somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি স্বাধীনতার প্রতীক ও কিছু কথা

০৯ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
স্ট্যাচু অব লিবার্টি সারাবিশ্বের মানুষের স্বাধীনতার প্রতীক ।


স্ট্যাচু অব লিবার্টির কিছু টুকিটাকি
• মশাল ধরে রাখা দান হাতের দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট তর্জনীর দৈর্ঘ্য ৮ ফুট , অপরদিকে নাক প্রায় ৫ ফুট ।
• লেডি লিবার্টির তামার ত্বক মাত্র ৩/৩২ ইঞ্চি পুরু ।
• জোরে বাতাস বইতে শুরু করলে স্ট্যাচু তিন ইঞ্চি পর্যন্ত আন্দোলিত হয় , অপরদিকে মশাল দুলে ওঠে পাঁচ ইঞ্চি ।
• লেডি লিবার্টির মুকুটের ২৫ টি জানালা দিয়ে তাকানোর জন্য পর্যটকদের অতিক্রম করতে হয় ৩৫৪ টি সিঁড়ি (২২তলা) ।
• মুকুটের সাতটি রশ্নি পৃথিবীর সাতটি সাগরকে নির্দেশ করছে ।
• ১৯০৩ সালে আমেরিকান কবি এমা ল্যাজারাসের লেখা সনেট “ দ্য নিউ কলোসাস ” খোদাই করা একটি ব্রোঞ্জের ফলক স্ট্যাচুর বেদিতে স্থাপন করা হয় ।
• যে কোনো পরিষ্কার দিনে ৪০ মাইল দূর থেকেও তা দেখা যেতে পারে ।


