somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কী ছিল সংবাদপত্রের সেই কালো আইনে?

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি সংবাদপত্রের কালো আইন প্রসঙ্গ তুমুলভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দল ও জোটগুলোর অভিযোগ, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েম করতে পত্রিকার মুখ বন্ধে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন, যার ফলে চারটি জাতীয় দৈনিক বাদে দেশের বাকি পত্রিকাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।paper

এ বিষয়ে ৪ জুন, শুক্রবারও সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার তথ্য ঢাকতে সরকার সংবাদপত্রের মুখ বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেছেন, সুইস ব্যাংকে কারা টাকা পাচার করছে এই তথ্য যাতে করে বের না হতে পারে সে জন্যই কালো আইন করছে সরকার।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে মনে, কী ছিল সেই আইন। আসুন জেনে নেই ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন ঘোষিত ‘সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্র (ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫’ সম্পর্কে।

এবিষয়ে ১৯৭৫ সালের ১৭ জুন দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো—
দ্বিতীয় বিপ্লবের আলোকে সংবাদপত্র
সম্পর্কে নতুন নীতি ঘোষণা
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্র পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যাপারে নতুন নীতি ঘোষণা করিয়া দুইটি অর্ডিন্যান্স জারি করিয়াছেন। নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) হইতে সারা দেশে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজার্ভার, দৈনিক বাংলা এবং বাংলাদেশ টাইমস এই চারটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হইবে। জনাব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, জনাব ওবায়দুল হক, শেখ ফজুলল হক মনি ও জনাব এহতেশাম হায়দার চৌধুরী যথাক্রমে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজার্ভার, বাংলাদেশ টাইমস ও দৈনিক বাংলার সম্পাদক নিযুক্ত হইয়াছেন।

সরকার আরো ১২২টি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার ডিক্লারেশন বহাল রাখিয়াছেন। এইসব পত্রপত্রিকাগুলি ছাড়া সরকারের বিনা অনুমতিতে আর কোনো পত্রিকা প্রকাশিত হইবে না। বাংলাদেশ সরকার সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিল) অর্ডিন্যান্স ১৯৭৫ জারি করিয়া ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ ও ‘দৈনিক বাংলা’ এবং ১২২টি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা ভিন্ন বাদবাকী সকল পত্রপত্রিকার ডিক্লারেশন ১৭ই জুন হইতে বাতিল করিয়া দিয়াছেন। বাসস ও এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয় : এই অর্ডিন্যান্স জারির অব্যবহিত পরে সরকার দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমস এই দুই দৈনিক সংবাদপত্রও প্রকাশের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। অতঃপর ওই চারটি দৈনিক এবং ১২২টি সাময়িকী ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ভিন্ন আর কোনো পত্রিকা বা সাময়িকী প্রকাশিত হইবে না।

সরকার যুগপৎ আরও একটি অর্ডিন্যন্স জারি করেন। সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহ পরিচালনার জন্য জারিকৃত এই অর্ডিন্যান্সের নাম হইতেছে সরকারী মালিকানাধীন সংবাদপত্র (ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫।

সরকার এতদসঙ্গে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন যে, অদূর ভবিষতে চট্টগ্রাম ও খুলনা হইতে একটি করিয়া এবং উত্তরাঞ্চলীয় কোনো একটি জেলা ইহতে অপর একটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হইবে।

ডিক্লারেশন বাতিলের ঘোষণা প্রকাশের অব্যবহিত পরে তথ্য ও বেতার দফতরের মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান যে, বাতিল সংবাদপত্রসমূহের কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষা ও ভবিষত্ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হইয়াছে।

ছাপাখানার কর্মচারীরা ভিন্ন বাতিল সংবাদপত্রসমূহের অন্যান্য কর্মচারীকে ৩০শে জুনের মধ্যে কমিটির নিকট রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করা হইয়াছে।

কমিটির সদস্যবৃন্দ হইতেছেন: জনাব মিজানুর রহমান, অধ্যাপক এম এ খালেদ এমপি, তথ্য ও বেতার দপ্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারী আনিসুজ্জামান খান, তথ্য ও বেতার দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারী জনাব সলিমুজ্জামান, জনাব গিয়াস কামাল চৌধুরী, জনাব আমানুল্লাহ খান এমপি (বগুড়া) এবং জনাব আবদুল গনি হাজারী। জনাব আনিসুজ্জামান খান কমিটির আহ্বায়করূপে কাজ করিবেন।

