somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলগিরি বান্দরবানঃ শেষ পর্ব

১৩ ই অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৮ সালে নির্মিত ক্যাফেটেরিয়া, নীলগিরি


নীলগিরি সৃষ্টির ইতিহাস

“সম্প্রীতির বান্দরবান” নামের একটা ফোল্ডারএর কথা আগেই উল্লেখ করেছি, সেখানে নীলগিরি সৃষ্টির ইতিহাস শিরোনামে উল্লেখ আছে — বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বদিকে বান্দরবান থানছি সড়কে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ২ শত ফুট উচ্চতায় মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এই নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি অবস্থিত। ... বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক চিম্বুক –থানছি সড়কটি নির্মাণের সময় ম্রো আধিবাসী অধ্যুষিত বান্দরবান থানছি সড়কের কাপ্রু পাড়া এলাকায় প্রথমে নিরাপত্তা চৌকি হিসাবে এটি নির্মিত হয়। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ এখানে একটি হিল রিসোর্ট তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহন করেন। ... ২০০৬ সালের ২৫শে জানুয়ারী মেঘদূত ও আকাশনীলা নামের দুইটি কটেজ সম্বলিত নীলগিরি রিসোর্টটি উদ্বোধন করেন। ... দিনের বেলায় এই রিসোর্ট থেকে খালি চোখে বঙ্গোপসাগর ও জাহাজ চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়। ... এখানে মোবাইল ফোনের নেট ওয়ার্ক থাকার কারনে কথা বলার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব। ... নীলগিরি রিসোর্টে অবস্থান ও রাত্রিযাপনের জন্য সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে আগাম যোগাযোগ করতে হবে।


সেনাবাহিনীর অবদানঃ নীলগিরি রিসোর্ট


ম্যাপঃ বান্দরবান

এই সুযোগে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নিয়ে কিছু কথা বলে নেই... বান্দরবানে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখনও একটা যন্ত্রনা বিশেষ। জিপির নেট ওয়ার্ক মাঝে মাঝে কাজ করে, কিন্ত আমি কখনই টানা ২/৩ মিনিটের বেশি কথা বলতে পারি নাই এবং সিগন্যালের মান ততটা উন্নত নয়। ওভারসীজ কল রিসিভ করা যায় না। আর বাংলা লিঙ্কএর অবস্থা জিপির চাইতেও খারাপ। আমি জিপি ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তাতে করে ইমেল মোটামুটি চেক করা যায়, কিন্ত সামহোয়ারের এক একটা পেজ নেমে আসতে ৩ থেকে ৪ মিনিট সময় লাগে। মুলতঃ নেট ওয়ার্কের সমস্যাটা কক্সবাজার থেকেই ফেস করেছি, আর বান্দরবানে যে দুইদিন ছিলাম — বলা যায় পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলাম।




ফেরার পথে শৈল প্রপাত

বান্দরবান নিয়ে কিঞ্চিৎ জ্ঞান সবার সাথে শেয়ার করি — বান্দরবানে জনসংখ্যার বিচারে প্রধান সম্প্রদায় মারমা। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে মারমা জনগোষ্ঠির বসবাস সর্বাধিক। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মার্মাদের প্রধান উৎসব সাংগ্রাই পোয়ে, ওয়াছো পোয়ে। সাংগ্রাই আমাদের বাংলা নববর্ষ উৎসবের সাথে যুক্ত। প্রায় পাঁচদিন ধরে চলা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষন মৈত্রী পানি বর্ষন। এখন বান্দরবানের প্রধান জনগোষ্ঠি বাঙ্গালী(১,৬০,০০০ জন)র সংখ্যা প্রধান সম্প্রদায় মারমাদের (৭৫,৮৮০জন) চেয়ে তা দ্বিগুনের বেশি। এছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে ম্রো, ত্রিপুরা, বম, তঞ্চঙ্গ্যা চাকমা, চাক, খেয়াং সহ প্রায় ১১টি নৃতাত্ত্বিক উপজাতি জনগোষ্ঠি।

কিছু দরকারী ফোন নাম্বার দিলাম এখানে। বান্দরবানের টেলিফোন কোড নম্বর 0361.

তথ্য কেন্দ্রঃ 62400, 01550603124.
ও সি, বান্দরবান থানাঃ 62233
পুলিশ কন্ট্রোল রুমঃ 62276
আর্মি টেলিফোন এক্সচেঞ্জঃ 62284, 62290.
পর্যটন মোটেল মেঘলাঃ 62741-2
হিল সাইড রিসোর্ট, (গাইড ট্যুরস লিমিটেড) মিলনছড়িঃ 01199275691
সাকুরাঃ 01556510277.

বান্দরবান থানছি রোডটা অতটা চওড়া নয়, কিন্ত এত মসৃন। সারা রাস্তা তেমন ভাঙ্গাচোরা নাই বললেই চলে। প্রায় নির্জন সেই রাস্তায় মাঝে মাঝে দু এক জন উপজাতীয় মানুষজন পায়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। রাস্তার পাশে কিছুদুর পর পরই প্রচুর আনারস আর বিভিন্ন ধরনের সব্জি পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, কচু, লাউ, ইত্যাদি জড় করে রাখা। ভাড়া করা ট্রাক এসে সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায় দুরের হাট বাজারে। মেয়েরা বেশ সক্রিয়, প্রচুর কাজকর্ম করে তারা। কিছু কিছু পুরানো আমলের ল্যান্ডরোভার তাতে গাদাগাদি করে বসা স্থানীয় মানুষ, এ ছাড়া আর তেমন যানবাহন চোখে পড়ে না। এগুলোকে মনে হয় চাঁদের গাড়ী বলে। আর কিছু মিনিবাসকে চলাচল করতে দেখেছি। যেগুলো চট্টগ্রাম অথবা কক্সবাজার থেকে যাওয়া আশা করে। কিন্ত বেশির ভাগ লোকের কাছে পায়ে হাঁটাই একমাত্র যোগাযোগের ব্যবস্থা বলে মনে হলো। ভাবলে অবাক লাগে এই রাস্তাটুকুও যখন ছিল না, তখন এই পাহাড়ি এলাকার লোকজন কিভাবে চলাফেরা করতেন...?

মসৃন থানছি সড়ক দিয়ে যেতে যেতে ইমরান আমাদের বলছিল — এ রাস্তা কিন্ত পর্যটকদের জন্য বানানো হয় নাই, এমনকি এলাকার অধিবাসীদের চলাচলের সুবিধা অসুবিধা মাথায় রেখেও এ রাস্তা নির্মিত নয়। এটা তৈরি হয়েছে স্রেফ রাষ্ট্রের সামরিক প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে... রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোন বিদ্রোহকে সামাল দিতে। যে কোন রাষ্ট্রে সামরিক বাহিনী তার ভুখন্ডের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা তার কাছে সুগম্য করে রাখতে চায়... বান্দরবানের মতো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা জায়গায় এর প্রয়োজন বলাবাহুল্য আরও বেশি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৫:১৬
২৩টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×