মামার বাসায় ছিলাম।সকাল বেলা ডাইনিং টেবিলে বসে পেপার খুলতেই চোখ আটকে গেল জ্বলন্ত ছবিটিতে। আজ হরতাল এবং গতরাতে হরতালের উম্মাদনায় বাসে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয়েছে নয়টি তাজা প্রাণকে।
প্রচন্ড কষ্টে মুহ্যমান হয়ে পড়লাম। জানলাম গতরাতে টিভিতেও দেখিয়েছে। আমার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য বলবো জানিনা আমি দেখিনি।
পেপার পড়তে পড়তে এক সময় ছোট মামির সাথে দেশের অবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেলো। কোথায় যাচ্ছি আমরা?কি হবে আমাদের?
হঠাৎ আমার আট বছর বয়সের মামাতো ভাইটি বলে উঠলো আপু বাংলাদেশের অনেক কিছুই আমার পছন্দ হয়না।
এমন কথায় মনোযোগ না দিয়ে পারলামনা ওর দিকে।
হরতাল সম্পর্কে তার যতটুকু ধারনা এটা একটা খারাপ কালচার, এতে দেশে ক্ষতি হয়।
জানতে চাইলাম আর কি পছন্দ হয়না তোমার।
আপু আমাদের দেশে এতো ময়লা কেন? চারদিকে শুধু ময়লা আর ময়লা।স্বীকার করতে বাধ্য হলাম আমরা খুব অসচেতন জাতি।
ওর সচেতনতায় খুশী হলাম, জানতে চাইলাম আমাদের এই ছোট্ট দেশটাকে নিয়ে আর কি ভাবো তুমি?
সাকী বলল আপুবাংলাদেশে কোন প্রডাক্টিভ কোম্পানি নেই কেন? আমি অন্য দেশে বাংলাদেশের তৈরী খেলনা খুঁজি কিন্তু পাইনা।
উল্লেখ্য এই ছোট পরিব্রাজক ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ(জাপান,থাইল্যান্ড,মিয়ানমার,লাওস,মালয়সিয়া)ভ্রমন করেছে।
বললাম তুমি বড় হয়ে দিও।তার উত্তর শুধু আমি দিলেতো হবেনা সবাইকে ভাবতে হবে।
সাকী এবার আমার কাছে জানতে চাইল আপু আমরাতো মুসলিম তাইনা?
বিপদে পড়ে গেলাম তার প্রশ্নে। আমি মুসলিম কিনা সেটা আমি বলতে পারি কিন্তু আমরা মুসলিম কিনা এর কি জবাব হতে পারে?
বললাম ভাইয়া মুসলিম ফ্যামিলীতে জন্ম নেয়ায় সবাই নিজেদের মুসলিম বলে ঠিকই কিন্তু কথায় কাজে ইসলামের বিপরীত করতেও দ্্বিধা করেনা।আমার কথায় সায় দিয়ে সে বললো হ্যা আপু আমরা 100% মুসলিম না ।
এবার আমি জানতে চাইলাম তুমি কেন একথা বলছো ?
সাকীর উত্তর বাংলাদেশের মানুষেরা ভালো মুসলিম হলে এখানে এতো স্ট্যাচু থাকতো?
সব জায়গায় শুধু স্ট্যাচু স্ট্যাচু স্ট্যাচু।স্ট্যাচু বানানো কি মুসলিমদের কাজ?
আসলেই না। কিন্তু কেউ যদি ভালো মুসলিম হতে না চায় আমি কি করব?
জানতে চাইলাম আর কিছু ভাবোনা?
এবার সে লাইনে আসল আই মিন আট বছরের বাচ্চার মতই মুখটা গম্ভির করে প্রশ্নকরলো আমাদের দেশে কার রেস ওয়ে নেই কেন(তার অন্যতম প্রিয় গেম)?
হেসে ফেললাম আমি কমিউনিকেশন ওয়েইতো নেই,তার আবার কার রেস ওয়ে?
সাকী মাথা দুলিয়ে বলল সব দরকার সব দরকার।
বললাম ভাইয়া আরো বড় হও কোনটা বেশী দরকার কোনটা কম দরকার সব বুঝতে পারবে।
তারপর নিজের কাজে চলে গেল সাকী।আমি মনে মনে বললাম বড় হও ভাইয়া, আমাদের এই খুবলে খাওয়া দরিদ্্র দেশটা তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছে।
পত্রিকার পাতায় চোখ রেখে আতঁকে উঠলাম আমি, বুঝতে পারলাম এতক্ষন সাকীর শিশুসুলভ সি্নগ্ধ পরশে গত সন্ধার বিভীষিকার কথা ভুলেই ছিলাম আমি।
আজ আবারো হরতাল।অনেকদিন আগের ভুলে যাওয়া স্মৃতি নাড়া দিচ্ছে আমাকে।আজও কি কোন ভয়াবহ ঘটনা জানতে হবে আমাকে।
আমিতো জানতে চাইনা।
আমিতো শুনতে চাইনা।
আমিতো প্রতিদিন আমার নিজের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য সুন্দর কিছু জানতে চাই,সুন্দর কিছু শুনতে চাই।
আমার সব চাওয়াই যদি পূরণ হত??
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০