লোকেদের কর্ম নাই।
এক লোকে দুই হাতের তালু জোড়া দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গীতে কাকুতি মিনতি করতে করতে এক কেজি চাল চাইতেছে। সে লোকে ঢাকা শহরে চলাচল করা আজমিরী বাসের হেল্পার। ঘরে তার অভাব। বাচ্চারা তার না খেয়ে আছে। তার এক কেজি চাল দরকার। জোয়ান মর্দ লোক। কর্মক্ষম লোক। ঢাকার রাজপথে আজমিরী বাস এখন চলাচল করে না। অনেকদিন ধরেই করে না।
আজমিরী বাসের এই হেল্পার লোকটার এখন কর্ম নাই। পথচলতি লোকেদের কাছে জোয়ান মর্দ কর্মক্ষম লোকটা বিলাপ করে এক কেজি চাল ভিক্ষা চাইতেছে। আহা! ঘটনাটা কেউ একজন নিজের ফোনে ভিডিও করে ফেলছে। চল্লিশ সেকেন্ডের ভিডিও। সেখানে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রমাণ ফ্লাইওভার ব্রিজ দেখা যায়। তারই পথের ধারে এক কেজি চাল চেয়ে কাকুতি মিনতি তার। এখন আজমিরী বাসের এই হেল্পার লোকেরে এক কেজি চাল কে কিনে দিবে!
লোকেদের তো কর্ম নাই।
পথচলতি লোকেরা হেঁটে হেঁটে সামনে দিয়ে চলে যায়। কেউ কেউ ঘাড় ঘুরায়ে ইতিউতি চায়। তাদের অবস্থা আজমিরী বাসের হেল্পার থেকে খুব আলাদা কিছু না। কৃষক শ্রমিক মজুরদের অধিকার নিয়ে বড় বড় রাজনীতি করে যেসব লোকেরা,তাদের বড় বড় কথাবার্তা কিংবা ফেসবুক স্ট্যাটাস এরা যেভাবে দেখে শোনে আর পাঠ করে, এই আর্তনাদও তাদের কাছে ভিন্ন কিছু না। তারা পাত্তা দেয় না তাই। পাকস্থলী কারও একলা না, তাদেরও আছে।
লোকেদের আসলেই কর্ম নাই।
লোকেরা এখন তাই অলস সময় কাটায়। রাষ্ট্র কয়, এই দেখ কত্তগুলা বোতল। নেও, এখন দেখে দেখে শুমারি কর। লোকেরা বোতল শুমারি করে। গ্ল্যামারও দেখে। অনুসন্ধিৎসু কমেন্ট কমেন্ট খেলে। রাজা মারে, উজির মারে। আর বলে, ‘সাংবাদিকগুলারও আসলে কর্ম নাই।’
লোকেদের তো কর্ম নাই-ই। যাদের কর্ম আছে, তাদের আছে বেকার হওয়ার ভয়।
আমার প্রতিবেশির বাসায় পোলাওয়ের গন্ধ ম ম করে। আজকে শুক্রবার। তার উপ্রে লকডাউন। একটু ভালোমন্দ না রানলে চলে!
ঢাকার রাস্তায় আজমিরী বাস চলে না। কোনো বাসই তো চলে না। খালি রিকশা চলে। আমার যাতায়াত খরচ বাড়ন্ত।
জোয়ান মর্দ কর্মক্ষম এক লোক আজমিরী বাসের হেল্পার ছিল। সে হাহাকারে আর্তনাদে এক কেজি চাল চায়। ঘরে তার বাচ্চারা না খাওয়া। লকডাউনে বাস চলা নিষেধ। এই লোকের তাই কর্ম নাই।
আরও কত কত শ্রেণিপেশার লোকেদের যে কর্ম নাই!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:১৯