ঢাকা ও খুলনায় বাতিল সংবাদপত্রসমূহের কর্মচারীদের জনাব মিজানুর রহমানের নিকট রিপোর্ট করিতে হইবে। অবজারভার হাউজে তাহার অফিস হইবে। চট্টগ্রামের কর্মচারীরা সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ খালেদের নিকট এবং বগুড়ার কর্মচারীরা সংসদ সদস্য জনাব আমানুল্লাহ খানের নিকট রিপোর্ট করিবেন।

রাষ্ট্রপতি সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিলের এই অর্ডিন্যান্স জারি করেন।

অর্ডিন্যান্সে বলা হয়: পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্যক হইয়া পড়ে। সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা অর্ডিন্যান্স বলে সরকারী সংবাদপত্রসমূহের পরিচালনা ও উন্নয়ন সাধনের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যবসায় পরিচালনার জন্য গঠিত নির্দিষ্ট কতকগুলি কোম্পানী ভাঙ্গিয়া দেওয়ার জন্যও অর্ডিন্যান্সে ব্যবস্থা করা হইয়াছে। এই অর্ডিন্যান্স বলে সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের জন্য সরকার পরিচালনা বোর্ড গঠন করিবেন। সরকার বোর্ডে একজন চেয়ারম্যান এবং উপযুক্ত সংখ্যক সদস্য নিয়োগ করিবেন। বোর্ড অন্যান্য কাজের সহিত নিম্নলিখিত কার্যাদি সম্পাদন করিবে : সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের এবং সংবাদপত্র মুদ্রণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সরকারের মালিকানাধীন ছাপাখানাসমূহের ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ, সরকারের অনুমতি অনুযায়ী স্বীয় পরিচালনাধীন সাংবাদপত্র ও ছাপাখানা সম্পর্কে চুক্তি সম্পাদন ও কার্যকরীকরণ, বোর্ড সংবাদপত্র ও ছাপাখানা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, খুচরা যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয় করিবে।

বোর্ড সুষ্ঠু ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্বীয় দায়িত্ব সম্পাদন করিবে, যাহাতে গণসংযোগ মাধ্যমের চাহিদা পর্যাপ্তভাবে পূরণ হয় এবং বিদেশে গঠনমূলকভাবে প্রগতিশীল জাতীয় ভাবমূর্তি বিধৃত হয়। (দৈনিক ইত্তেফাক: ১৭ জুন, ১৯৭৫)

সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্র
(ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্সের পূর্ণ বিবরণ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইন, সংসদবিষয়ক ও বিচার মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদ বিষয়ক দফতরের ১৩ জুন ১৯৭৫ সালে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঘোষিত সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্র (ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ তথা ১৯৭৫-এর ৩৪ নম্বর অর্ডিন্যান্সের পূর্ণপাঠে বলা হয়:

সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন এবং সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত কতিপয় কোম্পানী ভাঙ্গিয়া দিবার উদ্দেশ্যে ইহা একটি অধ্যাদেশ। যেহেতু সরকারি মালিকাধীন সংবাদপত্রসমূহের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন সরকার কর্তৃক কারবার পরিচালনা হইতেছে এই রূপ সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যবসা পরিচালনার উদ্দেশে গঠিত কতিপয় কোম্পানী ভাঙ্গিয়া দেওয়া এবং তত্সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক ব্যাপারে ব্যবস্থাগ্রহণ প্রয়োজনীয় হইয়া পড়িয়াছে।

এবং যেহেতু সংসদ এখন অধিবেশনে নহে এবং আশু কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা উদ্রেককর পরিস্থিতি বিরাজমান বলিয়া রাষ্ট্রপতি মনে করিতেছেন, তাই এক্ষনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের (১) নং ধারা অনুযায়ী ন্যস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করিয়া রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন এবং জারি করিতেছেন:

১। সংক্ষিপ্ত নাম: এই অর্ডিন্যান্সকে বলা হইবে সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্র (ব্যবস্থাপনা) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫।

