somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুসাফির নামা
আমি একজন সমালোচক,তবে তা সংশোধনরে জন্য। আবার একজন প্রশংসাকারিও বটে, তবে তোষামোদকারি নয়।জানতে চাই অনেক কিছু।হতে চাই কালের সাক্ষী।

রাসূলে পাক (সঃ) এর একাধিক বিয়ে এবং কতিপয় অভিযোগের জবাব

০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






সমগ্র মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান যিনি সকল রাসূলগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ রাসূল,তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন রাসূলে পাক (সঃ)।যিনি ছিলেন সর্বাধিক খোদাভিরু,দয়াবান,ক্ষমাশীল,দানশীল এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। যার গুণের সর্বোত্তম উপাধি মুহাম্মদ অর্থাৎ সর্বাধিক প্রশংসিত।যিনি মানব জাতিকে কুফুরি থেকে এক আল্লাহর দিকে আহব্বান করেছিলেন। যার প্রতি ভালবাসা প্রত্যেক মুমিনের আল্লাহর পরেই অবস্থান।ধর্মপ্রচার, যুদ্ধক্ষেত্র, রাষ্ট্র পরিচালনা সর্বক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ত্রুটিমুক্ত।বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাকে ঘায়েল করতে ব্যর্থ পাশ্চাত্য সমাজ এবং তাদের এদেশীয় অনুচরগণ শেষ পর্যন্ত তার একাধিক বিয়েকে খুটি হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেছে খুবই কদর্য ভাষায়।শতকোটি মানুষের প্রাণের চেয়ে প্রিয় এই মানুষটির উপর অভিযোগ তুলেই তারা ক্ষান্ত হয় নি বরং খুবই নোংরা ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে।অতীতেও যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সবই প্রকৃত ইতিহাস অথবা যুক্তির কাছে হারতে বাধ্য হয়েছে।এজন্য ইসলামী পন্ডিত এবং সত্যানুসন্ধানী পাশ্চাত্য পন্ডিতরা প্রশংসার দাবীদার।আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।


আল্লাহর বিষয়টা অবশ্য বিশ্বাসের বিষয়।এজন্য আমাদের তাঁর নিদর্শনাবলী বিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। আমি এর আগে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম ’বিজ্ঞান ও নিরীশ্বরবাদ’, সেখানে চেষ্টা করেছি আল্লাহর অস্তিতের অনেক নিদর্শন দেখাতে যা আমাদের আরো বেশী বিশ্বাসী হতে সাহায্য করে।আজ পর্যন্ত কোনআন হাদীসের কোন রেফারেন্স নেই,যে কোন নবী-রাসূল বা ফেরেস্তা আল্লাহকে দেখেছেন,তবে অনেক নবী-রাসূল তার সাথে কথা বলেছেন,এমন রেফারেন্স পাওয়া যায়। আল্লাহ কোরআনে নিজেই বলেছেন, ”কোন দৃষ্টিই নেই যা উনাকে ধারণ করতে পারে; তবে আসমান ও জমীনের সকল সৃষ্টিই তার দৃষ্টির মধ্যে”(সূরা আনআম:১০৩)।
তবে তার সৃষ্টির মধ্যেই তার নিদর্শনাবলী রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য।বিশ্বাসের মূল তাৎপর্যতো সেখানে।কেউ যদি বলে,না দেখে বিশ্বাস করবোনা,তাহলে বলব বিশ্বাস কি জিনিস সে বুঝেই নাই।অদেখা জিনিসের উপর আস্তা রাখাই বিশ্বাস।একটা উদাহরণ দিলে আরো পরিস্কার হবে। আপনি কাউকে বিশ্বাস করে এক লক্ষ টাকা ধার দিচ্ছেন।যেহেতু আপনি ভবিষ্যৎ জানেন না,তারপরও এই বিশ্বাস করে দিচেছন কারণ তাকে বিশ্বাস করার মতো আপনি তার মধ্যে অনেক কিছু দেখেছেন।তারপরও কেউ যদি বলে না দেখে বিশ্বাস করিনা ,বলব সে আহাম্মক।দেখলে বিশ্বাসের আর কি আছে? আল্লাহ নবী রাসূলদের মধ্যে বিশ্বাসের দৃঢ়তার জন্য তাদের তার ক্ষমতার অনেক নিদর্শন দেখিছেন।তাই ধর্মকে বিজ্ঞান বা ইতিহাস বা দর্শনের সম্মুখীন করা দোষের কিছু না।কারণ আল্লাহকে বিশ্বাসের পর এত বিধিবিধানের মূল উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ সাধন।তাই ধর্ম যেহেতু চর্চার বিষয় তাই একে শুধু বিশ্বাসের মধ্যে রাখলে তা শুধু রহস্যবাদের মধ্যে আটকা পড়ে যায়।ধর্ম কিভাবে মানুষের স্বার্বিক কল্যাণে আসে তার জন্য অবশ্যই ধর্মকে রহস্যবাদ থেকে মুক্ত করতে হবে।হযরত আয়েশা (রাঃ) এর জীবনী দেখলে দেখতে পাই,যখন রাসূল (সঃ) তাকে ইসলামের কোন বিধান বলতেন,কোন বিষয় খটকা লাগলে উনি অন্ধের মতো মেনে না নিয়ে সাথে সাথে প্রশ্ন করতেন এবং পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত প্রশ্ন করতেন।


