somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহি পরীক্ষানামা!!!

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনার্স জীবনে আমার বন্ধু ছিল একজন হ্যাঁ ঠিকই দেখছেন মাত্র একজন, আর পুরা ক্লাশের মধ্যে কথা বলতাম দুইটা মানুষের সাথে যার একজন ছিল আমার ঐ ফ্রেন্ডের বেষ্ট ফ্রেন্ড তবে অবশ্য এখন আর নাই তাই এখন আর কথা বলতে হয় না! আর আমার পরীক্ষামেটও ছিল দুইজন একজন সামনে আর একজন পিছনে সামনের জন ছেলে আর পিছনের জন মেয়ে। এরা দুজন দুই প্রজাতির হলেও এদের একটা কমন বৈশিস্ট ছিল এরা মোটামুটি নিজের নাম রোল নাম্বার আর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ছাড়া বাকি সবই আমার খাতার হুবহু কপি করতো। এর মধ্যে আমার সামনের জনের কিছু বৈশিষ্ট পুরাই ইউনিক, আমার জীবনের প্রথম যেদিন অনার্স পরীক্ষা দিতে যাই সেদিন সাগর কে দেখে ভাবছিলাম পোলাটারে দেখতে তো মাসুম মাসুম লাগে আবার চশমাও পরে নির্ঘাত একটা আইনিস্টাইন টাইপের পোলা যাক সামনে পইড়া ভালই হইলো। মানুষ চিনতে আমি যে কতটা অপারগ সেদিনই প্রমান হইয়া গেলো খাতা দেয়ার পর পরই তার প্রথম প্রশ্ন ছিলো দোস্ত আজকের পরীক্ষার সাবজেক্ট কোনটা!! আমি তো মোটামুটি শিউর হইয়া গেলাম যে আমার কপালে দুঃখ ছিল আছে এবং থাকবে!! পরীক্ষার হলের ভাগ্য কোন কালেই আমার ভালো ছিল না এই ধারনা আমার ইন্টারমিডিয়েট লাইফেই হইয়া গেছে আমার পাশের মাইয়ার কান্দন দেখার পর( এই কাহিনী শুনতে চাইলে পরবর্তীতে আরেক দিন শুনামু)। তো যা বলতেছিলাম সেই পরীক্ষা কোনমতে দেয়ার পর বের হইয়া তারে বললাম ভাই তুমি পইড়া আসোনাই ক্যান?? সে আমারে উত্তর দিলো তার কাছে রুটিন নাই তাই সে জানেনা কোন সাবজেক্ট পরীক্ষা!! বিরাট ইন্টেলেকচুয়াল উত্তর!! আমি তখন দু ধরনের পরীক্ষা সামলানোর মানসিক প্রস্তুতি নিতেছি পরক্ষনেই সে কইলো সামনের দিন থেকে সে পইড়া আসবে আমি তো হাফ ছাইড়া বাচলাম আগ্রহ কইরা আমার ফোন নাম্বার নিলো কইলো পরে ফোন দিবে। তার আগ্রহ উদ্দীপনা দেইখা তারে বিশ্বাস করলাম তার সাথে চ্যাপ্টার ভাগাভাগি করলাম (৭০:৩০) সেও পইড়া আসলো তা কফিডেন্ট দেইখা আমি উৎফুল্ল!! প্রশ্ন দিলো সে লেখা শুরু করলো একটা প্রশ্নের নাম্বার ১২ মোটামুটি ৪-৫ পৃষ্ঠা, আর সাব্জেক্টের নাম যেহেতু রসায়ন সেহেতু এই ৪-৫ পৃষ্ঠার অর্ধেকটাই নানান সাইজের ইকুয়েশন। ঠিক যখন অর্ধেক লিখা হইলো সে দেখি ঝিম মাইরা গেলো আমি কইলাম কিরে কি হইছে? সে কইলো দোস্ত ভুইলা গেছি!! আমি ভাবলাম যাক একটা প্রশ্ন ভুলছে তো কি হইছে আরো তো আছে কিন্তু সে যখন পর পর তিনটা প্রশ্নের বেলায় একই কাজ করলো তখন আমার মাথার মধ্যে পাগলা ঘন্টা বাজতাছে কবি যে ক্যান বলেছেন মানুষ চেনা দায় সেটা আমি বুইঝা ফালাইছি!!! এদিকে সময় পায় অর্ধেক শেষ!! কোন মতে বাকি দুই ঘন্টা লেইখা পার করালাম এর মধ্যে আবার ঘটনা হইলো সে দেইখা দেইখা লিখে আর কতক্ষন পর পর