একদা এক যুবকের বিবাহ করিবার খায়েশ হইয়াছিলো৷ তা তাহার আর দোষ কি, যৌবনের ধর্মই এই৷ বিবাহ করিবার খায়েশের জন্য তাহাকে দোষারোপ করা যায় না৷ তবে একটু সমস্যা ছিলো যে যুবক কোনো কাজ কর্ম করিতো না৷ জীবন ধারণের জন্য সে তাহার পিতৃদেবের উপর নির্ভরশীল ছিলো এবং কাজ না করিয়া সে পিতৃদেবের ঘাড়ের উপর চাপিয়া বসিয়া খাইতো৷ বিবাহের খায়েশ জাগিবার পর সে দুরু দুরু বক্ষে পিতৃদেবের সম্মুখে দাঁড়াইয়া নিজের খায়েশের কথা ব্যক্ত করিলো৷ পিতৃদেবের অঢেল ছিলো এবং সন্তানাদি বলিতে ঐ এক পুত্রধনই ছিলো৷ তাই পুত্র কিছু না করিলেও তিনি পুত্রের বিবাহে আপত্তি করিলেন না৷
অতএব চলিলো বিবাহের জন্য পাত্রী দেখিবার পালা৷ কয়েকখানা পাত্রী দেখিবার পর একখানা পাত্রী বেশ পছন্দ হইয়া গেলো৷ পাত্রীপক্ষও পাত্রকে পছন্দ করিলো৷ অতঃপর যথা সময়ে ধুমধাম করিয়া উভয়ের বিবাহ হইয়া গেলো৷
বিবাহের পর কিছুদিন নব দম্পতির হাসি ঠাট্টা, রঙ্গ তামাশায় অতীব সুখে গেলো৷ কিন্তু পৃথিবীতে সুখ কিছু চিরস্থায়ী বিষয় নহে৷ তাহাদের এই সুখের সাগরে বাঁধ দিতে যুবকের পিতৃদেব একদিন পট করিয়া মরিয়া গেলেন৷
পিতৃদেব মরিবার পর যুবক অথৈ পাথারে পড়িয়া গেলো৷ শীঘ্রই আবিষ্কার হইলো যে যুবক নিতান্ত অলস এবং অপদার্থ গোত্রের৷ কোনো এক অদ্ভুত উপায়ে নিজের দারুণ পারদর্শিতা দিয়া অতি শীঘ্র সে পিতৃদেবের ব্যবসাকে লাটে তুলিয়া দিলো৷ লাটে উঠিবার পর উহারা কিছুদিন এর ওর কাছ থেকে চাহিয়া চিন্তিয়া ক্ষুধা নিবারণ করিলো৷ কিন্তু এইভাবে তো চলিতে পারে না৷ যুবতী তখন জীবন ধারণের নিমিত্তে একটা কাজে ঢুকিয়া পড়িলো৷
অলস এবং অকর্মন্য যুবকেরা স্ত্রীর উপার্জন ভালো চোক্ষে দেখিয়া থাকে না৷ উহাতে উহাদের আত্মসম্মান আঘাত প্রাপ্ত হয়৷ আমাদের আলোচ্য যুবকটিও সেই নিয়মের বাহিরে গেলো না৷ স্ত্রীর উপার্জন তার চক্ষুশূল হইয়া দাঁড়াইলো৷ সে প্রত্যহ নিয়ম করিয়া কর্ম হইতে ফিরিবার পর স্ত্রীকে প্রহার করিতে লাগিলো৷
স্ত্রীটির অন্য কোথাও যাইবার ছিলো না৷ নিরুপায় হইয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখ বুজিয়া যুবকের প্রহার সহ্য করিয়া যাইতো আর মনে মনে যুবকটিকে অভিশাপ দিতে থাকিতো৷ তবে চিরকাল কাহারো সমান যায় না৷ একদিন যুবকটি সামান্য জ্বরে ইহলোকের মায়া কাটাইয়া পটল তুলিয়া ফেলিলো৷
স্ত্রীটি আনন্দের হাসি হাসিয়া কহিলো, “মরিয়াছে ভালো হইয়াছে৷ বেটা ভাত দিবার মুরোদ নাই কিল দিবার গোঁসাই৷”
ইতিকথাঃ গরম পড়িয়া গিয়াছে প্রায়৷ এখনও তেমন তীব্র গরম না পড়িলেও বিদ্যুৎ ইতিমধ্যেই মেঘে ঢাকা চাঁদের মতো হইয়া উঠিয়াছে৷ এই তাহাকে দেখা যায় তো পরক্ষণেই নাই হইয়া যায়৷ মাস দুই আগের তীব্র শীতের মধ্যে বিদুৎ ব্যবস্থার উন্নতি হইয়াছে এই মর্মে সিদ্ধান্ত জানাইয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জনৈক চামচ শিক্ষক মহোদয় প্রথম আলো পত্রিকায় কলাম লিখিয়া প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাইয়াছিলেন তিনি এক্ষণে কি বলিবেন জানি না, কিন্তু জানিতে পারিলাম সরকার বাহাদুর অথবা বাহাদুর সরকার আরো এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়াইবার পাঁয়তারা কষিতেছেন৷ আমার দুর্বল পাপ মন, এইরকম কথা শুনিলেই খালি উপরের গল্পের কথা মনে পড়িয়া যায়৷