somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ শবেবরাত, বিদ'আত থেকে বেঁচে থাকুন- শেষ পর্ব

১৬ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব ...
শবেবরাতের ছালাত
এই রাত্রির ১০০ শত রাক'আত ছালাত সম্পর্কে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে তা 'মওযূ' বা জাল। এই ছালাত ৪৪৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদে আবিষ্কৃত হয়। যেমন মিশকাতুল মাছাবীহ-এর খ্যাতনামা আরবী ভাষ্যকার মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃঃ ১০১৪ হিঃ)
'আল-লাআলী' কেতাবের বরাতে বলেন, 'জুম'আ ও ঈদায়নের ছালাতের চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে 'ছালাতে আল্‌ফিয়াহ' নামে এই রাতে যে ছালাত আদায় করা হয় এবং এর সপক্ষে যেসব হাদীছ ও আছার বলা হয়, তার সবই বানোয়াট ও মওযূ অথবা যঈফ। এই বিদ'আত ৪৪৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম জেরুযালেমের বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদে প্রবর্তিত হয়। মসজিদের মূর্খ ইমামগণ অন্যান্য ছালাতের সঙ্গে যুক্ত করে এই ছালাত চালু করেন। এর মাধ্যমে তারা জনসাধারণকে একত্রিত করার এবং মাতববরী করা ও পেট পুর্তি করার একটা ফন্দি এঁটেছিল মাত্র। এই বিদ'আতী ছালাতের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে নেক্কার-পরহেযগার ব্যক্তিগণ আল্লাহর গযবে যমীন ধসে যাওয়ার ভয়ে শহর ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিলেন'।

এই রাতে মসজিদে গিয়ে একাকী বা জামা'আত বদ্ধভাবে ছালাত আদায় করা, যিকর-আযকারে লিপ্ত হওয়া সম্পর্কে জানা যায় যে, শামের কিছু বিদ্বান এটা প্রথমে শুরু করেন। তারা এই রাতে সুন্দর পোষাক পরে, আতর-সুরমা লাগিয়ে মসজিদে গিয়ে রাত্রি জাগরণ করতে থাকেন। পরে বিষয়টি লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মক্কা-মদীনার আলেমগণ এর তীব্র বিরোধিতা করেন। কিন্তু শামের বিদ্বানদের দেখাদেখি কিছু লোক এগুলো করতে শুরু করে। এইভাবে এটি জনসাধারণ্যে ব্যপ্তি লাভ করে।

রূহের আগমন
এই রাত্রিতে 'বাক্বী'এ গারক্বাদ' নামক কবরস্থানে রাতের বেলায় রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর নিঃসঙ্গ অবস্থায় যেয়ারত করতে যাওয়ার হাদীছটি (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯) যে যঈফ ও মুনক্বাত্বা' তা আমরা ইতিপূর্বে দেখে এসেছি। এখন প্রশ্ন হ'লঃ এই রাতে সত্যি সত্যিই রূহগুলো ইল্লীন বা সিজ্জীন হ'তে সাময়িকভাবে ছাড়া পেয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে কি-না। যাদের মাগফেরাত কামনার জন্য আমরা দলে দলে কবরস্থানের দিকে ছুটে যাই। এমনকি মেয়েদের জন্য কবর যেয়ারত অসিদ্ধ হ'লেও তাদেরকেও এ রাতে কবরস্থানে দেখা যায়। এ সম্পর্কে সাধারণতঃ সূরা আল ক্বদর-এর ৪ ও ৫নং আয়াত দু'টি পেশ করা হয়ে থাকে। যেখানে বলা হয়েছে,

'সে রাত্রিতে (ফিরিশতা ও তাদের সর্দার) 'রূহ' তাদের মালিকের সব ধরনের আদেশ নিয়ে (যমীনে) অবতরণ করে, (সে আদেশ বার্তাটি হচ্ছে চিরন্তন) প্রশান্তি, তা ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত (অব্যাহত) করে'। এখানে 'সে রাত্রি' বলতে লায়লাতুল ক্বদর বা শবেক্বদরকে বুঝানো হয়েছে- যা এই সূরার ১ম, ২য় ও ৩য় আয়াতে বলা হয়েছে।

অত্র সূরায় 'রূহ' অবতীর্ণ হয় কথাটি রয়েছে বিধায় হয়তবা অনেকে ধারণা করে নিয়েছেন যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহগুলি সব দুনিয়ায় নেমে আসে। অথচ এই অর্থ কোন বিদ্বান করেননি। 'রূহ' শব্দটি একবচন। এ সম্পর্কে হাফেয ইবনে কাছীর (রহ.) স্বীয় তাফসীরে বলেন, 'এখানে রূহ বলতে ফিরিশতাগণের সরদার জিবরাঈলকে বুঝানো হয়েছে।'

