অতঃপর ভালোবাসায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত যেটা তা হলো অনুভূতি। ভালোবাসার সংজ্ঞা কেউ জানুক কিংবা না জানুক, মানুষগণ ভালোবাসেই। বর্ষায় হোক আর বসন্তেই হোক, হৃদয়ে প্রেম আসবেই। যখন প্রেম এসে যায় হৃদয়ে তখন তার অনুভবের জগৎ হয়ে যায় অপার আনন্দময়। যেখানে শব্দ ঝর্ণার কলধ্বনি, বর্ণইন্দ্রধনু আর অস্তিত্ব পূর্ণিমাময়।
১.
- আসলে মীরা, প্রাইভেট ভার্সিটিতে যে এমন র্যাগিং হয় আমি জানতাম না। আমি সত্যি সত্যি খুব বিরক্ত এখন! আর সম্ভব হচ্ছে না, প্রতিদিন এই ফাইজলামির।
- কেনো ফালতু চিন্তা করতেছিস? বাদ দেয় এসব ফাউল ছেলেদের কোনো কাজ নেই তাই এগুলো করে। বিয়াদপ একেকটা!
- বাদ দেবো কি করে? সেই ফার্স্ট ইয়ারে র্যাগিং করেছিলো, যে তার বউ হয়ে অভিনয় করতে হবে। আর সেই থেকে তার বউ বউ করে পুরো ক্যাম্পাসে বলে বেড়াচ্ছে। এখন থার্ড ইয়ারে। কোনো ছেলের সাথে কথা বললে সেই ছেলেকে মারে। ভার্সিটি থেকে কোথাও বেড়াতে তার জন্য আমি যেতে পারি নি! এগুলো আর কতো সহ্য করবো। বল?
- এক কাজ কর, একটা বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেল। দেখবি সমস্যার সমাধান। আর বড়ো কথা হলো আর কতো সিঙ্গেল থাকবি!
- আসলে লোকেরা এমনি এমনি বলে না যে, দুটো মেয়ে এক সাথে কিছুর সমাধান খুঁজা মানে সমস্যাকে বড়ো করা। চিন্তা করে দেখ, যার সাথে প্রেম করবো তার কি অবস্তা করে শয়তানটা!
কিচ্ছু করতে পারবে না। গ্রান্টি। যদি এক ঘন্টা সময় আমাকে দাও। পেছন থেকে একটা ছেলে বললো!
- আপনি কে? আর লুকিয়ে লুকিয়ে দুইটা মেয়ের কথা শুনছেন! এটা কিন্তু খারাপ অভ্যাসে পড়ে!
- আমি হলাম “কে” সেটা পরে বলি। সবে মাত্র এসেছি ক্রেডিট টান্সফার করে এখানে। সো, আগে তোমার প্রবলেম সোল্ভ করি তারপর না হয় চেনাজানা হবে।
- হুম! সুযোগ পেলে ফাইজলামি করার অভ্যাস সবার আছে। আপনি জান তো আপনার কাজে প্লিজ।
- ধুর বেশি কথা বলে! আগামীকাল তুমি তোমার শয়তানটাকে “সি আই” পার্কে বলো আসতে সকাল ৮ টার দিকে। আর তুমি ৭:৩০ এ এসো। মনে রেখো সমাধান হবেই তোমার।
(এটা বলে অচেনা ছেলেটি চলে গেলো।)
মীরা এটা পাগল নাকি?
- হ্যাঁ এটা পাগলই প্রায়।
- মানে তুই চিনিস নাকি?
- হ্যাঁ। কলেজে এক সাথে পড়েছি। ওর কথা শুনিস না। আস্তো পাগল একটা। সমস্যা তার কাছে আসে না ভয়ে। কেননা, সমস্যার পেছনে সে দৌড়ে বেড়ায়। আসি রে দেরি হয়ে গেলো।
- হুম। ভালো থাকিস!
২.
