somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবনী

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘ ছয় বছর পরে ঢাকায় আসলাম । একটা সময় পড়াশুনা করার সুবাদে ঢাকায় থাকতাম । কিন্তু একটা ঝড় পড়াশুনা শেষ করার আগেই আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল শহর থেকে দূরে । মফস্বলে ছোট একটা চাকরি করি । ইচ্ছে না থাকলেও জীবনধারনের জন্য নিতে হয়েছে । ইচ্ছে ছিল ভবঘুরেই হয়ে থাকবো সারাজীবন কিন্তু বাবা-মায়ের কথা ভেবে অবশেষে ছাপোষা জীবন বেছে নিতে হয়েছে ।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বন্ধুর বাসায় উঠেছি । ও একটা বড় চাকরি করে । বিয়ে করেছে বছরখানিক হল । এখনো আমার সব বন্ধুরা সন্ধ্যার পরে ছবিরহাট ,টিএসসিতে আড্ডা দেয় । অনেকদিন পরে ঢাকায় এসেছি শুনে বন্ধুরা সবাই অনুরোধ করলো যেন অবশ্যই সন্ধ্যার পরে টিএসসিতে ওদের সাথে দেখা করতে যাই । পুরনো আড্ডার জায়গাগুলো দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে । তাই একা একা বিকেলেই বেড়িয়ে পরলাম ।

টিএসসিতে যে জায়গাটায় আড্ডা দিতাম সেখানের অনেক চায়ের দোকানদার এখনো আছে । দুজন দেখেই চিনে ফেললো । শেষমেষ মোক্তারের চায়ের দোকানেই বসলাম । একটু পরেই মোক্তার মরিচের চা আর একটা বেনসন নিয়ে এল । মোক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম , তুই এখনো মনে রেখেছিস আমি কি চা আর কি সিগারেট খাই ? একটা সরল হাসি দিয়ে নিজের কাজে চলে গেল মোক্তার ।

একটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা সিগারেট ধরালাম । অনেকদিন পরে প্রিয় জায়গায় আসায় বুকের ভিতরে কেমন যে একটা উত্তেজনা কাজ করছে । হঠাত ডাচের দিকে চোখ পড়লো । কালো শাড়ি পড়া একটা মেয়ে এদিকেই হেঁটে আসছে । খুব পরিচিত মুখ ,পরিচিত হাটার ভংগী । আমার সামনে থেকে যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন নাম ধরে ডাক দিলাম , “এই নবনী”। মেয়েটি আমার দিকে ফিরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম ,চিনতে পারছোনা নবনী ? নবনী বলল , চিনবোনা কেন ! এতদিন পরে কোথা থেকে ? আমি বললাম , চাকরির কাজে আসতে হয়েছে । নবনী পাশে এসে বসলো । তাকে দেখে কত স্মৃতি মনে পড়ে গেল ।

নবনী আর আমি একসাথেই পড়াশুনা করতাম । ক্লাশের প্রথম দিনেই পরিচয় হয়েছিল । এরপর আটমাসের মাথায় সম্পর্কটা বন্ধুত্ব থেকে প্রেমিক প্রেমিকায় রুপান্তরিত হয় । আমার একটা সাইকেল ছিল । ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন ওর বাসার সামনে চলে যেতাম । নবনী বের হলে ওকে সাইকেলের পেছনে নিয়ে টিএসসি চলে যেতাম । দুজনে দুকাপ চা খেয়ে কিছুসময় আড্ডা দিয়ে যে যার ক্লাশে চলে যেতাম । দুপুরে আবার টিএসসিতে এক হয়ে চলে যেতাম চানখারপুলে ।তিনটা রুটি আর একটা ভাজি ভাগাভাগি করে খেতাম । দুজনই টিউশনি করে চলতাম তখন ।