২। সংজ্ঞাসমূহ—এই অর্ডিন্যান্সের বিষয়বস্তু ও পরিপ্রেক্ষিতে ব্যতিক্রম কোনো কিছু না থাকিলে (ক) ‘বোর্ডং’ বলিতে বুঝাইবে ৩ নং ধারার অধীনে গঠিত সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্রসমূহ ব্যবস্থাপনার বোর্ড (খ) অবলুপ্ত কোম্পানী বলিতে বুঝাইবে ৬ নং ধারা অধীনে যে কোম্পানী গঠিত হইয়াছে।

৩। ব্যবস্থপনা বোর্ডের গঠন— (১) সরকার এই অর্ডিন্যান্সের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থাপনা বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠন করিতে পারিবেন।

(২) একজন চেয়ারম্যান এবং সরকারের বিবেচনায় উপযুক্ত বলিয়া বিবেচিত সংখ্যক অন্যান্য সদস্য লইয়া বোর্ডটি গঠিত হইবে।

(৩) চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য যে শর্তাবলীর অধীনে দায়িত্ব গ্রহণ করিবেন এবং বোর্ডের বৈঠকের বিধি পদ্ধতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করিয়া দেওয়া হইবে।

৪। বোর্ডের কার্যক্রম—বোর্ডের কার্যক্রম হইবে—(ক) সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্র এবং সরকারের মালিকানাধীন মুদ্রণ ছাপাখানাসমূহ পরিচালনা, উন্নয়ন, প্রসার এ ব্যবস্থা আধুনিক করা এবং এই সকল সংবাদপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশনার জন্য ঐগুলি ব্যবহার করা।

(খ) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হইলে স্বীয় ব্যবস্থাপনাধীন সংবাদপত্র ও ছাপাখানা সংশ্লিষ্ট যে কোনো চুক্তি বা ব্যবস্থা সম্পাদন এবং বাস্তবায়ন করা।

(গ) স্বীয় ব্যবস্থাপনাধীন সংবাদপত্র ও ছাপাখানাগুলির জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো যন্ত্র, কলকব্জা রক্ষণাবেক্ষণের খুচরা অংশ, কাঁচামাল ও সামগ্রী অথবা অন্য যে কোনো প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়করণ।

(ঘ) সরকারের বিশেষ অনুমোদনক্রমে ব্যবস্থাপনাধীন যে কোনো সম্পত্তি জিম্মা রাখিয়া ধার গ্রহণ বা অর্থ সংগ্রহ।

(ঙ) সরকার কর্তৃক নির্দেশিত অথবা উপরোক্ত কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুরূপ অন্যবিধ কাজ সম্পাদন।

৫। বোর্ড কর্তৃক অনুস্বত্বনীতি—(১) বোর্ড উহার কার্যক্রম সম্পাদনকালে দেশের গণসংযোগ মাধ্যম এবং গঠনমূলকভাবে জাতীয় প্রগতিশীল ভাবমূর্তি বিদেশে উপস্থাপনের চাহিদা পর্যাপ্তভাবে পূরণ করিয়া বলিষ্ঠ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কাজ করিয়া যাইবেন।

(২) বোর্ড উহার কার্যক্রম সম্পাদনকালে সময় সময় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশাদি দ্বারা পরিচালিত হইবেন।

(৩) কতিপয় কোম্পানী বাতিলকরণ—(১) ১৯১৩ সালের কোম্পানী আইন (১৯১৩-এর ৭ম)-এ অথবা সাময়িকভাবে বলবৎ অন্য কোনো আইনে অথবা অন্য কোনো ট্রাস্ট বা ওয়াকফ বা অন্য চুক্তি বা দলিলে যা কিছুই থাকুক না কেন, তফসিলে বর্ণিত কোম্পানীগুলি এই অর্ডিন্যান্স বলবত্ হইবার সাথে সাথে বিলুপ্ত হইয়া যাইবে।

(২)(১) নং উপধারা অনুযায়ী কোম্পানীগুলি ভাঙ্গিয়া যাইবার পর (ক) অবলুপ্ত কোম্পানীগুলির সকল পরিসম্পদ, স্বত্ব, অধিকার ও সুবিধা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, তত্সহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর শেয়ার এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়) আদেশ (পি, ও, নং ১৬, ১৯৭২)-এর অধীনে সরকারের হাতে ন্যস্ত হয় নাই—এইরূপ শেয়ার সেইগুলি অন্য কোম্পানী, কর্পোরেশন বা ট্রাষ্টে রহিয়াছে, উহার পর হইতে উহাকে উক্ত আদেশ বলিয়া অভিহিত করা হইবে এবং অবলুুপ্ত কোম্পানীসমূহের সকল নগদ অর্থ ও ব্যাংকের জমা সংরক্ষিত তহবিল ও বিনিয়োগ এবং বিলুপ্ত কোম্পানীর এই রূপ সম্পত্তি হইতে উত্সারিত সকল স্বার্থ ও স্বত্ব অথবা দখলী স্বত্ব, ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে হস্তান্তরিত ও ন্যস্ত হইয়া যাইবে।