শুভ্রা ঠিক ৭:৩০ এর দিকে চলে আসলো পার্কে। সারারাত অনেক চিন্তা ভানবনার পর। তিন বছর হলো কেউ তো এমন করে আশ্বাস দেয় নি যে “সমস্যার সমাধান হবেই বলে!” দেখি কি হয়!
ছেলেটা আসছে তৈরি হয়ে যাও। আমি তোমার আশেপাশে আছি। ভয় নেই বলে অচেনা ছেলেটা চলে গেলো!
- তুমি আমাকে এখানে কেনো ডেকেছো এতো সকাল সকাল? কি প্রয়োজন বলো? (খুব রাগ নিয়ে বলল ভার্সিটির বিয়াদব ছেলেটা)
- গলা নামিয়ে ভদ্র ভাবে কথা বলো? শুভ্রা ছেলেটার চোখের দিকে চোখ রেখে বললো!
- বাহ! এতো সাহস, তেজ দেখে যেমন আমি ভয় পাচ্ছি। একটা চড় দিয়ে গাল ফাটিয়ে দেবো। চিনিস আমাকে?
- চড় তো পরের কথা! সাহস থাকলে হাতটা ছুঁয়ে দেখা, নেয় ছুঁয়ে দেখা। শুভ্রা হাত বাড়িয়ে দিলো!
- জানো আমি কি করতে পারি তোমাকে চাইলে?
- তুই কি করবি তা আমার জানা হয়ে গিয়েছে। নেয় হাতটা শুধু একবার ছুঁয়ে দেখা পারলে? কি হলো? কি ভাবছিস? পেছন যাচ্ছিস কেনো? তোকে তো ভার্সিটির সবাই ভয় পায় এখন হাত ছুঁতে ভয় পাচ্ছিস কেনো? ছুঁয়ে দেখা, ফাউলের ঘরে ফাউল। ভীতুরডিম কোথাকার!
হাহাহাহা! কি ব্যাপার শুভ্রা? তুমি তো শুধু শুধু ভয় পেতে ওকে। দেখলে পালিয়ে গেলো কেমন?
- থ্যাংকইউ থ্যাংকইউ! সত্যি আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমি এতো দিন ওকে কেনো ভয় পেয়ে আসছিলাম। হাহাহাহাহা এখন ভাবতেই অবাক লাগতেছে। আচ্ছা তোমার নাম কি?
- অভি।
৩.
-অভি আজ তো ভার্সিটি লাইফের শেষ পরীক্ষা! একটা কথা ছিলো!
- কি কথা?
- কি করে বলবো বুঝতে পারতেছি না।
- নির্দ্বিধায় সোজা করে বলো না পেছিয়ে। তুমি যদি কাউকে হতাশায় ভোগাও তার থেকে তুমি নিজেই দূরে চলে যাবে।
- একটা ছেলেকে ভালো লাগে! খুব পছন্দ করি। কি করে বলবো বুঝতে পাচ্ছি না?
- তোমার বাবা মাও আছেন বেঁচে। তোমার দাদুমা কবে মারা গিয়েছেন?
- এইতো ক্লাস নাইনে। কেনো?
- তুমি তাকে কেমন মিস করো? ধরো, তোমার দাদুমাকে ফিরে পেলে তখন তুমি কি করবে?
- আসলেই তুমি পাগল। যা সম্ভব নয় তা ধরে নেবো কেনো?
- ধুর যেটা বলি সেটার উত্তর দাও?
- অনেক অনেক মিস করি বলে বোঝানো যাবে না। যখন উনার কথা মনে পড়ে কিভাবে চোখে পানি চলে আসে বোঝতেই পারি না। দাদুমাকে বড্ড ভালবাসতাম। অনেক ইচ্ছে, কথাগুলো বাকি থেকেই গেলো আর তো বলাই যাবে না।
- হুম! সেটা। আজ যাকে পছন্দ করো অথচও বলতে পারতেছো না। একদিন ঠিক তার জন্য এমনি ভাবে একা একা নিজের সাথে তাকে নিয়ে কথা বলবে। বড়ো কথা হলো, যার যায় সেই জানে বিচ্ছেদের কি যন্ত্রণা। বুঝলা!
