কতই রংগ দেখি দুনিয়ায়!ও ভাই রে,ও ভাই!
কতই রংগ দেখি দুনিয়ায়,
আমি যেদিক ফিরে দেখে অবাক বনে যাই
আমি অর্থ কোন খুজে নাহি পাই ভাই রে,
দেখ ভাল জনে রইল ভাঙা ঘরে ,
মন্দ যে-সে সিংহাসনে চড়ে।
সোনার ফসল ফলায় যে তার দুই বেলার জোটে না আহার,
হীরার খনির মজুর হয়ে কানাকড়ি নাই!ওরে ভা...ই রে।
কত রংগ দেখি দুনিয়ায়
(সত্যজিতের হীরক রাজার দেশে হতে)
এ গানটা অনেকদিন পরে শুনলাম,গানটিতে অনেক রাজনৈতিক বাস্তবতা আছে,আছে নিপীড়িতের বলিস্ঠ উচ্চারণ।কিন্তু এ গানটা কি শুধুই রাজনৈতিক?শুধুই ফিল্মিক?শুধুই অপরের কন্ঠস্বর?
একজন কবি বুনে চলে হীরক কল্পনার দ্যুতি,সে অর্থে কবিও একজন হীরার খনির শ্রমিক।কবির কাছে কানাকড়ির মূল্য কেমন?কবি কানাকড়িকে কিভাবে দেখেন?
জীবনানন্দ তাঁর "ভিখিরী" কবিতায় লিখেছেন-
"একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি আহিরীটোলায়,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি বাদুড়বাগানে,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো–
তবে আমি হেঁটে চ’লে যাবো মানে মানে।
–ব’লে সে বাড়ায়ে দিলো অন্ধকারে হাত।
আগাগোড়া শরীরটা নিয়ে এক কানা যেন বুনে যেতে চেয়েছিলো তাঁত;
তবুও তা নুলো শাঁখারীর হাতে হয়েছে করাত।
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি মাঠকোটা ঘুরে,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি পাথুরিয়াঘাটা,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো
তাহলে ঢেঁকির চাল হবে কলে ছাঁটা।
বলে সে বাড়ায়ে দিলো গ্যাসলাইটে মুখ।
ভিড়ের ভিতরে তবু — হ্যারিসন রোডে — আরো গভীর অসুখ,
এক পৃথিবীর ভুল; ভিখিরীর ভুলে : এক পৃথিবীর ভুলচুক।"
এই হীরার খনির মজুরেরা খনির বহুদুর গর্ত হতে দেখে মুক্তির আকাশ,আজ তাই সে কবির ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রের গানকে বলা হয় বিচ্ছিন্নতা।কবির অবকাশের গলা চেপে ধরে রাস্ট্র,সমাজ,সমগ্র।
আরো ব্যাপক অর্থে ধরলে এই মজুর আসলে আমরা প্রত্যেকেই।এই কর্পোরেট পৃথিবীতে তাকাই একবার।পাশের লোকটিকে দেখি,দৌড়াচ্ছে অফিসে।দেখি দৌড়াচ্ছে গাড়ি,দেখি দৌড়াচ্ছি আমি।বুঝতে পারি এই ঝাকানাকা নগরের প্রতিটি মানুষের অন্বেষা হচ্ছে হীরকনির্মিত এক সুখের প্রাসাদ।আর তাই আমি তুমি সে সকলে আসলে পৃথিবীর গভীর থেকে তুলে আনছি এক এক করে ব্যাক্তিক কল্পনাসমুহ,সযত্নে তা তুলে দিচ্ছি যন্ত্রের হাতে।তাই বুঝি আজ আমাদের চোখে আজ কোন নতুন স্পপ্ন দেখিনা।
এই গানটা দেখে আজ এইসব বিকল অনুভূতি হল। অবিকল হাইপোথিসিসের মত মনে হলেও আসলে তা আমার ব্যাক্তিক ভাবনা ছাড়া আর কিচু নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:২৮