somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গি দ্য মোপাসাঁ'র গল্প - 'বেচাকেনা'

২৩ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(মোপাসাঁ'র A Sale গল্পের বাংলা রূপান্তর এটি। প্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক 'সমকাল' এর সাহিত্যসাময়িকী 'কালের খেয়া'তে)

মিসেস ব্রুমেঁকে পানিতে চুবিয়ে মারতে চাওয়ার অপরাধে গ্রেফতারকৃত দুই আসামি -সিসেয়ার ইজাডোর ব্রুমেঁ এবং প্রসপার নেপোলিয়ন কর্নুকে ফৌজদারি আদালতে হাজির করা হয়েছে বিচারের উদ্দেশে। মিসেস ব্রুমেঁ অভিযুক্ত সিসেয়ার ব্রুমেঁর স্ত্রী।

ব্রুমেঁ এবং কর্নু - দরিদ্র দুই গ্রাম্য কৃষক -পাশাপাশি বসে অপেক্ষা করছে আদালতের পুরনো বেঞ্চে। প্রথমজন বেটেখাটো,মোটা, হাত-পাগুলো ছোটো-ছোটো আর ফুটবল সদৃশ গোল মাথাটি মনে হয় কেউ চেপে বসিয়ে দিয়েছে তার চর্বিবহুল ধড়ের ওপর, ঘাড় বলতে কিছু নজরে আসে না। টকটকে লালমুখে অসংখ্য ব্রণ। ছোটো একটা শুয়োরের খামার ছিলো তার একমাত্র আয়ের উত্স । বাস করতো ক্রিকেতো জেলার ক্যাশিভিল-লা-গোপিল গ্রামে । কর্নু হালকা-পাতলা মাঝারি উচ্চতার মানুষ, হাতজোড়া লিকলিকে লম্বা। মাথা সামান্য ঝুঁকে থাকে, বাঁকা চোয়াল, ট্যারা চোখ। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা, নীল রঙের একটা জামা পরে আছে সে। মাথার হলুদ রঙের কয়েকগাছি চুল খুলির সাথে লেপ্টে আছে, যা তার চেহারায় ভীতিকর বুড়োটে ভাব এনে দিয়েছে। লোকজনের কাছে সে ‘হরবোলা’ হিসেবে পরিচিত, কারণ গির্জার উপাসনা সংগীত থেকে শুরু করে সাপের আওয়াজ পর্যন্ত হুবহু নকল করতে পারতো সে। আর এ কারণে লোকজন চার্চের ধর্মীয়সভায় যোগ দেওয়ার চেয়ে কর্নুর মদের দোকানে হাজিরা দিতে বেশি পছন্দ করতো।

মিসেস ব্রুমেঁ সাক্ষীর জন্যে রাখা বেঞ্চে বসে ছিলো। হালকা-পাতলা শরীর, সাধারণ চেহারা, একজন কৃষকের বউয়ের যেরকম হওয়ার কথা। তাকে দেখে মনে হয় সারাক্ষণ ঝিমুচ্ছে । হাঁটুর ওপর হাত রেখে,নির্বাকদৃষ্টিতে শূন্যে তাকিয়ে ছিলো সে। জজ তার জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ‘তারপর, মিসেস ব্রুমেঁ, তারা আপনার বাড়িতে এলো এবং আপনাকে পানিভর্তি একটা পিপের মধ্যে ফেলে দিলো···, এরপর কী ঘটলো, দাঁড়িয়ে বলুন।’
মহিলা উঠে দাঁড়ালো। বাঁশের মতো লম্বা সে ,শাদা একটা গোল টুপি পরে আছে মাথায়, যা দেখে পতাকা টাঙানো বাঁশের কথা মনে পড়ে। কম্পিত স্বরে, মনে করার চেষ্টা করতে করতে বলতে শুরু করলো সেঃ ‘আমি শিম কুটছিলাম, এমন সময় তারা বাড়িতে ঢোকে। তাদের দেখে আমার সন্দেহ হলো, কারণ তাদের মোটেও স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো না। মনেমেনে ভাবলাম, নিশ্চয়ই কোনো শয়তানি বুদ্ধি পাকিয়েছে দুটোতে মিলে। ‘তারা আমাকে আপাদমস্তক দেখছিলো,বিশেষ করে কর্নু, ট্যারা চোখে হাঁ করে দেখছিলো আমাকে। এই দুই কুঁড়ের বাদশার একসাথে চলাফেরা পছন্দ করতাম না আমি। জিজ্ঞেস করলাম,‘কী চাও এখানে?’