- হুম! বুঝলাম।
কিছুক্ষণ পর-
- অভি শোনো...
- হ্যাঁ বলো শুভ্রা।
- যে সাহস তুমি আমার মাঝে জাগরণ করেছো ভার্সিটিতে আমার অচেনা হয়ে এসে। এটা সত্যি দারুণ ব্যাপার। ভাবছি, তোমাকে জীবনে পেলে জীবনটা আরো সুন্দর হবে! অভিকে লক্ষ্য করে কথাগুলো বলে শুভ্রা চলে গেলো।
৪.
- তাহলে তুমি লন্ডন যেতে চাও! সেখানে “এ সি সি এ” কমপ্লিট করে চাকরি নিবে! তারপর আমরা বিয়ে করবো। শুভ্রা জিজ্ঞাস করলো অভি কে!
- আমি এসব ভবিষ্যতের জন্য করছি।
- এটা তোমার ভবিষ্যৎ। তাহলে আমি এখানে কোথায়?
- শুধু এক বছর প্লিজ!
- আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে! এর মধ্যে যদি আমার বাবা মা বিয়ে দিয়ে দেন?
- যদি এমন পরিস্থিতি আসেও আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু এখন না। শুধু একটা বছর।
- বেশ। ভালোবাসায় কখনো দ্বিতীয়বার সুযোগ থাকে না। মনে রেখো অভি। বলে শুভ্রা চলে গেলো।
অভি সব কিছু গুছিয়ে চলে গেলো তার পথে ভবিষ্যতের গন্তব্য খুঁজতে।
শুভ্রা ভীষণ রেগে আছে আজ প্রায় দুই মাস চলে গেলো ফোনে এতো কল দিলাম একটাবারও কলটা রিসিভ করে নি। যতোদূর শুভ্রাকে চিনি-জানি সামনাসামনি না গেলে ওর রাগ ভাঙ্গানো যাবে না।
কি আর করার আছে এখন বর্তমান সময়ে আমি সময়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছি।
দেখি সময়টা আমাকে কোথায় নিয়ে দাঁড়ায়!
৫.
আগামীকাল থেকেই আমার এক্সাম শুরু হবে। ভীষণ চিন্তায় আছি।
শুভ্রারও কোনো খবর নেই! শুভ্রাকে জানাতে পারলে অনেক খুশি হতো যে, আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর কয়েকটা দিন ব্যাস। তারপর শুভ্রার বাবার কাছে গিয়ে বলবো আংকেল আমি সাকসেস। এবার আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিতে বোধয় আপনার আর দ্বিধাবোধ করবেন না।
শুভ্রা যেদিন বলেছিলো, “ভালোবাসায় কখনো দ্বিতীয়বার সুযোগ থাকে না। মনে রেখো অভি”।
সেদিনি আমি শুভ্রার বাসায় গিয়েছিলাম ওর বাবার সাথে দেখা করতে। দেখা করতে মানে আমার আর শুভ্রার বিষয় নিয়ে কথা বলতে।
শুভ্রার বাবা বিষয়টা খুব স্বাভাবিক ভাবে নিলেও উনার কথা গুলো ছিলো একজন বাবার যা ইচ্ছে, চিন্তা তার মেয়েকে নিয়ে তাই প্রকাশ করলেন।
আমি শুরুতে বললাম-
- আংকেল কথাটা হলো আপনি অন্য কারো মুখ থেকে শুনার চেয়ে তাই ভাবলাম আপনাকে সরাসরি বলি। আমার আর শুভ্রার ব্যাপারে। চাইলে পালিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু এখানে পালিয়ে যেয়ে হয়তো আমরা ব্যক্তিগত ভাবে খুশিই থাকবো কিন্তু এখানে দুটি পরিবারের সম্পর্কের অবদান আছে। যদি আপনার মতামত জানাতেন তাহলে ভালো লাগবে আমার।
- দেখো বাবা, কাউকে ভালোবাসা খারাপ কিছু না। কিন্তু মেয়েটা পালিয়ে আসতে বলা এটা অবশ্যই ভুল। তুমি বর্তমানে কি করছো?