কয় দোস্ত এইটা ক্যামনে হইলো একটু বুঝাইয়া কও তো!! আমি কইলাম ভাইরে আমারে মাফ করেন আমি পরীক্ষা দিতে আইছি ক্লাশ নিতে না!! এই কাহিনী কইরা আমার পরীক্ষা দিতে দিতে এমন অবস্থা হইছে যেই আমি পরীক্ষা দিতে মোটামুটি ভয় পাইতাম না সেই আমি তীব্র আতঙ্ক নিয়া পরীক্ষার হলে ঢুকতাম আর অপেক্ষা করতাম কখন শেষ হয় তারপরো অরে কিছু কইতে পারলাম না!! কিন্তু থার্ড ইয়ারে আইসা আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না নিজের পরীক্ষা চরম খারাপ হইতাছে তার উপর আমার চেয়ে খারাপ ছাত্ররাও সামনে পিছনে ভাগাভাগি কইরা ভালো পরীক্ষা দিতেছে আর আমি আছি ফান্দে এমন ফান্দে আছি যে বগার মত কান্তেও পারতেছিনা!!! শেষমেশ একদিন গেলো মাথাডা নস্ট হইয়া ভরা ক্লাশ্রুমে দিলাম ঝাড়ি মেডাম আর স্যাররাও ঝড়ি শুইনা তব্দা খাইয়া রইলো, পরে আমার আর ওর খাতা নিয়া গেলো এরপর থেইকা আর ও আমারে ঘাটায় না। সেই থেইকা আমার পরিক্ষাগুলা মোটামুটি আগের চেয়ে ভালো হয়!! মাস্টার্সে ভর্তির সময় যখন শুনলাম সাগর এই কলেজে ভর্তি হবে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আর তিতুমীরে ভর্তি হবনা পরে আমার একমাত্র বন্ধু আমারে বুঝাইয়া কইলো যে সে আমার ভর্তির সব কাজ করবে আমার কলেজে যাইতে হবেনা তাই সাগর জানতেও পারবেনা আমি কবে ভর্তি হই বা না হই, ভালো কথা সব কাজ বন্ধু রেজাউল করলো এমনকি সকল কাগজ পত্রের আমার সিগনেচার গুলাও সে করলো মনে খুবই শান্তি নিয়া দিন কাটাইতেছিলাম, বিপত্তি ঘটলো আজকে পরীক্ষা দিতে গিয়া, কারন হলে ঢুইকা দেখি আমার সিটের পিছনেই সাগরের সিট!! সাগর শুকানোর জন্য মাক অভাগার তাকানো লাগে তার চখের এতই পাওয়ার!! আর আমি অভাগার ও অভাগা এত কাহিনী কইরাও এই সাগররে কিছুই করতে পারলাম না!! :( বন্ধুর দিকে তাকাইলাম ইচ্ছা করতাছিলা তার সাথে সংসদীয় ভাষায় কথা কই!!! কিন্তু পারলাম না তার হতাশা মাখা মুখ দেইখা!! কি আর করা জীবনের শেষ পরীক্ষায়ও আমার ভাগ্য জয়ী হইলো। সাগরের ভাষ্যমতে মুন্না তোর কপাল খারাপ তাই আমি এবার তোর পিছনে, আমি শীতল গলায় কইলাম দোস্ত এইবার যদি আমারে সামান্যতম ডিস্টার্ব করছ খোদার কসম তোমার কপালের দশা আমিও খারাপ কইরা দিমু!! সে ভড়কাইয়া গেলো। আজকে পরীক্ষার মাঝখানে দুইবার খোচা দিছিলো আমার শীতল চাউনি দেইখা আর কথা বাড়ায় নাই!! সবাই আমার জন্য দোয়া কইরেন!!!

বিঃ দ্রঃ অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষার পর থেইকাই আমার চুল পড়া শুরু হইছে এইটার কারন কি সাগর নাকি রসায়ন এইটা এখনো জানিনা!!
বিঃ বিঃ দ্রঃ আজকেও সাগরের প্রথম প্রশ্ন ছিল দোস্ত আজকে কোন সাবজেক্ট পরীক্ষা!!! হে আল্লাহ আমি সাগরের কাছ হইতে মুক্তি চাই!!! এই জনমে আর জাতীয় ভার্সিটিতে পড়ুম না!!!

মুল লেখা
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:০৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×