somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অধ্রুব ভালবাসা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাত প্রায় একটা। আচমকা সেলফোনটি বেজে উঠল। এমন সময় কে ফোন করতে পারে! অতসী ফোনটা ধরবে কিনা চিন্তা করছে, কারন অঞ্জনের ফোন সে খুব একটা রিসিভ করেনা। সব সময় কাজের ফোন, অফিসের কলিগ বা অপরিচিত বন্ধু বান্ধব যাদের অধিকাংশকেই অতসী চেনেনা। অঞ্জন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তাকে জাগাতে ইচ্ছা করছেনা। কিন্তু সেলফোনটা ক্রমাগত বেজেই চলছে। জরুরী ফোন হতে পারে মনে করে সে ফোনটা রিসিভ করলো।
পুরোটা শরীর কেমন যেনো হিম হয়ে আসছে। মাথাটা গুলিয়ে আসছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হতভম্ব হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। মাথায় কোন কিছুই কাজ করছে না। উচিত –অনুচিত কিছুই ভাবতে পারছেনা সে। আস্তে আস্তে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে। পাশে শুয়ে আছে অঞ্জন। দেখেই বড় মায়া লাগছে। আলতোভাবে চুলগুলোতে একটু হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। আসলে ঘুমন্ত মানুষগুলো এত নিষ্পাপ হয় কেন? ঘুম ভাঙ্গার পর মানুষগুলোর মাঝে তার লেশ মাত্র থাকেনা। মানব মনের জটিলতা উপলব্ধি করা সাধ্য কার! নিজের কানকে অতসী বিশ্বাস করতে পারছেনা, আবার যা শুনলো তাকে গুরুত্ব না দিয়েও পারছেনা। অঞ্জনকে সে কিভাবে জিজ্ঞাসা কবে! অঞ্জন যদি ভুল বুঝে! যদি সত্যি না হয় তাহলে পরবর্তীতে সে কিভাবে অঞ্জনের সামনে দাঁড়বে! আর যদি সত্যি হয় তাহলে সে কি করবে! তাছাড়া পুরো বিষয়টা পরিষ্কারও নয়।
প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে তার। বুকটা চিন চিন করে ব্যথা করছে। জানালার পাশেই ওদের খাট। সাদা কালো পর্দা টানানো। সাদা বা কালো যদিও কোন রঙের মধ্যে পড়ে না তবুও অতসীর খুব পছন্দের দুটো রঙ। কেননা এই দুটো রঙের মাঝে যেন জীবনবোধের চিত্র স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। সাদা মনে হয় জীবনের শুভ্রতা যা তাকে শুদ্ধ মানুষ হতে প্রেরণা দেয়। কালো রঙটা জীবনের অন্ধকার রূপটাকে ভাবায়। তাই তার ঘরে প্রতিটা জিনিসেই সাদা কালো রঙের ছোঁয়া। প্রতিটা মূহুর্তে সে জীবনটাকে উপলব্দি করে নিজেকে মূল্যায়ণ করে। কারন মানুষ নিমিষেই নিজেকে ভুলে যায়, তাই নিজেকে সে ভুলতে চায়না বলেই রঙ দুটো পাশাপাশি সব কিছুর মাঝেই আছে রান্নাঘর থেকে শুরু করে বাথরুম পর্যন্ত। ভালোর সাথে মন্দ, আঁধারের সাথে আলো, সাদার সাথে কালো।
অতসী জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দিল আস্তে আস্তে। আজ সারা সকাল থেকেই বৃষ্টি তবে বিকেল থেকেই আকাশ পরিষ্কার। জানলার ফাঁক গলে অর্ধপুরানো চাঁদের আলো বিছানায় এসে পড়লো। আশ্চর্য এক অনুভূতির শিহরণ। মনের সকল কষ্টগুলো চাঁদের সাথে ভাগাভাগি করতে ইচ্ছা করছে। বলতে ইচ্ছা করছে চিৎকার করে চেপে থাকা কষ্টগুলো। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরছে,কোনভাবেই সে সংবরন করতে পারছে না। এইতো সেদিনের কথা, কত অপরিচিত ছিল এই মানুষটা অথচ আজ সবচেয়ে বেশি আপন। চার বছরের সংসার ওদেরে। