somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের মধ্যমপন্থা: শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতা

১৩ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম একটি সর্বাধুনিক, মধ্যমপন্থী ও শান্তির ধর্ম, যা বিশ্বমানবতার কল্যাণে এসেছে। কট্টরপন্থা ও চরমপন্থার কোনো স্থান ইসলামে নেই। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন এবং তাঁর অনুসারীদেরও এ পথ অনুসরণ করতে উৎসাহিত করতেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, উম্মতে মোহাম্মদীকে মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে গঠন করা হয়েছে।

ইসলামের মধ্যমপন্থার শিক্ষা:
ইসলাম তার অনুসারীদের চরমপন্থা ও বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেয়। মহান আল্লাহ বলেন,
“এবং এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী উম্মত করেছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষ্যদানকারী হও এবং রাসূল তোমাদের ওপর সাক্ষ্যদানকারী হন।” (সূরা আল-বাকারাহ: ১৪৩)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলাম উগ্রতা ও চরমপন্থার বিরোধিতা করে এবং মধ্যমপন্থার অনুসরণকে গুরুত্ব দেয়। ইসলামে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযম ও ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
যেমন, ইবাদতের ক্ষেত্রেও ব্যালান্স বজায় রাখার জন্য রাসূল (সা.) বলেন,
“তোমাদের মধ্যে কেউ যেন ইবাদতে এত বেশি বাড়াবাড়ি না করে যে, সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং পরে তা ছেড়ে দেয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৭৪)
অন্যত্র রাসূল (সা.) বলেন,
“এই দ্বীন সহজ, যে ব্যক্তি দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করবে, সে নিজেই পরাস্ত হবে। তাই মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, যথাসম্ভব উত্তম কাজ করো, সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং সাহায্যের জন্য সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশ বেছে নাও।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৯)

ধর্মীয় চরমপন্থার অসঙ্গতি ও তার পরিণতি:
ইসলামে কোনো রকম চরমপন্থা অনুমোদিত নয়। মহানবী (সা.) এর বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন,
“যারা নিজেদের ধর্মে কঠোরতা অবলম্বন করে, তারা ধ্বংস হয়ে যায়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৭০)
ইসলামের মূল শিক্ষা হচ্ছে ন্যায়পরায়ণতা, সহনশীলতা ও সংযম। ধর্মীয় চরমপন্থা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। ইতিহাসে দেখা যায়, অতিরিক্ত কট্টরতা মুসলিম সমাজের বিভাজন ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণ হয়েছে। ইসলামে ন্যায়বিচার ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন,
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায়ের সাথে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো, সাক্ষ্য দাও ন্যায়ের পক্ষে, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতা কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেই যায়।” (সূরা আন-নিসা: ১৩৫)

ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব কার?
অনেক মানুষ মনে করেন যে, ইসলামের অবমাননা হলে তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন। কিন্তু পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহ স্পষ্টতই বলেছেন,
“নিশ্চয়ই আমি কোরান অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর রক্ষক।” (সূরা আল-হিজর: ৯)
এখান থেকে স্পষ্ট হয়, ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব মানুষের নয়, বরং স্বয়ং আল্লাহ তা নিয়েছেন। মুসলমানদের কাজ হলো সত্যের পথে অটল থাকা, ধৈর্যশীল হওয়া এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। মহানবী (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় বহুবার কষ্ট ও অপমান সহ্য করেছেন, কিন্তু কখনো সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং তিনি ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করতেন।

প্রতিবাদের নীতি ও সীমারেখা:
ইসলামে অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ইমানি দায়িত্ব। কিন্তু এই প্রতিবাদ হতে হবে শান্তিপূর্ণ ও সভ্য উপায়ে। মহানবী (সা.) কখনোই সহিংস প্রতিবাদকে সমর্থন করেননি। তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণ চায়, আল্লাহ তাকে কল্যাণ দান করেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)
অন্যত্র তিনি বলেন,
“একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই; সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে বিপদে ফেলবে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৪২)

বাকস্বাধীনতা ও সমালোচনার সীমারেখা:
বাকস্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। তবে এই স্বাধীনতার অপব্যবহার যেমন অনুচিত, তেমনই যুক্তিসঙ্গত সমালোচনাও প্রয়োজনীয়। ইসলাম অন্যায় ও অসঙ্গতির সমালোচনাকে উৎসাহিত করেছে, তবে তা যেন ন্যায়সঙ্গত ও রুচিসম্মত হয়। মহানবী (সা.) নিজেও বিভিন্ন সামাজিক অসংগতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলেছেন।
আল কোরানে মহান আল্লাহ বলেন,
“তুমি জ্ঞান ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তোমার রবের পথে মানুষকে আহ্বান করো এবং তাদের সাথে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করো।” (সূরা আন-নাহল: ১২৫)

ইসলাম শান্তি, সহিষ্ণুতা ও মধ্যমপন্থার শিক্ষা দেয়। যারা ইসলামকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে চরমপন্থী কার্যকলাপ পরিচালনা করে, তারা প্রকৃত ইসলাম থেকে বিচ্যুত। ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য এর মধ্যপন্থা ও সংযমে নিহিত। মুসলমানদের উচিত ধৈর্য, ন্যায়পরায়ণতা ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরা।
মহানবী (সা.) বলেন,
“সবচেয়ে উত্তম মুসলিম সে, যার হাত ও মুখের থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০)
ইসলামকে রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর, আমাদের দায়িত্ব হলো সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা। তাই সমাজে শান্তি বজায় রাখতে হলে সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতা নিশ্চিত করাই ইসলামের মূল শিক্ষা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এনসিপির ভোট কিভাবে বাড়ানো যায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৩



একটি নিরপেক্ষ সংস্থার জরিপ অনুযায়ী এখন বিএনপির ভোট ১৯% (প্রায়), জামায়াতের ভোট ১৬% (প্রায়), আওয়ামী লীগের ভোট ৯% (প্রায়), এনসিপির ভোট ৩% (প্রায়) সিদ্ধান্তহীন ভোট ৩০% (প্রায়), ভোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা কেমন আছেন?

লিখেছেন জেনারেশন একাত্তর, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৪



আমি আশা করছি, তিনি ভালো আছেন! কেহ কি জানেন উনি শারীরিকভাবে কেমন আছেন বর্তমানে? সর্বশেষ জেনেছিলাম (বছর খানেক আগে ) যে, উনি ভালো আছেন, চিকিৎসা চলছিলো। এরপর আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলাপুর টু নারায়ণগঞ্জ - ১ : কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৯



সময়টা ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখ।
উত্তর বাড্ডা থেকে রওনা হয়ে সকাল ১১টার দিকে পৌছাই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। উদ্দেশ্য রেললাইন ধরে হেঁটে হেঁটে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যাবো

হাঁটা শুরু হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি ব্লগ ........

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৪

২০১২-১৩ থেকে কয়েক বছর পছন্দ এদেশে ছিল ডিএসএলআর যুগ। মানে একটি ভালো মানের ক্যামেরা থাকা মানে ছিল সোস্যাইটি বা বন্ধ মহলে ছিল সম্মান, মর্যাদা, আর অহংকারের প্রতিক। সোস্যাল মিডিয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁধারের মাঝেও আলো থাকে

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮


আমাদের মানব জীবনে আলো আঁধারের দ্বন্দ্ব চিরন্তন
ইতিহাস বারবার করেছে প্রমান অন্ধকার যত গভীরই হোক
তার ভিতরেই পরবর্তী আলোর বীজ লুকিয়ে করে অঙ্কুরণ।

আঁধারেও আলো থাকে শুধু একটি কবিত্বময় বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×