somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার হারিয়ে যাওয়া সোনালী শীতকাল!

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হেমন্তকাল চলে এসেছে বেশ কিছুদিন হলো। প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। বাতাসে শীতের গন্ধে মন চনমন করে ওঠে। সারাটি বছর এই শীতকালের জন্যে অপেক্ষা করি। শীতে যতই কষ্ট হোক কষ্ট মনে হয় না, গরম কালে যতটা কষ্ট লাগে। গরম কালে খালি দোয়া করি আল্লাহ আমাকে বরফের একটা দেশে যাওয়ার সুযোগ দাও, যেখানে ৭-৮ মাস ঠান্ডা, বরফ থাকবে। :((

আমার রুমের পশ্চিমের জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস যখন আসে প্রাণ মন সব জুড়িয়ে যায়। এই সময়ে বান্দার পশ্চিম-উত্তর কোনে দাড়ালে বাতাসে গ্রামের গন্ধ পাই। বুক ভরে শ্বাস নেই। খড়-মাটির মিশেল মাতাল করা সেই গন্ধে যে কী সুখ, কী যাদুকরি ভাললাগা সেটা আমি কাউকে বোঝাতে না পারলেও নিজে ঠিকই উপভোগ করি । 8-|

শীতকাল এলে আমি গ্রামকে প্রচন্ড ভাবে মিস করি। কোথায় হারিয়ে গেল আমার সেই কুয়াশা ভেজা সকাল! আমার বুকটা হাহাকার করে সেই সব স্মৃতি মনে করে! বাড়ী ভর্তি মানুষ। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজিনদের সাথে কলসি হাতে যেতাম গাং পাড় (পদ্মার কাছাকাছি) উদ্দেশ্য খেজুর রস আনা। পেঁয়াজ, রসুন, গম, ধনিয়া ইত্যাদি ক্ষেতের আল দিয়ে যেতাম। সরসে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় হতো সবচেয়ে মজা। খালি কলসি ফুলের সাথে ঘসা দিতে দিতে গেলে শিশিরে ভেজা ফুলের পাপড়িতে কলসি হলুদ হয়ে যেতো। ফেরার পথে শিশির ভেজা মাটি স্যান্ডেলে লেগে স্যান্ডেল ভারী হয়ে যেতো। ঐ ভারি স্যান্ডেল পড়ে হাটতেই আমার ভাল লাগত! B-) ওজন বেশী হয়ে গেলে রাস্তায় থেমে পাটকাঠি বা কোন ডাল দিয়ে খুঁচিয়ে মাটি ফেলতাম, নতুবা একেবারে বাড়ী এসেই।

সরষে খেতের এই ছবি দেখে মনে হচ্ছে এটা যেন আমাদের বাড়ীর পেছনের গ্রামের ছবিটা


বাংলাদেশের সব গ্রাম মনে হয় দেখতে একই রকম। :)
(ছবি: নেট)
বাড়ী এসে চলত জ্বাল দেওয়ার আগেই কাঁচা রস খাওয়ার উৎসব। বাটি বা গ্লাসে নেওয়ার আগেই ভাল দেখে পাটকাঠি ভেংগে পানি দিয়ে ধুয়ে পাইপ বানিয়ে হাতে নিয়ে রেডী থাকতাম। সেই কাঠি দিয়ে খেতাম রস। ঠান্ডা রস খেয়ে শীতে হিহি করা, আহ কী যে মজা ছিল! !:#P একই সিস্টেমে খেতাম ডাবের পানি। কাঁচা রস খাওয়ার পালা শেষ হলে সেটা দিয়ে চলত পিঠা, পায়েস রান্নার ধুম। রস দিয়ে বানানো দুধ চিতই...ওফ শেষ কবে খেয়েছি ভুলে গেছি! তবে এখনো দুধ চিতই ই আমার সব চাইতে পছন্দের পিঠা, যদিও যেই রস পাওয়া যায় তা দিয়ে পিঠা তেমন ভাল হয়না। গ্রামে গেলে রসের পিঠা না খাওয়া গেলেও আলহামদুলিল্লাহ রসটা এখনো খেতে পারি, তবে পরীক্ষার গ্যাড়াকলে পড়ে গত বছর পারিনি খেতে। এই বছরও মনে হয় হবেনা। :(

পাশের বাড়ীতে ছিল এক গাছি। সারা এলাকার খেজুর গাছ কাটতো সে। মাঝে মাঝে রস নিয়ে বাড়ীতে এলে পিচ্চি পাচ্চারা বাটি নিয়ে যেতো তার কাছে রসের জন্যে। আমার খুব ইচ্ছে করলেও সংকোচে যেতে পারতাম না। আমার মনে পড়েনা তার কাছে থেকে রস খেয়েছি কিনা।
শীতের শেষে খেজুর গাছে মাথি হয়। আহা কী যে মজা সেই মাথি! এটা খেজুর গাছের একদম মাথার দিকের কচি অংশ মনে হয়। গতবছর খেয়েছিলাম অনেক বছর পরে। B-)

ইদানীং নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকায় কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া নিরাপদ নয়। যারা খাবেন দেখে-জেনে খাবেন। পরিচিত গাছির রস খাবেন, গাছে ঠিকঠাক জাল দিয়ে হাড়ি ঢাকা কিনা জেনে নেবেন।

একটু দুপুরে হলে শিশির কমলে যেতাম কলই (খেসারী) শাক তুলতে ক্ষেতে। অন্যদের মত আমি ভাল তুলটে না পারলেও খুব ভাল লাগত ঐ একটা দুটো করে তুলতে। বেশীর ভাগ সময়-ই হঠাৎ কোন ছটকা পোকা চোখহে পড়লে চিৎকার দিয়ে বের হয়ে যেতাম ক্ষেত থাকে। ঐদিনের মত শাক তোলা শেষ। B-) :P এই শাক অনেক এলাকাতেই খায়না, গরুর জন্যে মুলত বোনা হয়। আমাদের এলাকায় গরুর জন্যে বুনলেও কচি শাক প্রায় সবারই খুব প্রিয় খাবার। শীতকালে প্রায় সব বাড়ীতেই প্রতিদিনের কমন একটা খাবার এই কলই শাক ভাজি শুকনও মরিচ ভাজা।
সকাল বেলা রোদে বসে মুড়ি দিয়ে এই কলই শাক খেতে যে কী মজা, যে না খেয়েছে তাকে বোঝানো সম্ভব নয়। :) সকালে কয়েক বাড়ীর মানুষ একসাথে রোদে বসে মুড়ি, গুড়, কলই শাক খাওয়া হয়। যে শীতে বেশী কাবু সে হাত ধুতে হবে সেই ভয়ে শুকনো খাবারই খেতো আবার যার ক্ষুধা বেশী সে ভাত খেতো। ঠান্ডা কড়কড়ে ভাত সাথে আগের রাতের জমে যাওয়া তরকারী। আমি ঘ্যান ঘ্যান করতাম ভাত খেতে, আম্মা ধমকে টমকে দেরী করাতো শীত একটু কমার জন্যে। :| এখনো গ্রামে গেলে আমি সকালে যত ঠান্ডাই হোক আমি পিঠা হাত দিয়ে খাই। আগের সেই ঠান্ডা ভাব পাওয়ার জন্যে। এটার মজাই আলাদা। B-)

কোথায় পাবো আমি আমার সেই শীতকাল, কোথায় হারিয়ে গেলো আমার সেই দিন গুলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×