somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকাশে উড়বে ওয়াকি-মিন্টুর উড়োজাহাজ

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পশ্চিমের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-নির্ভর দেশের উদ্ভাবন-প্রিয় মানুষ একেক সময় একেকটি নতুন আবিষ্কার বা উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেয়। আর সে উদ্ভাবনের বাণিজ্যিক ব্যবহার করে উপার্জন করে কাড়ি কাড়ি অর্থ। সেই সঙ্গে খুলে যায় লাখ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের পথ। কিন্তু আমরা কেন পারি না? আমরাও উড়োজাহাজ বানাবো। সেই উড়োজাহাজে এদেশেরই মানুষ চড়বে, অর্থ আসবে। দেশ হবে স্বনির্ভর। এই অসম্ভবকে সম্ভব করতেই হবে।’

এরকমই স্বপ্ন দেখে আসছিলেন বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল ওয়াকি। ১৯৯৬ সালে এইচএসসি পাস করে উচ্চশিক্ষা নিতে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। ইংল্যান্ডে গিয়ে ছোটবেলার সেই স্বপ্নের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করে তার ।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) এর ওপর মাস্টাস করে ২০০৭ সালে দেশে ফিরে স্বপ্নের উড়োজাহাজ বাস্তবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করেন ওয়াকি। আর তার এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হাত বাড়িয়ে দেন এদেশেরই আরেক কৃতী সন্তান মিন্টু চৌধুরী।

এই ওয়াকি ও মিন্টু চৌধুরীর গত এক বছরের নিরলস পরিশ্রমে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে তৈরি প্রথম উড়োজাহাজ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই উড়োজাহাজটি দিয়ে পরীক্ষামূলক উড়াল (টেস্ট ফাইং) করা হবে।

দুই আসনবিশিষ্ট এই উড়োজাহাজ তৈরিতে ব্যয় হয়েছে সাত লাখ টাকা। এ উড়োজাহাজে চড়ে একজন বৈমানিক এক ঘন্টা অনায়াসে আকাশে উড়তে পারবেন। প্রাথমিকভাবে ৩০ ফিট ওপর দিয়ে উড়বে উড়োজাহাজটি। পরবর্তীতে এর উড্ডয়ন উচ্চতা ৫০০ ফিট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা উদ্যোক্তাদের।

এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট উড়োজাহাজটিতে মৃত্যু ঝুঁকিও খুব কম। কারণ এর রয়েছে ১৬ ফিট করে দু’পাশে বৃহৎ দু’টি পাখা। আকাশে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলেও ডেল্টা আকৃতির এই পাখা দু’টি সহজেই মাটিতে অবতরণে সাহায্য করবে।

গ্লাইডার আকৃতির উড়োজাহাজটির বডি তৈরি হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল ও মাইল্ড স্টিল দিয়ে। উড়োজাহাজের ইঞ্জিনটি কেনা হয়েছে চীন থেকে। ইঞ্জিন বাদে সবকিছুই এদেশে তৈরি। উদ্যোক্তা জানান, উড়োজাহাজটি চালানো খুবই সহজ। যে কেউ মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এটি চালানো শিখতে পারবেন।

ঢাকার মনিপুরীপাড়া বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল ওয়াকি বাংলানিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে উড়োজাহাজটি দুই আসনবিশিষ্ট হলেও এর আসন সংখ্যা এবং ফাইং আওয়ার বাড়ানো যাবে। পরীক্ষামূলক উড়ালের (টেস্ট ফাইং) পর এসব কাজে হাত দেবেন তারা।

তিনি জানান, গত এক বছর ধরে বুয়েটে মেকানিক্যাল বিভাগের টেকনিশিয়ান মিন্টু চৌধুরীকে নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণের জাল বোনা শুরু হয়। গত এক বছরের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল এই উড়োজাহাজ।