- আমি “বিবিএ” তে পড়ছি।
- “বিবিএ”! তুমি ওকে কিভাবে “বিবিএ” শেষ হবার পর দেখাশোনা করবে?
- আংকেল, ফাইনাল এক্সাম মাত্র শেষ হলো। ইন্টার্নি দিয়েই একটা চাকুরি পেয়ে যাবো।
- গুড। কনফিডেন্স থাকা ভালো। তবে তোমার আশেপাশের দুই তিন বছর আগের ছাত্ররা পাবলিক ভার্সিটি থেকে ডিগ্রী অর্জন করে এখন ঘুরছে, এমনকি তাদের সিজিপিও ভালো কিন্তু তারা এখনো বেকার! আর তুমি প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে চাকরি হয়তো বা পেয়েই যাবে! কিন্তু তখন তুমি নিজেকে গুছিয়ে নেবে না শুভ্রাকে সুখী করতে পারবে?
- আংকেল ভালো অবস্থানে তো যেতে হলে একটু সময় লাগবে। সেটা না হয় সময়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো না?
- হাহাহাহা! সরি হাসি চলে আসলো। আমি যে বড়োলোকি ভাব দেখাচ্ছি সেটা ভেবো না কিন্তু সত্যি কথা হলো যে, জন্মের পর যখন বাবা শুনতে পারে যে তার মেয়ে হয়েছে তখনও একটা বুকে মুচড় দিয়ে উঠে। একটা মেয়ের বাবা তার মেয়েকে নিয়ে তখন থেকেই চিন্তা করতে শুরু করে দেয়। মেয়ের জন্য ভালো একটা স্কুল, ভালো কলেজ, ভালো একটা ভার্সিটিতে পড়াবে। যাতে মেয়েটার কখনো কষ্ট না হোক। আর বাবারা মেয়েদের বেশি আদর ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করার পেছনে একটাই কারণ সকল বাবার কাছে যে, “একদিন মেয়েটা অন্যের ঘরে চলে যাবে বউ হয়ে” এটা তো বিয়ের আগের চিন্তা। “সেখানে কিভাবে জীবনযাপন করছে” এই চিন্তাটা নিয়ে তখন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভেবে ভেবে যায়।
বাবা এসব কিছুই লাগবে না। আমি অল্পতেও সুখী আর ওকে পেলেই। শুভ্রা দরজার পাশে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বললো।
- এখন এ সব বলা সহজ। কিন্তু বিয়ের পরে, যদি তুমি সিনেমা বা শপিং করতে চাও; তোমার হাজার বার চিন্তা করতে হবে। সেই ব্যাপারে। যদি কোনো কিছু খারাপ ঘটে তোমার এই বাসায় ফিরে আসতে হবে। বুঝেছো বলে শুভ্রার দিকে কথাগুলোর তীর ছুড়লেন শুভ্রার বাবা।
শোনো অভি! আমাদের কেবল একটাই চিন্তা-
তুমি কি আসলেই ওর দেখাশোনা করতে পারবে কি না?
