রিয়োটা বসে বিস্কিট খাচ্ছে। তাকে একটি বিস্কিটের ব্র্যান্ডের এম্বাসেডর বানানো হয়েছে। এখন সে বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনটিতে আপাতত তার একমাত্র কাজ বসে বসে বিস্কিট খাওয়া। কয়েক সেকেন্ড ধরে ক্যামেরার সামনে বিস্কিট খাওয়ার জন্য তাকে বাড়াবাড়ি অংকের টাকা দেয়া হবে। অবশ্য তাকে দেয়া হবে না। কারণ রিয়োটার সাথে ব্র্যান্ডের কন্টাক্ট হয়নি, হয়েছে তার মালিকের সাথে। যিনি রিয়োটাকে তার জন্মের পর থেকে পুষছেন।
রিয়োটা হলো পৃথীবির প্রথম সোজা লেজওয়ালা কুকুর। যার লেজ চাইলেও বাঁকানো যায় না। সে আজ কুকুর সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সেলিব্রেটি।
যাইহোক, রিয়োটা বিজ্ঞাপনের কাজ শেরে এখন বাড়ি ফিরছে, গাড়িতে। তার আরো কিছু কাজ ছিল অবশ্য। কিন্তু রিয়োটার শরীর খারাপ লাগছে। বিজ্ঞাপনের স্পটে বসেই সে একবার বমি করেছে। এই মাত্র আবার করল, গাড়িতে। তার মালিক ভাবছেন বাড়ি না যেয়ে সোজা হাসপাতাল যাবেন। তখন হঠাৎ নীল শার্ট পরা এক লোক তাদের গাড়ির সামনে পরল। রিয়োটার মালিক গাড়ি চালাচ্ছিলেন, কড়া ব্রেক না ধরলে হয়তো লোকটা এতক্ষণে ওপারে চলে যেতেন। লোকটার তেমন কিচ্ছু হয়নি, মাথা ঘোড়ানো ছাড়া। অবশ্য তার মাথা ঘোড়ানোর সাথে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি কয়েক মিনিট আগে বেশ কিছু কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন, ২০-২২ টার মতো এম্বিয়েন। তিনি গুনে দেখেননি। রাস্তার পাশেই সেন্ট্রাল পার্ক। সেখানে বসে ওষুধ গুলো খেয়েই তিনি রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। কয়েক মুহূর্ত রাস্তার মাঝখানে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থেকে তিনি আবার পার্কের দিকে গেলেন। কিন্তু রিয়োটার মালিক কোথাও গেলেন না। তিনি গাড়ি থেকে নেমে ১০ মিনিট ধরে নীল শার্ট পরা লোকটাকে গালিগালাজ করলেন। রাস্তার আশেপাশে কেউ ছিল না, একটু দূরে ফুটপাতে সিগেরেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ ছাড়া। রিয়োটার মালিক নীল শার্ট পরা লোকটাকে আরো গালিগালাজ করতেন, যদিও লোকটা এতক্ষণে পার্কের গাছগুলোর মধ্যে হারিয়ে গেছেন। এছাড়া তিনি যে গালিগালাজে তেমন কান দিয়েছেন তাও না। রিয়োটার শরীর আরো খারাপ হয়ে যাওয়ায় তার মালিক গালিগালাজ ছেড়ে গাড়ি নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলেন। ফুটপাতে সিগেরেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বৃদ্ধ লোকটা তা লক্ষ্য করেছেন। তিনি একবার ভাবলেন লোকটার সাথে কথা বলবেন। নীল শার্ট পরা লোকটার হাবভাব সুবিধার ঠেকছে না। আবার পাগলও হতে পারে, কেজানে। যাকগে, বৃদ্ধ সেই পাগলের দিকে এগোবেন না ঠিক করে সিগেরেট টানতে টানতে নিজের বাড়ির দিকে এগোচ্ছেন, আর ভাবছেন তার বয়স হয়ে গেছে। এখন আর অদ্ভুত কিছু তাকে তেমন আকর্ষণ করে না। সত্যিই বয়স মানুষকে বদলে দেয়। তিনিও যুবক থাকতে কম অদ্ভুত কাজ করেননি। কলেজে থাকতে তিনি প্রথম সিগেরেট খান। তাও কলেজের টয়লেটে দাঁড়িয়ে। ব্রেকের পরের পিরিয়ড অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। হঠাৎ কোত্থেকে কলেজের এডমিন এসে হাজির। কলেজে কিছু ছোকরার সাথে তার শত্রুতা ছিল। তারাই খবর দিয়েছে হয়তো। স্যার আসছেন টের পেয়ে তিনি জ্বলন্ত সিগেরেট রেখে দিলেন তার প্যান্টের পকেটে। সে এক কান্ড ছিল! বৃদ্ধ সে কথা মনে করে অজান্তেই হো হো করে হেসে উঠলেন। নিজের হাসির শব্দেই হোক, কিংবা বাসের তীব্র হর্ণের আওয়াজে- তার চিন্তায় বাধা পরল। তিনি সেই সিগেরেট-কাহিনীর কথা ভাবতে ভাবতে কী করে যেন ফুটপাত থেকে রাস্তায় চলে এসেছেন। তার বয়স হয়েছে, এত খেয়াল থাকে না, এমন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তিনি রাস্তায় এসে একটা চলন্ত বাসের সামনে পরলেন। কী করবেন তা ভাবার আগেই বাসটা তাকে চাপা দিয়ে চলে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তিনি মারা গেলেন। হঠাৎ মৃত্যু বলতে যা হয় আরকি! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি মারা যাওয়ার আগ মুহূর্তে কী তার ছোটবেলার বন্ধুটার কথা মনে করেছিলেন? কেজানে। সেই বন্ধু সবসময় তাকে বলতেন, "তুমি এত সিগেরেট কী করে খাও? দেখে নিও, এই সিগেরেটই একদিন তোমাকে মারবে, in one way or another." উত্তরে বৃদ্ধ হাসতেন। কী অদ্ভুত! মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও তিনি হাসছিলেন।
বৃদ্ধ যখন মারা যান, তখন ঘড়িতে ঠিক ৪:০৭ বাজে। তার আধ ঘন্টার মধ্যে সব বড় বড় স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেয়া হলো- "আজ বিকেল ৪:০৭-এ মৃত্যু বরণ করল বিষ্ময় কুকুর রিয়োটা"।
নির্বোধ সোজা লেজওয়ালা কুকুরটাও মরেছে। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার কিছুক্ষণ দেখে বললেন আর 'দশটা মিনিট' আগে আনলেও নাকি কিছু একটা করা যেত। সত্যিই কী কিছু করা যেত? নাকি এটা কথার কথা? ১০ মিনিটে কী আর তেমন কিছু হয়? কিংবা, কেজানে, হয়তো হয়।
যাইহোক, কথা হচ্ছে- রিয়োটার মৃত্যুতে সবাই শোকাহত হলো। অথচ একই সময়ে মারা গেছে সেই নীল শার্ট পরা লোকটাও। এখানে শোকাহত হওয়ার লোক নেই। কারণ এই খবর এখনো কেউ জানে না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:১০