পোস্টের শিরোনাম দেখে ভাববেন না আমি সবজান্তা শমসের আর আমি সে ঐতিহাসিক আলাদীনের চেরাগ নিয়ে এসেছি। একটা পোস্ট পড়ে আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে যাওয়াতে মনে হল, আমি আমার মতামত টা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। তবে এটা খুব ই একঘেয়ে পোস্ট হতে পারে অনেকের জন্যে! স্পয়লার এলার্ট!!
আমাদের দেশের সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা দিয়ে শুরু করি।
শিক্ষা ব্যবস্থা!!
একটা প্রচলিত ধারণা আছে, যাদের অন্য কোনও চাকরি বা ব্যবসা করার বা অন্য কোনও কাজে লাগার মত স্কিল ভিত্তিক কিছু করার সুযোগ নেই, তারাই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। এই ধরণের অভিযোগের পেছনে সত্যতা খুঁজতে গেলে বেশি দূরে যেতে হবে না, শুধু কেবল আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে যারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন তাদের দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন। আমি হলফ করে বলতে পারি যাদের মধ্যে অন্তত ৪০-৫০ ভাগ আছেন যাদের আসলেই আরও উন্নত প্রশিক্ষণ ছাড়া ক্লাসে যেয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়ানো উচিত না। বাকিটা আপনারাই বলবেন ...
চিকিৎসা ব্যবস্থা!!!
এটা আমার কাছে সবসময়েই মনে হয়েছে যে আমাদের দেশের ডাক্তারগণ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় স্কিলফুল, কিন্তু আমাদের অভাব শুধু উন্নত প্রযুক্তি আর যন্ত্রপাতি আর গবেষণা সুবিধা। কিন্তু, আমার সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটল যখন দেখলাম মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আউট হচ্ছে এবং তারাই মোটা দাগে ভালো প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সুযোগ পাচ্ছে যারা টাকার জোরে প্রশ্ন কিনে নিতে পারছে। প্রকৃত মেধাবীরা আর ধারে কাছে আসতে পারছে না!!
বিজ্ঞান ও গবেষণা!!
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা র্যাঙ্কিং পেয়েছিলাম (সঙ্গত কারণেই নামটা উল্লেখ করছি না), যেখানে কয়েকটা বিভাগের ওপর ভিত্তি করে মার্ক করা হয়েছিল তারপরে কম্বাইন করে পুরো রেজাল্ট পাবলিশ করা হয়েছিল। আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্কোর ছিল ২০ এ ১৯.৫ আর মৌলিক রিসার্চ ও রিসার্চ পেপার প্রকাশনায় ছিল ০.২। জি, ০.২ আউট অফ ২০! অবাক হবেন না আমাদের র্যাঙ্কিং তারপরেও ঐ বছরে সারা দুনিয়াতে ৬০০-১০০০ এর মধ্যে ছিল। কি সেলিব্রেশনের জন্যে তো অন্তত একটা পয়েন্ট পাওয়া গেল নাকি? কী বলেন আপনারা???
সাংবাদিকতা !!
এইটা নিয়ে আমি কিছু লিখব না, কারণ যা লেখার তা এখানেই আছে।
এর বাইরে আরও কিছু স্পর্শকাতর পেশা আছে, যেখানে সবার যাওয়া উচিত না বলে আমার বিশ্বাস-
১। নেতৃস্থানীয় অবস্থানে থাকা ব্যক্তিবর্গ (যাদের ওপরে গণমানুষের ভালো মন্দ নির্ভর করে)
২। বিচারকবর্গ
৩। স্বর্ণ বা মুল্যবান ধাতুর ব্যবসা যারা করেন (যেখানে সহজে ভেজাল মেশানোর সুযোগ আছে এবং সাধারণ মানুষ সহজে ধরতে পারবে না)
৪। ধর্মীয় উপাসনালয়ের প্রধান (ইমাম, পুরোহিত, বিশপ) ইত্যাদি পেশাসমূহ।
সাংবাদিকতা নিয়ে সোহানী এর লেখাটা থেকেই এই লেখার সূচনা আমার। ধন্যবাদ উনাকে নিরন্তর। উনার লেখাটার লিঙ্ক উপরেই দেয়া আছে। একজন দায়িত্ব জ্ঞানহীন পেশাজীবী কতখানি ভয়ঙ্কর তার একটা মাত্র ছোট্ট উদাহরণ সেটা।
ঐ পোস্টে আমিএকটা কমেন্ট করেছি, যেটা আমি নিচে হুবহু তুলে দিচ্ছি --
প্রতিটা মানুষেরই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। খুব কম মানুষই পারে সকল ধরণের সীমাবদ্ধতাকে ঠেলে সরিয়ে সামনে এগোতে। এইটা বলার কারণ হচ্ছে, কিছু পেশায় আপনি নিজে থাকলেও, আপনার ওপরে অন্য অনেক মানুষের জীবন মরণ নিরভর করে। তাই, জীবিকা অরজন আপনার মুল লক্ষ্য হলেও পেশা নির্ধারণে বা বাছাই করার সময়ে সতর্ক হোন। আপনি যে দায়িতবনিতে পারবেন না সেই দায়িত্বকে শুধু জীবিকার তাগিদে পেশা হিসেবে না নেয়াই ভালো।
ধন্যবাদ!
সেকারণেই আবারো বলি আপনি জীবিকার তাগিদে একটা পেশা বেছে নিলেন, কিন্তু ভেবে দেখুন আপনি আসলেই সেই পেশার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন কিনা বা আপনার সামান্য একটা ভুল বা অসাবধানতা পুরো একটা বড় জনপদের উপরে কী রকম ইফেক্ট ফেলতে পারে!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৬