তারা কোনো উত্তর দিলো না। আমার সন্দেহ ঘনীভূত হলো।’
এমন সময় বউয়ের কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে ব্রুমেঁ বললো,‘আমি তখন মাতাল ছিলাম !’তখন কর্নু ব্রুমেঁর দিকে ফিরে ফিসফিস করে বললো,‘বলো না,দোস্ত,আমরা তখন পুরোপুরি টাল ছিলাম,আমাদের হুঁশ ছিলো না তখন। আর এ কথা মিথ্যেও নয় !’
তখন জজ জিজ্ঞেস করলেন,‘তোমরা তখন মাতাল ছিলে ?’
ব্রুমেঁ ঃ জি, ধর্মাবতার, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
কর্নুঃ মদ খেলে কে না মাতাল হয়!

জজ মিসেস ব্রমেঁর দিকে দিকে ফিরে বললেন,‘ আপনি আপনার বক্তব্য শেষ করুন, মিসেস ব্রুমেঁ।’
মিসেস ব্রুমে আবার বলতে শুরু করলো,‘ব্রুমেঁ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,‘তুমি কি একশো সৌস কামাতে চাও?’
আমি বললাম,‘হ্যাঁ,চাই।’ কেননা একশো সৌস উপার্জন করা চাট্টিখানি কথা নয়। তখন সে আবার বললো,‘তাহলে ভালো করে দেখো,আমি কী করি ! আর আমি যা বলি ঠিক তাই তোমাকে করতে হবে।’ তখন সে বৃষ্টির পানি ধরার জন্যে ঘরের এককোণে রাখা একটা পিপে টেনে এনে রান্নাঘরের গালিচার ওপর রাখলো। আমাকে বললো,‘পানি এনে এটা ভর্তি করো!’ আমি দুটো বালতি নিয়ে কুয়ো থেকে পানি এনে পিপেটা ভরতে শুরু করলাম। প্রায় একঘন্টা লাগলো পিপেটা ভরতি করতে,কারণ পিপেটা একটা চৌবাচ্চার মতোই বড়ো ছিলো। এই একঘন্টা ওরা লাগাতার মদ গিলে যাচ্ছিলো। যখন আমি বললাম,‘তোমরা দেখি গলা পর্যন্ত গিলে বসে আছো।’ তখন ব্রুমেঁ বললো,‘চিন্তা কোরো না,আমরা ভালো আছি,তুমি নিজের কাজ শেষ করো। তোমাকেও সুযোগ দেওয়া হবে।’ ‘যখন পিপেটা কানায়-কানায় ভরতি হয়ে গেল,তখন ওদের বললাম,‘কাজ শেষ।’ কর্নু আমাকে একশো সৌস বের করে দিলো। ব্রুমেঁ বললো,‘তুমি কি আরো একশো সৌস কামাতে চাও ?’আমি বিস্ময় চেপে বললাম,‘হ্যাঁ, চাই।’ আমার জবাব শুনে ব্রুমেঁ বললো, ‘তাহলে তোমার কাপড় খুলে ফেলো !’
‘কী ! কাপড় খুলে ফেলবো ?’
‘হ্যাঁ।’
‘সব?’
‘বেশি লজ্জা লাগলে ভেতরের শেমিজটা রাখতে পারো। আমরা রাগকরবো না।’
একশো সৌস কম টাকা নয় যে পথেঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া যাবে! তাছাড়া এই দুই অপদার্থের সামনে নগ্ন হতে আমার মোটেও লজ্জা করছিলো না। আমি একেএকে আমার টুপি,জ্যাকেট,স্কার্ট এবং জুতা খুলে ফেললাম। মোজা খুলতে চাইলে ব্রুমেঁ বললো,‘মোজা খোলার দরকার নেই,তুমি ওটা রাখতে পারো, আমরা ভদ্রলোক।’ সায় দিয়ে কর্নুও বললো,‘হ্যাঁ হ্যাঁ,আমরা ভদ্রলোক।’ আর এভাবে প্রায় নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ওরা চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়ালো, কিন্তু নেশার প্রভাবে ঠিকমতো খাড়া হতে পারছিলো না। আমি মনেমনে ভাবলাম,‘ব্যাপারটা কী?’
