somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রয়ের যুদ্ধ

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী ছিলেন হেলেন,যিনি ছিলেন জিউস ও লিডার কন্যা এবং ক্যাষ্টর ও পোলাক্সের বোন। তার এমনই রূপ-সৌন্দর্য ছিলো যে গ্রিসের প্রতিটি তরুন রাজকুমারই তাকে বিয়ে করতে চাইলো। যখন তার পাণিপ্রার্থীরা বিয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার জন্য তার প্রাসাদে জড়ো হলো তখন তারা সংখ্যায় এত বেশি ছিলো এবং এতসব ক্ষমতাশালী পরিবার থেকে এসেছিলোযে আপাত বিবেচনায় হেলেনের পিতা ( হেলেনের মায়ের প্রকৃত স্বামী) , রাজা টিন্ডারিউস , তাদের মাঝ থেকে একজনকে নির্বাচন করতে গিয়ে ভয় পেয়ে গেলেন , এই কারনে যে অন্যরা হয়তো জোট বেধে তার বিরুদ্ধে চলে যাবে। তাই সবার কাছ থেকে নিয়ে নিলেন একটি অনড় অঙ্গীকার যে, যে ই হেলেনের স্বামী নির্বাচিত হোক না কেনো অন্যরা সেটি সমর্থন করবে। সবাই মেনে নিলো কেননা প্রত্যেকেই আশা করছিলো যে সে নিজেই নির্বাচিত হবে। এবং তারা প্রতিঞ্জা করলো যে কেউ হেলেনকে অপহরন করতে এলে তাকে দেওয়া হবে চরম শাস্তি।
হেলেন



রাজা টিন্ডারিস পছন্দ করলেন আগামেমননের ভাই মেনেলাউসকে এবং তাকে স্পার্টার রাজাও বানালেন।
মেনেলাউস




একটু পিছনে ফিরে তাকাই। প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী ভালো করেই জানতেন কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে মর্তের সবচেয়ে সুন্দরী নারীটিকে। ইনোনীর দুর্ভাগ্যের কথা একবারো চিন্তা না করে তিনি তরুন মেষপালককে পাঠিয়ে দিলেন স্পার্টাতে, যেখানে মেনেলাউস ও হেলেন তাকে তাদের অতিথিরূপে সাদরে গ্রহন করলেন। অতিথি ও আতিথ্যদানকারীর মধ্যে সম্পর্ক ছিলো অতি চমৎকার। এই বন্ধনে পূর্ণ আস্থা রেখে মেনেলাউস প্যারিসকে রেখে গেলেন তার গৃহে এবং রওনা দিলেন ক্রিটের উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্যারিস ভেঙে দিলেন সেই পবিত্র সম্পর্কটি।

প্যারিস




মেনেলাউস ফিরে গিয়ে দেখলেন হেলেন নেই ; তিনি পুরো গ্রিসের কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করলেন। সকল দলপতিই সাড়া দিতে বাধ্য ছিলেন। সবাই সোৎসাহে এগিয়ে এলেন ট্রয়কে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে। কিন্তু শীর্ষস্থানীয় দুজনকে পাওয়া গেলো না; তারা ছিলেন ইথাকা দ্বীপের রাজা অডিউস এবং সমুদ্র উপদেবী থেটিসের পুত্র একিলিস কে।


অডিউস ছিলেন গ্রিসের অন্যতম বুদ্ধিমান ও দ্বায়িত্বশীল মানুষ। কিন্তু একজন বিশ্বাসভঙ্গকারী নারীর জন্য তিনি নিজ পরিবার ও দেশকে ছেড়ে অন্যদেশে এক রোমান্টিক অভিযানে যেতে চাইলেন না। তাই তিনি পাগলের ভান করতে লাগলেন এবং সেনাবাহিনীর দূতকে ফাকি দেবার জন্য রাজা হয়েও তিনি মাঠে লাঙ্গল চড়াচ্ছিলেন এবং বীজের পরিবর্তে লবন বপন করছিলেন। কিন্তু দূতটিও ছিলো সুচতুর। সে অডিউসের ছোট পুত্র সরাসরি লাঙ্গের গতিপথের সামনে এনে রাখলো। সাথে সাথে অডিউস তার লাঙ্গল সরিয়ে ফেললেন এবং প্রমান হয়ে গেলো যে তিনি সম্পুর্ণ সুস্থ।
অডিউস