(খ) অবলুপ্ত যে কোনো কোম্পানী কর্তৃক উহার ব্যবসায় ও কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে বা তত্সংশ্লিষ্টে সৃষ্ট সকল দেনা ও দায়, গৃহীত সকল দায়িত্ব, সম্পাদিত সকল চুক্তি এবং সম্পাদিত সকল আয়োজন অথবা সম্পাদনের জন্য গৃহীত আয়োজিত সকল বিষয় সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হইবে এবং সরকার কর্তৃক, সরকারের সহিত, সরকারের জন্য সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া ধরিয়া লওয়া হইবে।

(গ) অবলুপ্ত কোম্পানীসমূহ উহাদের কারবার ও কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্টে ও উদ্দেশ্যে কোন অর্থ অঙ্ক প্রদানযোগ্য বা আদায়যোগ্য হইলে সরকার উহা পরিশোধ বা আদায় করিতে পারিবেন।

(ঘ) পরিপ্রেক্ষিত হেতু অন্যতর না বুঝাইলে এই সকল কোম্পানীর ব্যবসা ও কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ও সংশ্লিষ্টে যে কোন চুক্তি, দলিল, আমমোক্তারনামা, আইনগত প্রতিনিধিত্ব এবং যে কোনো প্রকৃতির অন্যবিধ দলিলে কোন অবলুপ্ত কোম্পানীর কোনো প্রসকোজেন্স থাকিলে তাহা সরকারে প্রসঙ্গ উল্লেখ বলিয়া ধরা হইবে এবং এইরূপ চুক্তি, দলিল, ক্ষমতা, মঞ্জুরী বা চুক্তি তদনুযায়ী কার্যকর হইবে।

(ঙ) অবলুপ্ত কোম্পানীসমূহের কারবার ও কার্যক্রমের প্রয়োজন ও সংশ্লিষ্টে অবলুপ্ত কোম্পানী কর্তৃক বা উহাদের বিরুদ্ধে এই ধারার অধীনে কোম্পানী অবলুপ্ত হইবার পূর্বে আরোপিত সকল মামলা, আপীল ও আইনগত শুনানী সরকার কর্তৃক বা সরকারের বিরুদ্ধে আরোপিত মামলা, আপীল ও আইনগত শুনানি বলিয়া ধরা হইবে এবং তদুনযায়ী অব্যাহত ও ক্রমাগত থাকিবে।

(চ) কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ আদেশ বলে তাহার নিয়োগ বা চাকুরি নাকচ করিয়া দিলে এবং সরকার কর্তৃক চাকুরির শর্তাবলী নির্ধারিত ও পুণঃসংজ্ঞায়িত না হইলে অবলুপ্ত কোম্পানীগুলির সকল অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তার চাকুরি, চাকুরির কোনো চুক্তি বা শর্তে যাহাই থাকুক না কেন, ওই সকল কোম্পানী অবলুপ্ত হইবার তাত্ক্ষনিক পূর্ববর্তী শর্তাবলীতে সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হইয়াছে বলিয়া ধরা হইবে।

(ছ) এই অর্ডিন্যান্স দ্বারা বা উহার অধীনে অবলুপ্ত কোম্পানীর কোন অফিসার বা অন্যান্য কর্মচারীর চাকুরি সরকারের নিকট স্থানান্তরিত হইলে এইরূপ বাতিল ও বদলির কারণে কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাইবে না।

(৩) বিরোধ এড়াইবার উদ্দেশ্যে এতদ্বারা ঘোষণা করা হইতেছে যে, উক্ত আদেশের অধীনে সরকারের নিকট ন্যস্ত অবলুপ্ত কোম্পানীর সকল সম্পত্তি উক্ত আদেশের আওতায় পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলিয়া আর পরিগণিত হইবে না এবং তদনুযায়ী আর উক্ত আদেশের বিধিসমূহের আওতাভুক্ত থাকিবে না।