তখন ব্রুমেঁ কর্নুকে বলল ‘তুমি তৈরি?’ কর্নু বলল ‘হ্যাঁ।’ তারপর তারা দু’জন আচমকা আমাকে ধরে উঠিয়ে নিলো। ব্রুমেঁ আমার মাথা ধরলো,আর কর্নু ধরলো পা। আমি চিত্কার করতে শুরু করলাম। তখন ধমক দিয়ে ব্রুমেঁ বলল,‘চুপ থাক, বেয়াদ্দপ মেয়েছেলে!’ তাপরপর তারা আমাকে পিপের ভেতর ফেলে দিলো। রক্ত হিম হয়ে গেল আমার। ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।
ব্রুমেঁ বললো,‘খেল খতম?’
কর্নু বললো,‘হ্যাঁ।’
ব্রুমেঁ বললো,‘মাথা তো এখনো বাইরে রয়ে গেছে,মাপতে সমস্যা হবে।’
‘পানিতে চেপে ধরলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়,’ সমাধান বাতলে দিলো কর্নু।
ব্রুমে আমার মাথাটা চেপে ধরলো, যেন সে আমাকে চুবিয়ে মারতে চায়। নাকেমুখে পানি ঢুকে বিষম খেলাম আমি,নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মনে হলো মারা যাচ্ছি। মাথা তুলতে চাইলাম,কিন্তু সে আবার চেপে ধরলো আমার মাথা। প্রাণভয়ে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু করলাম ছাড়া পাওয়ার জন্যে। এবার বোধহয় সে ভয় পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি আমাকে বাইরে বের করে আনলো, বললো,‘যা, হারামজাদি, কাপড় পরে আয়!’
ভয়ে-আতঙ্কে তখন আমি দিশেহারা। সুযোগ পেয়ে পড়িমরি করে দৌড় দিলাম। একছুটে একেবারে গাঁয়ের ডাক্তারের বাড়িতে। ডাক্তার আমাকে তাড়াতাড়ি তাদের চাকরানির একটা স্কার্ট এনে দিলেন; কারণ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আমি কাপড়চোপড় ছাড়াই পালিয়ে এসেছিলাম। এরপর ডাক্তার গাঁয়ের চৌকিদার মাইত্রে শিকোকে খবর দিতে গেলেন। তারপর শিকো পুলিশ নিয়ে আসলো ক্রিকেতো গিয়ে । বাড়ি ফিরে আমরা দেখলাম,দুজনে তখন ঝগড়া করছে।
ব্রুমেঁ চিত্কার করছিলোঃ‘এটা ঠিক নয়! এতে কম করেও আরো এক ঘনমিটার পানি ধরবে, আমার কথা শোন,তোর হিসেবে ভুল আছে। উল্টো কর্নু চেচিয়ে বললো,‘চার বালতি পানিতে আধা ঘনমিটারের বেশি হবে না, তুই চোপা বন্ধ কর,মাথামোটা,আমার হিসেবই ঠিক!’
‘এরপর পুলিশের দারোগা তাদের দুজনকে গ্রেফতার করলো। ব্যস,এটুকুই আমার বলার ছিলো।’
এই বলে সে বসে পড়লো। আদালতে উপস্থিত লোকজন হাসছিলো ওর বক্তব্য শুনে। জুরিরা হতাশ দৃষ্টিতে একে-অপরের দিকে তাকাচ্ছিলেন। জজ বললেন,‘বিবাদী কর্নু, মনে হচ্ছে এসব তোমারই শয়তানি! তোমার কিছু বলার আছে এ ব্যাপারে?’
কর্নু উঠে দাঁড়ালো। বললোঃ ‘ধর্মাবতার, আমি তখন নেশায় বুঁদ ছিলাম!’