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়েছিল ওদের। অঞ্জনই তাকে পছন্দ করেছিল আগে। অবশ্য পছন্দ করার মতো মেয়ে অতসী। ফর্সা ছিপছিপে গড়ন। লম্বাও ৫ফুট ৫। নিষ্পাপ সারল্য ভরা লাবণ্যময়ী মুখখানা আদৃত ছিলো সবার কাছে সব সময়। কিন্তু নিজের দিকে খেয়াল করার সময় কখন ও তার হয়নি। পড়াশুনা করতে করতে জীবন নিয়ে ভাবনার সময় তখন হয়নি। অতসী প্রথম দর্শনেই কেন জানি অঞ্জনকে ভাল লাগাতে পারেনি। কেন ভাল লাগাতে পারেনি তার কারন সে নিজেও খুঁজে পায়নি। অঞ্জন দেখতে বেশ সুদর্শন। একটা বেসরকারি ব্যাংকে বেশ মোটা বেতনের কর্মকর্তা। অতসী কেন তাকে পছন্দ করেনি প্রথমে সেটা সে আজ ও জানতে পারেনি। অতসীকে যতবারই প্রশ্নটা সে করেছে ততবারই একই উত্তর দিয়েছে- কোন কারন নাই, প্রথম দর্শণেই তোমাকে ভাল লাগতে হবে এমনটা কি ঠিক ? কিন্তু পরেতো ভাল লেগেছে। দিনের পর দিন কথা বলেছি ফোনে, দেখা করেছি। ভাল না লাগলে কি এগুলো করতাম ?
অঞ্জন বললো, কিন্তু নদীতে নৌকা ভাসানোর জন্য আমার যে সাধনা করতে হয়েছে তা কি মনে আছে ?
অতশী বলল ,আছে বৈকি। সাধনা ছাড়া কি কিছু হয়, নাকি কিছু হয়েছে কোনকালে ?
অঞ্জন বলল, হুম শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে পটিয়ে তারপর তাদের মেয়েকে পটানো! আহা প্রেম! জয় হোক ভালবাসার।
অতশী খিল-খিল করে হেসে উঠল । বলল, তোমার প্রশ্নের উত্তর তুমি পেয়ে গেছো, জান, বাহ্যিক সৌন্দর্য আমাকে কখনও টানেনা কারন এটা বিধাতা প্রদত্ত। আমি নিজেই কখনও নিজেকে সুন্দরের অহমিকায় আয়নায় দেখিনি বা দেখিওনা। মানুষ তার সৌন্দর্য নিয়ে কত গর্ব করে কিন্তু আমি এটার কোন যুক্তি খুঁজে পাইনা। কারন এটাতে তার কোন অবদান নাই। কিন্তু আপসোস আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ এই দলে। পাত্র –পাত্রী খুঁজতে গেলে এ ব্যাপারটা আসবেই বিশেষ করে মেয়েদের বেলায়। রূপের কদর অনেক এই বাজারে। আর ছেলে হিসেবে তোমার ভিতরেও জিনিসটা দেখলাম। তুমি প্রায়ই আমাকে বল, তুমি এত সুদর্শন তবুও তোমাকে আমার প্রথম দর্শনে ভাল লাগেনি কেন? কিন্তু কোন সুনির্দিষ্ট কারন আমি নিজেও জানিনা। তবে মনে হয় আমি তোমার আত্মিক সৌন্দর্যটাই খুঁজছিলাম। যখন পেলাম তখন তোমাকে মেনে নিলাম।

অঞ্জন বলল, কিন্তু তোমার সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারলামনা। প্রথম দর্শনে একজন মানুষকে ভাল লাগাটা অস্বাভাবিক কিছুনা, কিন্তু প্রেমের দৃষ্টিভঙ্গি হবে এমনটা কি আমি একবার ও বলেছি? তোমরা মেয়েদের এই একটা সমস্যা। কোন ছেলে পরিচিত হতে বা কথা বলতে আসলেই ভাব তোমাদের প্রেমে পড়ে গেছে। বাহ্যিকভাবে ভাল লাগলে একটা মানুষের আত্মিক সৌন্দর্যটাও জানা যায় ।
হুম মেয়েদের সমস্যা তাইনা? তাহলে তুমি প্রেমে পড়লে কেন? সাধু সাজ, সব পুরুষই এক মুখে এক মনে আরেক। পরিচিত হতে এসে শেষ পর্যন্ত প্রেম বিয়ে সবই করলে। এ বলে অতসী একটু অভিমানের আশ্রয় নিলো। অঞ্জন বলল, আরে বোকা মেয়ে আমি বিয়ের পাত্রী খুঁজছিলাম তাই আমার ব্যাপারটা আলাদা। আমি তোমার ধ্যান ধারনার কথা বলছিলাম।
অতসী বলল দেখো অঞ্জন আমি এতসব নিয়ে কখনও ভাবিনি। প্রথমত পরিবারের উপর ছেড়ে দিয়েছি কারন ওরা আমার জন্য ভাল কিছুই করবেন। ওরা যখন তোমাকে মেনে নিলেন তখন আমি ও তোমাকে মেনে নিলাম। তবে দু’বছর তোমাকে আগে জেনেছি তারপরই কিন্তু বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এতে কিন্তু পরিবারের লোকজন একটু বিরক্ত হয়েছিল। পরে অবশ্য খুশি হয়েছে আমার বিচক্ষনতায়।

অঞ্জন গাল টিপে অতসীকে একটু আদর করে দিল। বলল, দেখো আমরা কত সুখী আজ। এই জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আমার কোন কষ্ট নেই ,একফোঁটাও নেই। যাকনা চলে এভাবে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত!