আমরা সব সময় চিন্তা করি; আমাদের মেয়েকে যোগ্য ছেলের সাথে বিয়ে দিতে। এরপর চলে আসো জীবনে তোমরা তাদের। আর জীবনের সেই প্রতিচ্ছবির নাম দাও “ভালোবাস”। আর বিয়েও যদি করে ফেলো পালিয়ে, তারপর তোমরা বাচ্চাও নিয়ে ফেলো, এরপর ওদের কষ্ট করতে ছেড়ে দাও। একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এভাবেই ভেস্তে যায়। যদি আমরা বাবারা নিশ্চিত হয়ে যাই, তোমরা আমাদের মেয়েকে ভালো রাখতে পারবে। যদি মেয়েও পালিয়ে যায়, আমরা কিছুই মনে করবো না। আমরা এখানেই শান্তিতে থাকবোই। তোমার যদি সেই যোগ্যতা না থাকে, তাহলে তুমি আসতে পারো।
শুভ্রার বাবার কথা গুলো শুনে ভেতরে কেমন জানি একটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
তখন মনে হয়েছিলো জীবনের সবচেয়ে বড়ো অর্জনই হচ্ছে কারো দায়িত্ব নিলে সেটা পরিপূর্ণ ভাবে পালোন করা। ভালো তো বেসেছি কিন্তু ভালোবেসে কাউকে কষ্টের সম্মুখীন করাটাকে ভালোবাসা বলে না। আমি শুভ্রার সাথে এটা করতে পারবো না বলেই লন্ডনে আসা।
এটা সত্যি নাকি? বিশ্বাস হচ্ছে না!
শুভ্রার বাবার কথা গুলো চিন্তা করতে করতে শুভ্রার ফোন কল এসেছে। ভালোই হলো।
- হ্যালো... শুভ্রা কেমন আছো?
- ভালো! তুমি কেমন আছো?
- তোমাকে ছাড়া যেমন থাকা যায় আরকি। শোনো ভালোই হয়েছে তুমি ফোন দিয়েছো, তোমাকে তো ফোন দিলেই পাওয়াই যায় না। দোআ করো। আজকে থেকে এক্সাম শুরু হলো, এক্সাম হলেই যাচ্ছি বড়ো টাইমিং করে ফোন কল দিলে। এক্সাম গুলো ভালো ভাবে দিতে পারবো। তুমি ফোন কল না ধরার চিন্তায় অনেক হতাশায় ছিলাম। এখন মনটা বেশ ফুরফুরা লাগছে।
- আচ্ছা এক্সাম দাও। পরে কথা হবে।
- কিছু বলবে নাকি?
- না! তোমার অবস্তা জানার জন্য ফোন দিলাম। ভালো থেকো।
- ওকে! বাই!
(শুভ্রার ফোনের উদ্দেশ্য ছিলো অভিকে বলতে যে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শুভ্রা বলতে পারলো না অভি যে একটা ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন আছে সেটা ভেবে। ফোনে যখন অভি কথা বলেই যাচ্ছে তখন শুভ্রার চোখে জল গুলো টলমল করছিলো। অনেক কষ্টে শুভ্রা নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলো।)
৬.
লোকে বলছে অদ্ভুত একটা পার্টিতে এসেছি!
অবশ্য আমার কাছে সেটা তেমন অদ্ভুত মনেই হচ্ছে না। রাকিব এবং আফরিন এর দীর্ঘ ৫ বছর প্রেম করার পর তারা হাসি মুখে তাদের ব্রেকআপ পার্টি দিচ্ছে। তারা দীর্ঘ বছর প্রেম করে বোঝতে পারলো তারা কেউ কারো সোল-মেট নয়! তাই তারা তাদের ভালোবাসাকে উৎসবমুখর সময় দিয়ে দুইজনের ব্যক্তিগতটাকে নিজ নিজ ব্যক্তিগত’তে আবার নিয়ে যেতে চায়। বিষয়টা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগছে। কেননা, তারা বোঝতে পাচ্ছে ভালোবাসা এক সময় সময়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। আর তার সাথে যখন মানুষ সময়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় তখন সময়ই তাদের পরিবর্তনশীল করে তোলে।
- আচ্ছা রাকিব এবং আফরিন তোমরা কিভাবে বুঝে গেলে যে ৫ বছরের মধ্যে আর যে ভালোবাসা নাই? তোমরা বিয়ে করো! তারপর বাচ্চা হলে ঠিকই বোঝতে পারবে। এখনো সময় আছে ভালো কিছু চিন্তা করো, তোমাদের আরো কিছু সময় নেওয়া উচিৎ আমি মনে করি! কি বলো শুভ্রা?
