কাদের সাহেব মোটামুটি একটা চাকরি করতেন। বছর তিনেক হলো তিনি অবসরপ্রাপ্ত। আগে যখন দম ফেলবার সময় পাওয়া যেত না এখন তার হাতে অখন্ড অবসর। অখন্ড অবসর কাটানোর নিত্য নতুন ফন্দি তিনি আটছেন কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। তাই তিনি নিজের উপর চরম বিরক্ত। কাদের সাহেবের দুই ছেলে কোন মেয়ে নাই। এজন্য তিনি আল্লাহ র কাছে প্রায়ই শুকরিয়া আদায় করেন। মেয়ে থাকলে তার বিয়েতে অনেক খরচ হতো স্বাভাবিক ভাবে।আর বুড়া বয়সে তো মেয়েরা জামাইয়ের ঘর করবে আর ছেলেরাই বাবাকেই টানবে। ছেলেদের মানুষ করায় কোন ত্রুটি রাখেননি আর দশটা স্বাভাবিক বাবার মত।এত করেও ছেলেদের মন পান নাই কারণ তিনি নাকি মানুষ হিসেবে অত্যন্ত বোকা।
কাদের সাহেব অবশ্য মানুষ হিসেবে তাকে বোকা মনে করেন না, অত্যন্ত চালাক মনে করেন। এ কথা তিনি তার দুই ছেলের কাছে প্রকাশ করেছেন ঠিকই কিন্তু দুই ছেলেই একসাথে উত্তর দিয়েছে সব বোকারাই তা মনে করে। এতে তিনি ভীষণ মর্মাহত ছিলেন। টানা দুইদিন অফিসে কাজে মনযোগ দিতে পারেন নাই। তারপর অনেক চিন্তা করে বের করলেন তিনি মনে তার মা মরা ছেলেদের দিকে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে পারেন নাই। তার জন্য অনুশোচনা বোধ করতে লাগলেন। তারপর থেকে ছেলে দুইটার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করতে লাগলেন। দুই ছেলেরই একটা গাড়ির শখ ছিল।তার মৃত বউ এর গয়না বিক্রি করে ছেলের সে শখ পূরণ করলেন। তার বড় ছেলের আবার সামান্য নেশা ভাং এর অভ্যাস আছে সেই টাকাও কাদের সাহেব জোটাতেন।বড় ভাই নেশা করে ছোট ভাই না করলে খারাপ দেখায় তাই ছোট ভাইও নিজেকে জাহির করার জন্য শুরু করলো নেশা। এইভাবেই কাটতো দিন। এখনো কাটে। কাদের সাহেব এখনো তার সঞ্চয় ভেংগে টাকার যোগান দেন দুই ছেলের।
কাদের সাহেব অবসর কাটানোর নতুন একটা উপায় পেয়েছেন। তার দুই ছেলে তাকে কেন বোকা মনে করে সেই রহস্য বের করবেন। অনেক ভেবে ভেবে কোন কারণ না পেয়ে কাদের সাহেব ভাবলেন তার দুই পুত্রধনকে এইবার বিয়ে দিতে হবে। ছেলেরা মুখ ফুটে বলতে পারে না,কিন্তু তার তো বোঝা উচিত ছিল। এই ভেবে তিনি লজ্জ্বা পান। তিনি অনেক ভেবে বের করলেন এই জন্যই তাকে হয়তো ছেলেরা বোকা ভাবে। মহা ধুমধাম করে দুই ছেলের বিয়ে সম্পন্ন হল। বিয়ের টাকা যোগাড় করতে মহা ঝামেলা হয়েছিল। কারণ বিয়ের আয়োজন ভাল না হলে দুই ছেলে আবার তাকে বোকা ভেবে বসতে পারে। বিয়ের টাকা ধার করার জন্য যার কাছেই যান সেই বলে আপনি রিটায়ার্ড মানুষ আপনাকে ধার দিলে শোধ দিবেন কেমনে? আপনার দুই ছেলেও তো কাজকর্ম কিছুই করে না। কমপক্ষে চার পাচ জায়গায় তিনি এই কথা শুনেছে। কিন্তু তিনি তো চালাক মানুষ দমে যাবার পাত্র না। এক মহাজনের কাছ থেকে কড়া সুদে টাকা নিলেন। টাকা বাড়িতে নিয়ে এসে আলমারিতে রাখার পর তিনি ভাবছিলেন তিনিই দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের অধিকারী।কারণ তিনি টাকাটা যোগাড় করতে পেরেছেন।
বিয়ে করার পর দুই ছেলে আলাদা হয়ে গেল। কাদের সাহেব বুদ্ধিমানের মত বাধা দিলেন না। ছেলেরা বিয়ে করছে আলাদা হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু দুই ছেলের তো আর ইনকামের পথ নাই। কাদের সাহেব বুদ্ধিমানে্র মত তাদের ছেলেদের টানতে লাগলেন। দুই ছেলে যেদিন কাদের সাহেবের কাছ থেকে বাড়ী লেখে নিল কাদের সাহেব বুদ্ধিমানের মত সই দিয়ে দিলেন। দুই ছেলে যেদিন তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার কথা বললো কাদের সাহেব বুদ্ধিমানের মত তাতেও রাজি হয়ে গেল কারণ ছেলেরা বলেছিলো বৃদ্ধাশ্রমে থাকলে তিনি ভাল থাকবেন। কাদের সাহেবও ভাবলেন এই বুড়া বয়সে ছেলেরা তাকে আর কি সংগ দেবে। তার চাইতে বৃদ্ধাশ্রমে তার বয়সী অনেকের দেখা পাবেন। আরামে দিন কাটবে। মাঝেমধ্যে ছেলেরা তো তাকে দেখতে আসবেই।
বুদ্ধিমান কাদের সাহেব এখনো তার ছেলেদের মুখ দেখার জন্য বৃদ্ধাশমে অপেক্ষা করেন।