অতসী অঞ্জনের বুকে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল, সত্যি অঞ্জন আমি ও খুব সুখী। সে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়লো। অঞ্জন অতসীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

এইতো গত দুমাস আগের কথা। পড়ন্ত বিকেলে বারান্দায় চায়ের মগে চুমুক দিতে কথাগুলো বলা । অথচ আজ এসব কি হচ্ছে বা সে ভাবছে! কোথায় ফাঁক রয়ে গেলো? সংসারে অপ্রাপ্তি কিছুই নেই। সময় কাটানোর জন্য একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করছে। সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা আছে। হয়তো খুব শিঘ্রই ------- কিন্তু দেরীতে সন্তান নিয়েও কারো কোনো অভিযোগ নেই। এত সুখী দম্পতি ওরা তাহলে আজ বন্ধনের সুতাটায় টান পড়ছে কেন? নাকি সে অযথাই ভাবছে, দেখা গেলো জিনিসটা কিছুই না বা একটা দুঃস্বপ্ন ।

ঘড়ির কাটা টিক টিক করে চলছে। রাত বাড়ছে। অঞ্জন হঠাৎ পাশ ফিরে শুলো। মনে হয় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। অঞ্জন ডাকল, তুমি ঘুমাওনি?
অতসী বলল, হুম।
জানালার পর্দা সরালে কেন? কি হয়েছে তোমার? শরীর ভাল ?
অতসী একবার ভাবল কথাটা তুলবে কিন্তু বিবেক বাঁধা দিল, পারলোনা সে। শুধু বলল শরীর ভাল, এমনি ঘুম আসছিলনা তাই জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিলাম। টেনে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও।
অঞ্জন বলল, ঠিক আছে তবে ঘুমুতে চেষ্টা কর নইলে শরীর খারাপ করবে ।

অতসী বলল, ঠিক আছে “ঠিক আছে” কথাটি বলতে গিয়ে তার গলাটা ভারী হয়ে এলো। বুক ভেঙ্গে কান্না আসছে তার। অঞ্জনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার। চাইছে সকল অনাকাঙ্খিত ভাবনার অবসান হোক। শেয়ার করতে না পেরে কষ্টের পরিমান মনে হয় আরো বেড়ে যাচ্ছে। ভাবছে রাতটা কেটে যাক, সকালে নাস্তার টেবিলে কথাটা জিজ্ঞাসা করবে। কারন মুখোমুখি না হলে সমস্যা দিন দিন বৃহৎ আকার ধারন করবে।

ঢাকা শহরের বাতিগুলোর উপর চাঁদটাও বেশ বিরক্ত। স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হতে না পারার আক্ষেপ তাকে বেশ জব্দ করেছে। যান্ত্রিক নগর সভ্যতার ক্রমবিকাশে প্রকৃতি আজ বড্ড ম্লান। অতসীর ভাবনার আকাশে হাজারো চিন্তা জড়ো হচ্ছে। অঞ্জন ঘুমিয়ে পড়েছে, সে পারছেনা ঘুমুতে তবে চেষ্টা ও করলোনা
