অ্দস আর অহমের সমন্বয়ে মানুষের সৃষ্টি । তাই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে দেখা যাচ্ছে মানুষ যেমন ছিল হিঃস্র তেমনি দেখা গেছে শান্তি প্রিয়। যেমনি মানুষের মধ্যে দেখা গেছে সাম্রাজ্য আর সম্পদ জয়ের নেশায় যুদ্ধে মত্ত হতে তেমনি আবার দেখা গেছে শান্তির আশায় সিংহাসন ত্যাগ করতে,যুদ্ধের পরিবর্তে স্বন্দি করতে । আবার দেখা যায় নিঁখুত ঐশ্বরিক অধিশাস্তার বলে বা কখনও বিবেক তাড়িত অধিশাস্তার বলে মানুষ শান্তির জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে আবার অশান্তিকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্বন্ধির প্রস্তাব দিচ্ছে। কথায় কথায় যুদ্ধ আর রক্তপাত কােন কোন মানুষকে ভাবাত এবং ভাবিয়েছে। তাইতো মানুষ যুদ্ধ ছাড়া তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চিন্তা করেছে। তাইতো বছে নিয়েছে বুদ্ধি সর্বস্ব কৌশল অথবা কূটকৌশল । আর এরই মার্জিত নাম দেওয়া হয়েছে রাজনীতি । অ্দ্স আর অহম স্বর্বস্ব মানুষদের জন্য এর চেয়ে ভালো শান্তিপূর্ণ লড়াই আমাদের সামনে এখন পর্যন্ত আর নেই। সাম্রাজ্য ধরে রাখা বা নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এই রাজনৈতিক রুপ আবার ধারণ করেছে গণতন্ত্র,রাজতন্ত্র,স্বৈরতন্ত্র,একনায়কতন্ত্র। এর কােনটাকেই এখন পর্যন্ত ত্রুটিমুক্ত বলা যায় না। আবার কােনটিকেই একবারেই জগণ্য এই কথাও বলা যায় না। যদিও এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রকেই সর্বাধিক ত্রুটিমুক্ত রাজনৈতিক প্রাঙ্গন বলা যায় । তবে কােন কোন রাজতন্ত্রে কখনওবা আবার কােন স্বৈরশাসককে আবার কখনওবা কােন একনায়ককে চমৎকার সাম্রাজ্য শাসন এবং তার প্রজাকূলের সমৃদ্ধি আনয়নে সক্ষম হয়েছে। যা অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হয়নি। গুটিকয়েক উদাহরণ বাদ দিলে রাজনৈতিক চর্চার শ্রেষ্ট জায়গায় গণতন্ত্র এতে কােন সন্দেহ নেই। আর যদি এর কােনটিও বলবৎ না থাকে অর্থাৎ রাজনীতি বন্ধ হয়ে যায় তখন তার শূন্যস্থান পূরণ করবে অবশ্যই যুদ্ধতন্ত্র। ইরাক ও সিরিয়া আজ যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি তেমন ভিরু না হলেও রক্তপাতকে আমি প্রচণ্ড রকম ঘৃণা করি। পুরো বিশ্বে আজ যদিও এই মরণ খেলা শুরু হয়ে গেছে। রাষ্ট্রগুলোকে রাজনীতি শুণ্য করে দিয়ে যুদ্ধের দিকে ধাবিত করে দিচ্ছে। ভয়ে আৎকে উঠি সে খেলা যে আমার দেশেও শুরু হয়ে গেছে। এক ভয়ংকর পরিকল্পনায় আমরা রাজনীতিহীন হয়ে পড়েছি। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে দেখা দিয়েছে পুরোপুরি আদর্শিক বিচ্যুতি,বি এন পি আছে কােমায়,জামায়াত ফেরারী,জাতীয় পার্টি বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতিতে রুপান্তরিত আর বাকী দলগুলোতো বরাবরই সাইড লাইনের বাহিরে এখন তারাও প্রায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
রাজনীতিহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা ক্রমেই তার আন্ত:শক্তি হারিয়ে ফেলছে । ভাবলেসহীন হয়ে পড়েছে সমাজের ও রাষ্ট্রের সকল সুশীল প্রতিষ্ঠানগুলো। আর ক্রমেই জেগে উঠছে জে এম বি,আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ,আই এস । এখনও হয়তো বড় কিছুই ঘটেনি । কিন্তু যা ঘটে যাচ্ছে তারতো সমাধানে সরকারের কােন মনোযোগ নেই । তাইতো শংকাগ্রস্থ হয়ে পড়ছি। মনে হচ্ছে রাজনীতি ঋত হচ্ছে আর যুদ্ধতন্ত্র সমাগত হয়ে আসছে । কিন্তু সরকারের ভাষ্য :
নো ডর নাে ভয়
আমরা থাকলেই গণতন্তের জয়।
যেখানে রাজনীতিই নেই সেখানে গণতন্ত্রতো প্রশ্নই আসেনা । অবাধ রাজনৈতিক ব্যবস্থাই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত । আর বাক্ স্বাধীনতা,গণমাধ্যমে স্বাধীনতা,আইনের শাষন,মতের সহিঞ্চুতা এবং সর্বোপরি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা । এর কােনটিই বাংলাদেশে বর্তমানে নেই । অতএব বলা যায় গণতন্ত্র এখান থেকে নির্বাসিত ।কিন্তুু এর ফেরৎ আমাদের আনতেই হবে ।না হয় বুলুণ্ঠিত হয়ে যাবে আমাদের সকল অর্জন ।শান্তি প্রিয় জাতি হিসাবে এই ব্যপারে আমােদর পুরোপুরি আপোষহীন হতে হবে। তবে তাকে আনতে হলে সবার আগে যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে রাজনীতি চালু করা। অর্থাৎ সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষদের সাথে আলোচনায় বসায় । আর এর মূল চাবি সরকারের কাছে থাকে এটাই সবারই জানা। আমার বিশ্বাস তারা সেদিকেই অগ্রসর হবে। যে দলের অনেক গৌরবময় ইতিহাস আছে ,যে দলের দৃড় প্রতিজ্ঞ নেতৃত্ব আছে,যে দলে সৈয়দ আশরাফ,ওবায়দুল কাদের সহ তরুণ প্রজন্মের অনেক গণতান্ত্রিক মানসিকতা সম্পন্ন নেতা আছে তাদের পক্ষে অবশ্যই এই কাজটি করা সম্ভব । আর বিরোধী পক্ষেরও রাজনৈতিক সচলতা আনয়নে রাখতে হবে বিশেষ ভূমিকা। কথায় কথায় আন্দোলনের ডাক দেওয়া, হরতাল আহবান করা,অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা,জনস্বার্থে আন্দোলন না করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আন্দোলন, আলোচনার আহবান না করে আলটিমেটাম দেওয়া, নেতাকর্মীরা মাঠে না নেমে পথ শিশুদের ব্যবহার করে ককটেল পেট্রোল বােমা মারা, নিজেদের দলের মধ্যে গণতন্ত্রের সুষ্ঠ চর্চা না করা এসব বন্ধ করতে হবে।
তবে এ কথাতো ঠিক যার যত গাফিলতি থাকবে রাজনৈতিক ময়দানে তারা ততবেশি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ অযথা রাজনীতি বন্ধ না করে সবাইকে ময়দানে ছেড়ে দিন। বি এন পি যদি অপর্কম করে থাকে তার জওয়াব জনগণই তাদের দিবে। ধর্মীয় দলগুলোকেও যথাযত রাজনীতি করার সুযোগ দিন। পাহাড়ী নৃত্বাক্তিক জনগোষ্ঠীগুলোেকেও যথাযত রাজনৈতিক ধারায় নিয়ে আসুন। রাজনৈতিক ময়দান যতবেশি প্রতিযোগিতামূলক হবে দলগুলোর গুণগত মান তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। দেশ পাবে সৎ ও যােগ্য নেতৃত্ব। আর রাজনীতি যে অবাধ হচ্ছে এর আসল পরীক্ষার জায়গা অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন। গণতন্ত্রের অন্যসব ধর্ম এর থেকে গড়ে উঠে এবং তা উঠতে বাধ্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৪