somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায় বেলার ভাবনা গুলো

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগেই শেষ হলো আমার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষ করে খুব টায়ার্ড ছিলাম, সারারাত ঘুমানো তো দুরের কথা, একটু শোবার চান্স ও পাইনি।
এত তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করাটা আমার খুব একটা ভালো লাগছিলো না। যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে একেবারেই অচেনা একজন মানুষ। তাকে ভালো করে চেনা তো দুরের কথা ঠিক করে কিছুক্ষন কথা বলবার মত সময় ও আমাকে দেওয়া হয়নি।
রাত টা চেষ্টা করেছি হইহুল্লুড় করে পরিবার ও বন্ধুদের সবার সাথে কাটাতে, কেননা নতুন জীবনে প্রবেশের আগে এটাই আমার শেষ রাত। চেয়েছিলাম নিজের জন্য খানিকটা সময়, কিন্তু এত মানুষের ভীড়ে সে সময় টুকু সেভাবে পাইনি। পুরোনো বান্ধবীদের সাথে অনেকটা সময় কাটালাম, স্মৃতিচারন করলাম, তারপরেও মনের মধ্যে এক অজানা আশংকা। নতুন একটা পরিবার পেতে যাচ্ছি, নতুন মানুষ নতুন আচরন। জানিনা আমি খাপ খাওয়াতে পারবো কিনা। সবার সাথে মানিয়ে চলতে পারবো কিনা। ওরা কি আমাকে আমার মত থাকতে দেবে নাকি আমাকে পরিবর্তিত করে ফেলবে?



আজকে আমার বিয়ে ! সকাল সকাল পার্লারে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে। সেখান কার কাজ শেষ করে ভেন্যুতে নিয়ে গেলো। গেইট দিয়ে ঢোকার মুহুর্তেই চোখ ধাঁধানো আলো পড়লো আমার মুখে সেই সাথে গরম ও অনুভুত হলো। দেখলাম ক্যামেরা ম্যান দাঁড়িয়ে আছে। বউ স্টেজে প্রবেশ কবে তার ফুটেজ নিতে হবে তো। বুঝতে পারলাম উপস্থিত সবার চোখ আমার দিকে। চাইলেও মুখ গোমড়া রাখতে পারবো না। মনের অনুভুতি মনেই রেখে দিয়ে মুখে একটা কপট হাসি ফুটিয়ে তুল্লাম। সবাই তো খুশি হয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বসে ছবি তুলতে লাগ্লো, আর আমি বুকের ভিতরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাকে শান্ত করার আপ্রান প্রচেষ্টার সাথে সাথে হাসি হাসি মুখে বসে রইলাম। হাজার হোক বউ বলে কথা, তাকে তো আর গোমড়া মুখে মানায় না।
কিছুক্ষন পরেই হবু বর এসে হাজির। তাকে সাদরে আপ্যায়ন করে আমার পাশে এনে বসানো হলো। অতঃপর আবারো সেই চোখ ধাঁধানো আলো। একটু পরেই খাবারের টেবিলে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে, আশে পাশে সবাই অপরিচিত মানুষ। নিজের কাউকে খুজে পেলাম না। হঠাত করেই আমার এক বান্ধবী কে দেখলাম টেবিলের পাশ দিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে, ওর দিকে তাকালাম আমি। আর মনে মনে বলছিলাম, প্লিজ দোস্ত, চলে যাইস না।
খাবার টেবিলে বসে কিছুই খেতে পারি নি আমি। এত লাইট, ক্যেমেরা, এত এটেনশনের মাঝে খাওয়া যায় !!!


এক বান্ধবী চলে যাবে, আমার কাছে বিদায় নিতে আসলো, এতক্ষন যা মনের মাঝে চাপা দিয়ে রেখেছিলাম ওকে দেখে তা এক ঝটকায় বেরিয়ে আসলো। জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিলাম আমি। আর বললাম, চিন্তা কইরো না, আমি আবারো আসবো তোমাদের সাথে দেখা হবে।