ইসলাম যেহেতু সর্বাঙ্গীন কল্যান সাধনের জন্য,তাই একে রহস্যবাদের মধ্যে না রেখে এর সর্বাঙ্গীন বিশ্লেষণ যুগের চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে।শিক্ষিত সমাজও তাই চায়। ইসলামের বিধিবিধান রহস্যবাদ থেকে মুক্ত করা গেলে আল্লাহর বিধিবিধান যে কত তাৎপর্যপূর্ণ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর তা অনুধাবন করতে পারব।এতে করে আল্লাহকে আমরা আরো ভালো ভাবে অনুধাবন করতে পারব।
আজ তাই মাদ্রাসা শিক্ষিত লোকই নয় বরং প্রাচ্যের ধর্মহীন শিক্ষার লোকজনও একে জানছে এবং জীবন আদর্শ হিসাবে নিচ্ছে।আবার কিছু ধর্মানুরাগী লোক একে ভালভাবে না জানার কারনে অন্যের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অনেকে আরার না জানার কারণে যে সূত্রগুলোকে অপপ্রচারকারী ব্যবহার করছে সেগুলোকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।প্রকারান্তে সে নিজেই মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে।এটা ঠিক নয়।যে আল্লাহর রাসূল তার গোটা জীবনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন,সেখানে আমি আপনি গোপন করা তার নির্দেশের বরখেলাপ। বিদায় হজ্জে তিনি সুস্পষ্ট বলে দিয়েছেন, উপস্থিতরা যেন অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়।আপনার জানা না থাকলে চুপ থাকুন ,মিথ্যা বা গোজামিলের আশ্রয় নিবেন না। আর এটাই সরল পথ।ইসলাম সর্ববস্থায় সরল পথ অবলম্বনের কথাই বলেছেন।

আসুন আজকের আলোচ্য বিষয়ের দিকে যাই।

হাদীসগ্রন্থগুলোর আলোকে আল্লাহর রাসূলের সর্বমোট এগারজন স্ত্রী ছিলেন এবং উনার অধিনস্থ চারজন ক্রীতদাসী ছিলেন। উনারা হলেনঃ

১)হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রথম স্ত্রী হলেন হযরত খাদীজা বিনতু খাআইলেদ(রাঃ): তিনি একজন বিধাবা ছিলেন,বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৪০ এবং রাসূল(সঃ) এর বয়স ছিল ২৫। একমাত্র ইব্রাহীম ছাড়া রাসূল(সঃ) এর সব সন্তান তার গর্ভে হয়।

২)সাওদা বিনতে জামআ(রাঃ) রাসূল(সঃ) এর দ্বিতীয় স্ত্রী: উনিও একজন বিধাবা ছিলেন। বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৫০ আর রাসূল (সাঃ) এর বয়স ৫০।

৩)আয়েশা সিদ্দিকা বিনতু আবুবাকর (রাঃ) ছিলেন তৃতীয় স্ত্রী: বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৬ আর রাসূল (সাঃ) এর বয়স ৫১। বিয়ের তিন বছর পর উনাদের বাসর হয়।

৪)হাফসা বিনতু ওমর (রাঃ) ছিলেন চতুর্থ স্ত্রী: তিনিও ছিলেন বিধাবা। বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ২২ আর রাসূল (সাঃ) এর বয়স ৫৬।

৫)যায়নাব বিনতু খুযাইম (রাঃ) ছিলেন পঞ্চম স্ত্রী: বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৩০ এবং রাসূল(সাঃ) এর বয়স ৫৭।বিয়ের আটমাসের মাথায় উনি মারা যান।

৬)উম্মু সালামা (রাঃ): বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ২৬ এবং রাসূল (সাঃ) এর বয়স ৫৭।

৭)যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) ছিলেন সপ্তম স্ত্রী: বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৩৬ এবং রাসূল (সাঃ) এর বয়স ছিল ৫৮।

৮)জুআইরিয়া বিনতু হারেসা (রাঃ): বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ২০, রাসূল(সাঃ) এর ৫৮।

৯)উম্মু হাবীবা বিনতু আবু সুফিয়ান(রাঃ): বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৩৬ এবং রাসূল (সাঃ) এর বয়স ৫৯।

১০)মাইমুনা বিনতু হারেস(রাঃ): বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৩৬ এবং রাসূল(সাঃ) এর বয়স ৫৯।

১১)সাফিয়া বিনতু হুয়াই(রাঃ): বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ১৭ এবং রাসূল(সাঃ) এর বয়স ৬০।

রাসূল (সাঃ) আরো দু’টো বিয়ে করেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন আসমা বিনতে জুন। সহবাসের পূর্বে তিনি তালাক দাবি করলে রাসূল (সাঃ) বিনা বাক্যে তাকে তালাক দিয়ে সসম্মানে বিদায় দেন।

এছাড়া আরেক জনের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। যদিও হাদীসগ্রন্থগুলোতে তার নাম পাওয়া যায়নি কিন্তু তার সাথে সহবাস হয়নি। বিয়ের পর তার ছোঁয়াছে রোগ আছে জানা গেলে রাসূল (সাঃ) সহবাসের পূর্বেই তাকে তালাক দিয়ে সসম্মানে বিদায় দেন।

এভাবে তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা হচ্ছে ১১জন। দুই জন আগেই মারা যাওয়ায় মৃত্যুর সময় তিনি মোট নয়জন স্ত্রী রেখে যান।

ক্রীতদাসীঃ

১)রাইহানা বিনতু সামউন (রাঃ): ৫ম হিজরী
২)মারিয়ায় কিবতীয়া(রাঃ): ৬ষ্ঠ হিজরী
৩)জামিলা (রাঃ): যুদ্ধ বন্দি হিসাবে
৪)নাম জানা যায়নি: যাইনাব (রাঃ)তাঁকে হেবা করেন।

