somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথা : রূপটুশি

০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রূপটুশি
নাসরিন সুলতানা

বহুদিন আগের কথা। তখন যন্ত্রচালিত কোনো যানবাহন ছিল না, হাসপাতাল ছিল না ; ছিল রাজায়-রাজায় হানাহানি, ছিল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। কে কার রাজ্য দখল করবে এ চিন্তা যেমন ছিল ঠিক তেমনই ছিল নিজের রাজ্যের উন্নয়নের চিন্তা। কোনো রানীর মেয়ে হলে রাজা আবার বিয়ে করতেন। পরবর্তী সন্তান ছেলে হয় কি না সে পর্যন্ত অপেক্ষা করার মতো সময় তাদের ছিল না। কারন রাজার মৃত্যু হলে রাজ্য পাবে তার মেয়ে। সে রাজ্য সহজেই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে তারা ধারণা করত। রাজার মৃত্যুর সময় তার ছেলের বয়স যদি কম থাকে সে রাজ্যও হারাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। এ রকম অব¯থায় রাজার নিকটাত্মীয়রা বা অন্য রাজ্যের রাজারা রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে ফেলবে, রাজার পরিবারকে বন্দী করে রাখবে বা এ ধরনের যে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

সপ্তবর্ণা রাজ্যের রাজা হঠাৎ অসু¯থ হয়ে পড়লেন। তার বয়স পঁচিশ বছর। বাবার মৃত্যুর পরে রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা সামলাতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। এক বছরের মধ্যেই বিছানায় পড়ে গেলেন। সারাক্ষণ অসহ্য মাথা ব্যথা। কোনো কিছু খেতে পারেন না, জোর করে খেলে বমি হয়, কোনো কিছু চিন্তা করা তো দূরের কথা, কারো সাথে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। রাজ্যের সব বড় বড় কবিরাজ তার চিকিৎসা করলেন কিন্তু রাজার অব¯থা দিন দিন খারাপের দিকেই যেতে লাগল। রাজসভায় একজন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। রাজা সব ব্যাপারে তার মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। রাজার বাবাও তার পরামর্শ ছাড়া কোনো কাজ করতেন না। সেই জ্ঞানী মানুষটার দাপ্তরিক নাম ছিল দ্বিতীয় সভাসদ।

দ্বিতীয় সভাসদ একদিন রাজাকে বললেন, মহারাজ, আমি স্বপ্ন দেখলাম আপনার কবিরাজ সাহেব আমার সাথে বলছেন, যদি এমন একটা মেয়ে পাওয়া যেত যার গায়ের রং এবং চুলের রং হালকা গোলাপী সে যদি মহারাজের মাথায় এক গ্লাস পানি ঢালে তাহলে তিনি সু¯থ হয়ে উঠবেন।

রাজা বললেন, এ রকম মেয়ে কোথায় পাবেন ?

দ্বিতীয় সভাসদ বললেন, আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে চারদিকে আপনার চারটা কবুতর পাঠাতে পারি। ওরা তো আপনার কথা শোনে। আমি নিজের হাতে চিঠি লিখে ওদের পায়ে বেঁধে দেব। চিঠি আপনাকে পড়ে শোনাব।

রাজা রাজি হলেন। কারন তিনি জানেন যে দ্বিতীয় সভাসদ কখনো তার অকল্যান চান না।

দ্বিতীয় সভাসদ কবুতর চারটা নিয়ে রাজার কাছে আসলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, সপ্তবর্ণা রাজ্যের মহারাজ মাথা ব্যথায় ভুগছেন। এই রোগে তার মৃত্যুও হতে পারে। যে মেয়ের গায়ের রং এবং চুলের রং হালকা গোলাপী সে যদি মহারাজের মাথায় এক গ্লাস পানি ঢালে তাহলে তিনি সু¯থ হয়ে উঠবেন। বিনিময়ে আপনি কী চান তা লিখে মেহেরবানী করে এই কবুতরটার পায়ে বেঁধে দিবেন। আমরা আপনাকে আনার জন্য রাজপানসি পাঠিয়ে দেব।

দ্বিতীয় সভাসদ কবুতর চারটাকে এলাকা দেখিয়ে দিলেন। বললেন, যে মেয়ের গায়ের রং এবং চুলের রং হালকা গোলাপী সে যখন একা থাকবে তখন তার সামনে গিয়ে বসবি। সে ছাড়া অন্য কেউ যেন এই চিঠি খুলতে না পারে।

অনেক দিন চলে গেল। কবুতর ফিরে এল না। রাজার অব¯থা আরো খারাপ হয়ে গেল। এখন আর তার বাঁচার ইচ্ছে নেই। দুঃখ শুধু একটাই যে নিজের সু¯থতার জন্য কবুতরক’টাও হারাতে হল। রাজা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। ভাবলেন, কবুতরগুলো হয়ত হালকা গোলাপী রংয়ের মেয়ে খুঁজতে খুঁজতে মরেই গিয়েছে।

হঠাৎ একটা কবুতর আসলো। তার পায়ে বাঁধা চিঠিতে লেখা, আমি রাজাকে বিয়ে করতে চাই।

রাজা রাজি হলেন, পানসি ছেড়ে দিলেন। পানসির সাথে সাথে কবুতরও যাচ্ছিল পথ চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। কিছুদিন পরে আর একটা কবুতর আসলো। তার পায়ে বাঁধা চিঠিতে লেখা, আমাকে রাজ্যের অর্ধেক লিখে দিতে হবে।