। এভাবেই কাটল বাকিটা সময়। রাত প্রায় শেষ, অতসী উঠে গেলো যদিও এখনো বাইরে আবছা অন্ধকার। ছাদে গিয়ে আনমনে একটু হাঁটল। ফিরে এসে দেখে অঞ্জন ও উঠে গেছে। এত সকালে অঞ্জন উঠেনা তবে আজ এতো ভোরে উঠে গেলো কারন কি? নিজের মনেই প্রশ্নের মালা গাথতে লাগল। অঞ্জন বাথরুমে শাওয়ার নিচ্ছে। সে নাস্তা রেডি করতে যাবার আগে ভাবলো অঞ্জনের কাপড়গুলো আলমারি থেকে নামিয়ে যাবে। ওমা যেই আলমারি খুলল দেখতে পেলো সুন্দর একটা শপিং ব্যাগ । ব্যাগটা নামিয়ে দেখলো এর ভেতর সুন্দর গর্জিয়াস একটা পাঞ্জাবী। কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে হয়ত কিনেছে কিন্তু কই কোন অনুষ্ঠান আছে বলে মনে হয়না, আর থাকলে অঞ্জন তাকে বলত এবং তাকে নিয়ে গিয়েই পাঞ্জাবী সেটটি কিনতো। আর কিনেই যখন আনলো তখন তাকে না দেখিয়ে অঞ্জন থাকতেই পারতো না। হয়ত ভুলে গেছে কাজের চাপে, নয়তো পরে বলবে এমনটা ভেবে সে পাঞ্জাবিটা আগের জায়গায় রেখে দিল। সে অঞ্জনের অফিসের কাপড় বের করে নাস্তা রেডি করতে গেলো ।
বার বার সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে মন। কথাটা কখন উঠাবে, কিভাবে উঠাবে! অঞ্জন সত্যি কথাটা বলবেতো! যদি সত্যি বলে তাহলে পজেটিভ না নেগেটিভ হবে? আর যদি সত্যি না বলে তাহলে সে কি কিছু জানতে পারবে! আশা নিরাশার দোলাচলে মন-- না সে ভাবতেই পারছেনা। অঞ্জন তাড়াহুড়ো করে বেরুচ্ছে নাস্তা খাবার সময় নেই।
“নাস্তা খেয়ে যাও অঞ্জন।”
“সময় নেই। জরুরী কাজ আছে।ফিরতে অনেক রাত হবে। তুমি টেনশন করোনা, আমি মিটিং শেষ করে তবে ফিরবো।”
অতসী কিছুই আর বলতে পারলোনা। অঞ্জনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। অঞ্জন গাড়িতে গিয়ে বসল। বারান্দায় এসে হাত নেড়ে অতসী আবার ও বিদায় জানাল। তবে মনটা খচখচ করতে লাগল!
বর্ষা শুরু হয়েছে, সকাল থেকেই বৃষ্টি। আজ সে আর বের হবেনা। সারাদিন বাসায় থাকবে সে চিন্তা করলো। তারচেয়ে ভাল স্কুলে একটা ফোন করে দেবে আগে! অতসী রুমে এলো এমন সময় হঠাৎই ফোন বেজে উঠল। অঞ্জনের ফোন। অঞ্জন তার সেল ফোন ভুলে গিয়েছে। ফোনটা সে রিসিভ করলো । আবারও সেই রাতের কন্ঠস্বর, “শোন অঞ্জন তোমাকে রাতে ফোন দিলাম। তুমি কোন কথাই বললেনা । আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছ। এত তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি বলে তুমি বেশ রাগ করেছো, আমার সাথে রাগ করে রাতে তাই কথা বলনি। কিন্তু তুমি পুরো ব্যাপারটাই জান । তবে কথা বলনা কেন? রাতে তোমাকে বললাম আমায় আজ কটায় নিতে আসবে তুমি কিছু বললেনা। তাই বেশি কিছু না বলে ফোন রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমিতো শেষ পর্যন্ত মত দিয়েছো তাহলে কথা বলছোনা কেন? রোমেল বলল, তুমি কাল ওদের সাথে কথা বলেছো যে তুমি আজ সকাল দশটায় আমাকে নিতে আসবে, আমি যেন রেডি থাকি সবাই কাজী অফিসেই থাকবে। আমার কিন্তু কেনাকাটা সব শেষ, গতকাল শাড়ীটা কিনেছি। তুমি কিন্তু পাঞ্জাবীটা আনতে ভুলোনা! কি ব্যাপার এখনও কথা বলবেনা? কথা বলনা কিন্তু ফোন ঠিকই রিসিভ করছো। আস তুমি তারপর সামনাসামনি শোধ নেবো!
