দশ বছরের শিশু জহিরুল ইসলাম (জহির)। গাজীপুর থেকে অসুস্থ মাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিল চিকিৎসা করাতে। ভর্তিও করেছিল হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
বুধবার দুপুরে জহিরের মা মারা গেছেন। গত সোমবার দুপুরে ভর্তির পর থেকে বুধবার পর্যন্ত ওর বাবা বা অন্য কোন আত্মীয় হাসপাতালে আসেননি, যোগাযোগও করেননি। এ তিন দিন জহির একাই হাসপাতালে মায়ের পরিচর্যা করেছে। সে আশা করেছিল, মাকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যাবে। কিন্তু ছোট বুকের অগাধ ভালোবাসা দিয়েও মাকে ধরে রাখতে পারলো না সে।
চিকিৎসকরা জানান, হঠাৎ স্ট্রোক করে জহিরের মা আমেনা বেগম মারা গেছেন। এ মৃত্যুর পর জহির একদিকে যেমন কান্না আর হতাশায় ভেঙে পড়ে, অন্যদিকে লাশ নিয়েও বিপদে পড়ে। সে লাশ নিয়ে যাবে কি করে? তার কাছে কোন টাকা-পয়সা নেই।
চিকিৎসক-সেবিকাদের জহির জানায়, ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনে আউট ডোরে দেখিয়ে মাকে ভর্তি করেছে ৯৫ টাকা খরচ করে। এর মধ্যে ইসিজির জন্য খরচ হয় ৮০ টাকা। হাসপাতালে এ কয়দিন মাকে দেয়া খাবারই ভাগ করে খেয়েছে সে।
গাজীপুরের একটি স্কুলের ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এ শিশু লাশ নিয়ে যখন গভীর হতাশায় মুচড়ে পড়ে তখন এগিয়ে আসেন হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা। এরা হলেন- ওয়ার্ডমাস্টার মো. সামসুদ্দিন মোল্লা, মো. বাহার উদ্দিন, মো. হাসানুজ্জামান, এ. কে. এম জাকারিয়া। এরা চাঁদা তুলে ১০ হাজার ৮০০ টাকা সংগ্রহ করে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ পাঠিয়েছে গাজীপুরে জহিরদের বাড়িতে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালে জহিরের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তিন ভাই বোন। সেই সবার বড়। মায়ের অসুস্থতা দেখে ওর মনে হয়, ঢাকায় নিলে মা সুস্থ হবে। তাই মাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিল। ওর বাবা গাজীপুরে একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন। বাবাকে বলেও এসেছিল মাকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাবা কোন আগ্রহ দেখাননি। তারপর থেকে ওর বাবা বা বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ হয়নি। যোগাযোগের কোন সুযোগও ছিল না। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের জহিরের কাছে যেমন মোবাইল ফোনসেট ছিল না, তেমনি ওর বাবার কাছেও নেই মোবাইল ফোনসেট। তাই বাবার সাথে যোগাযোগ হয়নি। এ অবস্থায় হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাহায্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে জহির।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের এক ওয়ার্ড মাস্টার এ. কে. এম জাকারিয়া বলেন, “এ এক দুঃসাহসী ছেলে। মায়ের প্রতি মমত্ববোধ অসাধারণ। ওর দুঃখ কষ্ট ও মর্মবেদনা আমাদের মর্মাহত করেছে। কিন্তু আমরা কিইবা করতে পারি? ওর মাকে আমরা সুস্থ করতে পরিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা, নিঃসন্দেহে দু:খজনক। কিন্তু ওর মায়ের লাশকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পেরে আমাদের কিছুটা হালকা লাগছে।”
এখান থেকে নেয়া।