somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ওয়ারন" (মা দিবসের গল্প)

১০ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক
ভয়ংকর স্বপ্নটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না রু এর। স্বপ্নে সে একটা ছোট শিশুকে দেখে। শিশুটি ভয়ে কান্না করছে। নিজের শৈশবের কোন কিছুই মনে নেই রু এর। তবুও সে শিশুটিকে চিনতে পারে। শিশুটি সে নিজেই। ভয়ে কান্নারত। এমন সময় একজন মমতাময়ী মহিলা এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আদর করে বলে, ” কি হয়েছে আমার রু এর? কে মেরেছে? আমার রু কাঁদছে কেন?” রু কাঁদতে কাঁদতে বলে, ”ভয় পেয়েছি মা। একটা ’ওয়ারন’ দেখে ভয় পেয়েছি।” মা হেসে বলে, ”ভীতু ছেলে। ’ওয়ারন’ কে ভয় পাওয়ার কি আছে? ওরাও তো মানুষ।” রু কাঁদতে কাঁদতেই বলে, ”না মা, ’ওয়ারন’রা মানুষ নয়।” মা আয় আমার বুকে আয় বলতেই রু মায়ের দিকে ঝাপ দেয়। একটা শিশুর মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আশ্রয় খুজে নেবার দৃশ্য কোন ভয়ংকর স্বপ্ন হতে পারে না। কিন্তু রু এর কাছে এটাই ভয়ংকর স্বপ্ন মনে হয়। কারণ সে একজন ক্লোন। বিজ্ঞান গবেষনাগারের ল্যাবে টেস্টটিউবে জন্ম তার। ’মা’ নামক শব্দটা তার অপরিচিত। তবুও স্বপ্নে সে মা বলে ডাকছে। আদরের আশায় মায়ের কোলে ঝাপিয়ে পড়ছে। তাছাড়া আরও একটা কারণ আছে। সে একজন ’ওয়ারন’। অথচ সে ই কিনা বলছে ” ’ওয়ারন’রা মানুষ নয়।”

ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে আছে পৃথিবী। প্রায় ১০০০ বছর পুর্বে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনে নেমেছিল নারীরা। অধিকার প্রতিষ্ঠিতও হয়। সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমান অধিকার পেতে থাকে। কিন্তু ঝামেলা বাধল নারীদের একটা বিশেষ সময়কে কেন্দ্র করে। গর্ভাবস্থায় নারী তার পূর্ন দক্ষতায় কাজ করতে পারে না এবং সন্তান জন্ম দেবার পর আরো দু বছর সে সন্তানের লালন পালনে ব্যয় করে। ফলে একজন নারীর জীবন থেকে ঝরে যায় প্রায় ৩ টি বছর। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে উথ্থাপন করা হলে অনেক যুক্তি তর্ক শেষে মাতৃগর্ভে সন্তান ধারণ নিষিদ্ধ করা হয়। সন্তান নিতে চাইলে ক্লোন শিশু নিতে হবে। সেই শিশূ জন্মের পর ৫ বছর ল্যাবের বিশেষ ক্যাপসুলে বড় হবে। জীবন ধারনের সকল উপকরণ থাকবে সেখানে। ক্যাপসুলের মাঝেই বেড়ে উঠবে তারা। ফলে আর কারো সময় নষ্ট হবে না। তাছাড়া আরো একটা সমস্যা আছে। মাতৃগর্ভে জন্ম নেয়া শিশুর মাঝে ভালবাসা নামক এক অদ্ভুত শক্তি কাজ করে। যা বিভিন্ন সময়ে তার দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে।

নতুন এই আইন পৃথিবীর বিঢ়াট একটা অংশ মেনে নিল না। তারা মাতৃগর্ভে সন্তান ধারণের নিয়মেই তারা তাদের জীবন ধারন করতে চাইল। কিন্তু বিজ্ঞান কাউন্সিল তাদের সেই অনুমতি দিল না। যারা মাতৃগর্ভে সন্তান নিত, তাদের ধরে নিয়ে অমানুষিক অত্যাচার করা হত। হত্যা করা হত মাতৃগর্ভে জন্ম নেয়া শিশু। ফলে যারা মাতৃগর্ভে সন্তান নিতে আগ্রহী তারা লুকিয়ে লুকিয়ে সন্তান নিতে শুরু করল। সেই সন্তান বেড়ে উঠত লুকিয়ে। এক পর্যায়ে বিজ্ঞান কাউন্সিলের অত্যাচারের ভয়ে এই সব মানুষ গড়ে তুরল আলাদা কলোনী। তৈরি হয়ে গেল দুইটা গ্রুপ। ক্লোন সম্প্রদায় আর মানব সম্প্রদায়। সময়ের প্রয়োজনেই শুরু হল এই দুই বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ। ক্লোন সম্প্রদায় তৈরি করল তাদের ভয়ংকর তম যোদ্ধা বাহিনী ’ওয়ারন’। যাদের একমাত্র কাজ মানব বসতীতে হানা দিয়ে মানব শিশুদের হত্যা করা। ধীরে ধীরে যুদ্ধটা একতরফা হয়ে গেল। ’ওয়ারন’ বাহিনীর সামনে কোন প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারে না অন্য বাহিনী। ফলে বিভিন্ন গোপন জায়গায় কলোনী তৈরি করে লুকিয়ে থাকতে শুরু করল তারা।

দুই
রু একজন ওয়ারন। প্রথম যেদিন সয়ংক্রিয় লেজার গান দিয়ে একটা মানব শিশু আর তাকে রক্ষা করতে আসা শিশুটির মাকে হত্যা করে সে, সে দিন থেকেই এই ভয়াবহ স্বপ্ন পিছু নিয়েছে তার। বিষয়টা কারো সাথে শেয়ার করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু করেনি। যদি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের কেউ জানতে পারে তবে মানষিক বিকারগ্রস্থ বলে তাকে ধ্বংষ করা হবে। খুবই আনমনে ছিল রু। ফলে যোগাযোগ মডিউলটার বিপ, বিপ শব্দেও চমকে ওঠে সে। রু মডিউলটা স্পর্শ করা মাত্র হলোগ্রাফিক স্কীনে ’ওয়ারন’ বাহিনীর প্রধানের ছবি ভেসে ওঠে।
- ”সুস্বাগতম মহামান্য ইলিয়ন।” রু প্রথা অনুশারে সম্মান জানায়।
- ”একটা মানব কলোনীর খোজ পাওয়া গেছে। রু তুমি তৈরি হয়ে নাও।” এটুক বলেই অদৃশ্য হয়ে যায় মহামান্য ইলিয়ন। রু দ্রুত পোষাক পাল্টে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বের হয়ে আসে।

স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে পাথরের মত দাড়িয়ে থাকে রু। অজানা এক শক্তি তাকে তার ধ্বংষ যজ্ঞে বাধা দিচ্ছে। একজন মা তার সন্তানকে গভীর মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরে আছে। তীব্র ঘৃনা নিয়ে তাকিয়ে আছে রু এর দিকে। শিশুটি ভয়ে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। রু অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, মহিলাটি তার সন্তান ফেলে পালাচ্ছে না কেন? সে তো চাইলেই একজন ক্লোন শিশু নিতে পারে। কেন সে সন্তানের জন্য নিজের জীবণ উৎসর্গ করেতে চাইছে? একজন ক্রোন তো কখোনো অন্য কারো জন্য জীবন উৎসর্গ করে না। তখনই তার স্বপ্নে দেখা মমতাময়ী মহিলার ছবি ভেসে উঠল মনের পর্দায়। মনে মনে ভাবল সে, ”ল্যাবে জন্ম না হয়ে আমার জন্ম যদি এই মহিলার গর্ভে হত সে কি আমাকে ওয়ারন হিসেবে তৈরি করত? বিজ্ঞান কাউন্সিল যদি আমাকে ওয়ারন হিসেবে সিলেক্ট করত আমার মা কি বাধা দিত না? আর কেউ কি বাধা দিত? হ্যা, আমার বাবা দিত, ভাই বোন সবাই বাধা দিত। কিন্তু এখন এই পৃথিবীতে আমি একা। কারণ আমি একজন ক্লোন। আমার কোন পরিবার নেই। আমার জন্য কারো কোন অনুভুতি নেই।

কলোনীর অধিবাসীদের চিৎকার আর কান্নার শব্দে বাস্তবে ফিরে এল রু। তাকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্বয়ংক্রিং অস্ত্র হতে অন্যান্য ওয়ারনরা এগিয়ে আসছে। রু তার অস্ত্রটা শক্ত করে ধরল।

পরিশিষ্ট:
বিজ্ঞান কাউন্সিলের জরূরী সভা বসেছে। ক্লোন সম্প্রদায়ের ইতিহসে এমন ঘটনা ঘটেনি। তাদের পুরো একটা ওয়ারন টিম ব্যার্থ হয়েছে। একজন ওয়ারন যোদ্ধা রু বাকী ওয়ারন দের ধ্বংষ করে দিয়েছে। বিজ্ঞান একাডেমির জন্য এটা একটা বিপর্যয়। সবাই ইলিয়নকে দায়ী করছে এই ঘটনার জন্য। ইলিয়ন উঠে দাড়াল। দেখে বোঝা গেল লম্বা চওড়া একটা বক্তৃতা দেবে। ”মহামান্য বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য গন, সুস্বাগতম।” ইলিয়ন তার বক্তব্য শুরু করল। ’ওয়ারন বাহিনীর জন্য আজ এক মহা বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। একজন ওয়ারন অন্য ওয়ারনদের ধ্বংষ করেছে। এটা প্রায় অসম্ভব একটা ঘটনা । কিন্তু এটা সত্য। কারণ রু কোন ক্লোন নয়। সে আসলে মাতৃগর্ভে জন্ম নেয়া সন্তান।”
ইলিয়ন যেন বোমা ফাটাল কক্ষটাতে। পিন পতন নিরাবতা নেমে এল হল ঘরে। ধাক্কাটা সামলাতে অনেক সময় লাগল সবার। বিজ্ঞান একাডেমির পরিচালক কিরি সবার আগে ধাক্কাটা সামলে নিল। শান্ত স্বরে বলল, ”রু ক্লোন সম্প্রদায়ের মাঝে এল কি করে?”
- ”মহামান্য কিরি, এটা একটা পরীক্ষা মুলক প্রজেক্ট ছিল।” ইলিয়ন তার বক্তব্য শুরু করল। রু কে খুব ছোট বেলায় ধরে আনা হয়। তার স্মৃতি থেকে অতীতের সবকিছু মুছে ফেলা হয়েছিল। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, একজন মানব শিশু ক্লোন শিশুদের মঝে বড় হলে তার মাঝে কোন পরিবর্তন আসে কি না? মাতৃগবে জন্ম নেয়া শিশু আর ক্লোন শিশুর পার্থক্য কোথায়?”
- ”কোন পরিবর্তন আসেনি আমরা সবাই দেখলাম।” বললেন কিরি। ”কিন্তু এর কারণ কি? জেনেটিক্স বিশেষজ্ঞ রাতুল, আপনার মতামত কি?”
একটু কেশে গলা পরিস্কার করে নিল রাতুল। তারপর শুরু করল, ”মাতৃগর্ভে জন্ম নেয়া শিশুর জন্মই হয় বাবা মায়ের ভালবাসা থেকে। তারপর মা শিশুটিকে তার পরম আদরে আগলে রাখে। মায়ের মমতা থেকেও সে ভালবাসতে শেখে। যে গুন একজন ক্লোন শিশুর থাকে না। আমার বিশ্বাস, রু এর মস্তিস্ক থেকে সকল স্মৃতি অপসারণ করা হলেও তার মায়ের স্মৃতি ছিল। যে স্মৃতি সঠিক সময়ে সারা দিয়েছে। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।”
ইলিয়ন ক্ষেপে গিয়ে বলল, ”আপনি কি করে নিশ্চিত হলেন যে, রু এর মস্তিস্কে তার মায়ের স্মৃতি ছিল?”
মহামান্য রাতুল শান্ত স্বরে বলল, ”মায়ের স্মৃতি পৃথিবীর কোন শক্তিই মুছতে পারে না”।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১০ ভোর ৫:১২
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×