লোকমুখে মেরাজ সম্পর্কে একটি কথা প্রসিদ্ধ আছে যে, মেরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরশে মুআল্লায় প্রবেশের পূর্বে জুতা খুলতে চাইলে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
হে মুহাম্মাদ! আপনি জুতা খুলবেন না। (জুতা নিয়েই আরোহন করুন) কেননা, আপনার জুতা নিয়ে আগমনে আরশ ধন্য হবে। এটি বরকত লাভের কারণে অন্যের উপর গর্ববোধ করবে।
কথাগুলো সাধারণ মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ তো আছেই, কোন কোন বক্তার মুখেও শোনা যায়। কিন্তু তা প্রমাণিত নয়। সবগুলোই মনগড়া ও বানানো কথা।
ইমাম রযীউদ্দীন আল-কায্ভীনী (রহ.)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জুতা নিয়ে আরশ গমন এবং আল্লাহ তাআলার সম্বোধন (হে মুহাম্মাদ! আপনার জুতায় আরশ ধন্য হয়েছে) ইত্যাদি প্রমাণিত কি না। তিনি উত্তরে বলেছিলেন-
জুতা পায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরশ গমনের হাদীস প্রমাণিত নয়। এমনকিক তিনি (খালি পায়ে) আরশে পৌঁছেছেন এমন কথাও কোন নির্ভরযোগ্যসূত্রে বর্ণিত নেই। সহীহ বর্ণনা মতে তিনি শুধু সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন করেছেন।-সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ-শরহুল মাওয়াহেব ৮/২২৩
অপর এক মুহাদ্দিসের ভাষ্য-
আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করুন, যে বলে তিনি জুতা নিয়ে আরশে আরোহণ করেছেন। কত ঔদ্ধত্য! কত বড় স্পর্ধা!! যিনি শিষ্টাচারীদের সরদার, যিনি আরেফবিল্লাহগণের মধ্যমণি, তাঁর ব্যাপারে এমন কথা! তিনি আরো বলেন যে, রযীউদ্দীন আল-কাযভীনীর উত্তরই সঠিক। প্রায় চল্লিশজন সাহাবী থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেরাজ তথা উর্ধ্ব জগতে গমনের ঘটনা বর্ণিত আছে। এঁদের কারো হাদীসে এ কথা উল্লেখ নেই যে, সে রাতে তাঁর পায়ে জুতা ছিল। এ কথা কতক গন্ডমূর্খ কিসসা-কাহিনীকারদের কাব্যে এসেছে। ... কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হাদীসে বা দুর্বলসূত্রে বর্ণিত হাদীসেও এ কথা নেই যে, তিনি আরশে আরোহন করেছেন। এটি কারো বানানো কথা, এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা যায় না।-শরহুল মাওয়াহেব ৮/২২৩