৭। ক্ষতিপুরণ: (১) ৬নং ধারার অধীনে সরকারের হাতে ন্যস্ত কোন অবলুপ্ত কোম্পানীতে বিরাজমান শেয়ার এবং এই সকল শেয়ার হইতে উদ্ভূত সকল স্বত্বের ক্ষেত্রে এই ধরনের শেয়ারের মালিকদিগকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদত্ত হইবে—

(ক) যদি শেয়ারের পূর্ণ মূল্য পরিশোধিত হইয়া থাকে, ঐ সকল শেয়ারের লিখিত মূল্য, এবং

(খ) শেয়ারসমূহের পূর্ণ মূল্য সম্পূর্ণ পরিশোধিত না হইয়া থাকিলে ঐ সকল শেয়ারের খাতে প্রকৃতই পরিশোধিত অংকের সমান অর্থ।

(২) অবলুপ্ত কোম্পানীর একজন শেয়ারহোল্ডার (১) নং উপধারার অধীনে প্রদানযোগ্য ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করিয়া লইয়া এইরূপ শেয়ারহোল্ডার এইরূপ কোম্পানীর দেনা ও দায়ের সংশ্লিষ্ট সকল দায়িত্ব ইহাতে সম্পূর্ণ এবং পূর্ণাঙ্গ অব্যাহতি লাভ করিবেন।

(৩) কোন শেয়ারহোল্ডার (১) নং উপধারার অধীনে তাহার শেয়ারসমূহের জন্য প্রদানযোগ্য ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিলে সেক্ষেত্রে ১৯১৩ সালের কোম্পানী আইনের (১৯১৩ সালের ৭ম) অধীনে অবলুপ্ত কোম্পানীর হিসাব-নিকাশের পর দায় অপেক্ষা পরিসম্পদের মূল্য বেশি বা কম হইলে তদনুযায়ী তিনি অংশ লইতে বাধ্য থাকিবেন।
স্বত্বসিল

(৬ নং ধারা দ্রষ্টব্য)
১। আলহেলাল প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং কোম্পানী লিমিটেড।
২। দৈনিক পাকিস্তান লিমিটেড।
৩। ন্যাশনাল নিউজ পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
৪। জনতা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড।
শেখ মুজিবুর রহমান; রাষ্ট্রপতি।
বিচারপতি এমএইচ রহমান সেক্রেটারি
ঢাকা ১৩ জুন, ১৯৭৫।

গতকাল (সোমবার) সরকার কর্তৃক জারিকৃত সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিলকরণ) অর্ডিন্যান্স ১৯৭৫-এর অধীনে প্রকাশনার ডিক্লারেশন বাতিলকরণ হইতে সরকার ১২৪টি দৈনিক, সাপ্তাহিক, দ্বিপাক্ষিক, মাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক পত্রপত্রিকাকে অব্যাহতি দান করিয়াছেন। আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) হইতে এই অর্ডিন্যান্স কার্যকরী হইতেছে।
অব্যাহতি লাভকারী পত্রপত্রিকার তালিকা নিম্নরূপ:

দৈনিক পত্রিকা
১. দি বাংলাদেশ অবজারভার, ঢাকা। ২. দৈনিক বাংলা, ঢাকা।

সাপ্তাহিক
৩. বাংলাদেশ সংবাদ, ঢাকা। ৪. বাংলাদেশ সি আই গেজেট, ঢাকা। ৫. বাংলাদেশ গেজেট, ঢাকা। ৬. বাংলাদেশ পুলিশ গেজেট, ঢাকা। ৭. ডিটেকটিভ, ঢাকা। ৮. ডাকবার্তা, ঢাকা। ৯. যুববার্তা, ঢাকা। ১০. সোভিয়েত সমীক্ষা, ঢাকা, ১১. সোভিয়েত রিভিউ, ঢাকা। ১২. আরাফাত, ঢাকা। ১৩. প্রতিবেশী, ঢাকা। ১৪. বিচিত্রা, ঢাকা। ১৫. চিত্রালী, ঢাকা। ১৬. সিনেমা, ঢাকা। ১৭. বেগম, ঢাকা। ১৮. ললনা, ঢাকা। ১৯. দি পালস, ঢাকা।

