বিভাবরির সাথে কিছুক্ষণ
অনিন্দ্য সুন্দর এক তরুণী ডাক্তারের সাথে কথা হোত আমার চাকরির শুরুতে প্রায়শঃই রাতের ডিউটিতে। যে তখন ইন্টার্নি করছিল, তার কলেজ হাসপাতালে; দেশসেরা ঢাকা মেডিকেলে। আমাকে ফোন করত সে মধ্যরাতের পরে, আমি যখন আমার হাতের কাজ শেষ করে, রাতের খাবারের অপেক্ষায়। কিংবা শেষ করেছি মাত্র এমন সময়। ক্ষণ মেপে মেপে ফোন করত আমায় সেই সময়। সারারাত আমরা কথা বলতাম, কতো কথা, কতো কবিতা! তার ভালোলাগত আমার তাৎক্ষনিক বানানো কথা কবিতা; সে কি তার উচ্ছাসভরা আনন্দজাগানিয়া মুগ্ধতা! ডাক্তার হতে চায়নি সে কোনোদিন কোনোকালে এমনকি তার সঙ্গীটি ডাক্তার হোক তাও সে চায়না আক্ষেপ করে বলত, ‘শেষ পর্যন্ত এই ছিল তার ভালে? বাবা মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই,নিজের স্বপ্নকে সে দিয়েছে জলাঞ্জলি আমি তাকে কি বলতে পারি, কিইবা তারে বলি!! সাহিত্য পড়বে ইচ্ছে ছিল তার ইংরেজী কিংবা বাংলা; হোলনা পড়া আরএবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে; শেষতক কি আর করা! বাবা মায়ের ইচ্ছেতেই মেডিকেলে পড়া। মৃত মানুষের শরীর নিয়ে ব্যবচ্ছেদের ক্লাস ঘরে প্রথম দিনেই ওয়াক ওয়াক করে বমি করার পরে একেবারেই অজ্ঞান, তারপরেও কীভাবে যে সঁপেছে সে তারমনপ্রাণ; এই ডাক্তারি বিদ্যায়, সেটাই তারআজো বিস্ময়। রাতের ডিউটি ভালোলাগেনা, আর ডাক্তারিতো নয়ই, আরো আরো কতো কতো কথা! কখনো চুড়ির শব্দে জলতরঙ্গের সুর আবার কখনো নিরবতা। একদিন বললো সে,‘চলে এসো আজ বিকেলে, কফি খাবো একসাথে বিকেল বেলায়’। ‘কফি হাউসতো নেই আমাদের এই ঢাকায়! তুমি চলে এসো, বন্ধু আমার! তেঁজগায়ের কুপার্সে’ আমি তাকে দেখিনি কখনো আগে, জিজ্ঞাসিলাম, আমি তোমায় চিনব কিভাবে? তার জবাব ছিল, ‘কবি, আমি তোমার জন্য পড়ব নীলাম্বরী! যে তুমি আমায় নাম দিয়েছ প্রিয় বিভাবরি’!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