গম্ভীর হয়ে জজ বললেন,‘তাতো দেখতেই পাচ্ছি,তারপর কী হলো বলো।’
‘জি,বলছি। প্রায় ন’টার দিকে ব্রুমেঁ আমার কাছে আসে। দুই পেগ মদের অর্ডার দিয়ে বলে,‘একটা তোমার জন্যে।’ আমি অবাক হলাম না - কারণ মদ্যপানের ব্যাপারে লোকজন সাধারণত দিলদরিয়া হয় -ওর সাথে বসে টানতে শুরু করলাম। এরপর আমিও তাকে এক পেগ খাওয়ালাম আমার পক্ষ থেকে। সে আবার আমাকে খাওয়ালো। এভাবে চললো প্রায় দুপুর পর্যন্ত, আকন্ঠ মদ গিলে আমরা তখন পুরোপুরি মাতাল।’
‘এরপর ব্রুমেঁ হঠাত্ কাঁদতে শুরু করলো। ওর কান্না দেখে আমার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কী হয়েছে জানতে চাইলে সে বললোঃ ‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে যেভাবেই হোক আমাকে এক হাজার ফ্রাঁ জোগাড় করতে হবে।’ ওর কথা শুনে আমি কিছুটা ঠান্ডা মেরে গেলাম। বুঝতে পারছেন তো,ধর্মাবতার ? এরপর ও হড়বড় করে বললো,‘আমি আমার বউকে বেচে দেবো, কিনবে তুমি?’
‘আমি তখন নেশার ঘোরে,আর আমার বউ মারা গেছে বহুদিন আগে। বুঝতেই পারছেন, ধর্মাবতার, কথাটা শুনে আমি কিছুটা অস্থির হয়ে পড়লাম। আমি তার বউকে কখনো দেখিনি,কিন্তু এটাতো ঠিক যে তার বউ একজন মহিলা,ঠিক কিনা? আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,‘কতো হলে তুমি তোমার বউকে বেচবে?’ একথা শুনে সে চমকে উঠলো,অথবা চমকে ওঠার ভান করলো। উত্তরে সে যা বললো তা একজন মাতালই শুধু বলতে পারেঃ‘আমি তাকে ঘনমিটারের হিসেবে বেচবো!’ একথা শুনে আমি মোটেও অবাক হলাম না,কারণ আমি নিজেও তখন বদ্ধ মাতাল,আর একজন মাতালের কাছে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়। ঘনমিটারের হিসেব আমি ভালোই বুঝতাম, আমার ব্যবসায় একহাজার লিটার মানে এক ঘনমিটার। তখনো দরদাম হয়নি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,‘এক ঘনমিটারের জন্যে কতো চাও তুমি?’ সে বললো,‘ দুই হাজার ফ্রাঁ। খরগোশের মতো খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম আমি। ভাবলাম এই মহিলা কিছুতেই তিনশো লিটারের বেশি হবে না। কিন্তু মুখে বললাম,‘দামটা বেশি হয়ে যাচ্ছে না?’ ব্রুমে বললো,‘এর কমে দিতে পারবো না,ভাই, লোকসান হয়ে যাবে!’
‘বুঝতেই পারছেন, ধর্মাবতার,নিজের স্বার্থ একটা মাতালও বুঝতে পারে। কিন্তু সে যদি শুয়োরের মাংস বিক্রিতে সিদ্ধহস্ত হয়, আমি তাকে সুদ্ধু বিক্রি করে দেওয়ার বুদ্ধি রাখি। হা হা হা! তো, আমি তাকে বললাম,‘যদি তোমার বউ নতুন হতো,তাহলে আমার আপত্তি ছিলো না। কিন্তু সে অনেকদিন তোমার বউ ছিলো,অর্থাত্ সে এখন আর আগের মতো খুব একটা তাজা নয়। আমি তোমাকে প্রতি ঘনমিটার পনেরো শ’ ফ্রাঁ করে দেবো, এরবেশি একটাকাও না। রাজি থাকলে বলো।’
সে বললো,‘ঠিক আছে,তা-ই সই!’ এরপর দু’জনে হাত ধরাধরি করে আমরা দোকান থেকে খুশিমনে বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু একটা শঙ্কা জাগলো আমার মনে,তাই ব্রুমেকে জিজ্ঞেস করলাম,‘তরল কিছুতে না ঢেলে কিভাবে তাকে তুমি মাপবে?’ ‘সে তার পরিকল্পনা জানালো। বললোঃ‘প্রথমে একটা পিপে নেবো,তারপর পানি দিয়ে সেটাকে কানায়কানায় ভরতি করবো। এরপর তাকে ওটার ভেতর ফেলে দেবো। যেটুকু পানি বাইরে পড়বে,সেটা মেপে নেবো। ব্যস,এভাবে আমরা নিঁখুত মাপ পেয়ে যাবো।’
আমি বললাম,‘বুঝেছি! কিন্তু যে-পানি বাইরে পড়ে যাবে সেটা তুমি মাপবে কিভাবে?’