মাসিক পত্রিকা
ঢাকা থেকে প্রকাশিত: ২৩. পূর্বাচল, ২৪. নবারুণ, ২৫. বাংলাদেশ বেতার (ইংরেজী), ২৬. কৃষিকথা, ২৭. অগ্রদূত, ২৮. বীমাবার্তা, ২৯. সুখী পরিবার, ৩০. বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, ৩১. বুলেটিন অব স্ট্যাটিসটিক্স, ৩২. ধানশালিকের দেশ, ৩৩. উত্তারাধিকার, ৩৪. গণকেন্দ্র, ৩৫. পুরোগামী বিজ্ঞান, ৩৬. সমবায়, ৩৭. শাপলা-শালুক, ৩৮. স্ট্যাটিসটিক্যাল বুলেটিন অব বাংলাদেশ, ৩৯. বাংলাদেশ লেবার কেসেজ, ৪০. ইকোনমিক ইন্ডিকেটর অব বাংলাদেশ, ৪১. ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স, ৪২. বাংলাদেশ ট্যাক্স ডিসিশন্স, ৪৩. দি জার্নাল অব ম্যানেজমেন্ট বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স, ৪৪. বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমী, ৪৫. ঢাকা ল’ রিপোর্টস, ৪৬. কারিগর, ৪৭. আজকের সমবায়, ৪৮. মা (বাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা)। ঢাকা হইতে প্রকাশিত : ৪৯. বই, ৫০. দীপক, ৫১. উদয়ন, ৫২. ভারত বিচিত্রা, ৫৩. আল মাহদী, ৫৪. আততাওহিদ, ৫৫. নবযুগ (চাঁদপুর, কুমিল্লা), ৫৬. নাদায়ে ইসলাম, ৫৭. তাহাজীব, ঢাকা, ৫৮. সন্দীপন, পাবনা, ৫৯. আল-আমীন, ঢাকা, ৬০. হেফাজত-এ- ইসলাম, ঢাকা, ৬১. ঋতুপত্র, ময়মনসিংহ, ৬২. ছোটগল্প, ঢাকা, ৬৩. চন্দ্রাকাশ, ময়মনসিংহ, ৬৪. ঢাকা ডাইজেস্ট, ঢাকা, ৬৫. দীপ্ত বাংলা, ৬৬. ধলেশ্বরী, ৬৭. দিগন্ত, ঢাকা, ৬৮. গণমন, ফরিদপুর, ৬৯. ইস্পাত, কুষ্টিয়া, ৭০. যুগরবি, চট্টগ্রাম, ঢাকা হইতে প্রকাশিত ৭১. গণসাহিত্য, ৭২. কপোত, ৭৩. মুক্তবাংলা, ৭৪. সওগাত, ৭৫. শতদল, ৭৬. সুজনেষু, ৭৭. কিংশুক, ৭৮. বঙ্গবাসী, ৭৯. আবাহন, ৮০. খেলাঘর, ৮১. টাপুরটুপুর (চট্টগ্রামের), ৮২. বিদিশা, ৮৩. রূপম, ৮৪. রোমঞ্চ, ৮৫. শুভেচ্ছা, ৮৬. ঝিনুক, ৮৭. চিত্রকর, ৮৮. গোয়েন্দা পত্রিকা, ৮৯. জোনাকী, ৯০. চিত্রবাণী, ৯১. চলচ্চিত্র, ৯২. নিপুণ, ৯৩. খেলাধুলা, ৯৪. চিকিত্সা সাময়িকী, ৯৫. পারিবারিক চিকিত্সা (নোয়াখালী), হাকিমী খবর (ময়মনসিংহ), ৯৭. স্বাস্থ্য সাময়িকী (ঢাকা). ৯৮. শাশ্বতী, চট্টগ্রাম, ৯৯. বিজ্ঞান সাময়িকী (ঢাকা), ১০০. দি নিউ ইকোনমিক টাইমস, ঢাকা, ১০১. ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ঢাকা, ১০২. উর্বর, ময়মনসিংহ. ১০৩. রংপুর সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, রংপুর, ১০৪. মৈত্রী. ঢাকা। (দৈনিক ইত্তেফাক : ১৭ জুন, ১৯৭৫

সুত্র: বিডিভিউ২৪.কম
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×