somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের প্রথম রক্তদান: অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারা জীবন ইনজেকশন নামক জিনিসটিকে প্রচন্ড ভয় পেয়ে এসেছি। সিরিন্জ-সুই দেখলেই কলজের পানি শুকিয়ে ভুমিকম্প শুরু হত। এখনও যে হয়না তা না। বিভিন্ন কারনে ব্লাড টেস্ট করাতে হলে ভয় পেয়ে কান্না-কাটি করেও কাজ হত না তবে একটা সময় আবিষ্কার করলাম যতটা ব্যাথা পাই তার চেয়ে পঞ্চাশ গুন বেশী পাই ভয়।
ছোটবেলায় বাত জ্বরের কারনে প্রথমে ইনজেকশন দিতে হত। একবার বড় ফুপু ইনজেকশনের সময় আমার অবস্থা দেখে বলেছিলেন, "হায়াত না থাকলে মরে যাবে তার পরেও এই অবস্থা করে ইনজেকশন না দিতে" পরবর্তীতে ইনজেকশন বাদ দিয়ে ঔষধ খেতে হয়েছে।
যাক ইনজেকশন কাহিনী অনেক হল, আসল কাহিনী ই বলছি। ব্লগে/বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে রক্ত দিতে দেখে ভয় পেলেও আমার মনে হয় ভয় পেলেও, একটু ব্যাথা লাগলেও এর বিনিময়ে যদি একটি প্রান বেঁচে যায় তাহলে কেন রক্ত দিবো না! এই ভেবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি সুযোগ পেলে অবশ্যই দিবো। একজন ব্লগার সব ব্লগারদের রক্তের গ্রুপ নিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছিলেন সেখানে আমার গ্রুপটা বলেও দিয়ে এসেছিলাম।
কিছুদিন আগে এক ব্লগার জরুরী ভিত্তিতে AB+ রক্ত চেয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলেন। পোষ্ট টি দেখে কেমন যেনো একটা অনুভূতি আসলো। একটু ভয় ভয় করছিলো। নিজেই নিজেকে বললাম এতদিন তো আফসোস করতে এবার তোমার সময় এসেছে মনে সাহস জোগার করে ফোন দিলাম। ব্লাড ক্যান্সারের রোগী। চার ব্যাগ রক্ত একত্রে করে তার শ্বেত কনিকা নিয়ে একব্যাগ করে পরে দিতে হয়। রোগীর ভাই জানালেন উনাদের রক্ত জোগাড় হয়ে গিয়েছে তবে পরে লাগলে আমি দিবো কিনা। মনে মনে ভাবলাম যাক এইবার বেঁচে গেলাম(আমি যে কতটা ভীতু পরে বুঝেছি)মুখে বলেদিলাম যে কোন সময় ফোন করতে। গত ৬ তারিখ গ্রামের বাড়ী গেলে সেদিন ই ফোন করেন রোগীর ভাই। বলেন উনাদের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন। হাতে আর ডোনারও তেমন নেই। আমার অবস্থা বলে ঢাকায় ফিরলে জানানোর কথা বলে দিই। ১০ তারিখ ঢাকায় ফিরলে ফোন দিলে ১১ তারিখ লাগবে বলে জানান। যেতে হবে মোহাম্মদপুর রেড ক্রিসেন্ট অফিসে। কথামত ভাইয়াকে সাথে করে যাই। কাছাকাছি যেয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ব্যাথা পাবো কিনা। ভাইয়া বলে আমি কি জানি। হাত দিয়ে মেপে দেখায় এত্ত বড় সুই দিয়ে রক্ত নেয়। যাক আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে গেলাম।
ফর্মালিটি শেষ করে যেয়ে শুয়ে পড়লাম বেডে। প্রথমে বামহাতে খুজে ভেন খুব চিকন বলে ডান হাতে দেখে। দুইহাতে একই অবস্থা। পরে ডান হাত থেকেই নেয়। সুইটা ঢোকানোর আগমুহূর্তে ভেতরে সিডর বয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ঢোকানো হয়ে গেলে একটু হতাশ ই হয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম না জানি কি হবে, কত ব্যাথা পাবো অথচ কিছুই না।
এমনিতেই শীত তার ওপর ভেন চিকন। খুব ধীরে ধীরে রক্ত যাচ্ছিল। তার মাঝে মনে সুইয়ের পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। মহিলাকে টের পেলাম তুলা দিয়ে মুছে দিল। ভাইয়া তো আমার অবস্থা আগেই জানত তা দেখে রেগে গিয়ে বলে টেপ মেরে দিতে কিন্তু আনাড়ী মহিলা তা করে নাই। অর্ধেক ভরার পরে মনে হয় রক্ত আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পরে সুই হালকা টেনে-টুনে কায়দা করে দেয়। এভাবেই শেষ হয় আমার রক্তদান কাহিনী। পরে ভাইয়া বলে যেখানে ওর ৭-৮ মিনিট লাগে সেখানে আমার নাকি ২০ মিনিট লেগেছে ব্যাগ ভরতে! ভেবেছিলাম রক্তের ব্যাগটা দেখবো। নিজের এত্তগুলো রক্ত দেখবো, কিন্তু এত কাহিনীতে ভূলেই গিয়েছিলাম।
আসলেই এখানে যদি শেষ হত তাহলে কথা ছিল না। কিন্ত রক্ত দিয়ে কলেজে আসলে কিছুক্ষন পরে ফোন আসে রোগীর ভাইয়ের কাছ থেকে। আমাকে বলে "আপু আপনার ব্লাড গ্রুপ তোAB+ না। আপনার টা A+!!! শুনে প্রথমে ভাষা হারিয়ে ফেললাম। ধাক্কা কাটিয়ে বললাম আমি একবার টেস্ট করেছিলাম তখন এটাই বলা হয়েছিল! খুব দুঃখ প্রকাশ করলে উনি আমাকে স্বান্তনা দিয়ে ফোন রেখে দেন। পরে শুনি ভাইয়াকে ফোন করেছিলেন এবং ভাইয়া ভার্সিটি থেকে জোগাড় করে দেয়।

খুব খারাপ লাগছিল জীবনের প্রথম দেয়া রক্তটা কাজে লাগল না।
মনে হচ্ছে আমি এমন একটি মানুষ যার দ্বারা কারো কোন উপকার হবার না....
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৮
৬২টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×