এগারো বছর দুই সপ্তাহ চলে ব্লগ জীবনের! একটা সময় নাওয়া-খাওয়া ভুলে পড়ে থাকতাম ব্লগে। কত যে বকা খেয়েছি এই ব্লগের জন্যে তার হিসেব নেই। আবার একটা সময়ের পরে সেই পাগলামি কমেও যায়, তবে বর্ষপূর্তিতে একটা পোষ্ট দেইনি এরকম হয়নি হয়ত। এই বছর যেটা হয়েছে। এরকমটা হয়েছে কিছু ব্যক্তিগত কারনে। ব্যক্তিগত জীবনে একটু পরিবর্তন হয়েছে। একটা সময় ব্লগে আমরা একটা পরিবারের মতই ছিলাম, অনেকের স্নেহের ছিলাম আমি। সবাই হয়ত নেই তবে যারাই আছেন মাঝে-সাঝে আসলে খুব ভালো লাগে তাদের সাথে কমেন্টের মাধ্যমে কথা বলতে। মনে হয় আগের সেই টান, সেই ভালোবাসা এখনো রয়েছে। তাই মনে হল আমার এই পরিবর্তনের খবরটা এই ব্লগ পরিবারে জানানোর সময় হয়েছে এখন।
গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে নতুন জীবনে প্রবেশ করেছি মানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি (লজ্জা লাগছে নিজের বিয়ের খবর বলতে )। সে এক কাহিনীময় বিয়ে, বিয়ের আগের দিন রাত ৯টায় ঠিক হল পরেরদিন রাতে আমার বিয়ে। দুপুরে গোসল করে প্রায় বিকেলবেলা বের হলাম পার্লারে সাজতে, এই পার্লার সেই পার্লার করে করে একটা পার্লারে গিয়ে তেমন ভালো লাগেনি আবার খুব বেশি খারাপ ও হয়নি এরকম একটা পার্টি সাজ নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম! ছোট মামা একবার বললেন এত টাকা কাবিন তোমার, আরেকবার বললেন এখানে সাইন দাও। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাইন দিয়ে একটু পরে শুনি বরমশাই কবুল বলছেন! তখন মনে হল হায় হায় কেউ আমাকে কবুল বলতে বলল না, জোর জবরদস্তি করল না, কান্নাকাটি করলাম না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিলাম সাইন হয়ে গেল বিয়ে! কবুল বলতে না পারার এই আফসোস জীবনে যাবে না মনে হয়।
বিয়ের পরে ব্যস্ততায় এখন বুঝি কেন মানুষ বিয়ের পরে বদলে যায়। অথচ বান্ধবীর সাথে কত মান-অভিমান করেছি তার এরকম বদলে যাওয়ায়! আমার রেগুলার অনার্স-মাস্টার্স আরো আগেই শেষ হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই ই আর-এ এম এড করছিলাম। একদম শেষ সেমিস্টারে বিয়েটা হয়। বহুত নাকানি-চুবানী খেয়ে ডুবতে ডুবতে শেষমেষ আল্লাহ'র অশেষ রহমতে সেমিস্টারটা শেষ করেছি এবং ভেবেছি পড়ালেখা অবস্থায় বিয়ে দিলে কী যে অবস্থা হতো আল্লাহ ই ভালো জানেন!
১৫-ই ডিসেম্বর আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয় ১৬-ই ডিসেম্বর বরের সাথে ওমরাহ করতে যাই। ১০দিনের সফর ছিল কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো কেটেছে সেই সময়। মক্কা এবং জেদ্দায় শ্বশুর বাড়ীর আত্মীয় এবং বরের ঘনিষ্ট বন্ধুরা থাকায় ওমরাহ এবং ঘোরাফেরা সব কাজ সহজ হয়ে যায়।
সেখান থেকে ফিরে তিন দিনের মাথায় কক্সবাজার মানে শ্বশুর বাড়ী যাই শ্বাশুড়ীর সাথে দেখা করতে। সেখানে চারদিন কাটিয়ে ঢাকা ফিরি গত পরশু মানে ৫ তারিখ। ফিরেই খবর পাই এক বছর আগে পাবলিশ হওয়া এক চাকরীর রেজাল্টের। মানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অধীনে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে পিএসসি থেকে সুপারিশ করেছিল একবছর আগে, সেটার নিয়োগাদেশ পাই এই বছর জানুয়ারিতে। একদিকে চাকরী পাবার আনন্দ আরেক দিকে নতুন জীবনে প্রবেশ করতে না করতেই বিচ্ছেদের নোটিশ সব মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতিতে আছি।
দোয়া চাইছি সবার কাছে নতুন দুটি জীবনের অর্থৎ সংসার এবং চাকরী জীবনের জন্যে, সবদিকে যাতে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার তৌফিক দেন আল্লাহ তায়ালা।
বিবাহের খানাপিনা চাহিয়া কেহ লজ্জা পাইবেন না, আমি নিজেই নিজের বিবাহ খাইতে পারিনাই। তবে গরীবের ঘরে যেহেতু এসেছেন ই একটু ভার্চুয়াল মিষ্টিমুখ করে যান, গুগলাংকেলের দোকান থেকে ফ্রিতে মিষ্টি এনেছি আপনাদের জন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪১