somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজন্ম জানতে চায় (১ম পর্ব)

০১ লা মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একাত্তরেরর ২৫ মার্চ রাতে ১২টার পর পাকহানাদার বাহিনী শুধু নিরস্ত্র মানুষের উপরই আক্রমণ করেনি তারা একসঙ্গে রাজারবাগ পুলিশলাইন, পিলখানা (ই.পি.আর) ক্যাম্পে ও ক্যান্টনমেন্টগুলোতে বাঙালী জওয়ানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

নোয়াখালী’র কথায় আসি। ২৫ মার্চ গভীর রাতে (অর্থাৎ ২৬ মার্চ) ঢাকা থেকে জেলা প্রশাসক জনাব মঞ্জুরুল করিম, বঙ্গবন্ধুর প্রথম সারির সহচর মরহুম আবদুল মালেক উকিল ও তখনকার দৈনিক পাকিস্তানের রিপোর্টার (বর্তমান জনকন্ঠের) জনাব কামাল উদ্দিন আহমেদের কাছে গোপন মেসেজ আসে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং ঢাকায় জনতার সঙ্গে পাকহানাদারদের সম্মুখ যুদ্ধ চলছে। কার্য্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ সংযুক্ত। সঙ্গে সঙ্গে নোয়াখালী টাউন হল রূপ নিলো বৃহত্তর জেলার কন্ট্রোল রুমে। পি.টি.আই ভবনে অবস্থান নিলো মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা। যেখানে ছিলো অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনী, অবসরপ্রাপ্ত ই.পি.আর, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ, ও আনসার। জিলা স্কুলে অবস্থান নিলো U.O.T.C ও J.C.C ট্রেনিং প্রাপ্ত কলেজ ও স্কুলের ছাত্ররা। জিলা স্কুল ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলামম আমি নিজে। P.T.I দায়িত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ও নেভীর কমান্ডার রফিক। উভয় কেন্দ্রে অস্ত্র সরবরাহ করেন ৭১ এ অবস্থানরত নোয়াখালী’র D.C/S.P জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট ও মহকুমা আনসার অ্যাড। টাউন হল কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বে ছিলেন মরহুম এম.এ. আজিজ। ১৯৭১ এর ১৫ মার্চ থেকে এক মাস নোয়াখালী শত্রুমুক্ত ছিলো। এর পর পাকবাহিনী আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নোয়াখালী তাদের দখলে নিয়ে যায়। আমরা সবাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যাই। ট্রেনিং নিয়ে (এ জেলার ছেলেরা দেশের প্রত্যেকটি জেলার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে) সকল মুক্তিযোদ্ধা ক্রমে ক্রমে ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করে। কয়েকটি যুদ্ধের কাহিনী:

রাজগঞ্জ যুদ্ধ:
পুরোনো কলেজের পরে রাজগঞ্জ। ৭১ সনের ২১ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬ টি দল একত্রিত হয়ে পাকবাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য রাজগঞ্জ বাজারের চতুর্দিকে অবস্থান করে। রাজগঞ্জ বাজার থেকে মাইজদীতে অবস্থানরত পাকবাহিনী’র কন্ট্রোলরুমে বারবার টেলিফো করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করা হয় এবং পাকবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য আহবান জানানো হয়।২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর ৫টি দলকে প্রত্যাহার করে অন্য জায়গায় অপারেশনে পাঠানো হয়। শুধু ১টি দল রাজগঞ্জে রইলো। পাকবাহিনী এই তথ্য গোয়েন্দা মাধ্যমে জেনে ঐদিন রাত ৩.৩০ মি: রাজগঞ্জ বাজারের ৫ দিক থেকে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের রাজগঞ্জে অবস্থানরত হাশেম কমান্ডারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষুদ্র দলটি মাইজদী বাজার থেকে ছয় আনি রাস্তা দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। পুরোনো নোয়াখালী কলেজের কাছ থেকে পাকবাহিনী ২ ইঞ্চি মর্টার দিয়ে ফায়ার অব্যাহত রাখে।আর পাকবাহিনী ৪টি দল আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রের সাহায্যে মুক্তিবাহিনীর উপর বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাশেম দৃঢ়তার সাথে পাকবাহিনীর মোকাবেলা করতে থাকে। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৭.৩০ মি: পর্যন্ত যুদ্ধ করে মুক্তিবাহিনী প্রায় ২৩ জন পাকহানাদারকে হত্যা করে। ছয়আনি বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ১টি দল কমান্ডার হাশেমকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসার চেষ্টা করলেও সম্মুখ যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর গোলাবারুদ শেষ হয়ে যায়। কমান্ডার হাশেম নীরব হয়ে প্রায় ৩০ মি: নিজ অবস্থানে টিকে ছিলেন। শত্রুপক্ষ এ নীরবতার কারণ বুঝতে পেরে মুক্তিবাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফে‍লে এবং কমান্ডার হাশেমকে গুলি করে হত্যা করে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সবুজ ও রবি পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তরুণ সবুজ (পিতা: মৃত সিদ্দিক উল্যা। থানা: মান্দারী, জেলা: নোয়াখালী)ও রবি (পিতা: হরিমোহন সাহা, গ্রাম: ভবানিগঞ্জ, জেলা: লক্ষীপুর) এই ছিলো দুইজনের ঠিকানা। অন্যদিকে পাকবাহিনীর যে দল রাজগঞ্জ আক্রমণ করেছিলো তাদের হাতে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হায়দার ও সফিক ধরা পড়ে। গোলাম হায়দারকে সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করে এবং সফিককে মাইজদী কোর্টে নিয়ে যায়। পাক বাহিনী ঐ এলাকা থেকে আরো ৬ জনকে বন্দী করে নিয়ে যায়। পাক হানাদার সবুজ, রবি, মানিক ও ঐ ৬ জন লোককে মাইজদী জেনারেল হাসপাতালের পূর্ব উত্তর কোনের বিল্ডিং এর কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে গণকবর দেয়।

(চলবে)


► লেখক: সাইফুল আলম জাহাঙ্গীর
সাবেক ইউনিট কমান্ডার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নোয়াখালী।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক স্বাধীনতা ২০০৩ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকালঃ মার্চ ২০০৩।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:১৬
২৯টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×