ভারত ক্রিকেটের এক পরাশক্তি নামেই পরিচিত। তার চেয়েও তাদের বড় পরিচিতি তিন মোড়লের বড় মোড়ল। ভারতে জনসংখ্যা ও ক্রিকেট জনপ্রিয় বেশি হওয়ায় আইসিসির আয়ের ৭০ শতাংশ উৎস ভারত। আর তাই ভারতের ক্রিকেট কর্তা ব্যাক্তিদের ইচ্ছা অনুযায়ী আইসিসি চলতে বাধ্য। তবে একা কিভাবে চলবেন ভারত? তাই অট্রোলিয়া ও ইংল্যান্ডকে সাথে নিয়ে গঠিত হয়েছে তিন মোড়ল। আর তাই এই তিন মোড়লের কথা বাইরে যাচ্ছে না আইসিসি। তাই অনেকে বিরক্ত হয়েই আইসিসির নাম দিয়েছেন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল।
যাই হোক মূল কথায় আসা যাক ভারত কি আসলেই ‘ফেভারিট’। ভারত মোড়লের আসনে বসার পর থেকেই ভারতকে ‘ফেভারিট’ ভাবা হচ্ছে। কেন? ১৯৮৩ সালে ভারতকে ফেবারিট ভাবা হয়নি। তখন ভারত সচ্ছ ক্রিকেট খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মোড়লের আসনে বসার সাথে সাথে সকলে ভারতকে ‘ফেভারিট’ ভাবছে।
সে চ্যাম্পিয়ন হোক আর না হোক। আইসিসি ক্রিকেটের বিশ্বায়নের কথা চিন্তা না করে কীভাবে ভারতের জনগণকে ক্রিকেট ‘খাইয়ে’ অর্থ উপার্জন করবে, সেই চিন্তাই করে সব সময়। অর্থ উপার্জনের জন্য আইসিসির সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সুতরাং, বিশ্বকাপের শুরুতেই ভারত বাদ মানে, আইসিসির বিরাট লোকসান।
ভারতকে যত দূর পর্যন্ত নেয়া যাবে, আইসিসির আয়ও তত বাড়বে। এসব কারণে বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা ছোট করতেও আপত্তি নেই আইসিসির। এমনকি বিশ্বকাপ হাস্যকর ফরমেশন দিতেও আপত্তি নেই তাদের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ৪টি গ্রুপে ভাগ খেলেছিল ১৬টি দল। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আসর এবং সেরা ফরমেশন। প্রত্যেক গ্রুপে ৪টি দল একে অপরের সঙ্গে খেলেছে। অর্থাৎ গ্রুপ পর্বের ২৪টি ম্যাচের পরেই ৮টি দল বাদ। আইসিসির জন্য দুঃখের বিষয় বাদ পড়া ওই ৮টি দলের একটি ছিল ভারত। এরপর শুরু হয় সুপার এইট। সেখানে ৮টি দল একে অপরের সঙ্গে খেলে (গ্রুপ পর্বের সঙ্গী বাদে)। এভাবে সুপার এইটে অনুষ্ঠিক হয় মোট ২৪টি ম্যাচ। সুপার এইট থেকে সেরা ৪টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেমিফাইনাল এবং পরে ফাইনাল। ২০০৭ বিশ্বকাপে মোট ৫১টি ম্যাচ হয়েছিল। কিন্তু ওই বিশ্বকাপের ওই ৫১টি ম্যাচের মধ্যে ভারতীয় সমর্থকেরা আগ্রহ নিয়ে দেখেছে মাত্র ৩-৪ টি ম্যাচ। তাহলে কি পরিমাণ লোকসানের মুখোমুখি হতে হয়েছে আইসিসিকে, একবার চিন্তা করুন! টুর্নামেন্টের অর্ধেক না যেতেই যদি ভারতের ১২৫ কোটি দর্শক হারায়, তাহলে পুরো ইভেন্টটাই ফ্লপ। তাই বিশ্বকাপের পরের আসরে পুরো ফরমেশনেই ব্যাপক পরিবর্তন আনে আইসিসি।
২০১১ এর বিশ্বকাপের ফরমেশন পরিবর্তন করে ১৪টি দল নিয়ে ২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক গ্রুপে ৭টি দল খেলেছিল একে অপরের সঙ্গে। এভাবে প্রতি গ্রুপে ২১টি ম্যাচ এবং ২ গ্রুপ মিলিয়ে ৪২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ ৪২ ম্যাচ পর গ্রুপ পর্বের খেলা শেষ হয়। এবার ভারতের খেলা ছোট দলের বিপক্ষে ছিলো বলে দু’একটা ম্যাচ হারলেও কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা ছিল না। ৬ ম্যাচের মধ্যে ৩-৪ টা জিতলেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত। আর ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে মানে গ্রুপ পর্বের ৪২ ম্যাচের পর কোয়ার্টার ফাইনালের ৪ ম্যাচেও দর্শক থাকবে। ২০১১ বিশ্বকাপে মোট ৪৯টি ম্যাচ হয়। ভারত হয় চ্যাম্পিয়ন।
২০১১ সালের পাকিস্তান ভারতের ম্যাচটি ছিলো সবচেয়ে লাভজনক একটি ম্যাচ। আর ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ছিলো আইসিসির সবচেয়ে লাভজনক একটি ইভেন্ট।
তাই ভারতকে জেতাতে আইসিসি যে কোন সুযোগ–সুবিধা দিতে প্রস্তুত আইসিসি। আর আম্পায়াররাও আইসিসির কথা নিয়ে মাঠে নামে ভারতকে সুযোগ-সুবিধা দিতে। যতটা ভারতকে সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়। ততটাই দেয়ার চেষ্টা করেন আইসিসি।
পাকিস্তান ক্রিকেটে চলছে দূরদশা। আর এ দূরদশার জন্য ভারত নিয়ন্ত্রীত আইসিসি দায়ী। পাকিস্তান ভারতের চির-প্রতিদ্ধন্দী বলে নয়। মুনাফা অর্জনকে কেন্দ্র করেই এই দূরদশা। তাতে শুধু পাকিস্তান কেন যে কোন দেশই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। বাংলাদেশও এই সমস্যার মুখোমুখি দাড়িয়ে। আর আইসিসির সহযোগি দেশগুলো আরো বেশি হুমকির মুকে।
আইসিসি ক্রিকেটের বিশ্বায়নের চেয়ে মুনাফা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই বলাই যায় এটা ক্রিকেটের জন্য এক আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছু নেই। আইসিসি থেকে যেহেতু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তাই যে কেউ ভারতকে ফেভারিট ভাবছে। তাই আইসিসির সহযোগীতা পাবার জন্য ভারতকে আমিও বলছি ফেভারিট । তাই বলা যায় যে, মুনাফা অর্জনকে কেন্দ্র করে ভারতই ‘ফেভারিট’।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