উল্লেখিত বিস্তারিত আলোচনার আলোকে রাসূল (সাঃ) জীবনে ১১ জন স্ত্রী এবং ৪ জন ক্রীতদাসী তাঁর অধিনস্ত ছিল।

অমুসলিম পন্ডিতগণের মধ্যে থেকে অধিকাংশরাই একাধিক বিয়ের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর উপর অত্যান্ত সূক্ষভাবে , হৃদয়বিদারক আক্রমণ চালিয়েছে।যার সারমর্ম হল এই যে,খাদীজা (রাঃ) এর মৃত্যুও সময় তাঁর বয়স ছিল ৫০ বছর, ৫০ থেকে ৬৩ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ১০ টি বিয়ে করেছেন আবার ক্রীতদাসীও ছিল অর্থাৎ ১৩ বছরে তাঁর অধীনে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ জন স্ত্রী ছিল।(তাদের দৃষ্টিতে ) যার অর্থ দাঁড়ায় যে তিনি জীবন ব্যাপী যৌনতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। নবুয়াত আর ওহীকে তিনি শুধু মাত্র ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন।

অবাক করার বিষয়, রাসূল(সাঃ) কে হেয় করার জন্য গত একশ বছরে পশ্চিমা যে পরিমান বই লিখেছেন, অন্য কোন বিষয় নিয়ে এর একভাগও লেখা হয়নি। অথচ তাদের নবীকে নিয়ে মুসলিমরা হেয় করে বই লিখছে এরকম আমার নজরে পড়েনি। বরং ইসলাম ধর্মের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা নবীদের মধ্যে পার্থক্য করিনা।শুধু আহলে কিতাবদারী না বরং অন্য ধর্মের প্রবর্তকদের নিয়ে আলোচনার সময় ইসলামী পন্ডিতগণ যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে।এবং তাদের উপর যে দোষসমূহ পড়ে এর জন্য গ্রন্থ প্রণেতাদেরই দায়ী করা হয়।
১৯২৪ সালে একজন হিন্দু প্রকাশক রাজপাল একাধিক বিয়ে নিয়ে অত্যান্ত হৃদয়বিদারক এক বই লিখেন,যার নাম দেওয়া হয় ’রঙ্গিলা রাসূল’।

এর বিষয় হল এই যে,রাসূল (সাঃ) এর জীবনীর উপর কটুক্তি করার নিমিত্তে কোন ত্রুটি না পেয়ে একাধিক বিয়ের বিষয়টা সামনে নিয়ে আসে।অথচ একাধিক বিয়ের ব্যাপারে তাঁর ওপর যত অভিযোগ আনা হয়েছে সবই অন্ধ শত্রুতা, হিংসা আর গোড়ামী বহিৎপ্রকাশ মাত্র। ব্লগে এই বিষয়ে বেশ কয়েকটা লেখা আমার নজরে পড়ে। তাই এই বিষয়টা নিয়ে অহেতুক গোড়ামী দূর করার জন্য এই প্রয়াস।

রাসূল (সাঃ) এর আগমনের পূর্বে আরব সমাজে অনেক কুপ্রথা বিদ্যমান ছিল। একজন পুরুষ একসাথে ৮ জন ,১০ জন ,১২জন, মহিলাকে বিয়ে করত, একাধিক বিয়ের কোন সীমাবদ্ধতা ছিল না। ইসলাম এ কুপ্রথাকে রহিত করে শুধু চারটি বিয়ের করার অনুমতি দিয়েছে তাও ন্যায়পরায়ণতা রক্ষা সাপেক্ষে।আর এ নির্দেশ দিয়েছে,যে ব্যাক্তি ন্যায়পরায়ণতা রক্ষা করতে পারবে না তার জন্য একটিই যথেষ্ট।এই চারটিও বিয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট কারণ ইসলাম দেখিয়েছে।যাক আমাদের আজকের বিষয় যেহেতু তা নয়, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব না।

প্রথমেই আমি. কোরআনে রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে কি বলে এবং তারপর অভিযোগ খন্ডন করব। কোরআনকে আনতে হবে এই জন্য,রাসূল(সাঃ) এর জীবন পরিচালিত হয়েছে কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী, তারপর দেখাব সময়সাময়িক কি কারণে রাসূল(সাঃ) এর একাধিক বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আর সে সাথে আলোচনা করব দাসদাসীদের বিষয়টা।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

”হে নবী! আমি আপনাকে বিশাববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি” (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)

”আপনি অবশ্য মহান চরিত্রের অধিকারী”(সূরা কালাম: ০৪)

”আপনার পালনকর্তা থেকে যা অবতীর্ণ হয়,আপনি তার অনুসরণ করুণ।........”(সুরা আরাফ: ১৫৮)

”আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুইটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ-যাদের সাথে তোমরা যিহার কর ,তাদের কে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা, আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।তোমরা তাদের কে তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায় সঙ্গত।যদি তোমরা তাদের পিতৃপরিচয় না জান,তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে।এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই,তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।”(সূরা আহযাব:০৪-০৫)

”নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ট এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা।....”(সুরা আহযাব-০৬)

”হে নবী, আপনার পত্নীগণকে বলুন,তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও বিলাসিতা কামনা কর,তবে আস আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দিই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় দিই।”(সূরা আহযাব:২৮)

”আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন; আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন; তাকে যখন আপনি বলেছিলেন,তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করেছিলেন,যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দিবেন,আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকে অধিক ভয় করা উচিত।অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে তাদের বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না হয়।আল্লাহর নির্দেশই কার্যে পরিণত হয়।”(সূরা আহযাব: ৩৭)

”আল্লাহ, নবীর জন্য যা হালাল করেন তাতে তাঁর কোন বাধা নেই,পূর্ববর্তী নবীগণের ক্ষেত্রে এটাই ছিল আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধান নির্ধারিত ,অবধারিত।”(সূরা আহযাব: ৩৮)

”মুুমিনগন! তোমরা যখন মুমিন নারীদের বিবাহ কর, অতঃপর তাদের স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও,তখন তাদের ইদ্দত পালনে বাধ্য করার ব্যাপারে তোমাদের কোন অধিকার নেই।অতঃপর তাদের কিছু দেবে এবং ইত্তম পন্থায় বিদায় দেবে।”(সূরা আহযাব: ৫৯)

”হে নবী! আপনার জন্য আপরার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি,যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেছেন,আর দাসীদের হালাল করেছি যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দিয়েছেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাত,মামাত,ফুফাতো,খালাতো ভগ্নি যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করতে চায়,তবে তাকে আপনি বিবাহ করতে চাইলে সেও আপনার জন্য হালাল। এটা বিশেষ করে আপনার জন্য অন্য মুমিনদের জন্য নয়।....”(সূরা আহযাব:৫০)

দেখা যাচ্ছে,নবী-রাসূলগণ অন্যদের মতো মানুষ হলেও তাদের জন্য আলাদা কিছু বিধিবিধান ছিল। যেমনঃ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্য তাহাজ্জুদ নামায ফরজ ছিল কিন্তু নবীর উম্মতের জন্য তা নফল।সাদকা রাসূল (সঃ) এবং তাঁর পরিবারের জন্য হারাম কিন্তু উম্মতের জন্য হালাল।রাসূল (সাঃ) জন্য আহলে কিতাবদের সাথে বিয়ে হারাম কিন্তু উম্মতের জন্য হালাল।রাসূলের রেখে যাওয়া সম্পত্তি উত্তরসূরীদের জন্য বন্টন বৈধ নয় অথচ সমস্ত উম্মতের জন্য তা বৈধ।রাসূলের জন্য স্বীয় স্ত্রীগণের মাঝে সমতা জরুরী ছিলনা কিন্তু উম্মতের জন্য জরুরী।রাসূলের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীগণকে অন্য কেউ বিয়ে করা বৈধ নয় কিন্তু উম্মতের জন্য এ বিধান নেই।

অবাক করার বিষয়, রাসূল(সাঃ) এর ৬৩ বছরে মক্কার মুশরিক এবং মদীনার মুনাফিক ও ইহূদিরা তাঁর ওপর হাজারো আপবাদ চাপিয়েছেন কিন্তু কখনও তিনি চরিত্রহীন বা নারী লোলুপ ছিলেন এরকম অভিযোগ দেয়নি, অথচ আজ চৌদ্দশ বছর পর তার ওপরই সে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এরকম একটি অভিযোগ মুমিনদের কষ্টের কারণ বটে,সে সাথে অনেকে বিষয়টাকে মেনে নিতেও অপরাগ হয়ে পড়েছেন।তাই নারী লোলপুতার কারণেই কি তাঁর এতগুলো বিয়ে না সেখানে কাজ করেছে অন্য অনেক বিষয় তা খন্ডন জরুরী হয়ে পড়েছে।

১)রাসূল(সাঃ) প্রথম বিয়ে করেন খাদীজা(রাঃ) কে। যখন রাসূল(সাঃ) এর বয়স ২৫ এবং খাদীজা(রাঃ) এর বয়স ৪০।তাঁদের ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যান্ত সুখের এবং শান্তিময়।

২)খাদীজা (রাঃ) এর মৃত্যুও পর তিনি সাহাবীদের পরামর্শে তিনি বিয়ে করেন ৫০ বছর বয়স্কা সাওদা(রাঃ) কে। অথচ ঐ সময় মক্কার কুরাইশরা তাকে তাঁর ধর্ম প্রচার বন্ধ করার শর্তে মক্কার সবচেয়ে সুন্দরী নারীর সাথে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।ওহী যদি আল্লাহর আদেশ না হয়ে তাঁর বিয়ে করার ঢালই হত এবং তিনি নারী লোলুপ হতেন,তবে সে সময় একটা ঢাল নিশ্চয়ই গজিয়ে নিতে পারতেন। পূর্বে সূরা আহযাবের ২নং আয়াত উল্লেখ করেছি,সেখানেই আল্লাহ তাঁর জন্য নির্দেশনাবলী দিয়ে দিয়েছেন।

