আমার ছোটবেলা কেটেছে পূর্ব রাজাবাজারে; আমার ছোট বোনের জন্মও সেখানেই।
মাওলানা ফারুকি ছিলেন আমাদের প্রতিবেশী; আম্মুর কাছে সেই সময়ের গল্প শুনছিলাম আমি আর আমার বোন আজ সন্ধ্যায়। শুনছিলাম ফারুকি সাহেবের গল্প।
যখন আমি ছোট; আম্মুকে ফারুকি সাহেব প্রায়ই বলতেন আমাকে তার কাছে পাঠাতে। আম্মু খুব বিরক্ত হতেন; ইসলাম শিক্ষা নিতে তার কাছে ছেলে পাঠাতে বলে, এটা কেমন কথা? একদিন মা তো বলেই বসলেন, ছেলেকে ইসলাম ধর্ম শেখাব কোন দুঃখে???
ফারুকি সাহেব হেসে বলেছিলেন, ধর্ম তো ধর্মই। তার আবার নাম ভেদাভেদ কিসের? সেই হাসিখুশি লোকটাকে কিনা জবাই করে হত্যা করা হল; কারন কিন্তু আমাদের সবার জানা।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি তার মাজারপন্থী আদর্শকে অপছন্দ করতাম; কিন্তু ব্যাক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন আসলেই অসাধারণ। দেশ বিদেশ ঘুরে তিনি আমাদের দেখাতেন আউলিয়াদের মাজার; দেখাতেন সুন্দর সুন্দর মসজিদ। ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ যায়গা, মসজিদ আর স্থান। তার ইসলামী দর্শনকে অপছন্দ করার কারন ছিলানা।
প্রায়ই নাজনিন স্কুলের সামনে তাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখতাম; সেখান থেকে তিনি রিক্সা নিতেন। সেদিন তো কথাও হল। আমিই এগিয়ে গিয়ে কথা বলেছিলাম। আমাকে তার মনে আছে; আব্বু আম্মুর খোঁজ নিলেন। আমাদের ফার্মগেটের ফাস্ট ফুডের দোকান হাইফাই স্নাক্সের তিনি ছিলেন নিয়মিত কাস্টমার। আমার জন্মদিনে তিনি একটি বই গিফট দিয়েছিলেন; খুব মনে আছে বইটার নাম ছিল "ছোটদের চার খলিফার জীবনী"। বইটা আমি পড়িনি; সম্ভবত প্লেন বানিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।
এই হত্যার পেছনে যে জঙ্গি জামাত হেফাজতের হাত আছে সেটা তার শুভাকাঙ্ক্ষী অনুসারী মাত্রই নিশ্চিত। খবরেও দেখলাম ইসলামী ফ্রন্টে এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর সদস্যরা সেই কথাই বারবার উচ্চারিত করছিলেন উচ্চকণ্ঠে।
ফারুকির দোষ; সে বিরোধিতা করতেন জাকির নায়েকের মিথ্যাচারের, তিনি বিরোধিতা করতেন হিযবুত তাওহীদ-জামাত-শিবির-হাফাজতের; বিরোধিতা করতেন জঙ্গিবাদের। সর্বোপরি ইসলামের কুলাঙ্গারদের।
এই কিনা তার মৃত্যুদণ্ড যোগ্য ভয়াবহ অপরাধ???
শাহবাগ আন্দোলনের সময় জামাত-হেফাজতের বিরোধিতা করার কারনে ১০ জন ওলামার নাম হত্যার উদ্দেশে হিট লিস্ট করা হয়েছিলো; এখন প্রান দিলেন মাওলানা ফারুকি!
এখন ভয় হচ্ছে বাকি নিরীহ ওলামাকে নিয়ে; যারা আপাত দৃষ্টিতে ইসলামের শান্তিতে বিশ্বাসী।
তাদের নিরাপত্তা দেবে কে?
পশুদের হাতেই কি তাদের শহীদ হতে হবে?
এ কেমন অবিচার?
যতদিন জামাত শিবির হেফাজত আর হিজবুতের শেকড় উৎপাটন করা সম্ভব না হবে; ততদিন এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত খবর আমাদের পেতেই হবে।
সুশীল আলেম সমান, সাধারন মডারেট মুসলিম এবং আমাদের নাস্তিকদের যুদ্ধ কখনোই ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলোনা; ছিল এর ধ্বংসাত্মক রূপটির বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, ধর্মের অমানবিক দিকটার বিরুদ্ধে। সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার অপরাধে আর কতজনকে জঙ্গিদের হাতে এভাবে প্রান দিতে হবে?
যাদের হাতে নিরাপদ নয় বাংলার সংখ্যালঘুরা; এমনকি শান্তিপ্রিয় মুসলমানেরা; তাদের বাংলা থেকে নিষিদ্ধ করতে আর কত দেরী??? আর কত রক্ত ঝড়লে তাদের দমন করা হবে? একাত্তরে তাদের হাতে রক্ত দিয়েছে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা, দিচ্ছে বাংলার সংখ্যালঘুরা। এখন দিচ্ছে শান্তিপ্রিয় মুসলমানেরা।
বাংলায় এদের সমূলে নির্মূল করার সঠিক সময় যদিও আরও আগেই ছিল; কিন্তু আরও দেরী হয়ে যাওয়ার আগেই সরকারের উচিৎ তাদের কালো হাত ধ্বংস করে দেয়া।
জামাত শিবির হেফাজতের কালো হাত রুখে দেয়ার এখনি সঠিক সময়।
ফেসবুক পোস্ট লিঙ্কঃ Click This Link