somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চালু হোক 'বঙ্গবন্ধু স্টাডিজ' কোর্স

১৭ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নুরুল আলম পাঠান (মিলন)
যে দিবসটিকে শুধু শিশুদের জন্য উৎসর্গ করা হলো, সেই শিশুরা হয়তো শিশুকালে জাতির পিতার নাম বড়জোর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনে রাখবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে 'বঙ্গবন্ধু স্টাডিজ' নামে কোর্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম পড়ানো হলে এই শিশুরাই দেশপ্রেমিক ও নেতৃত্বদানের যোগ্য হিসেবে নিজেদের গড়তে পারবে

কথিত আছে, মাও সে তুং দুইশ' বছর গাঁজা খেয়ে ঘুমানো চীনাদের জাগিয়ে যেমন এক নতুন চীনা জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শোষিত বাঙালিকে জাগিয়ে পরম আরাধ্য ও কাঙ্ক্ষিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে হয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। জন্মের পর থেকে বঙ্গবন্ধু মা প্রকৃতির হাতে এমনভাবে বেড়ে ও গড়ে উঠেছেন, জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায় বলা যায়, 'মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারা ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা লুঙ্গি-টুপি-দাড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই।' বঙ্গবন্ধুর চেহারা, জীবন ও কর্মে সেই উক্তির যথার্থতাই সুস্পষ্ট। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন শোষিত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত মানুষের জন্য লড়াই করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন আজীবন। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু শোষকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে জনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই জনতার মধ্যে তারই প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। বলতে দ্বিধা নেই, রাষ্ট্রযন্ত্র সে হত্যার বিচারও রহিত করেছিল, যদিও পরবর্তীকালে রাষ্ট্র্রযন্ত্রই বিচারের ব্যবস্থা করেছে।
বঙ্গবন্ধু আমাদের সামনে ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদার অসাম্প্রদায়িক মানস গঠন করেছেন। ভাষার জন্য লড়াই করেছেন, মুক্তির সনদ ঘোষণা করে ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এসেছেন। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে হত্যা করতে পারেনি। অথচ নির্মমভাবে তারই প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রে নিহত হলেন। সারাজীবন শোষিতের জন্য লড়াই করা এই মহাপুরুষের ঋণ এই বাঙালি জাতি কখনোই শোধ করতে পারবে না।
বাঙালির রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধুকে আমরা কী দিলাম বা দিতে পারলাম তাতে তার কিছুই আসে যায় না, বরং আমাদের প্রয়োজনেই বারবার তাকে খুঁজতে হবে। তাকে যথাযথ সম্মান দিতে না পারা বা তার জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারা জাতি হিসেবে আমাদেরই দৈন্য বলতে হবে।
লেখার শিরোনামে একটি প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করেছি। সেটি আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের দেশপ্রেমিক খাঁটি বাঙালি হওয়ার মানস গঠনের জন্যই। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪০ বছর হলো। বাঙালির সবচেয়ে আপন মানুষটিও নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৫ বছরের বেশি সময় আগে। এই মহাপুরুষের মহাপ্রয়াণের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে আমাদের ক্রমশ বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টা। এহেন অপচেষ্টা অব্যাহত থাকার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো, ইতিহাস থেকে আমরা কেউই শিক্ষা নেই না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই রাজনীতিবিদদের জন্য আলাদা পড়ালেখার ব্যবস্থা আছে, আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মহান কীর্তিমানদের বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা। ব্যক্তির নামে দেশে দেশে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স পড়ানো হয়। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে 'গান্ধী স্টাডিজ' নামে একটি বিভাগ ছাড়াও আমেরিকার ইস্টার্ন কানেক্টিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে গান্ধী স্টাডিজ এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈবহঃবৎ ভড়ৎ ঃযব অফাধহপবফ ঝঃঁফু ড়ভ ওহফরধ নামে একটি সেন্টার চালু রয়েছে, যেখানে 'গান্ধী স্টাডিজ' পড়ানো হয়। দিলি্লর জওয়াহেরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ে 'নেহরু স্টাডিজ' নামের একটি কোর্স পড়ানো হয়। শুধু যে নিজ দেশেই পড়ানো হয় বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়, পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন ও কর্ম নিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হয়। যেসব মহামনীষী পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, এতে তাদের কোনো লাভ-ক্ষতি নেই, বরং নিষ্ঠায়, ত্যাগে, অঙ্গীকারের দৃঢ়তায় এবং মনুষ্যত্ব ও দেশপ্রেমের দীপ্র চেতনার দীক্ষা দেওয়ার ও জাতি গঠনে দক্ষ নেতৃত্ব তৈরি করার লক্ষ্যেই পড়ানো হয়। আমাদের দেশেও বিষয়ভিত্তিকভাবে অনেক কিছুই ইতিহাসের অংশ হিসেবে পড়ানো হয়। এমনকি কিছুকাল আগে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে 'নজরুল স্টাডিজ' নামের একটি কোর্স পড়ানো হয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যে মহান নেতা এ দেশকে স্বাধীন করলেন, সম্পূর্ণ একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন, তাকে কোথাও পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয় না, উপরন্তু কখনও কখনও থাকতে হচ্ছে নিষিদ্ধ হয়ে! ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়, কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করে দেয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার পালনের সিদ্ধান্ত নেয়, যা আজও বহাল আছে। অদূর ভবিষ্যতে কী হবে সেটা বোঝা মুশকিল। এখানে বিষয় হলো, যে দিবসটিকে শুধু শিশুদের জন্য উৎসর্গ করা হলো, সেই শিশুরা হয়তো শিশুকালে জাতির পিতার নাম বড়জোর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনে রাখবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে 'বঙ্গবন্ধু স্টাডিজ' নামে কোর্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম পড়ানো হলে এই শিশুরাই দেশপ্রেমিক ও নেতৃত্বদানের যোগ্য হিসেবে নিজেদের গড়তে পারবে। সেই ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া সকারেরই দায়িত্ব। কেননা পূর্বাপর একজন অনমনীয় ও অনন্য সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টান্ত কেবল তিনি নিজেই।

View this link

বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে সুন্দর, সময়োপযোগী ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখার জন্য বন্ধু 'নুরুল আলম পাঠান মিলন' কে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:২৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×