রাজা এ প্রস্তাবেও রাজি হলেন, পানসি ছেড়ে দিলেন। আগের পানসি ফিরিয়ে আনার জন্য কবুতর পাঠালেন। কিছুদিন পরে তৃতীয় কবুতরটা আসলো। তার পায়ে বাঁধা চিঠিতে লেখা, আমি রাজার মাথায় পানি ঢেলে দেব। বিনিময়ে কিছুই চাই না। সমস্যা তো রাজার, তিনি আমার কাছে আসবেন ; আমি তার কাছে যাব না।

রাজা এবারও রাজি হলেন, পানসি নিয়ে রওনা করলেন। আগের পানসি ফিরিয়ে আনার জন্য কবুতর পাঠালেন। কিছুদিন পরে শেষ কবুতরটা আসলো। তার পায়ে বাঁধা চিঠিতে লেখা, আমি রাজার মাথায় পানি ঢেলে দেব। বিনিময়ে কিছুই চাই না। পানসি পাঠাতে হবে না ; আমি এখান থেকে পানসি নিয়ে যাব। যদি রাজি থাকেন তাহলে খবর জানাবেন।

রাজা তো মহাখুশি, এত বড় সুখবর ! পানসি ঘুরাও। তাড়াতাড়ি খবর পাঠাও।

দ্বিতীয় সভাসদ খুব খুশি। তিনি প্রতিবারই খুশি ছিলেন। যদিও তার মনে হয়েছিল যে পরবর্তী কবুতর অপেক্ষাকৃত ভালো খবর নিয়ে আসবে কিন্তু অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য রাজার ছিল না বলে তিনি কিছু বলেননি।

হালকা গোলাপী রংয়ের মেয়ে আসলো। তার নাম রূপটুশি। অসামান্য রূপসী , চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো সুন্দরী। তার দিকে তাকানোমাত্রই রাজার অসুখ অর্ধেক ভালো হয়ে গেল। সে রাজার মাথায় পানি ঢালল। মুহূর্তেই তিনি সু¯থ হয়ে গেলেন। উঠে বসলেন। রূপটুশিকে বললেন, আমি আপনাকে কিছু উপহার দিতে চাই। আপনি অনুগ্রহপূর্বক গ্রহণ করুন।

রূপটুশি বলল, আমি যদি আপনার উপহার গ্রহণ করি তাহলে আমার পিতা আমাকে ঘরে উঠতে দিবেন না।

রাজার চোখে পানি এসে গেল। কে আপনার পিতা ? কী তার নাম ? আমি একবার তাকে দেখতে চাই।

রুপটুশি কিছু বলল না। রাজা হাতজোর করে বললেন, দয়া করে আমাকে তার সাথে দেখা করার অনুমতি দিন।

রূপটুশি বলল, আপনি তাকে দেখতে পারেন তবে রাজপানসিতে যেতে পারবেন না। আমার পিতা আমার ওপর নাখোশ হবেন। আমি যাওয়ার কিছুদিন পরে আপনি যাবেন। সাধারণ পানসিতে করে সাধারণ পোষাক পরে যেতে হবে।

রাজা সাধারণ পানসিতে করে রূপটুশির বাবার সাথে দেখা করতে গেলেন। পানসি ভিড়ানোর আগেই তিনি বুঝে ফেললেন যে এটা নীলপুরী রাজ্যের রাজবাড়ি। ভেতরে গিয়ে তিনি শুনলেন যে রূপটুশি রাজকন্যা। তিনি গিয়ে রূপটুশির বাবাকে কদমবুচি করলেন। বললেন, এ রকম মহান একজন রাজা আমার রাজ্যের কাছেই আছেন আমি রাজ্য দিয়ে কী করব ? মহারাজ, আপনি আমার রাজ্যটা নিয়ে নিন। আমি আপনার সাধারণ প্রজা হয়েই থাকব।

নীলপুরীর রাজা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, আমার তো ছেলে নেই। আমার মৃত্যুর পরে আমার মেয়ের হাতেই যাবে রাজত্ব। তার চেয়ে তুমিই নিও। আমি লিখে দিয়ে যাব তোমাকে।

দ্বিতীয় সভাসদ আনন্দে কেঁদে ফেললেন। তিনি রূপটুশির বাবাকে বললেন, মহারাজ, আমাদের রাজ্যটা আপনি নিন আর আপনার কন্যাকে আমাদের মহারাজের সাথে বিয়ে দিন।

রূপটুশির বাবা বললেন, উত্তম প্রস্তাব। আপনাদের রাজা কি রাজি হবেন ?

সপ্তবর্ণার রাজা নীলপুরীর রাজাকে আবার কদমবুচি করলেন। নীলপুরীর রাজা সপ্তবর্ণার রাজাকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে বললেন, বিয়ের বাদ্য বাজাও।

রূপটুশি ভেতর থেকে এ দৃশ্য দেখে লজ্জা পেল। সে দরজার কাছ থেকে সরে গেল। অমনি বিয়ের বাদ্য বেজে উঠল।

রচনা- ১৩.১০.২০১২
প্রকাশ- অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৩-তে শিশু সাহিত্য হিসেবে বই আকারে প্রকাশ করে বিশিষ্ট প্রকাশণা সংস্থা ‘বাংলা প্রকাশ’।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:২২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×