উড়োজাহাজটি তৈরির কারখানা হিসেবে বুয়েটের ল্যাব ব্যবহারের অনুমতির ব্যবস্থা করে দেন বুয়েটেরই মেকানিক্যাল বিভাগের প্রধান ড. আবু তাহের। আর পরিচয় করিয়ে দেন তার বিভাগের টেকনিশিয়ান মিন্টু চৌধুরীর সঙ্গে। মিন্টু চৌধুরী একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর গত ৩৫ বছর ধরে কাজ করছেন।

ওয়াকি ও মিন্টু চৌধুরীর মধ্যে এখন গভীর বন্ধুত্ব। দুজনার জন্মদিনও একইদিন (৭ জুন)। উড়োজাহাজ তৈরির স্বপ্ন, অর্থ, উদ্যোগ সবই ছিল আব্দুল্লাহ আল ওয়াকির। কিন্তু এর কৃতিত্ব তিনি একা নিতে রাজি নন। তার কথা আমি অর্থ দিয়েছি, স্¦প্ন দেখেছি সত্যি। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করেছেন মিন্টু চৌধুরী। আর তাইতো ওয়াকি দুজনের নামের ইংরেজি আদ্যক্ষর দিয়ে তৈরি করেছেন ‘মা (এমএ)’ এভিয়েশন।

উদ্যোক্তা জানান, এদেশের বিত্তবানরা ছাড়া কেউ উড়োজাহাজে চড়তে পারেন না। কিন্তু তার এই উড়োজাহাজে যে কেউ ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায় চড়তে পারবেন।

উড়োজাহাজ তৈরির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে বলতে আব্দুল্লাহ আল ওয়াকি ফিরে যান পেছনের দিকে। ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় গ্লস্টারশায়ারের বাসিন্দা মার্টিন ব্রোমিচের সঙ্গে। মার্টিনের বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন ওয়াকি।

মার্টিন ব্রোমিচের একটি ব্যক্তিগত উড়োজাজাহজ ছিল। ওই উড়োজাহাজে চড়ার সৌভাগ্য হয় ওয়াকির। দুই আসনের ‘ওয়েট শিফট উড়োজাহাজ’ চড়তে চড়তে ছোটবেলায় উড়োজাহাজ তৈরির পালে হাওয়া লাগতে শুরু করে। ওখানে বসেই পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেন বাংলাদেশের এই তরুণ উদ্যোক্তা।

দেশে এসে প্রথমে তিনি হেলিকপ্টার তৈরির পরিকল্পনা করেন। তার সঙ্গে পরিচয় হয় বুয়েটের মানিকের সঙ্গে। হেলিকপ্টারের রোটোর তৈরির কাজ দেওয়া হয় মানিককে। তবে ইঞ্জিনটা ছিল অনেক ভারি। শেষমেষ ওই পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়। তবে দমে যাননি ওয়াকি।

এরপরই তিনি হাত দেন উড়োজাহাজ তৈরির কাজে। বুয়েটের শিক্ষক আবু তাহেরের সঙ্গে পরিচয় এবং তার অকুন্ঠ সহায়তায় এক বছর আগে তিনি উড়োজাহাজ তৈরির কাজ শুরু করেন।

বগুড়ায় শহরের সূত্রাপুরে জন্ম নেওয়া এই কৃতী সন্তান সফল টেস্ট ফাইংয়ের জন্য বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ তৈরির কাজে হাত দিতে চান। অবশ্য টেস্ট ফাইংয়ের আগে তিনি সবার দোয়া চেয়েছেন। যদিও আবিষ্কারের নেশা তাকে আন্দোলিত করে তবে জীবনে একজন সফল রাজনীতিক হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।

রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য হাতে খড়ি দিয়ে ফেলেছেন। ২০০৭ সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতা ছাড়ার পর ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে বগুড়া সদর আসন থেকে খালেদা জিয়ার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। এ সময় তিনি তার পোস্টারে স্লোগান হিসেবে লিখেছিলেন ‘আমাদের দরকার, আবিষ্কারক মনোভাবাপন্ন সরকার’।
৩১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×