৩)মক্কা ও মদীনার যুগে রাসূল্লাহ (সাঃ) যতগুলো বিয়ে করেছেন তারা সবাই বিধাব বা তালাকপ্রাপ্তা । একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল আয়েশা(রাঃ)। যখন তাঁর বিয়ে হয় তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ছয়। এনিয়েও অনেক কথা উঠেছে।বস্তুত পক্ষে আয়েশা (রাঃ)এর সাথে রাসূল (সাঃ) এর বিয়ের প্রস্তাবের পূর্বেই জুবাইর ইবনে মাতুইম(রাঃ) এর ছেলের বিয়ের প্রস্তাব চলছিল। সহজেই অনুমেয় এবং হাদীসের বর্ণনা মতে ছয় বছর বয়সেই আয়েশা (রাঃ) পরিপূর্ণ মেয়ের মতোই লাগত।শুধু শারিরিক নয় বরং মানসিক দিক দিয়েও অর্থাৎ অল্প বয়সেই ব্যাপক বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ পায়। তাই রাসূল (সঃ)ও নারীদের মধ্যে ইসলামী হুকুম আহকাম চর্চার ক্ষেত্রে আয়েশা (রাঃ)কে যোগ্য বিবেচনা করে রাজি হন। ইতিহাস বলে,আয়েশা (রাঃ) সেক্ষেত্রে পরিপূর্ণ আঞ্জাম দেন।কি কোরআনের তাফসীর, হাদীস বর্ণনা ও ব্যাখ্যা ,ফিকহ শাস্ত্র এমনকি সাহিত্যেও সবক্ষেত্রে তিনি নারীদের মধ্যে সেরা এবং অনেক বড় বড় সাহাবীদেও সাথে অনেকটা তুল্য। তাই আয়েশা (রাঃ) কে সিলেকশন ছিল আল্লাহর রাসূলের এক দূরদর্শী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।অন্য স্ত্রীগণ সফলও হলে কেউ তাঁর মতো পারেনি।অন্য আরেক সময় সুযোগ ফেলে এই মহীয়সী নারী ইসলামের কি অতুলনীয় ক্ষেদমত করেছেন তা তলে ধরব।

৬ বছর বয়সে বিয়ে হলেও উনাদের রুখসাত হয় ৯ বছর বয়সে। বলা যায়,উনাকে তুলে আনার সময় উনার মাথার চুল একে বারেই পড়ে গিয়েছিল এবং চেহারা হয়ে গিয়েছিল বিবর্ণ। কারণ মদিনায় হিজরতের পর সেখানের বিরুপ আবহাওয়া উনি মারাত্মক রোগে পড়েন। তাঁরপরও আল্লাহর রাসূল খাদীজা (রাঃ) এর পরে উনাকেই বেশী ভালবাসতেন।এই ব্যাপারেও আল্লাহর দৃষ্টিভঙ্গি আগেই উল্লেখ করেছি। তারপরও জাগতিক বিষয়ে তিনি সবসময় সাম্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। তিনি আল্লাহর কাছে বলতেন,আল্লাহ আমার সাধ্যে যা কুলো আমি সাম্যতা রাখার চেষ্টা করেছি,আর যা আমার সাধ্যের বাইরে তাঁর জন্য ক্ষমা কর;যদিও এই বিষয়ে আল্লাহ উনাকে সাম্যতা বজায় রাখতে হবে এই বিষয় থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আর ঐ দু’জনের প্রতি মনের মধ্যে বেশী ভালবাসা সৃষ্টি হওয়া যে স্বভাবজাত ছিল,তা আপনারা ভালভাবেই জানেন।এখানে সহজে অনুমেয়, নারী লোলুপতা নয় বিয়েগুলোর রয়েছে ব্যাপক তাৎপর্য।

বয়সের এত ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল ব্যাপক সুখের এবং এ যুগের লোকেরা যেমন চায় বলা যায় সেরকম বন্ধুত্বপূর্ণ দাম্পত্য জীবন। ঘরে থাকলে যখন যার ঘরে থাকতেন তাকে পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করতেন, তাদেরকে নিয়ে ঘুরতে বের হতেন। সেসময় খেলাধূলা ছিল ঘোড়া দৌড়.তীর নিক্ষেপ এসব দেখতে নিয়ে যেতেন।আমরা কয়জন এগুলো করি।এভাবে দাম্পত্য জীবনের বেশীর ভাগই আমরা আয়েশা(রাঃ) অথবা তাঁর অন্য স্ত্রীদের থেকে জানতে পারি।

তাছাড়া এই বিয়ের মাধ্যমে মুমিনগণকে আল্লাহর রাসূল যে ভাই ভাই সম্বন্ধ করে দিয়েছেন , এতে অনেকের মনে এই এই ধারণা চলে আসছিল যে ধর্মের এই ভাই আরেক ভাইয়ের কন্যাকে বিয়ে করতে পারবেনা। এই বিয়ের মাধ্যমে মুমিনদেন এই ধারণাও অপনোদন হয়। এছাড়া আবু বাকর (রাঃ) এর কন্যাকে বিয়ের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হয়।

হযরত ওমর (রাঃ) এর কন্যা হাফসা (রাঃ) এর সাথে বিয়ের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) তাঁর অত্যান্ত বিশ্বস্থ সাহাবীগণের সাথে স্বীয় সম্পর্ককে সুদৃঢ় করলেন।অপর দিকে ওসমান (রাঃ) এর সাথে একের পর এক দু’কন্যাকে এবং আলী (রাঃ) এর সাথে ফাতেমা (রাঃ) কে বিয়ে দিয়ে এ চারজন অগ্রবর্তী জ্ঞানী এবং একনিষ্ঠ সাহাবীগণের সাথে স্বীয় সম্পর্ককে মজবুত করলেন।তাঁর মৃত্যুর পর এ চার জন সাহাবী একের পর এক যেভাবে সুদৃঢ় মনোভাব নিয়ে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ধরে রেখেছিলেন তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। সময়ের আবর্তনে প্রমাণিত হয়েছে যে , এ চারজন সম্মানিত সাহাবীর সাথে তাঁর এ সুদৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন ইসলামের অগ্রযাত্রার জন্য কত জরুরী ছিল।