‘তখন সে আমাকে বোঝাতে শুরু করলোঃ ওর বউকে পিপেতে ফেলার পর যে-পানিটুকু বাইরে পড়বে,পুনরায় সেটা ভরতি করা হবে। যেটুকু পানি ভরা হবে সেটাকে মেপে নেওয়া হবে। অর্থাত্ দশ বালতি পানি ভরলে হবে এক ঘনমিটার। দেখলেন, ব্রুমেঁ আসলে মোটেও বোকা নয় - মদ খেলেই শুধু বুড়ো ঘোড়া হয়ে যায় সে।’
তো আমরা তার বাড়িতে পৌঁছলাম। একনজর তার বউকে দেখে বুঝলাম,খুশিতে বগল বাজানোর মতো রূপবতী সে নয়। দেখুন,এখানেই সে আছে। তো,তাকে দেখে মেজাজটা খিঁচড়ে গেলেও,নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে মনেমনে বললাম, সুন্দরী হোক আর বান্দরী,তাতে কী আসে যায়? কাজে তো আসবে! ভালো করে আরেকবার তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, চেহারার মতো শরীরটাও খুব একটা সুবিধের না, একেবারে রোগা-পাতলা। মনেমনে ভাবলামঃ যাক, চারশো লিটারের বেশি হবে না সে মোটেও! মদের ব্যবসা করতে করতে তরল জাতীয় দ্রব্যের হিসাব ভালোই বুঝতাম আমি। এরপর কী ঘটেছে সেটা জানিয়েছে সে আপনাকে। লোকসান হবে জেনেও শেমিজ আর মোজা জোড়া তাকে খুলতে দিইনি,কারণ আমি ভদ্রলোক। একফাঁকে সে পালিয়ে গেল। আমি ব্রুমেঁকে বললাম,‘ব্রুমেঁ, দেখো সে পালাচ্ছে!’
‘চিন্তা কোরো না,’ বলল সে। ‘আমি তাকে ধরে নিয়ে আসবো। তাছাড়া রাতের বেলা তো তাকে ফিরতেই হবো। এসো আমরা পানিটা মেপে নিই।’
এরপর আমরা পানি মেপে নিলাম। চার বালতিও হয় নি। হা হা হা! ’
হাসতে শুরু করলো কর্নু পাগলের মতো । শেষ পর্যন্ত পেছনে দাঁড়ানো সিপাহিরা বাধা দিয়ে তাকে শান্ত করলো। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আবার সে বলতে শুরু করলো ঃ ‘তখন ব্রুমেঁ চিত্কার শুরু করলো,‘কিছুই হচ্ছে না, তোমার হিসেবে ভুল আছে!’ আমিও ক্রমাগত চেঁচাতে শুরু করলাম। এরপর সে আমাকে ঘুসি মারলো, আমিও তাকে মারলাম,সে আবার আমাকে মারলো। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত হয়তো আমাদের ঝগড়া চলতে থাকতো, কারণ আমরা দুজনেই ছিলাম বদ্ধ মাতাল। পরে পুলিশ এসে গ্রেফতার করে আমাদের জেলে নিয়ে গেল।’ কর্নু বসে পড়লো।

ব্রুমেঁ তার অপকর্মের সহচর কর্নুর সব কথায় সায় দিলো। জুরিরা ফাঁপরে পড়ে গেলেন এই অদ্ভুত মামলার সমাধান করতে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে তারা আদালতের ভেতরের কক্ষে চলে গেলেন। প্রায় ঘন্টাখানেক পর তারা ফিরে এসে তাদের রায় শোনালেন। দাম্পত্যজীবনের মাহাত্ম্য, দায়-দায়িত্ব আর ব্যবসায়িক আদান-প্রদানের ন্যূনতম সীমারেখা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে ব্রুমেঁ আর কর্নুকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হলো।

ব্রুমেঁ তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজগৃহে ফিরে গেল। আর কর্নু ফিরে গেল তার নিজের ব্যবসায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ২:০৭
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×