একিলিসকে আটকে রেখেছিলেন তার মা। উপদেবীটি জানতেন যে একবার ট্রয়ে গেলে তার পরিণতি হবে মৃত্যু। তিনি একিলিসকে নারীবেশ ধারন করতে বাধ্য করলেন এবং লুকিয়ে রাখলেন মেয়েদের মাঝে। অডিউস এলেন তাকে খুজতে। ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে তিনি গেলেন রাজপ্রাসাদে এবং সাথের ঝোলায় করে নিয়ে গেলেন চমৎকার গহনা এবং কিছু অস্ত্র। অন্যান্য বালিকাদের সাথে একিলিসও আসলেন এবং তিনি আগ্রহ দেখালেন অস্ত্রের প্রতি। তখন অডিউস তাকে চিনে ফেললেন এবং নিয়ে গেলেন সেনাছাউনিতে।
একিলিস



একটি বিশাল নৌবহর তৈরি হয়ে উঠলো। এক হাজার জাহাজ নিয়ে চললো গ্রিক দলটিকে। তারা মিলত হলো অলিসে, যে স্থানটি ছিলো তীব্র বায়ু প্রবাহ ও মারাত্নক স্রোতে আক্রান্ত। উত্তর-বায়ু প্রবাহ চলা পর্যন্ত পাল তোলা অসম্ভব হয়ে পড়লো। এবং দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতেই থাকলো। সৈন্যদল মরিয়া হয়ে উঠলো। ভবিষৎবক্তা ক্যালকাস ঘোষণা করলেন যে, আর্টেমিস (শিকারি দেবী, তিন কয়মারি দেবীর মাঝে অন্যতম) রাগান্বিত। কেননা তার প্রিয় বন্য প্রাণীগুলোর অন্যতম একটি খোরগোশকে তার শাবক সহ হত্যা করেছে গ্রিকরা। আর্টেমিসের ক্রোধ কমানোর উপায় হলো সেনাদলের সর্বাধিনায়ক আগমেমননের কনিষ্ঠা কন্যা, ইফিজিনিয়াকে উৎসর্গ করা। এটি সকলের কাছেই ছিলো এক ভয়ংকর ব্যাপার। তবুও আগমেমনন তা ই করলেন কেননা এটি না করলে সৈন্যদলে তার গ্রহনযোগ্যতা এবং ট্রয় জয় করে গ্রিসকে বিজয়ি করার জন্য তার আকাঙ্খা বিপন্ন হয়ে পড়তো। তিনি যুদ্ধকে সাহায্য করার জন্য নিজ সন্তানকে হত্যা করার দুঃসাহস দেখালেন।
তিনি ডেকে আনলেন তার কন্যাকে আর তার স্ত্রীকে লিখে পাঠালেন যে , তাদের কন্যার সাথে একিলিসের শুভ বিবাহের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু যখন সে তার বিবাহ অনুষ্ঠানে এলো তখন তাকে হত্যার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো বেদিতে এবং তার সকল মিনতি-- পিতা, পিতা বলে চিৎকার , তার নবীন প্রাণ এসব কিছুই স্পর্শ করলো না নিষ্ঠুর যুদ্ধন্মাদদের। সে মৃত্যবরণ করলো এবং উত্তর বায়ুপ্রবাহ থেমে গেলো এবং প্রশান্ত সমুদ্রে গ্রিক জাহাজগুলো আবার যাত্রা করলো।




যখন তারা ট্রয়ের অন্যতম নদী সিময়েসের উৎসে পৌছালো,যিনি প্রথম তীরে পা রাখলেন তিনি ছিলেন প্রতেসিলাউস। এটি ছিলো অত্যন্ত সাহসী একটা কাজ কেননা ভবিষৎবক্তা বলেছিলেন যে , যিনি প্রথম ভূমি স্পর্শ করবেন তিনিই প্রথম মৃত্যু বরণ করবেন। কাজেই যখন প্রতেসিলাউ ট্রোজানদের তীরবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন গ্রিকরা তাকে এমন ভাবে সম্মান জানালো যেনো তিনি কোনো দৈব চরিত্র এবং দেবতারাও তাকে যথেষ্ট সমীহ করলেন।


হার্মিস (জিউসের বার্তাবাহক) তাকে তুলে আনলেন মৃতদের মাঝ থেকে ,তার শোকে মুহ্যমান স্ত্রী লাওডামিয়াকে দেখানোর জন্য। লাওডামিয়া তাকে দ্বিতীয়বার হারাতে চাইলেন না। যখন তিনি আবার ফিরে গেলেন পাতালরাজ্যে তার স্ত্রীও তার সহযাত্রী হলেন ; সে বেছে নিলো আত্মহত্যার পথ।

টু বি কন্টিনিউড........................
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২১
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×