৪) তাছাড়া আবু সুফিয়ান (রাঃ) এর মেয়ে ছিল উম্মে হাবীবা(রাঃ)।কুরাইশদের সেনাপতি হয়েও যুদ্ধে রাসূল(সাঃ) এর সামনে আসতেন না।

সাফিয়া বিনতু হুয়াই(রাঃ) ইহুদি বংশ বনি নাযিরের সর্দারের মেয়ে ছিলেন। এ বিয়ের ফলে বনি নাযির আগের ন্যায় শত্রুতা করেনি।

জুআইরিয়া বিনতু হারেস (রাঃ) ইহুদি বনি মোস্তালেকের সর্দারের মেয়ে ছিল।রাসূল (সাঃ) এর সাথে তাঁর বিয়ের ফলে তারাও বিরোধিতা বন্ধ করে দেয়।

৫)যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে কিছু জাহেলী প্রথাকে নিধন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।যায়নাবের সাথে প্রথম বিয়ে যায়েদ বিন হারেসা(রাঃ) এর সাথে হয়েছিল,যে রাসূল (সাঃ) এর পালক পুত্র ছিল। আরবদের মধ্যে পালক পুত্রদের ঐ অধিকার ছিল যা নিজের সন্তানদের ছিল। যায়েদ ও যায়নাবের মাঝে মিল হচ্ছিল না, আর রাসূল (সাঃ) না চাওয়া সত্ত্বেও তাদের মাঝে তালাক হয়ে গেল। তাই জাহেলী প্রথাকে রহিত করার জন্য আল্লাহ তাঁকে যায়নাব কে বিয়ে করার নির্দেশ দিলেন।

৬)উম্মু সালামা বিনতু আবু উমাইয়া (রাঃ) ছিলেন বিধাবা। তাঁর বংশের সাথে খালিদ বিন ওয়ালিদের বংশের সম্পর্ক ছিল সুদৃঢ়। তাঁকে বিয়ের পর রাসূল(সাঃ) এর সাথে তাদের শত্রুতার মনোভাবে অনেক পরিবর্তন চলে আসে।

৭)মাইমুনা বিনতু হারেস(রাঃ) সম্পর্কে হাদীসগ্রন্থগুলো থেকে তেমন কিছু জানা যায় না। শুধু তাঁর মৃত্যুর পর আয়েশা(রাঃ)বলেন,তিনি ছিলেন আমদের মধ্যে সবচেয়ে পরহেযগার।

এভাবে রাসূল (সাঃ) আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে যে মারাত্মক শত্রুতা ছিল তা অনেকাংশে কমিয়ে নিয়ে আসেন।এবং সে সাথে তাঁর বিবিগণ নারীদের মধ্যে দ্বীনী দাওয়াত ও হুকুম আহকাম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন,পর্দার বিধান নাযিল হওয়া যা রাসূল (সাঃ) এর জন্য কঠীন হয়ে গিয়েছিল।ইতিহাস সাক্ষী এক্ষেত্রে আয়েশা (রাঃ),হাফসা (রাঃ) এবং উম্মু সালামা (রাঃ) এর অবদানপ্রায় বড় বড় সাহাবীদের সমতুল্য।

অত্যান্ত দুঃখের বিষয় ,তাঁর উপরই আরোপিত হচ্ছে নারী লোলুপ,চরিত্রহীনতার।

তাঁর বিবাহিত নারীগণের মধ্যে ১ জন কুমারী,৯ জন বিধাবা এব ১ জন তালাকপ্রাপ্তা।আর তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিল ৪০ বছর বয়স্কা বিধবা যখন তাঁর বয়স ছিল ২৫।দ্বিতীয়জন ছিল ৫০ বছর বয়স্কা বিধাবা। তিনিতো চাইলে পারতেন কম বয়সী সুন্দরীদেও বিবাহ করে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা পূরণ করতে।যখন আরবে ১০ থেকে ১২ বছরের মেয়েদের বিবাহের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় মনে করা হত, এখনও মনে করা হয়,সেখানে তাঁর অধিকাংশ স্ত্রী যেকোন দৃষ্টিকোণে বয়স্ক মহিলা ,কোন কোন ক্ষেত্রে বৃদ্ধা।অবশ্য উল্লেখ্য যে ,আরবের উষ্ণ ও বিরুপ আবহাওয়ার কারণে আরবের মেয়েরা খুব কম বয়সে সাবালকত্ব অর্জণ করে এবং অল্পদিনে তরুণী সুলভ অবয়ব হারিয়ে ফেলে।হাদীসের বর্ণনা মতে আয়েশা (রাঃ) ১৫ বছর বয়সে এতটা ভারী হয়ে গিয়েছিল মনে হত ত্রিশোর্ধ একজন মহিলা।

তাঁর ব্যাপারে স্ত্রীদের সাথে সাম্যতার বিষয়ে আল্লাহর দৃষ্টিভঙ্গি আগেই উল্লেখ করেছি। তারপরও জাগতিক বিষয়ে তিনি সবসময় সাম্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।মৃত্যু শয্যায় উপনীত হলে আল্লাহর কাছে বলতেন,আল্লাহ আমার সাধ্যে যা কুলো আমি সাম্যতা রাখার চেষ্টা করেছি,আর যা আমার সাধ্যের বাইরে তাঁর জন্য ক্ষমা কর,যদি এই বিষয়ে আল্লাহ উনাকে সাম্যতা বজায় রাখতে হবে এই বিষয় থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আর খাদীজা (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) এই দু’জনের প্রতি মনের মধ্যে বেশী ভালবাসা সৃষ্টি হওয়া যে স্বভাবজাত ছিল,তা আপনারা ভালভাবেই জানেন।একজনের ইসলামের প্রতি ত্যাগ তীতীক্ষা এবং আরেক জনের জ্ঞান গরিমা।এখানে সহজে অনুমেয়,সবদিক চিন্তা করলে কোন নারী লোলুপতা নয় বিয়েগুলোর রয়েছে ব্যাপক তাৎপর্য।

