তখনও স্কুলের পাঠ শুরু হয়নি আমার।ভাইয়া-আপুনির টিচার আর আম্মুর কাছ থেকে বাংলা অক্ষর আর আধো আধো বানান করা শিখেছি।তারপর সেই আধো শেখা বানান নিয়ে শুরু করেছি বিস্তর গবেষনা।যেখানে যা পাই টুক টুক করে বানান করে পড়ি।আমার এই স্বভাবই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল শারমিন রীমার সাথে।নিঃশব্দে পড়ি বলেই হয়তো রীমার জন্য আমার নিঃশব্দ কষ্ট কেউ টের পায়নি।
আমি সেই শারমিন রীমার কথা বলছি,যে তার পরকিয়া আক্রান্ত স্বামী মুনিরের হাতে নিহত হয়েছিল।মনে আছে, একটি ম্যাগাজিন পত্রিকা ,যার ফার্স্ট টু লাস্ট ছিল রীমা হত্যাকান্ডের বিশদ বিবরণ ,সেটা আমি একটু একটু করে প্রচুর সময় নিয়ে অনেকদিন যাবত পড়ে শেষ করেছি।
জটিল অনেক কিছুই বুঝিনি ।সরলভাবেই বুঝেছি একটি ছেলে একটি মেয়েকে ছুরি দিয়ে মেরে পানিতে ফেলে দিয়েছে এবং তাকে এ অন্যায় কাজ করতে আরেকটি মেয়ে বলে দিয়েছে।
আমার সেই কচি মনে ঘটনাটি কষ্টের দাগ কেটে গেল।আমি অনুভব করলাম মুনিরের কাজ আমি যেমন ঘৃনা করি ঠিক তেমনই খুকুর কাজ আমার সাংঘাতিক অসহ্য আর ঘৃনিত লাগছে।একটি মেয়ে কি করে আরেকটি মেয়ের জীবন এভাবে শেষ করে দিতে পারে। আমি এ ঘটনা জানার 2/3 বছর পর মুনিরের ফাসী হয়েছে।
তারওপর কেটে গেছে অনেক বছর।আরো কত রীমাকে চোখের সামনে ঝরে যেতে দেখলাম।কিন্তু প্রতিবার আমার কেন রীমার কথা মনে পরে?কেন পত্রিকার পাতায় মাম্মি,সোনিয়ার ছবি দেখার পরই আমার চোখের সামনে রীমার নববধূ সাজে সজ্জিত ঝলমলে চেহারাটি ভেসে উঠে?আর কত রীমাকে এভাবে প্রাণ হারাতে হবে? একজন রীমা কত স্বপ্ন, কত আশা নিয়ে প্রিয় মা-বাবা,প্রিয় ভাই-বোন.প্রিয় পরিবেশ ছেড়ে স্বামীর ঘরে পা রাখে।এর জন্যই কি?
কে জানে হয়তো একদিন আমিই কারো চোখে রীমা হয়ে ধরা দেব।
রীমাআপ,ু আমাদের ছেড়ে চলে যাবে বলেই কি ওভাবে সেজে স্বামীর হাত ধরেছিলে?
তুমিতো শহীদ হয়েছ।আল্লাহর কাছে ভালোই আছো।
কিন্তু তোমার এই ছোট আপুটা যে খুব কষ্টে আছে। তাকে যে প্রতিনিয়ত আরেক রীমা আপুকে হারানোর ভয়ে ভীত থাকতে হয়।
তুমি কি জানো?
নিজের জীবন দিয়ে তোমার এই ছোট আপুটার সামনে জটিল পৃথিবীর কুটিল একটি দিকের পরিচয় প্রকাশ করে গিয়েছ।