somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা, আমি ও আমার বন্ধু

১০ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐ আকাশের তারায় তারায় চাঁদের জোছনা
ঝিরি-ঝিরি কাঁপন তোলা, উদাসী হাওয়া
আমার হৃদয় জুড়ে আছো স্মৃতির পাতায় পাতায়
স্মৃতির বুকে অশ্রু ঝরে, হৃদয় ভেসে যায়
আমি খুঁজেছি তোমায় মাগো, আমি খুঁজেছি তোমায়
আমি খুঁজেছি তোমায়

কত স্বপ্ন ছিল বুকের ভিতর তোমায় নিয়ে মাগো
সেই স্বপ্নগুলো থমকে আছে তুমি এসে দেখো
তোমার ছেলের কাটছে সময় কেমন অসহায়
আমি খুঁজেছি তোমায় মাগো, আমি খুঁজেছি তোমায়

আজ ইচ্ছে করে তোমার কোলে একটু মাথা রাখি
এই হৃদয়খানি উজাড় করে মা বলে ডাকি
কেমন করে নিরব থাকো, কোন সে মমতায়
আমি খুঁজেছি তোমায় মাগো, আমি খুঁজেছি তোমায়


ক্লোজ-আপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় গাওয়া রাশেদের গান মা

আজ ’মা দিবস’। সবার জীবনের সবচেয়ে নির্ভরতার স্থান, ভালোবাসার স্থান, পরম মমতার স্থান এই মায়ের কোল। সেই সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা। আমার মা এখনো আছেন। এখনো আমি ফোন করে মায়ের কন্ঠ শুনতে পাই। এখনো আমি পরীক্ষা দিতে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে মা ফোন করে মনে করিয়ে দেন, ’শান্তভাবে পরীক্ষা দিবে। ঠাকুরের নাম নিয়ে বের হও।’ বাসা থেকে যখন ঢাকায় ফিরে আসি, আজ প্রায় ৪ বছর হতে চলল, এখনো সবসময় মাকে প্রণামের পর মাথায় হাত বুলিয়ে কড়ে আঙুলে কামড় দিয়ে আর্শীবাদ করে দেন। প্রতিবার আমি বিরক্ত হই। কি সব ছেলেমানুষী কর!! যখন রিকশায় উঠি তখন হঠাৎ পেছনে পরে গেলে এখনো দেখি মায়ের চোখ ভেজা। আমি চোখ ফিরিয়ে নেই। প্রতিবার ভাবি, আর না। আর মা’র সাথে ঝগড়া করব না, রাগারাগি করব না, মাকে বকবো না। কিন্তু, তারপরও আবারও ঝগড়া করি। আবারও রাগ করে মা’র ফোন ধরি না। মাকে ফোন করি না। মা রাগ করেন। নিজে ফোন করেন না। দাদা ফোন করে, দাদা কথা বলে, পাশ থেকে মা প্রশ্ন শিখিয়ে দেয়!! আমি আড়িপেতে শুনি.. ”কি খাইছে জিজ্ঞেস কর। টাকা লাগবে কিনা??”

এই লেখাটা আমার ভাইপ্রতিম এক বড় ব›ধুকে উদ্দেশ্য করে। হাফ-প্যান্ট পরা বয়স আমরা একসাথে। একই বিল্ডিংয়ে উপরতলা-নীচতলা!! আমার ২ বছরের সিনিয়র, কিন্তু, তাতে কি?? আমাদের তুই-তুই সম্পর্ক!! মা আর আন্টির মাঝেও খুব হৃদ্যতা। আমার মতই ওর সাথে আন্টির সারাদিন খটমটি!! সারাদিন ঝগড়া, চেয়ার-টেবিল নিয়ে টানাটানি!! আমরা নিচে থেকে শুনি!! এই আন্টি কোন এক পূজো উপলক্ষ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। সেদিন আমার বন্ধুও বাসার বাইরে টিউশনিতে ব্যস্ত। ফিরতি পথে রাস্তায় লোকজনের ভীড়। উৎসুক বন্ধুও ভীড় ঠেলে তার সবচেয়ে নির্ভরতার স্থানের করুণ পরিণতিটি চাক্ষুস করল। চলন্ত ট্রাকের ধাক্কায় রিকশা উল্টে মাথায় আঘাত। কে নেবে এই মহিলার দায়িত্ব?? মানুষ শুধু তাকিয়েই থাকে আর হা-হুতাশ করে যায়!! বন্ধু দ্রুত সিএনজি ডেকে হাসপাতালের পথ ধরে। তার সৌভাগ্য। যার কোলে মাথা রেখে সে বড় হয়েছে.. সে-ই আজ তার কোলে মাথা রেখে নির্ভরতায় চোখ বুজে। আমি অনেকদিন তার সাথে দেখা করতে যাইনি। উপরতলায় থাকে। আমি নীচে বসে ঝিম ধরে থাকি। কি সান্ত্বনা দেব আমি?? বলব, দু:খ করিস না। সবাইকেই যেতে হয়।
আমার কাছে পরম উপহাস মনে হয়। কিছু বলা হয় না। ওর সাথে দেখা হয় না। আন্টির শেষকৃত্যে যেতে হবে। আংকেল এসে অনুরোধ করেন, বাবা, তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?? আমি পাশ কাটাই পরীক্ষার উছিলা দিয়ে!! নিজের দায় সাড়ি ১ মাস পরের অনুষ্ঠানে গিয়ে!!
আমার মা ওদের বাসায় যান। প্রায়ই এটা-ওটা রান্না করে নিয়ে যান। মোটামুটি শোক সামলে ওঠার পর একদিন ওদেও বাসা থেকে ফিরে কি এক কথা প্রসঙ্গে হঠাৎ বলে উঠেন.. দেখিস তুই আমার সাথে সারাদিন চিল্লা-চিল্লা করিস.. একদিন ওর মত তুই-ই সবচেয়ে বেশি কাঁদবি। আমি থমকে যাই।

আমি ওর মত সৌভাগ্যবান হতে চাই না। আমি আমার মাকে আজীবন আমার সাথে চাই। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন আমার আর আমার ভাই’র মাঝে ঘুম ঝগড়া!! কথা কাটাকাটি। আমাদের দু’জনেরই তখন বিয়ে হয়ে গেছে!! আমাদের স্ত্রী’রাও আমাদেও উস্কানি দিচ্ছে!!
মা-বাবা দূরে বসে হাসছেন!! কারণ, ঝগড়াটা যে তাদের নিয়েই!! কেন, মা-বাবা একজনের বাসায় বেশিদিন থাকেন না!! আমি চাই, আমার বাসায় থাকুন। আমার কাছে থাকুন। ভাইয়া’র ও একই দাবি। তাই নিয়ে দু’জনের ঝগড়া-ঝাঁটি!!

শুভ মা দিবস।

আজ, ভোরে মাকে এস.এম.এস পাঠিয়েছি.. love you MA
মা এস.এম.এস পড়তে পারেন না। আমি নিশ্চিত, বাবা/ ভাইয়া খুলে দিয়েছে!! কিন্তু, সাথে সাথে এও নিশ্চিত, যে উত্তরটা এসেছে.. valo theko সেটা মায়ের নিজের হাতে লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:৫২
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×