দু’একজন সতীন যেখানে একে অপরকে সহ্য করতে পারেনা, সেখানে রাসূল (সাঃ) স্ত্রীদেও বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী কদাচিৎ দু’একটা বিষয় হালকা মনমালিণ্য ছাড়া তাঁদের সম্পর্ক ছিল মধুর।রাসূল পাক (সাঃ) তাঁদের সন্তুষ্টির দিকে সর্বদা খেয়াল রাখতেন।তাঁর পরও তাঁর অভাবের সংসার। আয়েশা (রাঃ) এর বর্ণনা মতে,তাঁর নয় বছরের দাম্পত্য জীবনে তিনি কখনও রাসূল (সাঃ) কে দু’বেলা পেট ভরে ক্ষেতে দেখেন নি,এমন অনেক সময় গেছে তাঁরা দু’দিন না খেয়ে ছিলেন অথবা শধু পানি খেয়ে রোযা রেখে দিয়েছেন। তাঁর ঘরে যে খাবার দাবার আসত না তা নয়, সাহাবীদের কাছে কোন খাবার আসলেই একটা অংশ তাঁর ঘরে পাটিয়ে দিতেন।দিলে কি হবে,হয়তো আরো কিছু অভাবী এসে দরজা দাঁড়িয়ে আছে। তাই স্ত্রীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে একবার তাদের ডেকে বললেন,তোমরা যদি চাও আমি তোমাদের উত্তম পন্থায় বিদায় জানাবো।উত্তরে সবাই আল্লাহর রাসূলের সাথে থাকাকেই শ্রেয় মনে করলেন।এরকম একজন লোকের ওপর যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা কি শত্রুতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে?দুনিয়ার সব কিছু ছিল তাঁর কাছে তুচ্ছ।তাঁর জীবনেতো একটাই মিশন ছিল,আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শতদা বিভক্ত মানবজাতিকে একসুত্রে গেঁথে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

আসা যাক,দাসীদের ক্ষেত্রে। শুধু আরব নয়,পুরো বিশ্বেই তখন দাস প্রথা বিরাজ ছিল। আর পেছনে কিছু তৎকালীন কারণও ছিল। দাসদের বিশাল একটা ছিল যুদ্ধবন্দী। অত্যাচারী শাসকদের ক্ষেত্রে দেখা যায়,তারা জোর করে অন্য এলাকা থেকে লোকদের এনে দাস বানাতো। যাদের দ্বারা তারা খুবই কঠীন কাজগুলো করাতো।
আরবদের ক্ষেত্রে আরো কিছু কারণ ছিল। আরবে তখন পর্যন্ত কোন রাষ্ট্র কাঠামো ছিল না,ফলে অপরাধ কর্মেও সাজা হিসাবে অনেকে দাসে পরিণত হত।তাদের মালিক ইচ্ছমূলক বিক্রি করতে পারত।তাদের ব্যাক্তিগত জীবন বলতে কিছুই ছিল না।ইসলাম প্রচারের সাথে সাথে আল্লাহর রাসূল দাস মুক্তির কাজ শুরু করেন।তিনি নিজে তাঁর অধিনস্থ যায়েদ বিন হারেসাকে মুক্ত করে দেন।কিন্তু যায়েদ সেচ্ছায় তাঁর কাছে থেকে যায়।

কিন্তু এ ব্যবস্থা এত প্রকট ছিল যে,একদিনে তা দূর করা সম্ভব ছিল না।ইসলাম বরাবরই সংস্কার এর মাধ্যমে এসকল জাহেলী প্রথা দূর করেছে।বিপ্লব অপেক্ষা সংস্কার মানুষের জন্য সবসময় সহজ।কারণ অনেক দিনে চলে আসা প্রথা যে কারো ছাড়তে একটু সময় লাগবেই। এই জন্য বেশিরভাগ বিপ্লবের ক্ষেত্রে প্রতিবিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরী হয়। ইসলাম তাই সমাজে মারাত্মক আকারে ঝেকে বসা কুপ্রথা যেমনঃ-মদ,সুদ,জুয়া এসব ক্রমান্বয়ে দূর করেছে,তেমনি শরিয়তের বিধিবিধানগুলোও ক্রমান্বয়ে পুনঃস্থাপন করেছে। দাস প্রথা বিলোপের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করে।কারণ হাজার হাজার বছরের চলে আসা এসব প্রথা ,যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যছিল,তা একদিনে বিলোপ করতে যাওয়া মানে ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হওয়া।তাই ইসলাম বরাবরই সংস্কার এর মাধ্যমে এগিয়ে গেছে।

