
পর্ব ১: নিষ্ঠুর
লিখেছেন, বদী বিলাইনি
বদটা এক ভাবে তাকিয়ে আছে! কি যন্ত্রণা! এভাবে কি খাওয়া যায়?
আমি মাথাটা হালকা ঘুরিয়ে চোখমুখ কুঁচকিয়ে সর্তক সংকেত পাঠিয়ে দিলাম। দুূরেই থাকো।
ও একটু গদগদ ভাবে কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করতেই থাবা তুলে দেখিয়ে দিলাম আমি কি করতে পারি, সঙ্গে সঙ্গে আবার দুই পা পিছিয়ে গেল।
অনেক কষ্টে মাছটা পেয়েছি, কোথায় মনের আনন্দে খাবো, তা না, গন্ধ শুঁকে শুঁকে চলে এসেছে!
পাড়ার উঠতি বয়সি সুন্দরী বিলাইনিগুলার সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে টিংটিং করে হাঁটার সময় আমার কথা মনে থাকে না! এখন আসছে ভালোবাসা দেখাতে! হুহ্!
আমি জানি, এখন কাছে আসবে, গায়ের সাথে গা ঘষবে, মুখের সাথে মুখ ঘষবে তারপর যেই আমি বেখেয়াল হবো, অমনি টুপ করে মাছটা কামড়ে তুলে মুখে পুরে ফেলবে।
উঁহু, ওর ফাঁদে আমি পা দিলে তো!
ওই যে আবার আস্তে আস্তে পা পা করে এগুচ্ছে!
আমি ধারালো নখগুলো দেখিয়ে বললাম, 'কাছে আসলে এক টানে তোর চোখ আর নাকের মাঝে নীল নদ এঁকে দিব।'
ও মুখটা করুণ করে বলল, 'মিউ মিউ'।
আমিও হুংকার দিয়ে বললাম, 'মিঞাও মিঞাও'।
ও দশ হাত পিছিয়ে গিয়ে গাছের ছায়ায় বসল।
আমি আরাম করে চিবিয়ে চিবিয়ে মাছটা খেয়ে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চাটতে চাটতে ভাবলাম, খাবার খাবারের জায়গায় আর প্রেম প্রেমের জায়গায়। বিলাইনি হলাম তো কি হলো! নিজের চিন্তা সবার আগে।
পর্ব ২: স্বার্থপর
লিখেছেন, ভালো বিলাই
বিলাইনি যে এত্তগুলা বদী সেইটা বিলাইয়ে এক জীবনে ভাবতে পারা তো দূরের কথা, কল্পনাও করে নাই। পচা ধচা কাঁটা বাইর হওয়া একটা মাছ পাইয়া এইরকম পল্টি!
ছিঃ বিলাইনি ছিঃ! ধিক্!
বিলাইনিরে এত এত আদর, এত এত ভালোবাসা, পুরাই হুদাই। মিঁউ মিঁউ করে বিলাই খালি কী মাছ এইটা জিজ্ঞাস করতেই বিলাইনি দাঁত খিচায়ে থাবার নখ বাইর করে খামচি দিবে বইলা হুমকি দেয়। বিলাই তো তব্দা লেগে গেল। তবুও লাজ শরমের মাথা খেয়ে বলে, ‘ও বিলাইনি, ওইটা কী মাছ? মলা? না ঢেলা?’
বলে চোখে একটা রোমান্টিক দৃষ্টি ফুটায়ে চোখ দুইটারে আকাশ নীল করে বিলাইনির দিকে আগাতে লাগল। বিলাইনির গায়ে গা ঘষা দরকার। রাগ হওয়ার ফলে বিলাইনিরে সুন্দর দেখাইতেছে।
বিলাইনি উত্তর না দিয়া গররর গররর করতে থাকে। বিলাই একটু ডর হয়। বিলাইনি বড়ই স্বাস্থ্যবতী। ওজনও মাশাল্লা কম না। লাফ দিয়া বিলাইয়ের ওপরে পড়লে বিলাই ইস্ত্রি হয়ে যাবে। তখনই বিলাইনি ঝাড়ি মেরে বলে উঠল, ‘কাছে আসলে এক টানে তোর চোখ আর নাকের মাঝে নীল নদ এঁকে দিব।’
নদ হইল পুরুষবাচক শব্দ। নীলের সঙ্গে নদ যাওয়ার কথা না। নীলের সঙ্গে নদী হইতে হবে। নদী স্ত্রীবাচক শব্দ। নীল আর নদী যুক্ত হইলে কী অদ্ভুত আর সুন্দর একটা রোমান্টিক একটা আবহ তৈরি হয় না? আহা!
তাহলে বদী বিলাইনি নীলেরে নদ বলতেছে কেন! সন্দেহজনক কথাবার্তা! নইলে একটা মলা কিংবা ঢেলা মাছের জন্য কেউ এইরকম পল্টি লইতে পারে!
এইত গেল সপ্তাহেই তো বিলাই পাশের দোতলার গৃহিনীরে ফাঁকি মাইরা একটা জাটকা ইলিশ চুরি করছিল। নিজে লেজটা রেখে পুরাটাই বিলাইনিরে দিয়ে দিছিল। আর বিলাইনি সেইটা গপগপায়া খেয়ে নিছিল। আর এখন ভাব নিতেছে। আরে বিলাইয়ে জাটকা ইলিশ আর্ন করে দান করে দিছে। নিজে খায় নাই। এখন বিলাইনির স্ব উপার্জিত পচা ধচা মলা ঢেলা খাবে!
‘চিনলি নারে বিলাইনি! এখনও বিলাই চিনলি না।’
আইচ্ছা, কালকে পাশের বাড়ির পরের বাড়িটার কার্নিশে সাদা পশমে নীল ডোরা কাটা একটা তন্বী বিলাইনি দেখছিল না? সে কী ওই কার্নিশে বসবাস করে? দেখতে হবে।
বিলাই লাফ দিয়া দেওয়ালে উঠল। তারে আরও দুইটা দেওয়াল বাইতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


