somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেলার গল্পঃ হুমায়ূন শিকার

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বইমেলায় অন্যপ্রকাশের স্টলের পাঁচ হাতের মধ্যে আমি কখনো যাই না, সব সময় সেটা থেকে কমপক্ষে পাঁচ হাত দূরে থাকি৷ হুমায়ূন ভক্তরা স্টলটা এমনভাবে ঘিরে থাকে যে ভিড় ঠেলে এর বেশি কাছে যাওয়া সম্ভব হয় না৷ আর হুমায়ূন আহমেদ যদি স্টলে থাকেন তাহলে তো হাত পঞ্চাশের মধ্যেই যাওয়া যায় না৷ দূর থেকে স্টলটা দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়৷ একবার এক বন্ধুপত্নী বইমেলায় হুমায়ূনের একটা বই আমার হাতে দিয়ে বললো, “হুমায়ূন আহমেদের একটা অটোগ্রাফ এনে দিতে পারবে?”
আমি বললাম, “পাগলে কামড়েছে নাকি?”
“কেনো পাগলে না কামড়ালে হুমায়ূন আহমেদের অটোগ্রাফ আনা যাওয়া যায় না?”
“যায়৷ সে ক্ষেত্রে নিজেকেই পাগল হতে হয়৷”

বন্ধুপত্নী হাসতে লাগলো৷ বাস্তবিক পাগলে না কামড়ালে বা নিজে পাগল না হলে যুদ্ধ করে হুমায়ূনের অটোগ্রাফ আনতে যায় নাকি কেউ? যায় নিশ্চয়৷ অটোগ্রাফ শিকারীরা অটোগ্রাফের জন্য অনেক কিছু করতে পারে৷

আজকেও অন্যপ্রকাশের স্টলের ধারে কাছে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিলো না৷ বাস্তবিক স্টলটার কথা আমার মনেই ছিলো না৷ বইমেলার মাইকে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হুমায়ূনের বইয়ের নাম শুনে মনে পড়লো- আহহা, আমার তো হুমায়ূনের একটা বই কেনার কথা!

মনে পড়তেই মেজাজটা একটু বিলা হয়ে গেলো৷ আজ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই কিনিনি৷ পণ করেছিলাম কোনোদিন কিনবো না৷ পণটা কি এবার ভাঙতে হবে?

হুমায়ূন ভক্ত পাঠক, এ পর্যন্ত পড়েই চোখ কুচকে ভাববেন না যে আরেক আঁতেল এসেছে, এখনই বলবে যে হুমায়ূনের বই হচ্ছে রাবিশ মাল, কেনার যোগ্য না৷

না, আমি সেটা বলবো না৷ হুমায়ূনের বই কেমন সেটা নিয়ে আমি কিছু বলতে যাচ্ছি না৷ আমি হুমায়ূনের বই কিনিনা তার কারণ ভিন্ন৷

প্রথম ঢাকায় আসার পর কিছুদিন হা বই হা বই করে ঘুরে বেড়ালাম৷ বাইরে থাকতে পাবলিক লাইব্রেরী থেকে বই এনে পড়া যেতো৷ ঢাকায় সবেধন নীলমনি মার্কা একটা পাবলিক লাইব্রেরী আছে বটে, কিন্তু সেটা আমার বাসা থেকে অনেক দূরে আর সে বেটারা বাসায় বই নিতে দেয় না৷ সে লাইব্রেরীর সময়ও বিচিত্র, যেতে আসতেই লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে যায়, দু দন্ড বসে পড়ার সময় পাওয়া যায় না৷ আর লাইব্রেরীর কাঠের চেয়ারে বসে কোমর ব্যাথা করে বই পড়ে কোন পাগলে? বই পড়তে হয় আরাম করে বিছানায় গড়াগড়ি দিতে দিতে৷ অন্য কোনো লাইব্রেরীও চিনি না যারা বাসায় বই আনতে দেয়৷ তো কি করি৷ শুরু করলাম আশেপাশের মানুষদের বাসায় ধরণা দেয়া৷ যার কাছে হাত পাতি সেই দেখি হুমায়ূনের দু-চারটা বই বের করে দেয়৷ এই করতে করতে এক সময় দেখলাম না কিনেই হুমায়ূনের বেশিরভাগ বই পড়ে ফেলেছি৷ তখন ভাবলাম যাক, এই জীবনে আর হুমায়ূনের বই কিনবো না৷

কিন্তু প্রতিজ্ঞাটা আজ ভাঙতে হলো৷ হুমায়ূন নিউ ইয়র্কে বসে কি লিখেছেন সেটা পড়ার খায়েশ হয়েছে এক জনের৷ আর সে খায়েশ সে আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছে৷ বইটা আমাকে কিনে তাকে গিফট করতে হবে৷ মানুষের খায়েশ দেখে মরে যাই!

মন মেজাজ খারাপ করে ভিড় ঠেলে অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে হাজির হলাম৷ স্টলের লোকগুলো এতই ব্যস্ত যে ওরা কোনোদিকে তাকাতেই পারছে না, সবাই মিলে চোখ বুঁজে রয়েছে৷ চুপিসারে নিউ ইয়র্কি বই একটা হাতে নিয়ে বললাম- “নিলাম৷”

ওরা চোখ না খুলেই বললো, “নেন গা৷ ঐ বাক্সে দেড়শো টাকা ফেলায় দিয়ে যাইয়েন৷”

হাহ, হায়রে গিফট!

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৩৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×