এ ঠিক শৈশবের গল্প নয়৷ তবু হয়তো শৈশবেরই গল্প!
শৈশবে দেখেছি, সকাল ৯ টার দিকে অফিসে যাবার জন্য আব্বা ধীরে সুস্থে বাসা থেকে বের হতেন৷ সরকারি চাকরি করতেন বলে আমরা বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ঘুরে বেড়াতাম৷ যেখানেই যেতাম, তাঁর অফিস থাকতো এমন দূরত্বে যে হেঁটে যেতে তিন-চার মিনিট লাগে৷ দুপুরে বাসায় ফিরে খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষণ গড়িয়ে নিয়ে আবার অফিসে যেতেন৷ ব্যতিক্রমী কিছু না ঘটলে বিকেল পাঁচটা সাড়ে পাঁচটায় অফিস শেষ করে ফিরে আসতেন৷ তখন সন্ধ্যা লাগতেই বই খাতা নিয়ে ছিলো আমাদের পড়তে বসা৷ তারপর আটটা বা সাড়ে আটটায় সবাই মিলে খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে ফেলা৷ খেতে এর চাইতে বেশি দেরী কদাচিৎ হতো৷
সেই শৈশব এখন নেই৷ এখন আমার নিজেরই অফিস যাবার পালা৷ অফিসে পৌঁছাই সকাল এগারোটায়৷ অফিস থেকে যখন বের হই তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে৷ রাস্তার জ্যাম ঠেলে বাসায় ফিরে আসতে আসতে আটটা সাড়ে আটটা৷ বাসায় ফিরে হাল্কা কোনো নাস্তা থাকলে নাস্তা খেয়ে এক কাপ চা খাই৷ রাতের খাবার খেতে খেতে দশটা পার হয়ে যায়৷ এর আগে রাতের খাবার খাওয়া হয় খুব কদাচিৎ হয়৷
অফিস থেকে বাসায় ফিরে আজকে হঠাৎ রাক্ষসের মতো খিদে পেয়ে গেলো৷ মনে হলো এক্ষুণি খাবার না পেলে পৃথিবীটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো৷ বাসায় আজকে নাস্তা ছিলো না৷ বললো- একবারে ভাত দিই?
- তাই দাও৷ না হলে বাড়ি ঘর সব খেয়ে ফেলবো৷
টেবিলে যখন খেতে বসলাম, ঘড়িতে তখন আটটা৷ বহুদিন- না, বহু বছর এমন সময়ে ভাত খেয়ে অভ্যাস নেই৷ খেতে বসে হঠাৎ অদ্ভুত এক ব্যাপার ঘটলো৷ মনে হলো, আমি আমার শৈশবে ফিরে গেছি৷ শৈশবের সে আশ্চর্য সময় ফিরে এসেছে৷ আমার চারপাশে শৈশবের ছায়া৷ আমি যেন বসে আছি কুমারখালীর বাসার ভিতরে৷ মফস্বলের সেই শান্ত, ঠাণ্ডা, নিরিবিলি অদ্ভুত পরিবেশ৷ বাতাসে আশ্চর্য মায়াবী গন্ধ৷ জানালা খুললেই দেখতে পাবো সেইসব প্রিয় প্রিয় গাছ৷ টিভি ছাড়লে এক্ষুণি শুরু হবে প্রিয় ম্যাকগাইভার!
আহ, প্রিয় শৈশব! আরেকবার যদি তোমার কাছে ফিরে যাওয়া যেতো, তবে নিশ্চয় সে ভুল আর করতাম না৷ যে ভুল আমি করেছিলাম একবার৷ বড় হয়ে উঠতে চাওয়ার ভুল৷
আমৃত্যু তোমাকে চাই৷ প্রিয় শৈশব!
(এইসব ভালো লাগে) : জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালী রোদ এসে
আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়,- আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল-
এই নিয়ে খেলা করে : জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কি ভুল
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রুপসীর মুখ ভালোবেসে
সে রুপসীর মুখ- শৈশবের৷