হাতে কারোরই খুব বেশি টাকা থাকতোনা । তবে একসাথে থাকার কারনে কোন কষ্টবোধ ছিলনা । বিকেলে দুজনই টিউশনিতে চলে যেতাম । আটটায় আবার দেখা হত টিএসসিতে ,তখন অবশ্য সব বন্ধুরাই থাকতো । নয়টা বাজলেই আমি আর নবনী সাইকেলে চলে যেতাম ফুলার রোডে নিজেদের কিছু সময় দেয়ার জন্য ।

ফুলার রোডে যতক্ষন বসতাম ততক্ষন কেউই খুব বেশি কথা বলতাম না । একে অন্যের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম । যদিও পরের দিন আবার দেখা হবে তবুও ওঠার সময় হলে নবনীর চোখ কেমন ছলছল করে উঠতো । এখান থেকে উঠে সাইকেলে করে নবনীকে ওর হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে আসতাম । সাইকেলে ওঠার আগে নবনীর একটা আবদার আমাকে টানা দুই বছর পুরন করতে হয়েছে । বিদায় নেবার সময় জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু ।

নবনী তার বাবাকে খুব ভয় করত । যখন আমরা ফাইনাল ইয়ারে পড়ি তখন হঠাত একদিন নবনীর বাবা ঢাকায় আসলো তাকে গ্রামে নিয়ে যেতে । হঠাত করে নবনীর বিয়ে ঠিক করেছে । তখন একদিন সন্ধ্যার পরে শামসুননাহার হলের পাশে দাঁড়িয়ে নবনী আমায় জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করেছিল । আমরা দুজন তখন এমন অবস্থায় ছিলাম যে আমাদের কারোরই কিছু করার ছিল না ।

নবনী তার পরদিন বাবার সাথে বাড়িতে চলে গিয়েছিল । যাওয়ার আগে বলেছিল আমি যেন কোন ধরনের পাগলামী না করি । আমি নবনীর কথা রাখতে পারিনি । বড্ড ভালবাসতাম নবনীকে । ওর চলে যাওয়া সহ্য করতে পারিনি । স্মৃতিঘেড়া জায়গাগুলো থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম তাই তার কিছুদিন পরেই ঢাকা শহরটাই ছেড়ে দিলাম । ঢাকা শহরের যে জায়গাগুলোতে আমার বিচরন ছিল সব জায়গায় ছিল নবনীর স্মৃতি । নবনীর চলে যাওয়ার কষ্ট আমাকে পড়াশুনাও শেষ করতে দেয়নি । ওর পরে আর কোনদিন নবনীর সাথে যোগাযোগ করিনি ।

নবনীর কথায় আমার ভাবনাটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল । নবনী বললো , বিয়ে করেছ ? আমি বললাম , তোমার মত কাউকেই যে পাইনি নবনী । উত্তরটা শুনে নবনীর চোখ ছলছল করে উঠলো । নবনীকে প্রশ্ন করলাম, ছেলেমেয়ে হয়েছে তোমার ? নবনী বলল,বিয়ে করলে তো ছেলেমেয়ে হবে । আমার মাথায় বাজ পড়লো । আমি শুধু হা করে নবনীর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।

তারপর নবনী বলল ,বিয়ের আগেরদিন রাতে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলাম । এসে তোমাকে অনেক খুজেছি ,পাইনি ।তোমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা আমাকে কোনদিন বলোনি যে ওখানে খুজবো । পালিয়ে আসার কারনে পরিবারের সবার অনেক অপমান সইতে হয়েছে আমাকে । আমি আর বাড়ি ফিরে যাইনি । পড়াশুনা শেষ করার পরে এখানেই শিক্ষক হয়ে থেকে গেলাম । একাই বাসা নিয়ে থাকি ।

নবনীর কথা শেষ হওয়ার পরে প্রায় বিশ মিনিট আমি কোন কথা বলতে পারিনি ,শুধু ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম । মনের অজান্তেই চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো । এরপর আমি নবনীকে শুধু একটা কথাই বললাম “ভালবাস” ?
নবনী বলল, “বড্ড বেশি” ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×