কয়েকদিন ধরে কাসেম বিন আবুবাকার নামের এক লেখক ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছেন। তার সম্পর্কে কিছু জানতাম না।তবে ফেসবুকের বই সম্পর্কিত গ্রুপগুলোতে তার ফুটন্ত গোলাপ,বোরখা পড়া মেয়ে নিয়ে ট্রল করা দেখেছি। সেটা নিছকই মজার পর্যায়ে ছিল কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যখন তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক বলে পরিচয় দেয়া শুরু করলো তখন থেকেই সমস্যার শুরু। অনেকে তার সাহিত্যের মান বিচার করা শুরু করলেন আরেকদল হেসেই উড়িয়ে দিল। কাসেম বিন আবুবাকারের ফুটন্ত গোলাপ সবচাইতে জনপ্রিয় গ্রন্থ। তিরিশ বার মুদ্রণ হয়েছে তার বইয়ের। এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার!আমার জানামতে হুমায়ূন আহমেদের কোনো বইও এত বার মুদ্রিত হয় নি । চেতনার উপর ভিত্তি করে গল্প লেখেন এবং শরীয়াহ অনুযায়ী তার উপন্যাসের নায়ক-নায়িকা রা প্রেম করে। ইসলামের মোড়কে হালাল প্রেমের মত বিষয় অনেকটা। আমাদের দেশের মাদ্রাসা মাধ্যম এবং গ্রামাঞ্চলে তার পাঠক সংখ্যা বেশি। বেশি বলতে তার সিংহভাগ পাঠকই ওখানের।তার নারী ভক্তকুল রক্ত দিয়ে তার জন্য চিঠি লেখেন। অনেকে তার উপন্যাস পাঠ করে ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দেন। ইসলামী আদর্শে জীবন যাপন শুরু করেন।
ইউটিউবে অতি সম্প্রতি তার সাক্ষাৎকার দেখলাম।সেখানে উপস্থাপক ভাড়ের মত লেম প্রশ্ন করে যাচ্ছেন আর লেখক ক্লাস টু এর মেয়ে রহিমার সাথে তার প্রণয়ের কথা বলে যাচ্ছেন।মিনিট নয়েকের মত দেখে আর দেখার ধৈর্য হারিয়ে ফেললাম। রহিমা ফ্রক পড়ে ছিল নিচে ছিল জাঙ্গিয়া তিনি যখন টিভি অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন তখন তাকে বিকৃত যৌন রুচির মানুষ বলা কিন্তু যেতেই পারে।
ফেসবুকে আবার এমন অনেক লেখা দেখেছি,সময়ের সেরা লেখক এতদিন উপেক্ষিত ছিল,বিশ্বমিডিয়া তাকে আমাদের সামনে তুলে এনে আমাদের মিডিয়াকে চপেটাঘাত করেছে। কিছু কিছু জায়গায় সুনীল,সমরেশ এদের খুঁত বের করে কাসেম সাহেবকে মহিমান্বিত করা হয়েছে।
আমাদের বাড়াবাড়ি করার অভ্যাস টা যেদিন যাদবে সেদিন থেকে হয়তোবা আবার আগের মত সুস্থ জীবনে আসতে পারবো।আমরা মুখ চেপে হাসতে পারি না।আশেপাশের দশজন কে নিয়ে হাসি।যদি কারো হাসি নাও আসে তাদের জোর করে হাসাই।হুট করে ডেইলি মেইল রিপোর্ট করলো আমরা নাচতে নাচতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরে ফেললাম। দেশি মিডিয়া ফলাও করে তখন তাকে প্রচার করতে শুরু করলো।সমস্যাটা হল হঠাত এতদিন পর এত জনপ্রিয় লেখকে উত্থানের কারণ কি?এতদিন কি দেশি মিডিয়া নাকে তেল দিয়ে ছিল?দেশের এত পাঠকের মন জয় করা লেখক এতদিন লাইমলাইটে আসেন নাই কারণ তার পাঠকেরা উচ্চশিক্ষিত না।তার লেখার মধ্যে কিছুই নাই। এক কথায় অন্তস্বাঃর শূণ্য। কোন রূচিবান পাঠকের মুখে তার লেখা রোচার কথা নয়। যারা বই বিক্রির দিক দিয়ে ,পাঠক সংখ্যার উপর বেস করে সাহিত্যের মান বিচার করেন তাদের কথা ভিন্ন।
তবে একটা ব্যাপারে কাসেম সাহেবের বেশকিছু ব্যাপারে ধন্যবাদ প্রাপ্য। ঐ সময়ে তিনি যখন লেখা শুরু করেছেন তখন বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রামের তরুণ-তরুণীদের কাছে পৌছে গেছেন। যদি তার বই পড়ে কেউ কারো বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়। কিন্তু দিন শেষে কাসেম সাহেব আলী জি এস টি ই আর কিংবা রাইসুল ইসলাম আতিফের মতোই একজন।ধর্ম নিজের মত পরিবর্তন করে তিনি লিখেছেন অনেকটা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করার মত কিন্তু তিনিই আমাদের দেশে একমাত্র ধর্ম ব্যবসায়ী নাকি তার আগেও কেউ করেছে!