এ পর্যায়ে এ বিষয়টি আশা করি সকলের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে যে, শবেবরাত নামে যে প্রচলিত ধর্মীয় আচার সমাজে পালন করা হয় তা পরিস্কার বিদ'আত। তাই এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো, বিদ'আত কি ও বিদ'আতকারীদের সম্পর্কে বিশ্বনবী (ছা.) আমাদেরকে কি বলে গেছেন।

বিদ'আত ও তার পরিণাম
বিদ'আত অর্থ 'নতুন সৃষ্টি'। আভিধানিক অর্থে বিদ'আত হ'ল-
'ঐ সকল নতুন সৃষ্টি, যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত ছিল না। শারঈ অর্থে-
'আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে নতুন কোন প্রথার চালু করা, যা শরী'আতের কোন ছহীহ দলীলের উপরে ভিত্তিশীল নয়'। পারিভাষিক অর্থে সুন্নাতের বিপরীত বিষয়কে বিদ'আত বলা হয়। মা আয়েশা (রা.) হ'তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছা.) এরশাদ করেন,

'যে ব্যক্তি আমাদের শরী'আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত'। {মুত্তাফাক আলাইহ, আলবানী, মিশকাত (বৈরুতঃ ১৯৮৫) হা/১৪০}। তিনি আরও বলেন,

'... তোমাদের উপরে পালনীয় হ'ল আমার সুন্নাত ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত। তোমরা উহা কঠিনভাবে আঁকড়ে ধর এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি হ'তে সাবধান! নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ'আত ও প্রত্যেক বিদ'আতই গোমরাহী'। নাসাঈ শরীফের অন্য ছহীহ বর্ণনায় এসেছে 'এবং প্রত্যেক গোমরাহ ব্যক্তি জাহান্নামী। {আহমাদ, আবুদাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫; নাসাঈ হা/১৫৭৯ 'ঈদায়েন-এর খুৎবা' অধ্যায়}।

খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত মূলতঃ রাসূলেরই সুন্নাত। কারণ তাঁরা কখনোই রাসূলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদনের বাইরে কোন কাজ করতেন না। যুগে যুগে বৈষয়িক প্রয়োজনে সৃষ্ট বিভিন্ন আবিস্কার সমূহ যেমন সাইকেল, ঘড়ি, চশমা, মটরগাড়ী, উড়োজাহায ইত্যাদি বস্তুসমূহ আভিধানিক অর্থে বিদ'আত বা নতুন সৃষ্টি হ'লেও শারঈ পরিভাষায় কখনোই বিদ'আত নয়। তাই এগুলোকে গুনাহের বিষয় বলে গণ্য করা অন্যায়। অনেকে এগুলোকো অজুহাত করে ধর্মের নামে সৃষ্ট মিলাদ, ক্বিয়াম, শবেবরাত, কুলখানি, চেহলাম ইত্যাদিকে শরী'আতে বৈধ কিংবা 'বিদ'আতে হাসানাহ' বলে থাকেন, যেটা আরো অন্যায়। বরং বিদ'আতকে দু'ভাগে ভাগ করাই আরেকটি বিদ'আত।

শা'বান মাসের করণীয়
রামাযানের আগের মাস হিসাবে শা'বান মাসের প্রধান করণীয় হ'ল অধিকহারে ছিয়াম পালন করা। মা আয়েশা (রা.) বলেন, 'আমি রাসূলুল্লাহ (ছা.)-কে রামাযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে শা'বানের ন্যায় এত অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। শেষের দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ করতেন'। যারা শা'বানের প্রথম থেকে নিয়মিত ছিয়াম পালন করেন, তাদের জন্য শেষের পনের দিন ছিয়াম পালন করা উচিত নয়। অবশ্য যদি কেউ অভ্যস্ত হন বা মানত করে থাকেন, তারা শেষের দিকেও ছিয়াম পালন করবেন।

মোটকথা শা'বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম পালন করা সুন্নাত। ছহীহ দলীল ব্যতীত কোন দিন বা রাতকে ছিয়াম ও ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা সুন্নাতের বরখেলাফ। অবশ্য যারা 'আইয়ামে বীয'-এর তিন দিন নফল ছিয়ামে অভ্যস্ত, তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ই শা'বানে উক্ত নিয়তেই ছিয়াম পালন করবেন, শবেবরাতের নিয়তে নয়। নিয়তের গোলমাল হ'লে কেবল কষ্ট করাই সার হবে। কেননা বিদ'আতী কোন আমল আল্লাহ পাক কবুল করেন না এবং সকল প্রকার বিদ'আতই ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে নিজ নিজ আমল সমূহ পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন!!

~~~সমাপ্ত~~~

লেখকঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×