- হ্যাঁ রাফি তুমি ঠিক বলেছো! তোমাদের আরো একটু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্তটা নেওয়া উচিৎ রাকিব এবং আফরিন।
অভির কথা গুলো শুনেই মেজাজ খারপ হয়ে উঠলো। কে এমন মহান জুটি যে এমন ভাবে বলছে, মনে হচ্ছে উনারা বাল্যকাল থেকেই প্রেমিক প্রেমিকা। পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে অভি সে আর কেউ না। শুভ্রা।
কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো শুভ্রার দিকে অভি।
অভি লন্ডন থেকে ফিরে গিয়েছিলো সোজা শুভ্রার বাড়ির দিকে। গিয়ে সেখানে শুনতে পারলো, শুভ্রার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তখনই অভি আবার ফিরে আসে লন্ডনে। তবে সে জানতো না যে শুভ্রা লন্ডনে এসেছে। ভালো তো! অন্যকে যে মেয়ে বুঝিয়ে কথা বলতে শিখে ফেলেছে সেই তো নিঃসন্দেহে সুখী।
শুভ্রা সুখেই আছে।
অভি শুরু করলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে-
সময় নিতে বলা হচ্ছে রাকিব আর আফরিনকে?
(শুভ্রা অভিকে দেখে হকচকিত হয়ে পড়লো। শুভ্রা অভির দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে, অভি সেটাকে তেমন ভাব নিয়ে পাত্তা দিলো না, বোঝালো শুভ্রাকে।)
কি মহান জুটি আপনারা। ওদেরকে যে বলছেন সময় নিতে?
বাচ্চাকাচ্চা হওয়া পর্যন্ত সময় নিতে? ওদের এখনই আলাদা হওয়া উচিৎ!
যখন ওদের ভুল বোঝার জিনিসও ভুল বোঝাবোঝিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এরপর বাচ্চা হলেও ঝগড়া করবে, কার কাছে বাচ্চা থাকা উচিৎ, তা নিয়েও লড়বে, একে-অপরকে কোর্টে দাঁড়িয়ে।
দোষারোপ করবে; নিজেদের সাথে, বাচ্চাদের জীবন ও নষ্ট করবে না তারা?
তখন কি আলাদা হওয়া ঠিক হবে?
এখন তো ওদের মধ্যে কিছুটা হলেও সেই বোধ ক্ষমতা আছে, ওদের এখন আলাদা হয়ে যাওয়া উচিৎ না? ওরা জীবনকে আরেকটা সুযোগ দিতে চাচ্ছে।
কেউ কেউ তো বলে ভালোবাসায় দ্বিতীয় সুযোগ থাকে না। তাই বলে জীবনে যে সেই সুযোগ থাকে না সেটা নয়। জীবন আমাদের বারবার সুযোগ দেয়। মৃত্যুর শেষ অবধি পর্যন্ত।
কংগ্রাচুলেশনস রাকিব এবং আফরিন। তোমাদের মধ্যে সুবোধ ঘটার জন্য!
ধন্যবাদ অভি। সুন্দর করে কথাগুলো বলার জন্য। এবং তুমিই সত্যি বলেছো বলে রাকিব এবং আফরিন চলে গেলো।
রাফিও আর কিছু না বলে শুভ্রাকে নিয়ে চলে গেলো।
অভি শুধু তাকিয়েই দেখলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো শুভ্রাকে ডেকে বলতে-
জানো শুভ্রা, ভালোবাসা বলতে কিচ্ছু নেই! আর যদি থেকেও থাকে তাহলে-
যে তোমার জন্যই তোমার দাবীদার তাকেই ভালোবাসো!
৭.
যখন নিজের দুঃসময়ে পাশে কেউ থাকে না তখন নিজের কাছে নিজেকে বড্ড আপনই মনে হয়।
যদি সঙ্গে থাকে একটা বোতল আর আইসের ছোট ছোট টুকরো!
