যি বলতে কি, আমি বিশ্বাস করতে শুরু করলাম যে বক্তৃতা শুনে মানুষ চেনা যায় না৷ মমতাদি বক্তৃতায় যতই ঝগড়ুটে হোক সে আসলে ভালোই করতে চায়৷

আমি এখনও বিশ্বাস করি আপনি আসলে মানুষের ভালো করতে চান, আপনার এলাকা, আপনার দেশকে উন্নত করতে চান৷ কিন্তু গোলমাল লেগে গেলো ঐ তিস্তার পানি নিয়ে৷ আমি বিশেষ তিস্তা বিশেষজ্ঞ না, পত্রিকা পড়ে যেটুকু বুঝেছি তা হলো তিস্তার যতটুকু পানি বাংলাদেশের পাওয়া উচিৎ আপনার দেশ তার চাইতে কমই দিতে চায়, কিন্তু আপনি চান আরও কম দিতে৷

মমতাদি, এতটা বয়স হলো আপনার, এতদিন নেতৃত্ব করলেন, এতটা পথ চললেন, এখনও এটুকু বুঝলেন না যে প্রতিবেশিকে অসুখী করে নিজে সুখী হওয়া যায় না৷ শুধু প্রতিবেশি কেনো, কাউকে অসুখি করেই সুখি হওয়া যায় না৷ বলেন দেখি, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলা সুখের জন্য কি না করেছে৷ অন্য কত দেশকে পায়ের তলায় দলিত করেছে, কত দেশের সম্পদ লুঠ করেছে৷ কিন্তু সেই দেশগুলা সত্যিই কি সুখে আছে? সন্ত্রাস বা বোমাতঙ্কে তারা কি ভোগে না? পৃথিবীর পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার আতঙ্কে তারা কি ভোগে না? সেইসব দেশের নাগরিকেরা যখন বিমানে বা বাসে ওঠে তখন কি চিন্তায় পড়ে না যে তারা নিরাপদে যাত্রা শেষ করতে পারবে কি না? অন্যদের দলিত করে যে সব দেশ উন্নত হয়েছে, তারা কি খুব সুখে আছে মমতাদি?

ভাবেন দেখি, এপার বাংলার মানুষ যদি মোটামুটি ভালো থাকে, সুখে থাকে, তারা কি আপনাকে জ্বালাতে যাবে? যাবে না৷ বরঞ্চ মাঝে মাঝে আপনার বিশাল দেশটা বেড়াতে গিয়ে তারা কিছু আপনাকে দিয়েই আসবে৷ আর যদি আপনার পদক্ষেপের ফলে এই মানুষগুলা অস্তিত্বের সংকটে পরে যায়, তাহলে তারা যে বোমা টোমা নিয়ে আপনার উপর ঝাপিয়ে পড়বে না তার গ্যারান্টি কে দিবে? আপনার দেশ ওরা দখল করে নিতে পারবে না জানি, কিন্তু আপনার কয়েক রাতের ঘুম কিন্তু নষ্ট হবে৷

ভগবানের বানানো নদী নিয়ে আপনারা যে খেলা দেখান, কিম আশ্চর্যম!

আপনি কোলকাতাকে লন্ডন বানান তাতে আমরা তো আপত্তি করতে যাই নি৷ আমরা বরং গাটের পয়সা খরচ করে আপনার লন্ডনিয়া কোলকাতায় বেড়াতে যাবো৷ কিন্তু কোলকাতাকে লন্ডন বানাতে গিয়ে আপনি বাংলাদেশকে দলিত করবেন, এ আপনার কেমন আক্কেল?

নাকি আপনাকে প্রথমে যেমন ভেবেছিলাম, আপনি আসলে বে-আক্কেল?

( ছবিসূত্রঃ কালের কণ্ঠের অনলাইন ভার্সন )
১৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×