ছোটবেলায় ঢাকার পাশে একটি গ্রাম গ্রাম এলাকায় দু'বছর (ক্লাশ থ্রী ফোর)থাকার সুযোগ হয়েছিল।কি দুরন্ত সেই দু'টি বছর।যেহেতু জন্ম থেকে ঢাকায় আর সবুজ খুব কম দেখেছি। আমি হয়ে গেলাম মুক্তপাখি।
আহা কি মজাই না করতাম।বান্ধবীদের সাথে মেঠো পথ ধরে স্কুলে যাওয়া,ভাইয়ার সাথে অলিন্দার বনে লুকোচুরি খেলা,শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দৌড়াদৌড়ি,বষর্াকালে স্কুল থেকে ফেরার পথে কাদায় পিছলা খেয়ে পরে কাদার ভুত হয়ে বাসায় ফেরা,গাছের মাথায় উঠে লাফালাফি করা কোনকিছুই ভুলে যাওয়ার নয়।সময়ের সাথে সাথে জীবন থেকে কত আনন্দ ঝরে যায় তাইনা?
তখন দেখতাম তাল গাছে ঝুলন্ত বাবুই পাথির বাসা।ভাবতাম ঐ খড়ের আটির দু'একটা খসে পড়েনা কেন?একটু টেনেছিড়ে দেখতাম।
অনেক পরে জেনেছি খড় নয়, বাবুই বাসা তৈরী করে তাল আর নারকেল পাতা ঠোঁট দিয়ে চিরি চিরি করে চিরে তাই দিয়ে।অপূর্ব শক্ত বুনুনি,আমার খায়েশ অনুযায়ী ঝড়ে খসে পরলেও হাত দিয়ে কোনদিন টেনে ছিড়তে পারতামনা।
আসলে বাবুই পাখিকে নিয়ে যত শৈশবের অভিজ্ঞতা আমার আম্মুর।আম্মু আর তার সমবয়সি কাজিনেরা এই বাবুই এর বাসার উপর রীতিমত অপারেশন করেছেন।ছুরি দিয়ে কেটে বাসার মানচিত্র উদ্ধার থেকে শুরু করে বাসার লাইটিং কি করে হয় সে তথ্যও উদ্ধার করেছেন। বাবুই পাথির বাসায় লাইটিং??
হ্যা, প্রতি সন্ধ্যাবেলা বাবুই তার বাসা আলোকমালায় সজ্জিত করে।পুকুর পার থেকে কাদামাটি এনে বাসার ভিতর লাগিয়ে জোনাকি পোকা এনে সে কাদায় আটকে রাখে।এক্ষেত্রে কাদামাটি সুপার গ্লুর মত কাজ করে।আম্মুর নানুরা বলতেন বাবুই এর সন্ধ্যাবাতি। কি অদ্ভূত শিল্পী বাবুই পাখি, যেমন তার বাসা তেমন তার লাইটিং।
থ্যাংকস টু আল্ল্ল্লাহ। আমাদের এই ছোটখাট আনন্দের খোরাকের মধ্যেও তাঁর কত মহিমাময় সুবিশাল কারসাজি লুকিয়ে রাখেন।
"ধিকি ধিকি জ্বলে নিভে জোনাকির আলো
বাবুই পাখির বাসা থাকেনাকো কালো"।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০০৬ ভোর ৫:০৪