কারা যেন বলেই যেতো নেশায় থাকলে, অনেক কিছু ভুলা যায়। যতোসব ফালতু কথা এগুলো।
আমি শুভ্রাকে ভালোবেসেছিলাম।
আর ওকেই বিয়ে করতে চেয়াছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমার জীবন আর মরণ ওর সাথেই হবে। আমারটা বুঝি সত্যিকারের প্রেম ছিলো না?
আচ্ছা, একটা মেয়ে চিন্তা করে ওর স্বামীর সাথে ও সুখে নেই, অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে যদিও যায় তাহলে এটাকে লোকে কি বলবে? হয়তো বলবে, মেয়েটার ঐ ছেলেটার সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে! এবং এমনি ভাবে যখন একটা মেয়ে কোনো ছেলেকে ভালোবাসে, কিন্তু অন্য ছেলে তাকে বিয়ে করে ফেলে, এটাকে লোকে কি বলবে? লোকগুলো কিছুই বলবে না। শুধু একমাত্র সকল প্রেমিকরাই বলবে, আমার প্রেমিকার সাথে ওর স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক আছে!
নেশা ডুবে গেলে নাকি মানুষ উলটাপালটা কথা বলে। আসলে কেউ মানুক কিংবা না মানুক, নেশায় শুধু মানুষের মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু মনের ওপর কোনো কিছুর প্রভাব পড়ে না, মনের কাছেই জগত এবং জীবন ধরাবাঁধা।
একটাই জীবন।
প্রেমের বিয়েতে কোনো অধিকার নেই। পারিবারিক বিয়েতে কোনো ভালোবাসার দরকার নেই।
তুমি যে মেয়েকে ভালোবেসে জীবন গড়তে চেয়েছিলে তোমার প্রেম আসলেই সৎ।
কিন্তু মানুষ তাদের ভালোবাসার মানুষের কথা; বিয়ের পর চিন্তাও করে না। কেবল স্মৃতি হয়ে যায়। আমি এখন যেখানে এখানে আসার আগেই ভেবেছিলাম আমার জীবন শেষ। আমি শুভ্রাকে অনেক জায়গায় খুঁজেছি, ওর কোনো খুঁজ পাই নি। কিন্তু ভাগ্যকে আমি বিশ্বাস করি না। কেননা, আমরা যদি ভাগ্য’র ওপর নির্ভরশীল হয়ে যেতাম তাহলে আমরা ভবিষ্যতের পেছন ছুটতাম না, বরং ভবিষ্যৎ আমাদের পেছন ছুটতো। এখন মনে হচ্ছে আমাদের জীবন কেবল আমাদের সাথেই থাকে। আমাদের সেটা অন্য কোথাও খুঁজে দেখার দরকার নেই। জীবনও আমাদেরও অনেক সুযোগ দেয়; আমাদেরও জীবনকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ। আর আমি সেটা দেবো নিজের জন্য না হলেও বাকি জীবনের জন্য।
আমার ভেতরের আমি’কে কিভাবে সামলে নিতে হয় আমি সেটা জানি। শুধু আমি না পৃথিবীর সকল প্রেমিক জানে এটা। শুধু মাত্র দশ মিনিট সময় নিতে হয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে। আর এভাবে ভাবতে ভাবতে একদিন আর চোখে জল আসবে না।
তবে, মনের ভুলেও কোনো একদিন হুট করে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতেই পারি-
শুভ্রাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। ভালো থাক শুভ্রা ভালো থাক ভালোবাসা!
বলেছিলাম না-
যে তোমার জন্যই তোমার দাবীদার তাকেই ভালোবাসো!
যেহেতু দরজার পর্দার আড়াল থেকে শুভ্রা সেদিন তার বাবার কাছে আমাদের ভালোবাসার দাবী জানিয়ে ছিলো- বাবা এসব কিছুই লাগবে না। আমি অল্পতেও সুখী আর ওকে পেলেই।
এই কথাগুলোতেই অনেক স্বস্তিবোধ করি আমি আজও!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০৯