অতসীর হাত থেকে সেলফোনটি পড়ে গেলো। দৌড়ে গেলো আলমারির কাছে, আলমারি খুলে দেখলো পাঞ্জাবীর প্যাকেটটা নেই। তাহলে কি সব সত্যি? অঞ্জন লুকাবে কেন? অঞ্জন কি আসলেই অন্য কারো মাঝে সুখ খুঁজতে চায় নাকি খুঁজে পেয়েছে? অতসী আর ভাবতে পারছেনা। রাতে যখন মহিলার ফোনটা এসেছিল অতসী সন্দেহের দোলাচলে ছিল, কারন এত রাতে একটা মহিলা ফোন করবে অঞ্জনকে তাও আবার! অঞ্জনের ভালবাসা বা তাদের সংসারের ভিত এত মজবুত যে অতসী অঞ্জনকে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করতেই তার মনটা তৈরি হচ্ছিলনা। এখন পর্যন্ত অঞ্জনকে জিজ্ঞাসা করতে পারেনি, অন্য মহিলারা হলে এতক্ষনে কুরুক্ষেত্র বেজে যেতো কিন্তু সে ঐ সমস্ত টিপিক্যাল নারীদের মতো হতে চায়নি , ভালবাসাকে সে যতন করেছে। সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছে। বিনিময়ে এমন প্রতিদান, এর চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল ছিল! কোথাও কোন ভুল আছে, আমার অঞ্জন এমন হতেই পারেনা! সে তার অতসীকে এত বড় শাস্তি কখনও দিতে পারেনা! পাগলের মতো অঞ্জনের অফিসে ফোন করলো, না অঞ্জনকে পাওয়া গেলোনা কারন সে অফিসে এখনও যায়নি হয়ত যাবেওনা। সে ঐ মহিলার নাম্বারে আবার ফোন দিল কিন্তু ফোন অফ আসছে। প্রচণ্ড কষ্টে তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে! অঞ্জন তাকে এভাবে ------ভালবাসা কেন এত রঙ বদলায়?
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আর দু’চোখে প্লাবিত বর্ষা। বাইরে ঝুম বৃষ্টি –অতসী বারান্দায় ঠায় দাঁড়িয়ে ।
বাহিরে হঠাৎ অঞ্জনের গাড়ী এসে থামলো। মানে কি? অতসী নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, দু’ঘন্টাও হয়নি, এত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হইয়ে গেলো? ওই মহিলা ওর সাথে নেই কেনো? অঞ্জন উপরে ওঠে এলো। এসে বললো আমি সেল ফোনটা ফেলে গিয়েছি। অনেক জরুরী কল আসতে পারে। তাই বাসায় ফিরে এলাম ফোন নেয়ার জন্য। অতসী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অঞ্জন অতসীর দিকে তাকাল।
কি ব্যপার অতসী তোমাকে এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেন? তুমি ঠিক আছ? শরীর খারাপ করেনিতো? অতশীকে গিয়ে সে জড়িয়ে ধরে বলল, কি হয়েছে অতসী? তোমাকে এমন কখনও আমি দেখিনি! আমাকে বল প্লীজ। অতসী অঞ্জনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা অঞ্জন, আমি সত্যি সত্যি মরে যাবো--।
অঞ্জন বলল, “এতগুলো বছর পরে এমন কথা কেন ? আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে কখনও যাবোনা। তোমার মন ও শরীর কোনটাই ভাল না। আজ আমার সব প্রোগ্রাম বাতিল। অফিসও যাবোনা, আজ আমি আমার অতসীর কাছেই আছি।
অতসী অনেক বেশী ইমোশোনাল হয়ে হয়ে গিয়েছিল তাৎক্ষনিকভাবে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিল। অঞ্জনের দিকে চোখ তুলে তাকালো। অঞ্জনের চোখে সেই আগের অঞ্জনকে পাগলের মতো খুঁজতে লাগল কারন চোখ কখনও মিথ্যা বলেনা-------।


( আমার জীবনের প্রথম গল্প। আজ পড়তে গিয়ে অনেক ত্রুটি ধরা পড়ছে কিন্তু সম্পাদনা করিনি কারন প্রথম লেখাটুকু ওভাবেই রাখতে চেয়েছি যা দেখে আমি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত অবস্থান পরিমাপ করতে পারি)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০৮
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×