আমার এক বান্ধবী পাশে বসে কথা বলছিলো, হঠাত করেই ওকে উঠিয়ে দেওয়া হলো, কেননা কাজি এখন বিয়ে পড়াবে। কাজি এসে কি কি বলল কিছুই আমার কান দিয়ে ঢুকছিলো না। কবুল বলতে বলল আমাকে। কবুল বল্বো !!! বললেই তো বিয়েটা হয়ে যাবে ! কিভাবে আমি আমার বা মা ভাই দুটাকে ছেড়ে থাকবো ! আমি পারবো না, কিছুতেই পারবো না কবুল বলতে। বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিলো, কিন্তু পানি টা শুধু চোখ বেয়েই পড়েছে। মন চাচ্ছিলো উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে বেড়িয়ে যাই। এত মানুষের সামনে চিৎকার করে কাঁদতেও পারছিলাম না। এ কেমন অনুভুতি। কিন্তু কবুল তো বলতেই হবে। অনেক কষ্টে দম আটকে রেখে বললাম কবুল। কি জ্বালা, আবারো কবুল বলতে হবে !! একবার বলেছি সেটা কি যথেষ্ট নয় ? আবারো দম আটকানো অনুভুতি !! কেনো ? বললাম আবারো। সাইন করে করে দিলাম। এই মুহুর্ত থেকে আমি অন্যের ! এতটা বছর ধরে যেই বাবা মা ভাই রা আমাকে আগলে রেখেছে, ভালোবেছে, আদর করেছে শাসন করেছে, এখন থেকে তাদের অধিকারে ভাটা পড়েছে। এও কি সম্ভব ? কোথায় লেখা আছে বিয়ের পরে বাবা মার অধিকার কমে যায় ?? কিভাবে হতে পারে এটা ?
যে বান্ধবীকে আমার পাশ থেকে উঠিয়ে দিয়েছিলো সে এসে আমার কাছে বসলো। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ওর বুকে মাথা রেখে কাদতে শুরু করলাম। কান্নার দমকে হেচকি উঠে যাচ্ছিলো। আশে পাশে মানুষ এসে বলছিলো কান্না না করার জন্য, কারন কান্না করলে মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে !!! হায়রে দুনিয়া, হায়রে মানুষ ! আমি কি ভাবছি , কি ফীল করছি সেটা কেউ বুঝার চেষ্টাই করলো না। পরে রইলো আমার মেকাপ নিয়ে !! বান্ধবীকে সরিয়ে নিতে চাইলো আমার কাছ থেকে, কেননা ও থাকলে আমি আরো কাদবো। ওদের কিভাবে বুঝাই যে আমি তো অনেক আগে থেকেই কাদছি, মনে মনে কাদছি। ওকে সরিয়ে নিলে হয়তো অদম্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়বো না কিন্তু কান্না তো বন্ধ হবে না। বরং ওর কাধে মাথা রেখে কাদতে পারলে আমি কিছুটা শান্তি পাবো। কিন্তু লোকসমাজ তো এত কিছু বুঝে না।



বিদায়ের সময় চলে এসেছে। ওরা আমাকে নিয়ে বের হলো, গাড়িতে উঠবো এখুনি। দুইভাই দুই পাশে। হায়রে, কতই না খুনসুটি ছিলো ভাইদের সাথে। ওদের কত আবদার। কত মারামারি। সব কিছু আজকে অগোছালো লাগছে। ভাইদের জড়িয়ে কেদে দিলাম আবারো। ওরা আমার সামনে নিজেকে অনেকটাই সামলে রাখছিলো। আব্বুকে ধরে কাদলাম, আম্মু কে ধরেও। বিয়ের কিছুদিন আগেও কত চিল্লা পাল্লা করেছি তাদের সাথে। কত আবদার করেছি, হাসিমুখে সব কিছু মেনে নিয়েছেন তারা। আজকে একমাত্র মেয়েটিকে বিদায় দিতে হচ্ছে। অদ্ভুত এই সমাজ। অদ্ভুত এই সমাজ ব্যাবস্থা।

চলে যাচ্ছি আমি। পিছনে ফিরে দেখলাম অশ্রুসজল চোখে আমার চলে যাওয়া দেখছে আব্বু আম্মু। যতক্ষন চোখে পড়লো তাকিয়েই রইলেন। আমি চলে এলাম এক নতুন অধ্যায় শুরু করবার জন্য।




গতকাল আমার সবচেয়ে বেষ্টেষ্ট ফ্রেন্ড এর বিয়েতে গিয়ে অকে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছিলাম। তার মনের ভাবনা গুলোকেই নিজের ভাষায় প্রকাশ করলাম।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×