somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা একটি ‘ব্রেন ওয়াশড’ জাতি।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হীরক রাজার গল্প নিশ্চয়ই শুনেছেন। কেউ কেউ দেখেও থাকতে পারেন। পশ্চিমবাংলা ফিল্ম কর্পোরেশন ৯০ দশকে হীরক রাজাকে নিয়ে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরী করেছিল। যাকগে সে কথা। আজ আপনাদেরকে সেই হীরক রাজার একটি অনন্য কৃত্তির কথা শোনাই।

সোজা বাংলায় বলতে গেলে হীরক রাজা একজন স্বৈরাচার ছিলেন। তার দরবারে শুধু জি হুজুর! জি হুজুর! ছাড়া কখনোই না হুজুর শোনা যেত না। এই জি হুজুর প্রথাকে বলবৎ রাখতে হীরক রাজা বিজ্ঞানীর স্বরনাপন্য হলেন। বললেন, বিজ্ঞানী! বুদ্ধি বের কর। যে করেই হোক এই দেশের মানুষকে আমার বশে রাখতেই হবে। যদি বুদ্ধি দিতে না পারো তবে তোমার গর্দান যাবে। তোমার পিছনে হাজার হাজার টাকা তো আর এমনি এমনি খরচ করতে পারি না। বিজ্ঞানী জীবনের ভয়েই হোক আর টাকার লোভেই হোক দারুন একটি বুদ্ধি বের করে ফেললেন।

বিজ্ঞানীর বুদ্ধিনুসারে হীরক রাজা কাজ শুরু করলেন। তিনি দেশের সকল পাঠশালা গুলোকে বন্ধ করে দিলেন। কারণ পড়াশুনা জানা শোনা লোকেরাই অন্যায় দেখলে প্রতিবাদী হয়ে উঠে। সে কারণেই বিজ্ঞানী রাজাকে বুদ্ধি দিলেন পাঠশালা গুলোকে বন্ধ করে দিতে। এরপরও যারা শিখে ফেলেছে তাদের জন্য রয়েছে বিজ্ঞানীর বিশেষ ব্যবস্থা। বিজ্ঞানী মহাশয় তাদের জন্য বিশেষ যন্ত্রের আবিষ্কার করেছেন। যার নাম ‘মগজ ধোলাই’ যন্ত্র অথবা ব্রেন ওয়াশ যন্ত্র। এই যন্ত্রের ভিতরে যাকে একবার ঠোকানো যাবে বের হয়ে সে শুধু জি হুজুর! জি হুজুর! করতে থাকবে। তার ভিতরে প্রতিবাদ কিংবা ন্যায় পরায়ন হবার মৃদ্যু সম্ভাবনাও থাকবে না। এভাবেই হীরক রাজা তার স্বৈরাচারী শাসনকে বলবৎ রেখেছিলেন।

হীরক রাজার সেই ‘ব্রেন ওয়াশ’ ফর্মূলা আজ আমরা আমাদের এই সবুজ ভূ-খন্ড বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই মন্ত্রী সভা থেকে শুরু করে জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিক সমাজ সবাই আজ জি হুজুর! জি হুজুর! নীতিতে মেতে উঠেছেন। বাকি রয়েছে শিক্ষিত যুব সমাজ। তাদেরকে তো আর ধরে বেঁধে ব্রেন ওয়াশ করানো যায় না। তাই ব্রেন ওয়াশের জন্য তাদের জন্য আনোয়ন করা হল নতুন ফর্মূলা। ‘প্রশ্ন ফাঁস’ এবং ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ব্রেন ওয়াশ করা হল। যারা মেধাবী এবং প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থী তারা বাদ; পড়ে গেল। আর ব্রেনওয়াশ হওয়া শিক্ষার্থীরা জাতির ফ্রন্ট লাইনে আসন নিয়ে নিল। এখন টাকা আছে যার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে তার। কখনো কখনো ৯ লাখ টাকা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১ম স্থানটাও দখল করে নিতে পারেন। পরবর্তিতে এরাই জি হুজুর! জি হুজুর! জাতিতে পরিণত হবে।



এই ব্রেন ওয়াশ জাতিকে দিয়েই জি হুজুর! জি হুজুর! রব তোলা সম্ভব। এই জি ‍হুজুর! জাতিকে দিয়েই হীরক রাণীর ভোটার বিহীন নির্বাচন করা করা সম্ভব। আবার এদেরকে দিয়েই শাহবাগে বিরিয়ানীর আড্ডা বসানো সম্ভব। আবার সেই বিরিয়ানী পার্টির মানুষকে মিডিয়ার মাধ্যমে ফুলিয়ে ফাপিয়ে লক্ষ লোকের সমাগম বলে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। আবার সেই বিরিয়ানী পার্টির খিস্তি খেউর এর কারণেই নাকি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আপিল আবেদন করার সুযোগ তৈরী করা হয়েছে। আর যার মাধ্যমে এই বিজয়ের মাসের ১২ তারিখে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরও একটি কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে। ইতিহাসে এই দিনটিকে একটি কালো অধ্যায় বলে বিবেচিত হবে বলে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি।

এই জাতি যে ব্রেন ওয়াশ জাতি তা অনেক আগেই জনৈক মনীষীরা বলে গেছেন। সত্য বলেচেন তাই তাদের জায়গা ভাগাড়ে হয়েছে। আর মিথ্যা বলেছে যারা তাদের জায়গা হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। যেমন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাদের ক্যাম্পে মুরগী সাপ্লাই দাতা শাহরিয়ার কবির এখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। গুনী জনেরা বলেছেন,‘ সত্য বচনং স্থান চ্যুত আবশ্যিক। মিথ্যা বচনং করদ সম্মান পাইবাং’।

১৪ ডিসেম্বর অন্যান্য ৪৫ টি বছরের মত বিশেষ ঘটা করে বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করা হল। কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর এর আগে এই বুদ্ধিজীবিরা কোথায় ছিল? মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা কি ছিল? তাদেরকে কি পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছিল? তাদেরকে কি চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল? এই সকল বুদ্ধিজীবিরা সেই সময় কাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন?

উপরোক্ত কোন প্রশ্নই আজকের ব্রেন ওয়াশ জাতির মাথায় আসে না। তারা জানতেও চায় না। আবার ইতিহাসবিদরা এসব নিয়ে লিখেনও না। লিখলে যদি আবার শহীদুল্লাহ কায়সারদেরকে রাজাকার বলে মরোনত্তর ফাঁসি দেওয়া হয়! ৪৫ বছর ধরে যাদেরকে বীর বলে সম্মান করা হচ্ছে তাদেরকে যদি গাদ্দার বলা হয়! এরকম না ভয়েই কিংবা আজকে যাদেরকে রাজাকার বলে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে তারাই আবার জাতীয় বীর বনে যায় কিনা সেই ভয়েই হয়তো হীরক রাণী সত্য ইতিহাসকে উঠতে দিচ্ছেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×