নিপীড়নের শিকল ছিন্ন করে এগিয়ে যাচ্ছেন এক নারী । তাঁর ডান হাতে স্বাধীনতার প্রতীক জ্বলন্ত মশাল আর বাঁ হাতে আঁকড়ে ধরে আছেন একটা ফলক যাতে খোদাই করা একটা তারিখ জুলাই ৪,১৭৭৬ এই দিনেই ঘোষণা করা হয় আমেরিকার স্বাধীনতা । স্ট্যাচু অফ লিবার্টি আমেরিকানদের নয়নের মনি , তাদের জাতীয় স্রৃতিস্তম্ব । নিউইয়র্ক হারবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্যাচু অব লিবার্টি কিন্তু তৌরি হয় ফ্রান্স এ । সেখান থেকে বিভিন্ন অংশ আলাদা করে ২০০টির বেশি বাক্সে ভরে স্ট্যাচু অব লিবার্টি কে তোলা হয় ফরাসি জাহাজ ইমেরিতে । প্রায় সাপ্তাহের সাগর ভ্রমন শেষে স্ট্যাচুসহ জাহাজ আমেরিকা পৌছে ১৮৮৫ সালের ১৭ জুন । সেখানে এটাকে পুনুরায় জোড়া লাগানো হয় । এটা ছিল আমেরিকানদের জন্য ফরাসিদের উপহার । এটার শুরু ১৮৬৫ সালে প্যারিসের কাছে এক রাত্রিকালীন ভোজনের সময়ে । একদল ফরাসি ভদ্রলোক নিজেদের একনায়ক সুলভ সম্রাট আর আমেরিকার গণতান্ত্রিক সরকারের তুলনা করছিলেন । এ সময় তারা সিদ্ধান্ত নিলেন আমেরিকার স্বাধীনতার স্মারক হিসেবে একটি স্মৃতিসৌধ গড়ে দিবেন । সম্ববত নিজের দেশে গণতন্ত্রের দাবিকে জোরালো করার প্রয়াসও এটি । আর এ নৈশভোজে উপস্তিত ছিলেন ফরাসি ভাস্কর ফ্রেডরিক অগুস্ত বারথোল্ডি । এ সময়ই স্বাধীনতার আলোতে প্রজ্বলিত একটা মশাল হাতে দাঁড়ানো এক নারির ভাস্কর্য ধরা দেয় তাঁর কল্পনায় । বারথোল্ডির এই চিন্তা বাস্তবে রুপ নিতে সময় লাগে ২১ বছর । স্ট্যাচু তৈরির টাকা জোগায় ফরাসিরা আর বেদির ব্যবস্থা করে আমেরিকানরা । শেষ পরযন্ত ১৮৮৬ সালের ২৮শে অক্টোবর আনুসঠানিক ভাবে স্ট্যাচুটা উদ্বোধন করা হলো ।
“ আমার স্ট্যাচুটা অবশ্যই দাঁড়াবে । এখানেই মানুষ পাবে তাদের নতুন পৃথিবীর প্রথম দর্শন । ”বলেন ভাস্কর ফ্রেডরিক অগুস্ত বারথোল্ডি । নিউইয়র্ক হারবারের বেডলো দ্বীপে লেডি লিবার্টিকে স্থাপনের অনুমতি পেলেন তিনি । পরে ১৯৫৬ সালে জায়গাটির নাম বদলে রাখা হয় লিবার্টি আইল্যান্ড ।
বারথোল্ডি নিজেও কল্পনা করেননি এত লোক তাঁর সৃষ্টি দেখবে । ১৯২০ সাল পর্যন্ত ২ কোটির বেশি ইউরোপীয় অভিবাসী আমেরিকা আসে । এদের বেশির ভাগিই নামে এলিস আইল্যান্ডে , স্ট্যাচু অব লিবার্টি থেকে মাত্র আধা মাইল উত্তরে যার অবস্থান । ১৮৮২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় বসবাসের জন্য আসা অভিবাসীদের কাগজপত্রসহ সব পক্রিয়া সম্পন্ন হতো এলিস আইল্যান্ডে । আর এসব অভিবাসীর কাছে স্বাধীনতার মশাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এ স্ট্যাচু ছিল আমেরিকার আন্তরিক অভ্যথ্রনার প্রতীক ।
আজ স্ট্যাচু আমেরিকার এমনকি পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে স্বাধীনতার এক শক্তিশালী জনপ্রিয় প্রতীক । প্রতিবছর ৪০ লাখেরও বেশি লোক স্ট্যাচু অব লিবার্টি দর্শনে আসে । কেউ কেউ সিঁড়ি বেয়ে সত্যিকারের মুকুটে উঠে পড়ে, কেউবা মাথায় পড়ে নকল মুকুট ।
১৯৮৬ সালে স্ট্যাচুর ১০০তম জন্মবার্ষিকীতে মরচে ধরে শ্রীহীন হতে থাকা স্ট্যাচু পেল ইস্পাতের নতুন সাপোর্ট স্তম্ব আর একটা নতুন মশাল । সেই সঙ্গে অত্যন্ত যত্নের সাথে পরিষ্কার করা হলো তাঁকে । পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগে ৪ বছর , আর এতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ।
ফ্রেডরিক অগুস্ত বারথোল্ডি তাঁর মাকে মডেল হিসাবে বেছে নিলেন । ১৫১ ফুট ১ ইঞ্চি উঁচু এ স্ট্যাচুটি ছিল সে সময় আমেরিকার উচ্চতম কাঠামো । অসংখ্য তামার পাতকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে একেবারে পাতলা করা হয় । তারপর এই পাতলা পাতগুলো দিয়ে তৈরি হয় স্ট্যাচু । কিন্তু এমন ধরনের একটা স্ট্যাচু দাঁড়িয়ে থাকবে কীভাবে ? লোহার সেতু নির্মাণের জন্য বিখ্যাত গুস্তাভ আইফেলের সাহায্য চাইলেন বারথোল্ডি , কয়েক বছর পর যিনি আইফেল টাওয়ারের নকশা করেন । স্ট্যাচু অব লিবার্টির মেরুদন্ড-র নকশা করে দিলেন তিনি । স্ট্যাচুর বিশালাকার চারটি স্তম্বের ভেতরে সাহাজ্যকারী হিসেবে থাকবে একটা ধাতুর কাঠামো , যেটা পাতলা তামার আবরণকে ধরে রাখবে । বারথোল্ডি আর আইফেল্কে ধন্যবাদ । ঘণ্টায় ৫০ মাইল কিংবা তারও বেশি বেগে যখন বাতাস বইতে শুরু করে তখন স্ট্যাচু দুলতে শুরু করে কিন্তু ডিগবাজি খেয়ে পড়ে যায় না
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×