somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোছনায় একাকী

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জোছনা, তারা, সবুজের বুকে এক চিলতে জল, নিশুতি রাতে বাঁশঝাড়ে জোনাকির গান- ইদানীং বেশ ভালো লাগে বিষয়গুলো। আজ জোছনারাত। ছাদে বসে বসে আকাশের গান গাইছি- 'আকাশের ঐ মিটিমিটি তারার সাথে...'।
একদিন এভাবে গান গাওয়ার সময় পেছন থেকে তপু এসে বলেছিল, 'হেলেনা, এ-ই হেলেনা'।
'তোমার না আরো আগে আসার কথা ছিল।'
'ছিল; তবু আসিনি।'
'কেন!'
'তোমার গান শুনতে ভালো লাগে বলে।'
'তুমি না এলে যে গান ভালো হয় না!'

তপু কথা দিয়ে আসে না। কথা না দিয়েও আসে। তপু আসুক, না আসুক, আমি প্রায় প্রতিরাত ছাদের কোণায় তপুর জন্য অপেক্ষা করি। জোছনা হলে প্রতিরাত গভীর রাত অবধি আমাকে অপেক্ষায় থাকতে হয়। পড়ার টেবিলে বসলে মনে হয়, বেচারা চুরি করে ছাদে ওঠে আমাকে না পেয়ে চলে যাবে।

আজ ধবধবে জোছনা। তারাগুলো জোছনাময় আকাশ থেকে প্রেমাচ্ছন্ন পৃথিবীতে খসে খসে পড়ছে। তপু বলত, প্রেমই পৃথিবী সৃষ্টির মূলকথা। পৃথিবী জুড়ে যতো প্রেম, সবই স্বর্গের প্রতিধ্বনি! সত্যি বলতে কী, আজ তপু এলে পৃথিবীটা নিরেট স্বর্গীয় হয়ে ওঠবে।

তপু বলেছে, আজ নিশ্চয়ই আসবে। তবু তপু বলে কথা! অনিশ্চয়তার দোলাচলে চড়ছি আর শরীরটা ভারি হয়ে যাচ্ছে। এখনই তপু আসবে- ভাবতেই শরীরের এপার-ওপার একটা শিহরণ এসে খেলা করছে।
তপুদের বাসার সামনের রাস্তাটাকে সামনে নিয়ে ছাদের এক কোণায় বসে আছি। অন্ধকার ভেদ করে আসা সবাইকে তপু মনে হচ্ছে। সে আসে অন্যভাবে। চোখকে ফাঁকি দিয়ে পেছন থেকে কখন চোখ দু'টো চেপে ধরে। আসলে, তপু দুষ্টু একটা ছেলে! মাঝে মাঝে রাগ করলে বলে কী- 'হেলেনা, তোমাকে আজ মেয়েলোকের মতো দেখাচ্ছে'।
আজ আমি প্রশ্ন করব, 'তপু, তারাগুলোকে তোমার কেমন মনে হয়?'
তপু বলবে, 'ঠিক তোমার মতো।'
আমি বলব, 'হাস্নাহেনাকে?'
তপু বলবে, 'তোমার মুখ থেকে আসা কথাগুলোর অচেনা সুবাসের মতো।'
আমি বলব, 'জোছনাময় এক-একটি রজনীকে?'
তপু বলবে, 'আমাদের ভালোবাসার মতো, সীমাহীন, নিশ্ছিদ্র, প্রেমময়।'

কল্পনার একটা সাগর আছে; সে সাগরে ভাসা যায়- আগে জানতাম না। তপু প্রেমে প্রেমে সেটা আমাকে শিখিয়েছে! বসে বসে জোছনাময় রাতে একটি ছাদের কোণায় আমি আর তপুর ভালোবাসার একটি ছবি আঁকছি। সেই ছবিতে তপু হাসছে; হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে; আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাচ্ছে; আমি বলছি, 'না'।

রাত বাড়ছে। এরচেয়ে গভীর রাতে তপু এসেছে।

একখানা মেঘ এসে আমার গানের তারাগুলোকে ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে; মনে হচ্ছে, মায়াচ্ছন্ন একটি দেহে কেউ এসে তার শীতল হাতটা এখনই বুলিয়ে দিয়ে যাবে।
হাস্নাহেনার ভুরভুরে গন্ধ আসছে গোলাঘরের পাশ থেকে; মনে হচ্ছে, অল্পক্ষণ পর অবিশ্রান্ত কোনো ঘর্মাক্ত দেহের সুঘ্রানে নেচে নেচে ওঠবে অপেক্ষমাণ কোনো মানবী।
চাঁদটা হাসছে ফালি ফালি; মনে হচ্ছে, এখনই কেউ পেছন থেকে চোখ চেপে ধরে বলবে, 'বলতো আমি কে?'; আমি বলব, 'তপু'; তপু হাসতে হাসতে বলবে, 'গাধী, আমি তপু নই, চাঁদ, আকাশের চাঁদ'।
বাঁশবাগান থেকে একগুচ্ছ জোনাকি ধেয়ে আসছে আমার দিকে; মনে হচ্ছে, আমাদের সবকিছুই দেখে ফেলবে ওরা, আর সব কথা লাগিয়ে দেবে ছাদের নিচের মানুষগুলোকে।
একঝটকা ঠাণ্ডা দখিনা বাতাসে শিরশিরিয়ে উঠেছি; মনে হচ্ছে, অল্পক্ষণ পর খেলা শেষের বেলা হবে; কান্ত আমি আর তপু গান গাইতে গাইতে বাকি রাতটা কাটাব- 'আকাশের ঐ মিটিমিটি তারার সাথে...'।

রাত বাড়ছে। তারাগুলো আগের জায়গায় নেই। আজ তপু তাহলে আসবে না! আমি সোফায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে স্বপ্নাচ্ছন্ন হয়ে যাব; সেখানে তপুর দেখা হবে; তপুকে একটা কথা বলে দেব- সে যদি এভাবে আমাকে নিয়ে খেলা করে আমি আর এই পৃথিবীতে থাকব না। আকাশের তারা দেখে দেখে তাকেও গান গাইতে হবে; পরজন্মে কাউকে পাওয়ার প্রতীক্ষার গান।

তপু আসছে না। তপু সম্ভবত আমার সঙ্গে রাগ করেছে। কিচ্ছু বোঝে না ছেলেটা! এটা চায়, ওটা চায়, সবই চায়। এর মধ্যে যে কোনো কোনোটা না দেয়ার থাকে, তপু সেটা বুঝতে চায় না।

এখন আমার তপুকে সবই দিয়ে দেয়ার ইচ্ছে জেগেছে। আকাশের তারাগুলোকেও আমার ইচ্ছের কথা জানিয়ে দিয়েছি! ওরা গিয়ে তপুকে কথাটা জানিয়ে দেবে। আর এখনই পাগলের মতো আমার কাছে ছুটে আসবে সে।

না, আমার মনের কথাটা তারারা তপুকে জানায়নি। অসংখ্য রাতের মতো আজ আমি বিমর্ষ বেডরুমটাকে সামনে নিয়ে গাইছি- 'আকাশের ঐ মিটিমিটি তারার সাথে...'।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৪৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×