দাসদের মুক্ত করার জন্য রাসূল(সাঃ) শুরু থেকে সাহাবীদের উৎসাহ দিতেন।যার উদাহরণ অনেক আছেন। যাকাতের থেকে ,কোন গুণাহের কাফফারা স্বরূপ দাস মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন।বারবার আহবান করেছেন, কে আছে প্রকৃত ধর্মের দিকে আসবে,তবে সে যেন দাস মুক্ত করে।আসলে ইসলামী বিধিব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ সাধন।কিন্তু তখনও তো মাত্র শুরু।কিন্তু এই দাসদের জন্য ইসলাম জীবনের আলো দেখিয়েছেন। পূর্বে দাসদের বিবাহের কোন ব্যবস্থা ছিলনা। ফলে হয় তাদের বৈধব্য জীবন অথবা ব্যভিচারে লিপ্ত হত,অনেক ক্ষেত্রে মালিক তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলত-এর কোন সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না,ফলে তাদের ঔরসজাত না পেত কোন সামাজিক স্বীকৃতি না পেত কোন সম্পত্তির মালিকানা।প্রকারান্তে তা ব্যভিচার।এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রাথমিক কাজই ছিল তাদের পবিত্র থাকতে বিধি করে দেওয়া এবং মোলিক মানবিয় মর্যাদার সৃষ্টি।শুধু মালিকদের মধ্যেই সমস্যাই নয়, মানুষও দীর্ঘদিন দাস থাকতে থাকতে তার মধ্যে ঐ মনোবৃত্তিটা গড়ে উঠে একটা শিল্পের মত। তাছাড়া শিক্ষাদিক্ষাহীন অনেক দাস ইসলামের কল্যাণে স্বাধীন হয়ে মারাত্মক বেকার সমস্যা পড়ে যায়।দাসীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরো পকট হয়।তাই ঐ সময় দাস মুক্ত করাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

তাই আল্লাহ তাঁদের পুতপবিত্র রাখতে এবং মানবীয় মর্যদা ধরে রাখার জন্য বিধান দেন।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নির্দেশ দেন,”তাদের মধ্যে যারা চায় অর্থাৎ দাস-দাসীদের মধ্যে যারা চায় তাদের বিয়ে দিয়ে দাও,যদি তাঁরা দরিদ্র হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তঁদের অভাব দূর করে দিবেন।”

অনেক ক্ষেত্রে সে রকম পাওয়া যেতনা বা অনেক মালিক রাজি হতেন না,তাদের ক্ষেত্রে তারা চাইলে দাসীদের সাথে সহবাস করতে পারবে।যদিও তাঁরা দাসী তথাপি এই অনুমতির ফলে একটি বৈধ সম্পর্ক সৃষ্টি হল এবং এই স্বীকৃতির ফলে তাদের সন্তানগণ প্রকৃত সন্তানের মর্যাদাই পেত এবং ঐ সন্তানগণ ঐ লোকের বৈধ উত্তরাধিকারী হত।এর ফলে দাসী পরিচয় ছাড়া মানবিক মর্যাদা হানিকর আর কোন অপবাদের সুযোগ থাকল না।দাসী মারিয়া কিবতীয়ার ঘরে আল্লাহর রাসূলে একটি পুত্র সন্তান হন, যার নাম রাখা হয় ইবরাহীম।যদিও শিশু অবস্থায় সে মারা যায় কিন্তু তার মৃত্যুতে রাসূল(রাঃ) দুই চোখে পানি নেমে আসে।

রাসূল (সাঃ) এর জীবনে অনেকগুলো যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে অনেক যুদ্ধবন্দি আসে,যাদেরকে আল্লাহর রাসূল মুক্তিপণ ,শিক্ষার বিনিময়ে অর্থাৎ যেকোন একটা অসিলা ফেলে মুক্ত করে দিতেন।এরপরও যারা থেকে যেতেন তাদের বন্টন করে দেওয়া হত এই সত্তে¡ তারা চাইলে তাদের মুক্ত করে দিতে পারবেন আর রাখলে তারা যেমন খায় ,যেমন পরে তেমন খাওয়াবেন,পরাবেন।আর যাদের সাথে সহবাস করবেন তাদের সন্তান তার বলেই গণ্য হবে। এতে করে দাসদাসী হলেও তাঁরাও মানবিক জীবন পেতেন।আল্লাহর রাসূলের গৃহে যারা ছিলেন তারা নিজেদের পরিবারের সদস্যই মনে করতেন।

আশা করি ,ইসলামের মূল উদ্দেশ্য মানুষের স্বার্বিক মঙ্গল সাধন এ বিষয়টা অনাধাবনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রাসূলকে অনুধাবন এবং তাঁর ব্যাপারে আল্লাহর বিধিবিধান ও অন্যান্য বিধিবিধানগুলো অনুধাবনে সক্ষম হবো।

আল্লাহর জ্ঞানই সর্ব বিষয়ে পরিব্যাপ্ত; তিনি আমাদের ভুলত্রুটিসমূহ ক্ষমা করুণ এবং আমাদেন অজ্ঞতা বশবর্তী অপরাধসমূহ মার্জণা করুণ। আমীন।




তথ্যসূত্রঃ-
১)কোরআন মাজীদ
২)সহীহ বুখারী
৩)সহীহ মুসলিম
৪)জামে তিরমিযী
৫)সুনানে নাসাঈ
৬)ইবনে মাজাহ
৭)আবু দাউদ
৮)মুসনাদে আহমদ
৯)তাবাকাত:ইবনে সাদ
১০)লাইফ অব মুহাম্মদ
১১)মোকাদ্দাস রাসূল: মাওলানা সানাউল্লাহ
১২)আর রাহিকুল মাখতুম
১৩)রাহমাতুলিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূল্লাহ(সাঃ): মোঃ ইকবাল কিলানী
১৪)সিরাতে আয়েশা(রাঃ): সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী রহ.


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৫:২৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×